ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কি জায়েজ? | জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কী বলে ইসলাম

ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কি জায়েজ? | জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কী বলে ইসলাম

আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! সবাইকে অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা ৷ আমাদের সাইটে আপনারা বিভিন্ন জীবন ঘনিষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ লেখা পেয়ে থাকেন ৷ আজ আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোকপাত করতে চলেছি ৷ ইসলামের জন্মনিয়ন্ত্রণ কি জায়েজ? জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কী বলে ইসলাম! বিস্তারিত আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ ৷

আরও পড়ুনঃ ওয়াদা ভঙ্গের কাফফারা কী? 

ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কি জায়েজ? | জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কী বলে ইসলাম

আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদাত করার জন্য পৃথিবীতে অসংখ্য ও অগণিত মানুষ সৃষ্টি করেছেন। যাদের মাধ্যমে পৃথিবী আবাদ রয়েছে। এ মানবকূলের পৃথিবীতে আগমনের মাধ্যম হলো পিতা-মাতা। নারী-পুরুষের সহজাত মিলনের মাধ্যমে তাদের জন্ম হয়।তাদের এ জন্ম ও শুভাগমন খোদাপ্রদত্ত নির্দেশেরই প্রতিফলন। তাঁর নির্দেশেই প্রতি বছর হাজার মা জন্ম দেন হাজারো উম্মাতি মুহাম্মাদী,যে আধিক্যতায় স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও কিয়ামতের দিবসে গর্ববোধ করবেন ৷

মৌলিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে—

এক. স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

  • ক) পুরুষের অপারেশন।
  • (খ) নারীর অপারেশন।

(ক) পুরুষের অপারেশন : পুরুষের অন্ডকোষে উৎপাদিত শুক্রকীটবাহী নালী (Vas deferens) দু’টি কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়। ফলে পুরুষের বীর্যপাত ঘটে, কিন্তু বীর্যে xy ক্রমোজম শুক্রকীট না থাকায় সন্তান হয় না।

(২) নারীর অপারেশন : নারীর ডিম্বাশয়ে উৎপাদিত ডিম্ববাহী নালী (Fallopian Tube কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়। ফলে পূর্ণ xx ক্রমোজম ডিম্ব (Matured Ovum) আর জরায়ুতে প্রবেশ করতে পারে না।

নারী অথবা পুরুষে যেকোন একজন স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে, অপর জনকে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় না। কারণ নারীর ডিম্ব পুরুষের শুক্রকীট দ্বারা নিষিক্ত না হ’লে সন্তানের জন্ম হয় না।

ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কি জায়েজ? | জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কী বলে ইসলাম
ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কি জায়েজ? | জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কী বলে ইসলাম

যার দ্বারা নারী বা পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ অবৈধ। আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (র.) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন: و هو محرم بالاتفاق অথাৎ স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।(উমদাতুল ক্বারীঃ ১৪/১৪ পৃঃ)

আরও পড়ুনঃ সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম

দুই. জন্মনিয়ন্ত্রণের অস্থায়ী পদ্ধতি

  • ক) আযল তথা ভিতরে বীর্যপাত না করা (With drawal)
  • খ) নিরাপদ সময় মেনে চলা (Safe period)
  • গ) কনডম ব্যবহার ৷
  • ঘ) ইনজেকশন পুশ ৷
  • ঙ) পেশীতে বড়ী ব্যবহার ৷
  • চ) মুখে পিল সেবন ইত্যাদি ৷

যার ফলে স্বামী-স্ত্রীর কেউ প্রজনন ক্ষমতাহীন হয়ে যায় না ৷ এ পদ্ধতি কেবল নিম্মোক্ত ক্ষেত্রে বৈধ হবে ৷

ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ pdf

  • দুই বাচ্চার জন্মের মাঝে কিছু সময় বিরতি দেওয়া যাতে প্রথম সন্তানের লালন-পালন, পরিচর্যা ঠিকমত হয়।
  • কোন কারণে মহিলার বাচ্চা লালন-পালনের সামর্থ না থাকলে।
  • মহিলা অসুস্থ ও দূর্বল হওয়ার কারণে গর্ভধারণ বিপদজনক হলে।

عن جابر قال كنا نعزل على عهد النبي صلى الله عليه و سلم ـ صحيح البخاري – (2 / 784)، باب العزل

হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আযল(যা জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটা পুরনো ও অস্থায়ী পদ্ধতি) করতাম। (বুখারী ২/৭৮৪)

তিন. গর্ভপাত ঘটানো (Abortion)

এটি জন্মনিয়ন্ত্রণের বহু পুরাতন একটি পদ্ধতি। জন্মনিয়ন্ত্রণের (Contraceptives) উপায়-উপাদানের অনেক উন্নতি সত্ত্বেও আজ অবধি দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে এ পদ্ধতিও চালু আছে ৷ এ পদ্ধতিও নাজায়েয ৷ তবে যদি মহিলা অত্যাধিক দুর্বল হয়, যার কারণে গর্ভধারণ তার জন্য আশঙ্কাজনক হয় এবং গর্ভধারণের মেয়াদ চার মাসের কম হয় ৷ তাহলে গর্ভপাত বৈধ হবে ৷ মেয়াদ চার মাসের অধিক হলে কোনোভাবেই বৈধ হবেনা ৷ আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেন, উম্মতে মুসলিমার সকল ফুকাহা এ ব্যাপারে একমত, (রূহ আসার পর) গর্ভপাত করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম ৷ কারণ এটা الوأد (সূক্ষ সমাহিত) এর অন্তরভুক্ত; যে ব্যপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ – بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ যখন (কেয়ামতের দিন) জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে,কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে…….’ (তাকবীর ৮-৯)। ফিকহী মাসায়েল সূত্রে ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ৪/২১৭ ফাতাওয়া দারুল ইফতা; মিশর। তাং-১১ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯ ইং)

আরও পড়ুনঃ আত্মহত্যা থেকে বাঁচার উপায়

ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কি জায়েজ? | জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কী বলে ইসলাম
ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কি জায়েজ? | জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কী বলে ইসলাম

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া কি জায়েজ

ইসলামে অস্থায়ীভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রনের জন্য যেকোন পদ্ধতি-ই জায়েজ আছে। এক্ষেত্রে পিল খাওয়া হারাম হবে না। অস্থায়ী পদ্ধতি এমন যে, যার ফলে স্বামী-স্ত্রীর কেউ প্রজনন ক্ষমতাহীন হয়ে যায় না। এছাড়া পিল খাওয়া কেবল এই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে বৈধ হবে।

বাচ্চার জন্মের মাঝে কিছু সময় বিরতি দেওয়া যাতে প্রথম সন্তানের লালন-পালন, পরিচর্যা ঠিকমত হয় এই জন্য পিল সেবন করা যাবে। কোন কারণে মহিলার বাচ্চা লালন- পালনের সামর্থ যদি না থাকে তাহলে।

মহিলা অসুস্থ ও দূর্বল হওয়ার কারণে গর্ভধারণ বিপদজনক হলে। তবে যদি কথা এমন হয় যে, সন্তান জন্ম নিলে তার রিযিকের ব্যবস্থা করা যাবে না। এক্ষেত্রে পিল খাওয়া হারাম। কেউ যদি এমন মনোভাব করে পিল সেবন করে তাহলে তার জন্য হারাম হবে।

বর্তমান সময়ে সন্তানের জন্মদানকে বন্ধ করার জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণের নানান পদ্ধতি গ্রহণ করছে বর্তমান সময়ের মানুষ। আর এই কথাগুলো আমাদের সবারই জানা যে, এ পদ্ধতি গ্রহণ করা করছে এ কথা বলে যে, মানুষ বেশি হলে অভাব দারিদ্র দেখা দিবে, রিযিকের ঘাটতি পড়ে যাবে। এমন মনোভাব করেই কিন্তু মানুষ জন্মদান কে বন্ধ করার চেষ্টা করছে।

এই বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন যে: তোমরা তোমাদের সন্তানকে দরিদ্রতার জন্য হত্যা করো না । আমিই তোমাদের রিযিক দান করি এবং তাদেরও আমি করব। [আনআম: ১৫১]

অভাব-অনটনের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না ৷ আমিই তাদেরকে রিয্ক দেই এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ ৷ [ বানী ইসরাইল: ৩১]

অতএব অত্র আয়াত দ্বারা বুঝাযায় যে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেকটি মানুষের জন্যই আলাদাভাবে রিজিক বরাদ্দ রাখে। কেউ কারো রিযিক কেড়ে নিতে পারবে না। আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছে এবং আল্লাহ তার রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহ করে দিবে। রিজিক যতদিন থাকবে সে ততদিন ভোগ করতে পারবে ৷

ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া কি হারাম

ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া কি? এই প্রশ্নের জবাবে উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে ঐ সকল ব্যক্তিদের সম্পর্কে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। বর্তমানে তোমাদের যেমন আমিই রিযিক দিচ্ছি এবং ভবিষ্যতে দেব, তোমাদের সন্তান হলে অভিষ্যতে আমিই তাদের রিযিক দেব, ভয়ের কোন কারণ নেই। প্রতিটি জীবের রিজিকের মালিক আল্লাহ। তবে জন্মনিরোধ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম কেননা তা সম্পূর্ণরূপে সন্তান দানের ক্ষমতাকে বিলুপ্ত করে দিয়ে থাকে।

মানুষ যদি চিন্তা-ভাবনা করে থাকে যে আমার যদি বেশি সংখ্যক সন্তান হয়ে থাকে তাহলে আমার আয়-রোজগার কমে যাবে এবং আমি ধ্বংসের পথে চলে যাব তাহলে তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে ইসলাম-পরিপন্থী। এরকম চিন্তা ভাবনা কেউ যদি করে থাকে সে মারাত্মকভাবে ভুল করছে এবং আল্লাহর পাপের মধ্যে নিমজ্জিত হচ্ছে।

তাই যারা সন্তান জন্মদানে বাধা প্রদান করার জন্য পিল সেবন করছে অথবা জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করছে তাহলে তাদের জন্য আল্লাহ্ কঠিন শাস্তি ব্যবস্থা করে রেখেছে। তাই অবশ্যই ইসলামে সম্পূর্ণরূপে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করা আল্লাহ হারাম করেছে ৷

উক্ত আলোচনা থেকে আশা করি এটা পরিস্কার হয়েছে যে, ইসলাম জন্মনিয়ন্ত্রণের সকল পদ্ধতি নয়; বরং বিশষ পদ্ধতির এবং সাধারণ অবস্থাতে নয়; বরং বিশেষ অবস্থাতে এর অনুমোদন দেয় ৷ অন্যথায় সাধারণ অবস্থায় ইসলাম মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের প্রসবনী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে ৷ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
تزوجوا الودود الولود ، فإني مكاثر بكم الأمم يوم القيامة

“তোমরা অধিক সন্তানের প্রসবনী ও স্বামীদের অধিক ভালোবাসে এ ধরনের মেয়েদের বিবাহ কর, কারণ, কিয়ামতের দিন আমি আমার উম্মত বেশি হওয়ার কারণে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব।” [আবু দাউদ, নাসায়ী। হায়াতুল মুসলিমিন, পৃষ্ঠা-১৮৯]

শেষ কথা

পাঠক! ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে আশা করছি সম্যক একটি ধারণা পেয়েছেন ৷ হুট করেই গড়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ হারাম বা হালাল বলা যাবে না ৷ অবস্থার আলোকে বলতে হবে ৷ আশা করছি উপকৃত হয়েছেন ৷ ফেসবুকে আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ পরামর্শ থাকলে দিন ৷ আল্লাহ হাফিজ ৷

ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কি জায়েজ? | জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কী বলে ইসলাম
ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কি জায়েজ? | জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কী বলে ইসলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *