ইসলামী সাহিত্য কাকে বলে? সাহিত্য চর্চা করার কৌশল

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]ইসলামী সাহিত্য কাকে বলে? সাহিত্য চর্চা করার কৌশল[/box]

 

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! ইসলামী সাহিত্য সম্পর্কে আপনি জানতে আগ্রহী ৷ তাই লেখাটি ওপেন করেছেন ৷ আমি আপনাদেরকে ইনশাল্লাহ বিস্তারিত বর্তমান নিবন্ধে জানানোর চেষ্টা চালাব ইনশাআল্লাহ ৷ সাহিত্য বলতে কি বুঝায় ? ইসলামী সাহিত্যের সংজ্ঞা-ইবা কী? সাহিত্য কি শুধু সমস্যা সমাধানের ইঙ্গিতই দিবে, না সমাধানের বাস্তব পন্থাও পেশ করবে ? ইসলামী সাহিত্য কাকে বলে? সাহিত্য চর্চা করার কৌশল

ইসলামী সাহিত্যে মূল্যবোধ

জীবন ও জগত সম্পর্কে সকল মানুষের দৃষ্টিডঙ্গি এক নয়। জীবনের উদ্দেশ্যও বিভিন্ন লােকের বিভিন্ন রকমের দেখা যায়। এই মৌলিক পার্থক্যের ফলেই সৌন্দর্যবােধ ও মূল্যমানের এত বিভিন্ন মানব সমাজে জটিলতা সৃষ্টি করে চলেছে। ভালাে ও মন্দ, সৎ ও অসৎ ন্যায় ও অন্যায় সম্পর্কে এ কারণেই মানুষে মানুষে এত পার্থক্য। স্বাভাবিকভাবেই এ বিভিন্নতা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও প্রকট হয়ে উঠেছে। সাহিত্যের সংজ্ঞা, সার্থক সাহিত্যের ধরন, সাহিত্যের উদ্দেশ্য ও কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে সকলের ধারণা তাই এক রকম হওয়া সম্ভবপর নয়।

ইসলামী সাহিত্য কাকে বলে? সাহিত্য চর্চা করার কৌশল
ইসলামী সাহিত্য কাকে বলে? সাহিত্য চর্চা করার কৌশল

এ বাস্তব কথাটি স্বীকার করে না নিয়ে এসব বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে কোনাে লাভ নেই। আর মৌলিক বিষয়ে মতভেদ থাকলে শাখা-প্রশাখার বিতর্ক করে কোনাে মীমাংসায় পৌঁছানাে সম্ভব নয়। নিছক ভােগবাদী জীবন দর্শনে বিশ্বাসীদের কাছে ইসলামী পর্দা, রমযানের রােযা, হালাল হারামের বাছাই নিতান্তই বাজে কথা বলে মনে হবে। কিন্তু মানুষের নৈতিক সত্তায় বিশ্বাসীদের নিকট এসব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ মৌলিক ব্যবধান বহাল রেখে পর্দা, রােযা ও হালাল-হারাম সম্পর্কে বিতর্ক তােলা অর্থহীন।

সাহিত্য সম্পর্কেও মানুষে মানুষে যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে তা বহাল রেখে উপরােক্ত প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিতর্ক করা মুশকিল। একসময় সাহিত্যের জন্য যখন সাহিত্য রচনা করা আদর্শ বিবেচিত হতাে তখন সাহিত্যে মানুষকে পথের সন্ধান দিতাে না। তথাকথিত সৌন্দর্য সৃষ্টিই তখন সাহিত্যের উদ্দেশ্য ছিলো। মানুষের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে মাথা ঘামানাে সাহিত্যের পক্ষে অমর্যাদার বিষয় মনে করা হতাে।

সাহিত্যের ভাগ

আজ একশ্রেণীর লােক অত্যন্ত গাম্ভীর্যসহকারে পাণ্ডিত্য জাহির করে বলেন— সাহিত্য উদ্দেশ্যমূলক হওয়া উচিত নয়। কিন্তু মানুষ কি উদ্দেশ্যহীনভাবে কোনাে কাজ করে? মানুষ প্রত্যেক কাজই বিচার-বিবেচনা করে বিশেষ কোনাে উদ্দেশ্যেই করে থাকে। অথচ একমাত্র সাহিত্যের ক্ষেত্রেই পাগলের ন্যায় উদ্দেশ্যহীন হওয়ার অর্থ কী?

কতক লােকের ধারণা-সাহিত্য জীবনের আলেখ্য। অর্থাৎ ক্যামেরার ন্যায় কেবল সমাজের ছবি এঁকে যাওয়াই সাহিত্যের কাজ। জীবনের প্রতিচ্ছবি মানুষের সামনে তুলে ধরলে মানুষ নিজেই ঠিক পথ বের করবে। সাহিত্য সেখানে পথ নির্দেশকের দায়িত্ব বহন করতে গেলে সে সাহিত্য প্রচারধর্মী হয়ে ওঠবে।

কিন্তু এক্ষেত্রে এটুকু বিবেচনা করা উচিত যে, মানুষ ক্যামেরার মতাে নির্জীব নয়। একই ঘটনা হতে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ‘সত্য’ আহরণ করে। এর কারণ এই যে, মানুষ চোখ দিয়ে যা দেখে তার সঙ্গে মনের রং মিশে যায়। নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশার যে রূপ ইউরােপ হতে আমাদের দেশে আমদানী হয়েছে ৷ তাকে তথাকথিত প্রগতিবাদীরা যখন সাহিত্যেও রূপ দান করে, তখন ক্যামেরার ন্যায় শুধু ফটোই পরিবেশন করে না ৷ বরং তাদের সাহিত্য সেই পশু সভ্যতার মহিমা এমন আকর্ষণীয়রূপে প্রচার করে যে, তা মানুষকে তার কুফল হতে অন্ধ করে ঐ প্রগতির নেশায় উন্মত্ত করে তােলে।

আর এটুকু আলেখ্যই যখন উন্নত নৈতিকতা সম্পন্ন সাহিত্যিকের কলমে ফুটে ওঠে তখন পাঠকের সুপ্ত মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয়ে এরূপ প্রগতিকে চরম ঘৃণা করতে শিখে। কিন্তু ক্যামেরায় একই বস্তুর এরূপ বিপরীত প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠতে পারে না।

এবার মূল প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাক। সাহিত্য জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত । সাহিত্যিকগণ নিজস্ব মূল্যবােধ ও মূল্যমান অনুযায়ী মানব সমাজকে অধ্যয়ন করেন। তারা সমাজে যেখানেই ঐ মূল্যবোধের বিপরীত কিছু দেখতে পান তার ছবিকে ভাষা-বর্ণে এমনভাবে এঁকে তােলেন যেন তীব্র কষাঘাত অনুভব করেন।

সাহিত্যের প্রভাব ও অবদান

সাহিত্যের অবদান
সাহিত্যের অবদান

শরৎ সাহিত্য হিন্দু সমাজের বহু কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কঠোর আক্রমণ করেছে। তার রচিত আলেখ্য সমাজ সংস্কারের দিকে পাঠককে উদ্বুদ্ধ করে বলে তা সফল সাহিত্য বলে স্বীকৃতি লাভ করেনি ? মানব জীবন যতটা ব্যাপক সাহিত্যের ক্ষেত্রেও ততটা বিস্তৃত। মানুষের জীবনের সকল দিক ও বিভাগেই সাহিত্যের প্রবেশাধিকার আছে।

তাই সাহিত্য মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক এমনকি আধ্যাত্মিক দিক নিয়েও চর্চা করবে। নারী-পুরুষের পরস্পরের সম্পর্কও স্বাভাবিকভাবেই সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত। সাহিত্যিকগণের দায়িত্ব অতান্ত ব্যাপক। তারা জীবনের এসব ক্ষেত্রে আপত্তিকর যা দেখবেন তা এমনভাবে তুলে ধরবেন যাতে সমাজ তা উৎখাত করার জন্য সমগ্র শক্তি নিয়ােগ করে।

আর তারা যা কিছু সুন্দর ও কল্যাণকর দেখবেন তা এমনভাবে সাহিত্যে ফুটিয়ে তুলবেন যাতে পাঠকগণ তা বাস্তব জীবনে গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ হন । সুতরাং এ অর্থে সাহিত্য জীবনের শুধু ছবিই নয়, জীবনে যা আছে তা যেমন সাহিত্যে স্থান পাবে, জীবনে যা হওয়া উচিত তা-ও তেমনি সাহিত্যের উপজীব্য হওয়া উচিত।

সাহিত্য সম্বন্ধে এ মৌলিক কথাটুকু বুঝে নিলে ইসলামী সাহিত্যের সংজ্ঞা সহজভাবেই বােঝা যাবে।

যে সাহিত্য ইসলামী জীবন দর্শন ও ইসলামী মূল্যবােধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে তা-ই ইসলামী সাহিত্য।

জীবন সমস্যাকে ইসলামী দর্শন ও মূল্যমানের দৃষ্টিকোণ হতে সমাধান করতে হলে যে ধরনের সমাজ সংস্কারের দিকে মানুষের দৃষ্টি আকৃষ্ট হতে হবে তার সন্ধান ইসলামী সাহিত্যে মিলবে।
এ হিসেবে সাহিত্য শুধু সমস্যারই আলােচনা করবে না, সমাধানেরও পথ নির্দেশ করবে।

তবে সরকারী বিজ্ঞপ্তি বা কোনাে সমাজ সংস্কারক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রতি সার্কুলারে যে ভঙ্গিতে সমস্যার উল্লেখ ও সমাধানের পরিকল্পনা পেশ করা হয় তা সাহিত্যের পর্যায়ে আসে না। ঠিক তখনই কোনাে রচনা সাহিত্যের মর্যাদার আসন লাভ করে যখন সেখানে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবিক আবেদন বর্তমান থাকে। সাহিত্য সকল মানুষের নিকটই বিস্তর খােরাক পরিবেশন করে। ইসলামী হােক আর অনৈসলামী হােক, মানব মনের নিকট আবেদনের তাগিদ না থাকলে কোনাে রচনাই সাহিত্য পদবাচ্য হতে পারে না।

সাহিত্য চর্চায় কল্পনার আশ্রয়

সাহিত্য রচনায় যে কল্পনার আশ্রয় নেয়া হয়, শরীয়তের দৃষ্টিতে তার হুকুম । কী ? যদি নাজায়েজ হয় তাহলে সার্থক সাহিত্য রচনা কি সম্ভব ?

গল্প, উপন্যাস, নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে উন্নত চরিত্রের নমুনা যদি সাহিত্যে সৃষ্টি করতে হয় তাহলে কল্পনার আশ্রয় অবশ্যই নিতে হবে। বিকৃত সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষের মন-মস্তিষ্ক যেভাবে কলুষিত করা হচ্ছে তার মােকাবিলায় বিপুল পরিমাণে ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টি হওয়া প্রয়ােজন। সুতরাং দ্বীনের স্বার্থেই ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক সাহিত্য রচনা করা দরকার। আর এ জাতীয় সাহিত্য রচনা করতে হলে যেসব ঘটনাবলীর মাধ্যমে চরিত্র সৃষ্টি করতে হয় তা কল্পনা প্রসূত হওয়াই স্বাভাবিক।

ইসলাম বিরােধী ঔপনাসিক ও নাট্যকারগণ তাদের রচনায় ঘটনাগুলােকে এমনভাবে সাজানাের চেষ্টা করে যাতে পাঠকদের নিকট ধার্মিক লােকেরা চরিত্রহীন, মানবতা বিরােধী ও যালিম হিসেবে চিত্রিত হয়। পাঠকদেরকে ধর্মের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করা ও ধার্মিক লােকদের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করাই এ ধরনের সাহিত্যের উদ্দেশ্য। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে সাহিত্য সৃষ্টি করা ছাড়া অপসাহিত্যের মােকাবিলা অন্য কোনাে উপায়ে সম্ভব নয়। আর এ সাহিত্য সৃষ্টি করতে হলে কল্পনার আশ্রয় নেয়া ছাড়া উপায় নেই।

আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখা

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *