ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল | ভাইবার প্রস্তুতি

ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল | ভাইবার প্রস্তুতি

আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ পাঠক কেমন আছেন? আপনারা ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এ প্রত্যাশায় আমাদের সবসময় ৷ আজ আপনাদের জন্য অত্যন্ত চমৎকার একটি টপিকে আমরা কিছু পরামর্শ শেয়ার করব ৷ যারা চাকুরী প্রার্থী ৷ চাকরির ইন্টারভিউ আসলেই তারা কিছুটা নার্ভাস ফিল করেন ৷ ইন্টারভিউতে কি ধরনের প্রশ্ন করবে ৷ কিভাবে এনসার করবেন ৷ কি  পোশাক পড়ে ইন্টারভিউ দিতে যাবেন ৷

যেকোনো চাকরির ক্ষেত্রেই আপনাকে অবশ্যই ভাইবা বোর্ডের মুখোমুখি হতে হবে ৷ ইন্টারভিউ থেকেই মূলত যোগ্য প্রার্থী তারা বাছাই করে চাকরির জন্য সিলেক্ট করবেন ৷ সবার থেকে আপনি কিভাবে সেরা ইন্টারভিউ দিবেন ৷ এবং নিজেকে শ্রেষ্ঠ উপস্থাপন করবেন ৷ ইন্টারভিউ এর আগে আপনার প্রস্তুতি কেমন হবে ৷ ইন্টারভিউ দেয়ার সময় আপনার উপস্থাপনা ভঙ্গি কেমন হবে ৷ যাবতীয় বিষয় থাকছে আমাদের বর্তমান নিবন্ধে ৷ সাথেই থাকুন ৷ পুরোটা পড়ুন ৷ প্রস্তুতি নিন ৷ ইনশাআল্লাহ আপনি সফল হবেন ৷

ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল | ভাইবার প্রস্তুতি

চাকরির জন্য ইন্টারভিউ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ইন্টারভিউ ছাড়া চাকরি হয় না। ইন্টারভিউর ক্ষেত্রে তিন ধরনের প্রস্তুতি দরকার। শারীরিক, মানসিক ও একাডেমিক। এখানে ইন্টারভিউ সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ।

চাকরি আপনার কেনো প্রয়োজন?

 বিশ্বে সেলফ এমপ্লয়মেন্ট পরিভাষাটি সকলের কাছে। পরিচিত। কেননা, শিক্ষিত তরুণ সমাজের বিরাট অংশ আত্মকর্মসংস্থানের চেষ্টা করে। আমাদের দেশে পড়াশােনা করে সরকারি চাকরি না পেলে অনেককেই হতাশ হয়ে ঘরে বসে থাকতে দেখা যায়। অথচ গার্মেন্টস শিল্প, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, মৎস্য খামার, হাঁস-মুরগির খামার, বাগানসহ বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্ট গ্রহণ করে আয় উপার্জন করলে শুধু নিজের কর্মসংস্থান হয় না, আরও অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।

 

এরকম আরও অনেক ফিল্ড রয়েছে। একজন মুসলিম তরুণ আপন মেধা মূল্যায়ন করে যেকোনাে একটি ক্ষেত্র বাছাই করে উক্ত দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করলে মেধার বিকাশ হয়। সমাজে এমন অনেক ক্ষেত্র আছে, যেখানে সাফল্যের জন্য খুব বেশি শিক্ষিত হওয়ার প্রয়ােজন নেই। গ্রামেগঞ্জে অল্পশিক্ষিত অনেক মানুষ আপন আপন পেশায় খ্যাতি অর্জন করে প্রচুর টাকা উপার্জন করেন।

একজন ভালাে কাঠমিস্ত্রি যে অর্থ উপার্জন করে মাস্টার্স ডিগ্রি পাস করেও অনেকে তার অর্ধেক উপার্জন করতে পারে না। একজন ভালাে টেইলরের কাছে জামা-কাপড় তৈরি করার জন্য সব সময় মানুষের ভিড় থাকে। একজন দক্ষ রঙমিস্ত্রীর হাতে ঘর রং করার জন্য মানুষ তার কাছে ছুটে যায়। তার টাকা-পয়সার অভাব হয় না। কোনাে কোনাে রাজমিস্ত্রির পারিশ্রমিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেতনের সমান।

এভাবে সমাজে এমন অনেক পেশা আছে, যাতে দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রচুর পড়াশােনার প্রয়ােজন নেই। যেকোনাে একটি পেশার প্রতি ব্যক্তির আগ্রহ ও ঝোঁক থাকলে চেষ্টা করলে সময়ের ব্যবধানে ঐ পেশায় খ্যাতি অর্জন করা সম্ভব হয়।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন শুধু ছবি একেই বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছেন। সুরসম্রাট আব্বাস উদ্দিন গানের সুরের জন্যই এত প্রসিদ্ধ। ওয়াসিম আকরাম, সাঈদ আনােয়ার, সৌরভ গাঙ্গুলী, শােয়েব আখতার, ইমরান খান, শচীন টেন্ডুলকার, ইনজামাম উল হক প্রমুখ ক্রিকেট খেলেই বিশ্বে এত পরিচিত ও সমাদৃত।

ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল | ভাইবার প্রস্তুতি
ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল | ভাইবার প্রস্তুতি

ইন্টারভিউ এর আগে কি করা উচিৎ

১. ইন্টারভিউ চর্চা করা : আপনার পরিচিত কারাে সাথে ইন্টারভিউ চর্চা করুন। তাহলে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য যখন যাবেন তখন সহজ মনে হবে।

২. দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হওয়া : ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় ভয়ে তটস্থ থাকা বা অহেতুক টেনশনে ভোগা ঠিক নয়। আপনি স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন ৷ তাহলে ইন্টারভিউ ভালাে দিতে পারবেন।

৩. আপনার নিজের সম্পর্কে কী বলবেন তা পরিষ্কার থাকা : আপনি যে পদের জন্য আবেদন করছেন উক্ত পদের জন্য আপনার ব্যক্তিগত কী কী যােগ্যতা আছে তা তুলে ধরতে হবে। এ কথা ঠিক যে নিজের প্রশংসা নিজে করা ঠিক নয়। তবে ইন্টারভিউতে আপনার যােগ্যতার কথা বলিষ্ঠতার সাথে তুলে ধরা প্রয়ােজন।

৪. সংশ্লিষ্ট সংস্থা সম্পর্কে মৌলিক ধারণা : আপনি যে সংস্থা বা বিভাগে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন উক্ত সংস্থার কার্যাবলি সম্পর্কে মৌলিক ধারণা থাকা জরুরি।

৫. আপনি কী জিজ্ঞাসা করতে চান : ইন্টারভিউ বাের্ডে আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হবে আপনার কোনাে জানার বিষয় আছে কি না? সেই সময় কী জিজ্ঞাসা করবেন তা আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা।

ইন্টারভিউ এর আগে কি করা উচিৎ
ইন্টারভিউ এর আগে কি করা উচিৎ

৬. চাকরি পাওয়ার আপনিই সবচেয়ে যােগ্য : আপনি যে পদে আবেদন করেছেন উক্ত পদের জন্য আপনিই সবচেয়ে যােগ্য মানুষ তা আপনার ইন্টারভিউর সময় ফুটিয়ে তুলতে হবে।

৭. আবেদনপত্র দেখে নেওয়া : আবেদনপত্রে কী উল্লেখ করেছেন তা ইন্টারভিউর দিন আবার দেখে নিন। কারণ আবেদনপত্রে উল্লিখিত তথ্যের আলােকে আপনি কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত হবেন।

৮. যথাসময়ে পৌছা : যথাসময়ের আগেই ইন্টারভিউর জায়গায় পৌছানাে দরকার। রাস্তায় লম্বা ট্রাফিক জ্যাম হতে পারে কিংবা অন্যকোনাে সমস্যায় বিলম্ব হতে পারে-এসব কথা ভেবেচিন্তে আগেভাগে রওয়ানা দেওয়া উত্তম।

৯. ইন্টারভিউর স্থান পরিদর্শন : ইন্টারভিউর স্থান সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা নেওয়া উত্তম। সম্ভব হলে ইন্টারভিউর স্থান আগে একবার দেখে আসা উত্তম। জনৈক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি, ইন্টারভিউর স্থানে গিয়ে প্রস্রাব-পায়খানার স্থানও দেখে আসা ভালাে। কারণ অনেক সময় ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সময়ে প্রাকৃতিক প্রয়ােজন পূরণের দরকার হয়। সে সময় স্থান খুঁজে পেতে সমস্যা হলে মানসিক চাপ অনুভব হয়। এর ফলে ইন্টারভিউ খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

১০. উপযােগী পােশাক : আপনি যে পদের জন্য আবেদন করেছেন উক্ত পদের সাথে সম্পৃক্ত বিশেষ কোনাে ড্রেস কোড আছে কি না তা জানার চেষ্টা করতে হবে। যদি ড্রেস কোড থাকে তাহলে ঐ ধরনের পােশাকই পরিধান করতে হবে। আর যদি ড্রেস কোড না থাকে তাহলে সুন্দর ও মানানসই পােশাক পরিধান করার চেষ্টা করতে হবে।

ইন্টারভিউ এর সময়ে কি করা উচিৎ

১. নম্র ও বন্ধুত্বপূর্ণ থাকা : ইন্টারভিউর সময় নিজেকে দ্র ও নম্র হিসেবে উপস্থাপন করে ইন্টারভিউ বাের্ডের সদস্যদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে কথা বলা জরুরি।

২ প্রতিদ্বন্দীর কাছে নিজেকে কম যােগ্য বলে উপস্থাপন না করা: আরও অনেকের সাথে ইন্টারভিউর জন্য অপেক্ষা করার সময় নিজেকে কম যােগ্য ভেবে হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না।

৩. ইন্টারভিউর কক্ষে স্বাভাবিকভাবে প্রবেশ করুন : ইন্টারভিউর জন্য যখন ডাকা হবে তখন কক্ষে স্বাভাবিকভাবে প্রবেশ করবেন। এ সময় তাড়াহুড়া করা উচিত নয়।

ইন্টারভিউ এর সময়ে কি করা উচিৎ
ইন্টারভিউ এর সময়ে কি করা উচিৎ

৪. আই কন্টাক্ট : ইন্টারভিউর সময় ইন্টারভিউ বাের্ডের সকলের সাথে আই কন্টাক্ট রাখা দরকার। কেউ কেউ আছেন, নিচের দিকে কিংবা আসমানের দিকে তাকিয়ে কথা বলেন, এটা উচিত নয়। ইন্টারভিউর সময় যখন যিনি প্রশ্ন করেন শুধু তার দিকে তাকিয়ে জবাব দেওয়ার পরিবর্তে ইন্টারভিউ বাের্ডের সকল সদস্যের দিকে দৃষ্টি রাখবেন।

৫. আত্মবিশ্বাসী থাকা : যখন কোনো প্রশ্নের উত্তর দেবেন আত্মবিশ্বাসের সাথে বলিষ্ঠভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন। দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা বললে ঠিক উত্তর দিলেও ইন্টারভিউ বাের্ডের সদস্যরা মনে করবেন বিষয়টি আপনার সঠিকভাবে জানা নেই।

৬. দীর্ঘ সময় নীরব না থাকা : কোনাে প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলেও দীর্ঘ সময় নীরব থাকা ঠিক নয়। সঠিক উত্তর জানা না থাকলে গোঁজামিলের আশ্রয় না নিয়ে সরাসরি বলা উচিত, দুঃখিত! আমার জানা নেই। না জেনেও জানার ভান করলে। আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হবে।

৭. কথার মধ্যে কথা না বলা : ইন্টারভিউ বাের্ডের সদস্যরা যখন কোনাে কথা বলেন। তা ভালােভাবে শুনবেন। তাদের কথার মাঝখানে কোনাে কথা বলা উচিত নয়।

 

চাকরি না হলে হতাশ হবেন না

চাকরি না হলে হতাশ হবেন না
চাকরি না হলে হতাশ হবেন না

কিছু সৌভাগ্যবান মানুষ প্রথম ইন্টারভিউতেই চাকরি পেয়ে যান। কিন্তু সাধারণত চাকরি পাওয়ার জন্য সব জায়গায় আবেদন করতে হয়, একাধিক ইন্টারভিউ দিতে হয়। তাই আপনি কোথাও ইন্টারভিউ দেওয়ার পর চাকরি না হলে হতাশ হবেন না। আপনি মনে রাখবেন, চাকরির ইন্টারভিউ পর্যন্ত যাওয়াটাই আপনার যােগ্যতার স্বীকৃতি। আর ইন্টারভিউর মাধ্যমে আপনার অনেক অভিজ্ঞতা হয়, যা পরবর্তী পর্যায়ে কাজে আসে।

জীবনের লক্ষ্য তৈরী করুন

আপনাকে কেউ চাকরি দিয়ে দেবে এই আশায় বসে থাকবেন না ৷ নিজেই নিজের কর্মসংস্থানে সন্ধান করুন ৷ আপনি যে ধরনের কর্মসংস্থান কে অগ্রাধিকার দেন ৷ সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন ৷ দু এক জায়গায় চাকরি না হলেও হতাশ হবেন না ৷ মেধা ও যোগ্যতা থাকলে আত্মকর্মসংস্থানের চেষ্টা করুন   তাহলে শুধু নিজের কর্মসংস্থানে হবে না ৷ আরো অনেকের চাকরি দেওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব হবে ৷

 

কিভাবে চাকরি হয়

বিভিন্নভাবে চাকরি হয় ৷

  • সরাসরি যোগাযোগ: সাধারণত আবেদনকারী ও চাকরি দাতা সংস্থার সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে চাকরি হয় ৷
  • পত্রপত্রিকার বিজ্ঞাপন: পত্রপত্রিকার চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই আবেদন করেন ৷ এরপর সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয় ৷ তারপর ইন্টারভিউ নিয়ে চাকরি দেওয়া হয় ৷
  •  এজেন্সি:  উন্নত বিশ্বে অনেক এজেন্সি রয়েছে ৷ যাদের কাছে চাকরিপ্রার্থী ও নিয়োগদাতা সকলেই তাদের চাহিদার কথা জানায় ৷ এজেন্সির কাজ হচ্ছে চাকরিদাতা সংস্থার চাহিদার আলোকে যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে বের করা ৷ এবং তাকে উক্ত চাকরির জন্য আবেদন করতে সাহায্য করা ৷ আমাদের দেশে এ ধরনের এজেন্সি খুব একটা বেশি না থাকলেও ঢাকা শহরের টিউশনি দেওয়ার জন্য অনেক এজেন্সি রয়েছে ৷

 

চাকরি পাওয়ার কয়েকটি ধাপ: আপনার ছাত্র জীবন শেষ ৷ কর্মজীবনে সন্ধানে ঘুরছেন ৷ এমত অবস্থায় প্রথমত আপনার সাথে আপনার ব্যক্তিগত বায়োডাটা থাকা প্রয়োজন ৷ বায়োডাটা আপনাকে চাকরি পেতে সাহায্য করবে ৷ দ্বিতীয়তঃ চাকরির আবেদন পত্র যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে ৷ তৃতীয়তঃ ইন্টারভিউ ভালোভাবে যেতে হবে ৷

আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু লেখা

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *