বায়ােডাটা লেখার নিয়ম | চাকরির আবেদনপত্র লেখার নিয়ম

বায়ােডাটা লেখার নিয়ম | চাকরির আবেদনপত্র লেখার নিয়ম

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! সবাই কেমন আছেন? আজ আপনাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আমরা আর্টিকেল লেখার চেষ্টা করছি ৷ অনেকেই বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে অথবা বিয়ে-শাদীর ক্ষেত্রে বায়োডাটা পূরণ করার ঝামেলায় পড়েন ৷

আমরা আপনাদের সামনে বায়োডাটা লেখার নিয়ম কানুন ৷ চাকরির আবেদন পত্র লেখার কৌশল ৷ কি কি বিষয়ে আপনার আবেদন পত্র থাকতে হবে এবং কি কি বিষয়ে আপনি এড়িয়ে যাবেন ৷ একটা চমৎকার বায়োডাটা তৈরির কলা কৌশল সম্পর্কে আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ ৷ শেষ পর্যন্ত সাথেই থাকুন ৷

বায়ােডাটা লেখার নিয়ম | চাকরির আবেদনপত্র লেখার নিয়ম
বায়ােডাটা লেখার নিয়ম | চাকরির আবেদনপত্র লেখার নিয়ম

বায়ােডাটা লেখার নিয়ম | চাকরির আবেদনপত্র লেখার নিয়ম

কোথাও চাকরি পাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত বায়ােডাটা প্রয়ােজন হয়। আবার কখনও কখনও পাত্র/পাত্রী নির্বাচনের জন্যও বায়ােডাটার দরকার হয়। ব্যক্তিগত বায়ােডাটা চাকরির ইন্টারভিউর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বায়ােডাটার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ ছাড়াই তার যােগ্যতা, দক্ষতা ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। এ কারণে বায়ােডাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে চাকরির বায়ােডাটা সম্পর্কে আলােচনা করবাে।

বায়োডাটা কি?

বায়োডাটা মানে হল জীবন বৃত্তান্ত। আমরা অনেক সময় তিনটি বিষয়কে এক করে ফেলি – Bio Data, Resume, Curriculum Vitae. যদিও এগুলো অনেকটা একই রকম এবং কাছাকাছি অর্থ বহন করে। তারপরও এদের কিছু ভিন্নতা আছে।

  • ১. Bio Data – Biographical Details বা জীবন বৃত্তান্ত। আমার মতে এখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এবং শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এই ব্যাপারগুলো আসবে।
  • Resume – কারো শিক্ষা, যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতার একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণী। এর সাধারণত দুইটা অংশ থাকে। প্রথম অংশে Career Objective থাকে। আর পরের অংশে আপনার বাদবাকি তথ্য। চাকরীর ক্ষেত্রে এটাই বেশী ব্যবহৃত হয়।
  • Curriculum Vitae – অনেকটা Resume এর মতই। কিন্তু কিছুটা বিস্তারিত। মানে Resume এর চাইতে একটু বড় হয়। এটা সাধারণত Job Application এর সাথে পাঠানো হয়। সাধারণত ২/৩ পৃষ্ঠা হয়ে থাকে। আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, এচিভমেন্টস, কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, এওয়ার্ডস, পাবলিকেশন্স সহ যা যা আছে এটাতে উল্লেখ করতে পারবেন। সাধারণত হাই প্রোফাইল লোক চায় এ ধরণের কাজে আবেদনের ক্ষেত্রে CV ব্যবহার করাটাই উত্তম।

বায়োডাটায় কী কী তথ্য থাকে? 

সাধারণত বায়ােডাটাতে দুই ধরনের তথ্য থাকে :
১. ফ্যাক্ট : যেমন নাম, বয়স, ঠিকানা, যােগ্যতা, দক্ষতা।
২. ব্যক্তিগত তথ্য : যেমন ব্যক্তির ঝোঁক-প্রবণতা, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ইত্যাদি।

বায়ােডাটা তৈরির ক্ষেত্রে কতিপয় পরামর্শ

  • ১. বায়ােডাটাতে কী উল্লেখ করতে চান বা বায়ােডাটাতে আপনার ব্যক্তিগত, একাডেমিক ও অভিজ্ঞতার কোন কোন তথ্য দিতে চান তা আগে নােট করুন।
  • ২. ফ্যাক্ট তথ্য দিয়ে শুরু করা : যেমন নাম, জন্মতারিখ, বয়স, ঠিকানা, বৈবাহিক
    অবস্থা, ফোন নম্বর, ই-মেইল প্রথমেই উল্লেখ করা।
  • ৩. শিক্ষাগত তথ্য : বায়ােডাটার দ্বিতীয় পর্যায়ে শিক্ষাগত যােগ্যতা উল্লেখ করা
    দরকার।
  • ৪. অভিজ্ঞতা : আপনার যদি কর্ম অভিজ্ঞতা থাকে তা উল্লেখ করুন। অভিজ্ঞতা
    উল্লেখ করার সময় অতীতে কোথায় কোন্ পদে চাকরি করেছেন এবং আপনার
    দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত কী ছিল তা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরুন।
  • ৫. ক্যারিয়ার লক্ষ্য : আপনার কর্মজীবনে ক্যারিয়ার লক্ষ্য কী তা তুলে ধরুন।
    ক্যারিয়ার লক্ষ্য তুলে ধরার সময় এই কথা উল্লেখ করা দরকার যে, আপনি শুধু অর্থের জন্যই এই চাকরি খুঁজছেন না। এই চাকরি আপনার কর্মজীবনের পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
  • ৬. শখ ও বিশেষ আকর্ষণ : আপনার ব্যক্তিগত শখ ও বিশেষ আকর্ষণের কথা উল্লেখ করা ভালাে।
  • ৭. বায়ােডাটা সময়ােপযােগী করা : পুরাতন বায়ােডাটা ব্যবহার করার পরিবর্তে সব সময় নতুন বায়ােডাটা ব্যবহার করা প্রয়ােজন। আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাবলি অপরিবর্তনীয়। কিন্তু কিছু তথ্য যােগ-বিয়ােগ হতে পারে। যেমন- বর্তমান ঠিকানা, ফোন নম্বর, শিক্ষাগত যােগ্যতা ও অভিজ্ঞতা।
  • ৮. বায়ােডাটা দেখতে সুন্দর হওয়া: বায়ােডাটা দেখতে যেন সুন্দর লাগে সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়ােজন।
  • ৯. বায়ােডাটাতে ব্যক্তিগত রেফারেন্সের জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তির নাম ও ঠিকানা দিতে হয়। রেফারি হিসেবে আপনার অতি পরিচিত গুরুত্বপূর্ণ এমন দু-একজন ব্যক্তির নাম দেওয়া উত্তম, যারা আপনার সম্পর্কে ভালাে রেফারেন্স প্রদান করবে।
  • ১০. বায়ােডাটাতে সকল তথ্য সঠিক হওয়া দরকার।
  • ১১. কোনাে কিছু বারবার উল্লেখ করা প্রয়ােজন নেই।
  • ১২. বায়ােডাটা সংক্ষিপ্ত হওয়া দরকার। কারণ যারা আপনার বায়ােডাটা পড়বেন তারা খুবই ব্যস্ত মানুষ। দীর্ঘ বায়ােডাটা দেখলে অনেকেই পড়তে চান না।

চাকরির আবেদনপত্র লেখার নিয়ম বাংলায়

চাকরির আবেদনপত্র লেখার নিয়ম বাংলায়
চাকরির আবেদনপত্র লেখার নিয়ম বাংলায়

আবেদনপত্র প্রেরণে কতিপয় সাধারণ ভুল : চাকরির জন্য আবেদনপত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু অনেক সময় অনেক যােগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীর আবেদনপত্রে সাধারণ কিছু ভুলের কারণে শর্টলিস্টেড করা হয় না। ভুলগুলাে নিম্নরূপ :

১. যার বরাবরে আবেদনপত্র পাঠানাে হচ্ছে তার নাম লিখতে ভুল করা,
২. রেফারেন্স ঠিকমতাে না দেওয়া। কখনও কখনও এমন ব্যক্তিদের রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয় যারা জানে না যে, তার নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে তাদের কাছে যখন জানতে চাওয়া হয় তখন তারা নেতিবাচক মন্তব্য করেন ৷
৩. প্রথম ড্রাফট না করেই আবেদনপত্র সরাসরি পূরণ করতে গিয়ে কাটা-ছেড়া হওয়া ৷
৪.কখনও কখনও স্বাক্ষর ও তারিখ দেওয়া ছাড়াই আবেদনপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়,
৫. ব্যক্তিগত যােগ্যতা ও অভিজ্ঞতা যথাযথভাবে না দেওয়া,
৬. যে পদের জন্য আবেদন করা হচ্ছে উক্ত পদের সাথে সম্পৃক্ত অভিজ্ঞতা না থাকা।

কী কী কারণে কারাে আবেদনপত্র প্রত্যাখ্যাত হয়

কয়েক কারণে আবেদনপত্র প্রত্যাখ্যাত হতে পারে :

  • ১. পূর্ব থেকে কাউকে ঠিক করে রাখলে।
  • ২. ইন্টারভিউ খারাপ হলে।
  • ৩. পদের সাথে সম্পৃক্ত যােগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকলে।

চাকরির আবেদনপত্র পূরণ সম্পর্কে কতিপয় পরামর্শ

চাকরি পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়। প্রায় ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার নির্ধারিত ফরম পূরণ করেই আবেদন করতে হয়। ফরম পূরণ করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা দরকার :
১. ফটোকপি করে তা আগে পূরণ করা : মূল আবেদনপত্রকে ফটোকপি করে তা প্রথম পূরণ করা দরকার। কারণ প্রথমবার পূরণ করার ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চাকরির আবেদনপত্র নির্ভুলভাবে পূরণ করা উচিত। আবেদনপত্র পূরণ করতে ভুল হলে আবেদনপত্র দেখেই আবেদনকারীর প্রতি নেতিবাচক মনােভাব সৃষ্টি হয়।

২. প্রয়ােজনীয় তথ্য থাকা : চাকরির আবেদনপত্র পূরণ করার সময় আপনার সর্বশেষ তথ্যসমূহ আপনার কাছে থাকা দরকার।

৩. নির্দেশিকা ভালােমতাে দেখা : চাকরির আবেদনপত্রে কিছু নির্দেশিকা থাকে। কোনাে কোনাে আবেদনপত্রে কালাে কালি দ্বারা বা পেন্সিল দ্বারা পূরণ করতে বলা হয়। নির্দেশিকা ভালােমতাে না পড়ার কারণে কেউ কেউ বড় অক্ষরে লেখার কথা থাকলেও ছােট অক্ষরে লিখে ফেলেন কিংবা কালাে কালি ব্যবহারের পরিবর্তে সবুজ কালি ব্যবহার করেন। এর ফলে আবেদনকারীকে শর্টলিস্টেড করা হয় না।

৪. সুন্দর ও সাজানাে হওয়া দরকার : আবেদনপত্রে যেসব বিষয় লেখা হয় তা সুন্দর ও সাজানাে হওয়া দরকার।
৫. দায়িত্ব ভালােভাবে লিখুন : যে পদের জন্য আবেদন করছেন উক্ত পদের সাথে। সম্পৃক্ত অতীতের দায়িত্বাবলি ভালােভাবে লিখুন।।

৬. বক্সের ভেতর তথ্য ঠিকমতাে লেখা : অনেক সময় ফরমে বক্স থাকে। উক্ত বক্সের ভেতরেই প্রয়ােজনীয় তথ্য লেখা দরকার। বক্সের সাইজ অনুযায়ী কথা তুলে ধরতে হলে পয়েন্ট আকারে তথ্য তুলে ধরতে হবে।

৭. আবেদনপত্র থেকেই ইন্টারভিউর প্রশ্নমালা বের করা : আবেদনপত্রের বিভিন্ন কলাম থেকে ইন্টারভিউর প্রশ্ন খুঁজে বের করতে হবে। কারণ আবেদনপত্রে জিজ্ঞাসিত বিষয়াদিই ইন্টারভিউতে জিজ্ঞাসা করা হয়।
৮. মূল আবেদনপত্র নিখুঁতভাবে পূরণ করা : খসড়া ফরম পূরণ করার পর তা দেখে মল ফরম নিখুঁতভাবে পূরণ করা দরকার। পূরণ করার সময় বানান যেন নির্ভুল হয়, কাটাছেড়া যেন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৯. আবেদনপত্রের ফটোকপি রাখা : মূল আবেদনপত্রের ফটোকপি আপনার কাছে রেখে দেবেন। ইন্টারভিউর সময় তা পুনরায় দেখে নিন। আবেদন করার সময় ফরমে যা লেখা হয় তার সাথে মিল রেখেই ইন্টারভিউতে প্রশ্ন করা হয়।

চাকরির আবেদন বাংলা PDF

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

বরারবর
মাননীয় প্রিন্সিপ্যাল
দারুলহুদা মডেল মাদরাসা
কোদালপুর, গোসাইরহাট, শরীয়তপুর ৷

বিষয়ঃ ভাইস প্রিন্সিপ্যাল পদের জন্য আবেদন পত্র ৷
মুহতারাম,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি ব্যক্তি মারফত জানতে পেরেছি আপনার প্রতিষ্ঠানে একজন ভাইস প্রিন্সিপ্যাল নিয়োগ দেয়া হবে ৷ উক্ত পদের জন্য আমি একজন আগ্রহী প্রার্থী ৷ আমার শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেইটসহ অন্যান্য জরুরি কাগজপত্র সংযুক্ত করে পাঠাচ্ছি আপনার সদয় বিবেচনার জন্য ৷

নামঃ দীদার মাহদী
পিতার নামঃ সিরাজুল ইসলাম
মাতার নামঃ দেলোয়ারা বেগম
জন্ম তারিখঃ 31-12-2000
বর্তমান ঠিকানাঃ দক্ষিণ গজারিয়া, নাগেরপাড়া, গোসাইরহাট, শরীয়তপুর ৷
স্থায়ী ঠিকানাঃ ঐ
মোবাইলঃ 01751039853
বিবাহ স্টাটাসঃ বিবাহিত
ধর্মঃ ইসলাম
জাতীয়তাঃ জন্মসূত্রে বাংলাদেশী

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ

  1.  হাফিজুল কুরআন/বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ/ জাইয়্যিদ জিদ্যান/ 2007
  2. দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) /আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিআতিল কওমিয়্যা বাংলাদেশ / জাইয়্যিদ জিদ্যান/ 2018
  3. দাখিল /বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড/ 5.00/ 2015
  4. আলিম/বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড/ 4.50/2017
  5. অনার্স ফোর্থ ইয়ার
  6. ফাজিল থার্ড ইয়ার (ফলপ্রার্থী)
  7. নূরানী বাংলা ট্রেনিংপ্রাপ্ত /নূরানী তা’লিমুল কুরআন বোর্ড/ প্রথম বিভাগ/2018

কাজের অভিজ্ঞতাঃ প্রধান পরিচালক পদে ২ বছর এবং সহকারী পরিচালক পদে ১ বছরের অভিজ্ঞতা ৷

ইন্টারেস্টঃ লেখালেখি ৷ বক্তৃতা ৷ বই পড়া ৷
রেফারেন্সঃ এনামুল হক সাদী, দারুলহুদা ফাউন্ডেশন

নিবেদক
দীদার মাহদী

আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরও কয়েকটি লেখা

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *