আত্মহত্যা থেকে বাঁচার উপায় | আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী

আত্মহত্যা থেকে বাঁচার উপায় | আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ! সুপ্রিয় পাঠক! কেমন আছেন? আজ গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে কথা বলবো ৷ আত্মহত্যা মহাপাপ। আত্মহত্যা কখনো কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে না। আমাদের সমাজে এমন বহু মানুষ রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার কথা ভেবে থাকেন। ভেতরে অত্যন্ত যন্ত্রনা সহ্য করে বেঁচে চলেছেন। থেমে যান ৷ পুরো আর্টিকেল পড়ুন ৷ আত্মহত্যা থেকে বাঁচার উপায় ৷ আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী? মানুষ কেন আত্মহত্যা করে? কথা বলবো ডিপ্রেশন আত্মহত্যা নিয়ে স্ট্যাটাস ৷ আরও আলাপ করবো আত্মহত্যা নিয়ে উক্তি ৷ আত্মহত্যা নিয়ে কিছু কথা ৷ সঙ্গেই থাকুন ৷

আরও পড়ুনঃ একসাথে তিন তালাক দিলে কত তালাক হবে? 

আত্মহত্যা কাকে বলে?

আত্মহত্যা বা আত্মহনন (ইংরেজি: Suicide) হচ্ছে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াবিশেষ। ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা। আত্মহত্যা করার বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে ৷ বিষ খাওয়া ৷ গলায় ফাঁস দেওয়া ৷ ট্রেনের নিচে ঝাপ দেয়া ৷ বহুতল ভবন থেকে লাফ দেয়া ৷ মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করা ৷ গাড়ির নিচে ইচ্ছাকৃত পড়া ৷ নিজেকে ছুড়িকাঘাত করা ৷ নিজ শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া ৷

মানুষ কেন আত্মহত্যা করে

স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিবিসি বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধু ২০২১ সালেই ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। স্কুল, কলেজের পরিসংখ্যান যোগ করলে তা বেড়ে যাবে আরো কয়েকগুণ।

এর বিপরীতে মাদরাসাপড়ুয়াদের আত্মহত্যার প্রবণতা নেই বললেই চলে। অথচ যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়ারা আত্মহত্যা করে, তা পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, মাদরাসাপড়ুয়াদেরই সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করার কথা।

মাদরাসাপড়ুয়ারা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র, সবখানে অবহেলিত। তাদের সামনে উন্নত জীবনের হাতছানি নেই। নেই ভালো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ। জেনারেল পড়ুয়াদের মতো উন্নত পরিবেশ তারা পায় না। শত প্রতিকূলতার পরও মাদরাসাপড়ুয়ারা কেন আত্মহত্যা করে না? কেন তারা জীবনের জয়গান গায়?

তার কারণ—শৈশবেই তাদের হৃদয় জমিনে পুঁতে দেয়া হয় ঈমানের বীজ। ঈমান তাদেরকে শেখায়—এই জীবন আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত। আল্লাহর এই আমানতের খেয়ানত করা মহাপাপ। তাদেরকে আরো শেখানো হয়, এই জীবনই একমাত্র জীবন নয়। নশ্বর এ জীবনের পরে অপেক্ষা করছে অনন্তকালের প্রকৃত জীবন।

আত্মহত্যা থেকে বাঁচার উপায় | আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী
আত্মহত্যা থেকে বাঁচার উপায় | আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী

ডিপ্রেশন আত্মহত্যা নিয়ে স্ট্যাটাস

এই জীবনের দুঃখ-কষ্ট যারা ধৈর্যের সাথে জয় করতে পারবে, মৃত্যুর পর তাদের জন্য রয়েছে অনন্ত সুখের জান্নাত। তাদেরকে আরো শেখানো হয় তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা। এ কারণে শত বিপদেও তারা ভেঙে পড়ে না। নিরাশ হয় না। আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা তাদের শক্তি যোগায়। অন্যরা যেটাকে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মনে করে, তারা তখনও আল্লাহর সাহায্যের প্রত্যাশা করে।

নবীজি সা. বলেছেন, অন্তরের সচ্ছলতা প্রকৃত সচ্ছলতা। নবীজির সা. এই হাদিসও তারা মনে-প্রাণে ধারণ করে। তাদের পকেটে পয়সা কম থাকতে পারে, কিন্তু অন্তরের দিক থেকে তারা থাকে পরিতৃপ্ত, ধনবান। তারা জানে সব বিচারের পর আসল বিচার হবে। দুনিয়ার সকল অবিচার, অবহেলা এবং অপমানেরও বিচার সেদিন হবে। সেদিন সবাই সুবিচার পাবে। সুতরাং সব হারানোর কিছু নেই। এইসব গুণের কারণে মাদরাসায় আত্মহত্যার সংখ্যা অনেক কম।

জেনারেলপড়ুয়ারা আমাদেরই ভাই-বোন, আমাদেরই সন্তান। তাদেরকে আমরা মাদরাসার বিরুদ্ধে দাঁড় করাচ্ছি না। সমস্যার গোড়া চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি মাত্র।

আমাদের সন্তানদের ভেতর যদি দীনি চেতনা, পাপবোধ, তাওয়াক্কুল, আখিরাতের প্রতি ঈমান, ছড়িয়ে দিতে পারি, তাদেরকে যদি অতিবস্তুবাদিতা, আত্মকেন্দ্রিকতা ও আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস থেকে রক্ষা করতে পারি, ইনশাআল্লাহ, তারা ধৈর্য ধারণ ও সহনশীলতা শিখবে, আত্মহত্যার পথে পা বাড়াবে না।

এভাবেই আমাদের জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম তার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বারবার ফিরে আসে। আমরা কি তা থেকে শিক্ষা নিতে পারি?

আত্মহত্যা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে

ভয়ংকর এক সামাজিক ব্যাধি আত্মহত্যা। ইসলামে আত্মহত্যা হারাম ও কবিরা গুনাহ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এ ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদের জীবন ধ্বংসের মুখে ফেলো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)

আত্মহত্যা রোধে ইসলাম সতর্ক করেছে। বিভিন্ন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছে। আত্মহত্যাকে স্পষ্ট হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর করুণাময়।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ২৯)

জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই একটি চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এরপর রক্তক্ষরণের কারণে মারা যায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৩২৭৬; মুসলিম, হাদিস : ১১৩)

আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী

আত্মহত্যাকারীর গন্তব্য জাহান্নাম। তাই যত কষ্ট-যাতনাই আসুক আল্লাহর দেওয়া জীবন শেষ করার অধিকার কারও নেই। আত্মহত্যার ব্যাপারে রাসুল (সা.) বিশেষভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামেও তার সেই যন্ত্রণাকে অব্যাহত রাখা হবে। আর যে ব্যক্তি ধারালো কোনো কিছু দিয়ে আত্মহত্যা করবে, তার সেই যন্ত্রণাকেও জাহান্নামে অব্যাহত রাখা হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৪৬)

আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে পাহাড় থেকে পড়ার অনুরূপ শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, সে স্থায়ীভাবে জাহান্নামের আগুনে বিষপানের আজাব ভোগ করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের আগুনে তা দ্বারা শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৭৮)

ছাবিত বিন জিহাক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন : ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বস্তু দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সে বস্তু দিয়েই শাস্তি প্রদান করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭০০; মুসলিম, হাদিস : ১১০)

আত্মহত্যা নিয়ে কিছু কথা

জীবনে হতাশা, দুঃখ ও নৈরাশ্য আসবে। তবে তখন ধৈর্য ধারণ করতে হবে। শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে নিজেকে শেষ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। বরং দুঃসময়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে। ইসতিগফার করতে হবে। নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা চাইতে হবে। সুখ-দুঃখের মালিক তিনিই। তার কাছে সুখের দোয়া করতে হবে। দুঃখের পর একদিন সুখ আসবেই। আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই দুঃখের সঙ্গে সুখ আছে।’ (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত : ৬)

আত্মহত্যা নিয়ে উক্তি

  • আত্মহত্যা জীবনে সবচেয়ে বড় কাপুরুষতার পরিচয়।

আত্মহত্যার চেয়েও বড় কাপুরুষতা হলো আত্মহত্যাকারীকে আত্মহত্যা এর মুখে ঠেলে দেয়া।

  • আত্মহত্যা কোনো উত্তর নয় বরং জীবন নামক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানোর অজুহাত মাত্র।

আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়া যাবে কি?

কিছু কিছু মানুষ মনে করেন, আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়া যাবে না বা তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করা যাবে না।

আত্মহত্যা মহাপাপ এবং এর শাস্তিও খুব ভয়াবহ- একথা সবাই জানে। কিন্তু তার জানাযা পড়া যাবে না বা তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করা যাবে না- এ ধারণা ঠিক নয়। তার জানাযাও পড়া হবে তার জন্য মাগফিরাতের দুআও করা যাবে।

তবে এমন ব্যক্তির জানাযায় শীর্ষস্থানীয় দ্বীনী ব্যক্তিত্ব না গিয়ে সাধারণ লোক দিয়ে জানাযার নামায পড়িয়ে নেওয়াই উত্তম। -শরহু মুসলিম, নববী ৭/৪৭ (৯৭৮ নং হাদীসের অধীনে); সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/১৯

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

আত্মহত্যা থেকে বাঁচার উপায় | আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী
আত্মহত্যা থেকে বাঁচার উপায় | আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *