আহলে কোরআন কারা | আহলে কুরআনের ভ্রান্তি
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সুপ্রিয় পাঠক! কেমন আছেন? আজ নব্য ফিতনা আহলে কুরআনদের নিয়ে কথা বলবো ৷ আহলে কোরআন কারা? আহলে কুরআনের ভ্রান্তি ৷ বিস্তর আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ ৷ সঙ্গেই থাকুন ৷
ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে যারা শুধুমাত্র কুরআনকে ইসলাম ধর্মের বিধান এবং আইন হিসাবে মানেন ও বিশ্বাস করেন তাদেরকে কুরানবাদী বলা হয়। তারা অবশ্য আহলে কুরআন বা কুরআন ওনলি বলেও নিজেদেরকে পরিচয় দেন। তারা হাদিস, ইজমা ইত্যাদিকে ইসলাম ধর্মের বিধান এবং আইন হিসাবে মানেন না।
মূলত যারা কুরআন মুখস্থ করে ও অর্থ অনুধাবন করে এবং তদানুযায়ী আমল করে তারাই মূলতঃ আহলে কুরআন। রাসূল সা. বলেন, কতক লোক আহলে কুরআন।
আরও পড়ুনঃ হারীসুল আশআরী বর্ণিত সংগঠকসংক্রান্ত হাদীসের দারস
আহলে কোরআন সম্পর্কে হাদীস
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ” إِنَّ لِلَّهِ أَهْلِينَ مِنَ النَّاسِ ” . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ هُمْ قَالَ ” هُمْ أَهْلُ الْقُرْآنِ أَهْلُ اللَّهِ وَخَاصَّتُهُ ” .
আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত :
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কতক লোক আল্লাহ্র পরিজন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! তারা কারা? তিনি বলেন, কুরআন তিলাওয়াতকারীগণ আল্লাহ্র পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা। [ইবনে মাজাহা: ২১৫]
عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يَأْتِيهِ الأَمْرُ مِنْ أَمْرِي مِمَّا أَمَرْتُ بِهِ أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ فَيَقُولُ لاَ نَدْرِي مَا وَجَدْنَا فِي كِتَابِ اللَّهِ اتَّبَعْنَاهُ ” .
উবাইদুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত :
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অচিরেই তোমাদের মধ্যকার কোন ব্যক্তি তার গদি আঁটা আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকাবস্থায় তার নিকট আমার নির্দেশিত কোন কর্তব্য বা নিষেধাজ্ঞা পৌছাবে, তখন সে বলবে, আমি অবহিত নই। আমরা যা আল্লাহ্র কিতাবে পাবো শুধু তারই অনুসরন করবো। [আবু দাউদ: ৪৬০৫]
عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيكَرِبَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ “ أَلاَ إِنِّي أُوتِيتُ الْكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ أَلاَ يُوشِكُ رَجُلٌ شَبْعَانُ عَلَى أَرِيكَتِهِ يَقُولُ عَلَيْكُمْ بِهَذَا الْقُرْآنِ فَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَلاَلٍ فَأَحِلُّوهُ وَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَرَامٍ فَحَرِّمُوهُ أَلاَ لاَ يَحِلُّ لَكُمْ لَحْمُ الْحِمَارِ الأَهْلِيِّ وَلاَ كُلُّ ذِي نَابٍ مِنَ السَّبُعِ وَلاَ لُقَطَةُ مُعَاهِدٍ إِلاَّ أَنْ يَسْتَغْنِيَ عَنْهَا صَاحِبُهَا وَمَنْ نَزَلَ بِقَوْمٍ فَعَلَيْهِمْ أَنْ يَقْرُوهُ فَإِنْ لَمْ يَقْرُوهُ فَلَهُ أَنْ يُعْقِبَهُمْ بِمِثْلِ قِرَاهُ ” .
আল-মিক্বদাম ইবনু মা’দীকারিব (রহঃ) থেকে বর্ণিত :
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জেনে রাখো! আমাকে কিতাব এবং তার সঙ্গে অনুরূপ কিছু দেয়া হয়েছে। জেনে রাখো! এমন এক সময় আসবে যখন কোন প্রাচুর্যবান লোক তার আসনে বসে বলবে, তোমরা শুধু এ কুরআনকেই গ্রহন করো, তাতে যা হালাল পাবে তা হালাল এবং যা হারাম পাবে তা হারাম মেনে নিবে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জেনে রাখো! গৃহপালিত গাধা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং ছেদন দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র পশুও নয়। অনুরুপ সন্ধিবদ্ধ অমুসলিম গোত্রের হারানো বস্তু তোমাদের জন্য হালাল নয়, অবশ্য যদি সে এর মুখাপেক্ষী না হয়। আর যখন কোন লোক কোন সম্প্রদায়ের নিকট আগন্তুক হিসাবে পৌঁছে তখন তাদের উচিত তার মেহমানদারী করা। যদি তারা তা না করে, তাহলে তাদেরকে কষ্ট দিয়ে হলেও তার মেহমানদারীর পরিমান জিনিস আদায় করার অধিকার তার আছে।
[আবু দাউদ: ৪৬০৪]
আহলে কোরআনের উৎপত্তি
রাসূল সা. এর উক্ত ভবিষ্যদ্বাণী হিজরী দ্বিতীয় শতকের শেষের দিকে বাস্তবে দেখা দেয়। এ সময় এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটে, যারা সুন্নাতকে অস্বীকার করে। ইমাম শাফেঈ এমন একজন হাদীস অস্বীকারকারী ব্যক্তির সাথে তার মুনাযারার কথা উল্লেখ করেছেন (কিতাবুল উম্ম ৭/২৮৭-২৯২)।
সেখানে তিনি তার দাবীর অসারতা প্রমাণ করেছেন। অতঃপর দীর্ঘ এগারো শত বছর হাদীস অস্বীকারকারীদের অস্তিত্বের কোন প্রমাণ মিলেনি। বিগত শতাব্দী তথা ত্রয়োদশ হিজরীতে এই ফিৎনার পুনরাবির্ভাব ঘটে মিসর, ইরাক এবং ভারতে ৷ বর্তমানে বাংলাদেশেও এই ভ্রষ্ট আকীদার কিছু ব্যক্তির আবির্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা থেকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) বলেন, ‘তারা কাফের এবং ইসলাম হতে খারিজ। তাদের হাশর হবে ইহূদী ও নাছারা বা অন্যান্য ভ্রান্ত মতাবলম্বীদের সাথে’
[মিফতাহুল জান্নাহ পৃঃ ৫]
আহলে কুরআনের ভ্রান্তি
আল্লাহর ন্যায় রাসুল (সা.)-ও হালাল-হারাম করেন ৷ রাসুল (সা.) হালাল করেন এবং হারামও করেন। আল্লাহতায়ালা তাঁকে এই অনুমতি দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে-‘যারা নিরক্ষর নবী (মুহাম্মদ)-এর অনুসরণ করে, যার কথা তারা তাদের কাছে রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, (সেই নিরক্ষর নবী) মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দেয় ও অন্যায় করতে নিষেধ করে। সে তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করে দেয় এবং অপবিত্র বস্তুসমূহকে তাদের জন্য হারাম করে দেয়। আর তাদের ওপর চাপানো বোঝা ও বন্ধন হতে তাদের মুক্ত করে। অতএব যেসব লোক তার প্রতি ইমান এনেছে, তার সাহচর্য লাভ করেছে, তাকে সাহায্য করেছে এবং সেই নুরের (কোরআনের) অনুসরণ করেছে, যা তার কাছে নাজিল হয়েছে, কেবল তারাই সফলতা লাভ করেছে।’ (সুরা আরাফ : ১৫৭)।
এই আয়াতও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে, রাসুল (সা.)-ও আল্লাহর নির্দেশক্রমে কিছু বিষয় হালাল করেছেন এবং কিছু হারাম করেছেন। এ আয়াতের প্রথম দিকে রাসুল (সা.)-এর অনুসরণের কথা বলার পর আবার তাঁর ওপর নাজিলকৃত নুর তথা কোরআনের অনুসরণের কথা আলাদাভাবে বলা হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায়- কোরআনের অনুসরণ যেমন দরকার, তেমনি কোরআন প্রচারকারী রাসুল (সা.)-এর অনুসরণও দরকার। আর সেই অনুসরণই হচ্ছে তাঁর সিরাতের অনুসরণ, তাঁর জীবনীর অনুকরণ; অন্য কথায়- তাঁর হাদিসের অনুসরণ।
হাদীস অস্বীকারকারী ফিতনা আহলে কোরআন
সুন্নাত অস্বীকার করার ফেতনা ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম দ্বিতীয় হিজরী শতকে উত্থিত হয়েছিল। এই ফিতনার সূত্রপাত করেছিল খারিজী ও মুতাযিলা সম্প্রদায়। খারিজীদের এই ফিতনা উত্থাপনের প্রয়োজন এজন্যে হয়েছিল যে, তারা মুসলিম সমাজে যে নৈরাজ্যে ছড়াতে চাচ্ছিল তার পথে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ (হাদীস) প্রতিবন্ধক ছিল যা এই সমাজকে একটি সুশৃংখল ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তাদের এ পথে মহানবী (স) এর সেই সব বাণীও প্রতিবন্ধক ছিল যার বর্তমানে খারিজীদের চরমপন্থী মতবাদ অচল হয়ে পড়েছিল। এ কারণে তারা হাদীসের যথার্থতায় সন্দেহ পোষণ এবং সুন্নাহর অনুসরণ অপরিহার্য হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করার দ্বিবিধ পন্থা অবলম্বন করে।
মুতাযিলাদের এই ফিতনার সূত্রপাত করার প্রয়োজন এজন্য দেখা দেয় যে, অনারব ও গ্রীক দর্শনের সাথে প্রথম বারের মত সাক্ষাত হওয়ার সাথে সাথেই ইসলামী আকীদা- বিশ্বাস, নীতিমালা ও আইন-বিধান সম্পর্কে যেসব সন্দেহের সৃষ্টি হতে থাকে তা পূর্ণরূপে অনুধাবনের পূর্বে তারা কোন না কোনভাবে এর সমাধান দিতে চাচ্ছিল। স্বয়ং এই দর্শনের উপর তাদের এতটা অন্তর্দৃষ্টি সৃষ্টি হয়নি যে, তার সমালোচনামূলক মূল্যায়নের ভিত্তিতে তার বিশুদ্ধতা ও শক্তি উপলদ্ধি করতে পারে। দর্শনের নামে যে কথাই এসেছে তারা তাকে সম্পূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তির দাবী মনে করেছে এবং তারা চাচ্ছিল যে, ইসলামের আকীদা-বিশ্বাস ও নীতিমালার এমন ব্যাখ্যা করা হোক যাতে তা এই নামমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিক দাবীর অনুরূপ হয়ে যায়। এ পথেও হাদীস এবং সুন্নাহ্ প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য তারাও খারিজীদের মত হাদীসকে সন্দেহযুক্ত মনে করে এবং সুন্নাহকে দলীল হিসাবে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়।
শেষ কথা
সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷