বিশ্বনবী সাঃ কে গালমন্দ ও কটুক্তি করার পরিণতি | মাওলানা দীদার মাহদী

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিশ্বনবী সাঃ কে গালমন্দ ও কটুক্তি করার পরিণতি[/box]

 

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! আজ আমরা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয় নিয়ে কথা বলব ৷ বিশ্বনবী সাঃ কে গালমন্দ ও কটুক্তি করার পরিণতি ৷ আশা করছি আপনারা সবাই ভাল এবং সুস্থ আছেন ৷ নিরাপদে আছেন ৷ আজ কথা বলব বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে গালমন্দ কটুক্তি করার পরিণতি সম্পর্কে ৷ বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালিগালাজ করা ৷ কষ্ট দেয়া ৷ তার চরিত্রে কালিমা লেপন করা মারাত্মক জঘন্য অপরাধ ৷ বক্ষমাণ নিবন্ধে আমরা জানব নবীজিকে নিয়ে অবান্তর, উদ্ভট, গালিগালাজ, কটু কথা এবং বাজে মন্তব্য করার পরিণাম সম্পর্কে ৷

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিশ্বনবি রহমাতুল্লিল আলামিন[/box]

রহমাতুল্লিল আলামিন
রহমাতুল্লিল আলামিন

বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিশোধ পরায়ন ছিলেন না ৷ তাকে কাফের মুশরিক বেদিনরা নানাভাবে নির্যাতন করত ৷ কষ্ট দিত ৷ কিন্তু তিনি প্রতিশোধ নেন নি ৷ তিনি ক্ষমা পরায়ন ছিলেন ৷ তিনি মাফ করে দিতে ভালোবাসতেন ৷ তার মাথার ওপরে উটের নাড়িভুঁড়ি দেয়া হতো ৷ তিনি সিজদাবনত ছিলেন ৷ তথাপিও তিনি তাদের বিরুদ্ধে একশন নেননি ৷

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাগল, গণক ও জাদুকর আখ্যা দেয়া হতো ৷ এমনকি বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওহুদের যুদ্ধে তার দাঁত মোবারক শহীদ করা হয় ৷ এভাবে তাকে নানা জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে হয় ৷ কিন্তু তিনি প্রতিশোধ নেন নি ৷

তায়েফের ময়দানের কথা আমরা সবাই জানি ৷ যেখানে বিশ্বনবীকে রক্তাক্ত করা হয়েছিল ৷ বিশ্বনবি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেন নি ৷ তিনি ক্ষমা করে দিয়েছিলেন ৷ দুটো পাহাড় চাপা দিয়ে তাকে ধ্বংস করার প্রস্তাব এসেছিল ৷ সে প্রস্তাব গ্রহণ করেননি ৷ তিনি এতটাই মহৎ হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন ৷

কিন্তু বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদাহানিকর কথা বলা ৷ তাকে কটুক্তি করা ৷ তার সম্মান ইজ্জতে কালিমা লেপন করা ৷ এটা শুধু ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথেই সীমাবদ্ধ থাকেনা ৷ বরং এটা ইসলামের ওপর একটি আঘাত হয়ে আসে ৷ আর ইসলামের উপর আঘাত কিছুতেই বরদাশ্ত করা হয় না ৷

বিশ্ব নবীর বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপ করা জঘন্যতম অপরাধ ৷ এর কারণে মুসলমানদের হৃদয়ে কুফরি ও নেফাকির বীজ রোপিত হয় ৷ তারা বিশ্ব নবী সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে যায় ৷ এটা প্রতিরোধের জন্য মুসলমানরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ৷ বিশ্ব নবীকে যারা গালিগালাজ করবে ৷ বিশ্ব নবী সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করবে ৷ বিশ্বনবীর সম্মানহানিকর উদ্ভট কথাবার্তা বলবে ৷ এদের বিরুদ্ধে ইসলাম কঠোর হুঁশিয়ারি জারি করেছে ৷

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিশ্বনবী সাঃ কে গালমন্দ ও কটুক্তি করার পরিণতি[/box]

 

বিশ্বনবী সাঃ কে গালমন্দ ও কটুক্তি করার পরিণতি
বিশ্বনবী সাঃ কে গালমন্দ ও কটুক্তি করার পরিণতি

নবী করিম সা: এর জীবদ্দশায় যেমনি তাঁকে কোনোভাবে কষ্ট দেয়া জায়েজ নেই ৷ তেমনিভাবে নবীজী সা: এর ইন্তেকালের পরও তাঁকে কষ্ট দেয়া হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নবীকে কষ্ট দেয়া তোমাদের জন্য জায়েজ নয় এবং এটাও জায়েজ নয় যে, তাঁর ইন্তেকালের পর তোমরা তাঁর স্ত্রীদের বিয়ে করবে। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা গুরুতর ব্যাপার’ (সূরা আহজাব : ৫৩)।

নবীজীকে কষ্ট দেয়ার পরিণাম সম্পর্কে কুরআন বলছে-

اِنَّ الَّذِیۡنَ یُؤۡذُوۡنَ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ لَعَنَہُمُ اللّٰہُ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ وَ اَعَدَّ لَہُمۡ عَذَابًا مُّہِیۡنًا ﴿۵۷﴾

নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে লানত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অপমানজনক আযাব। সূরা আহজাব-৫৭

রাসূল সা কে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ সম্পর্কে কুরআন বলছে

وَ لَئِنۡ سَاَلۡتَہُمۡ لَیَقُوۡلُنَّ اِنَّمَا کُنَّا نَخُوۡضُ وَ نَلۡعَبُ ؕ قُلۡ اَ بِاللّٰہِ وَ اٰیٰتِہٖ وَ رَسُوۡلِہٖ کُنۡتُمۡ تَسۡتَہۡزِءُوۡنَ ﴿۶۵﴾

আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে’?
সূরা তাওবা-৬৫

রাসূল সা এর বিরুদ্ধাচারণ সম্পর্কে কুরআন বলছে

وَ مَنۡ یُّشَاقِقِ الرَّسُوۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَہُ الۡہُدٰی وَ یَتَّبِعۡ غَیۡرَ سَبِیۡلِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ نُوَلِّہٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصۡلِہٖ جَہَنَّمَ ؕ وَ سَآءَتۡ مَصِیۡرًا ﴿۱۱۵﴾٪

আর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ।
সূরা নিসা-১১৫

বিশ্বনবী সাঃ কে গালমন্দ ও কটুক্তি করার পরিণতি

উল্লেখিত আয়াত গুলোর দিকে আবার দৃষ্টিপাত করুন ৷ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্পষ্ট ভাষায় নবীজী সাঃ কে কটুক্তি করা ৷ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ৷ সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর গুমরাহিতে নিমজ্জিত থেকে নবীর বিরুদ্ধাচরণ করা ৷ নবীজিকে দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় কষ্ট দেয়া ৷ নবীজির ইন্তেকালের পর তাঁকে গালিগালাজ এবং মন্দ কথা বলার মাধ্যমে কষ্ট দেয়ার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আমরা জানতে পারি ৷

যারা নবীজিকে গালি-গালাজ করবে ৷ মন্দ কথা বলবে ৷ তার চরিত্র সম্পর্কে অবান্তর অবাস্তব ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা বলবে ৷ আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে অভিসম্পাত করেছেন ৷ সে কত বড় নিকৃষ্ট প্রাণী ৷ যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানুষ সম্পর্কে বাজে কথা বলে ৷ যার চরিত্রের সার্টিফিকেট দিয়েছেন মহান রব্বুল আলামীন ৷ এমন একজন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বাজে কথা বলতে পারে একমাত্র জারজ সন্তানরাই ৷ তাই যুগে যুগে যারাই নবীজিকে গালমন্দ করেছে ৷ নবীজির বিরুদ্ধে ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করেছে ৷ তাদের করুণ পরিণতি হয়েছে ৷

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]নবিজীকে গালি দেয়ার শাস্তি[/box]

বিশ্বনবীকে গালি দেয়ার শাস্তি
বিশ্বনবীকে গালি দেয়ার শাস্তি

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন:

“নবীদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- যে ব্যক্তি কোন একজন নবীকে গালি দিবে ইমামদের সর্বসম্মতিক্রমে তাকে মুরতাদ হিসেবে হত্যা করা হবে। যেমনিভাবে কোন নবীকে অস্বীকার করলে ও তিনি যা নিয়ে এসেছেন সেটাকে অস্বীকার করলে যে কেউ মুরতাদ হয়ে যায়। কারণ কারো ঈমান পরিপূর্ণ হবে না যতক্ষণ না সে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর গ্রন্থাবলীর প্রতি ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান না আনবে।[সাফাদিয়্যা (১/২৬২) থেকে সমাপ্ত]

আমর ইবন আলী (রহঃ) … আবু বারযা আসালামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-কে মন্দ বললে, আমি বললামঃ আমি কি তাকে হত্যা করবো? তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেনঃ এই মর্যাদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত আর কারো নেই।

বিশ্বনবী সাঃ কে গালমন্দ ও কটুক্তি করার পরিণতি

হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন-
“ যে ব্যক্তি আমাকে গালি দেয়, তাকে হত্যা কর। আর যে আমার সাহাবীকে গালি দেয়, তাকে প্রহার কর।”

(জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-২২৩৬৬, জামেউল জাওয়ামে, হাদীস নং-৫০৯৭, দায়লামী, ৩/৫৪১, হাদীস নং-৫৬৮৮, আস সারেমুল মাসলূল-৯২)

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]শাতিমে রাসূলের শরঈ বিধান[/box]

 

শাতিমে রাসূলের শরঈ বিধান
শাতিমে রাসূলের শরঈ বিধান

আবু রাফে নামের এক ইহুদিকে রাসূল সা: এ জন্যই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, সে রাসূল সা:-এর বিরুদ্ধে সবসময় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করত। আল্লামা ইবনে কাসির রহ: আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে ইমাম বুখারি রহ:-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূল সা: আবু রাফেকে হত্যা করার জন্য বেশ ক’জন আনসারি সাহাবিকে নির্বাচিত করলেন এবং হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আতিককে তাঁদের দলপতি নিয়োগ করলেন। আবু রাফে রাসূল সা:-কে কষ্ট দিত এবং এ কাজে অন্যদের সহযোগিতা করত।

বিশ্বনবী সাঃ কে গালমন্দ ও কটুক্তি করার পরিণতি

মুজাহিদ রহ: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওমর রা:-এর দরবারে এমন এক ব্যক্তিকে আনা হলো, যে রাসূল সা:-কে গালি দিয়েছে। ওমর রা: তাকে হত্যা করেন। অতঃপর বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা বা কোনো নবীকে গালি দেবে তোমরা তাকে হত্যা করো।’ (আসসারিমুল মাসলুল : ৪/৪১৯)

আরও দেখুনঃ ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার নিয়ম

আমর রহ: বলেন, আমি জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসূল সা: বললেন, কে আস কাব ইবনে আশরাফের জন্য (অর্থাৎ তাকে হত্যা করতে পারবে? কেননা, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-কে কষ্ট দেয়। তখন সাহাবি মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা দাঁড়ালেন; তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি তাকে হত্যা করব, আপনি কি তা পছন্দ করেন? নবী সা: বললেন, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তাহলে আমাকে তার সাথে কিছু কৌশলগত কথা বলার অনুমতি দেন। নবী করিম সা: বললেন, তা-ই বলো।’ (বুখারি, হাদিস : ২/৫৭৬)

সার্বিক আলোচনা থেকে এটাই সুস্পষ্ট হয় ৷ বিশ্বনবী আমাদের প্রাণের স্পন্দন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা, উপহাস করা, গালাগালি ও বাজে মন্তব্য উপস্থাপন কারীর শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড ৷

  • ১. রাসুল (সা.)-এর শানে বেয়াদবিমূলক মন্তব্য, বক্তব্য বা তাঁর প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপকারী এবং ধর্মীয় কোনো বিধান নিয়ে ব্যঙ্গকারী ব্যক্তি উম্মতের সর্বোচ্চ ঐকমত্যে মুরতাদ বলে সাব্যস্ত হবে।
  • ২. তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
  • ৩. তবে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের দায়িত্ব শাসকদের।
  • ৪. শাসকদের জন্য আবশ্যক হলো এ ধরনের লোকদের চিহ্নিত করে আইনের মাধ্যমে তাদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা।

শেষ কথাঃ

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

One thought on “বিশ্বনবী সাঃ কে গালমন্দ ও কটুক্তি করার পরিণতি | মাওলানা দীদার মাহদী

  1. বিশ্বনবীর অপমান সইবে না আর মুসলমান।
    নুপুর শর্মার দুই গালে জুতা মারো তালে তালে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *