মাথা ব্যাথার দোয়া | মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার

মাথা ব্যাথার দোয়া | মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার

আসসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ৷ সবাইকে অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা ৷ আজ আমরা কথা বলবো মাথা ব্যথার কারণ ৷ মাথাব্যথা থেকে মুক্তির উপায় ৷ মাথাব্যথার দোয়া ৷ মাথাব্যথা সংক্রান্ত আরো অনেক কথা ৷ মাথা ব্যাথার দোয়া | মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার ৷ সঙ্গে থাকুন ৷

আরও পড়ুনঃ মুখস্থশক্তি বৃদ্ধির উপায়

মাথা ব্যাথার দোয়া

মাথা ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। মাঝে মধ্যে একটু-আধটু মাথা ব্যথা হয় না- এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ঘুম কম হলে অথবা অধিক দুশ্চিন্তায় কিংবা অন্য কারণ-অকারণে মাথা ব্যথা হতে পারে। তাই মাথা ব্যথা হলে না ঘাবড়িয়ে ব্যথা না হওয়ার মাধ্যম ও চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করাই শ্রেয়।

মাথা ব্যাথা হলে কী দোয়া পড়তে হবে- তা কোরআন-হাদিসে বিশেষভাবে উল্লেখ নেই। তবে আলেম-ওলামা ও ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা কোরআন-হাদিসের আলোকে বিভিন্ন আমল নির্ণয় করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন দোয়াও উল্লেখ করেছেন। সেগুলো অনুযায়ী আমল করলে মাইগ্রেনসহ মাথা ব্যথা দ্রুত উপশম হবে ইনশাআল্লাহ।

মাথা ব্যাথার দোয়া
মাথা ব্যাথার দোয়া

উসমান ইবনে আবিল আস (রা.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, তিনি রাসুল (সা.)-কে জানিয়েছিলেন যে, যখন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তখন থেকে তিনি তার শরীরে ব্যথা অনুভব করছেন।

তখন রাসুল (সা.) বললেন, “যে স্থানে তোমার ব্যথা হচ্ছে, সেখানে হাত রেখে তিন বার ‘বিসমিল্লাহ’ বলো। সাত বার ‘আউজু বিকুদরাতিহি মিন শাররি মা তুআনি ওয়া তাজিদু ওয়া তুহাজিরু।
(শুরুহুল হাদিস, হাদিস : ১৫৮)

কুরআনুল কারিমের এই আয়াতটি পড়ে মাথায় ফুঁক দিতে পারি

لَّا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنزِفُونَ

উচ্চারণ : লা ইউসাদ্দাউনা আনহা ওয়া লা ইয়ুংযিফুন।’ (সুরা ওয়াকিয়া : আয়াত ১৯)

মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার

অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের পড়তে বসলে মাথা ব্যথা করে বলতে শোনা যায় । মাথা ব্যথা কি, কেন হয় ও দূরীকরণের উপায় আলোচনা করা হবে। মাথা ব্যথা কোন রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। এই উপসর্গটিই বিশ্বব্যাপী সব অঞ্চলের মানুষের ভিতর ব্যাপক আকারে দেখা যায়।

আমাদের দেশে এর কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সে দেশের প্রায় দু’ কোটি লোক প্রতিবছর এই উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় । এই চিত্র থেকেই মাথাব্যথার ভয়াবহ পরিব্যাপ্তি সম্বন্ধে আঁচ করা যায়। পিছনে রয়েছে দু’শয়েরও বেশি কারণ।

সবাই কিন্তু এই ধরনের ব্যথায় ভোগে না। মাথা ব্যথার স্থায়িত্ব কয়েক মিনিট থেকে কয়েক দিন, সপ্তাহ কিংবা মাস পর্যন্ত চলতে পারে না। ব্যথার রয়েছে নানা ঢং নানা রূপ ।

  • ব্যথাটি হতে পারে মৃদু বা বোধহীন ।
  • হতে পারে স্পর্শকাতর ও যন্ত্রণাপূর্ণ।
  • হতে পারে চুরিকাহত হওয়ার মতো তীক্ষ্ণবেদনাময় ৷
  • কখনো মনে হতে পারে খুলির ভিতরে কেউ দুমদুম করে হাতুড়ি পেটাচ্ছে ও মনে হতে পারে অটল অনড় একটি ব্যথা দৃঢ় ভাবে গেঁথে আছে মগজের ভিতরে।

সচরাচর ঘটে এমন মাথা ব্যথার কারণে মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে এই ব্যথা জীবনের সকল সুখ-শান্তি হরণ করে, জীবনীশক্তি, কর্মস্পৃহা ও আত্মবিশ্বাসের মৃত্যু ঘটায়, গ্লানিবোধ জাগায় নিজের ভিতর। এভাবে মাথাব্যথা জীবনের উন্নতির ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

কেন মাথায় ব্যাথা অনুভূত হয়?

১। কোন কারণে ঘাড়, মুখ ও করোটির আবরণীর পেশীসমূহের প্রসারণ বা টান টান অবস্থার সৃষ্টি হলে ব্যথা হবে।

২। মাথার ধমণীর স্ফীতি হলে ব্যথা হবে ।

৩। প্রদাহ, রক্তক্ষরণ বা টিউমারের কারণে, মস্তিষ্কের ভিতরে চাপসৃষ্টি হলে ব্যথা হবে ৷

৪। শরীরে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ এর উপস্থিতি কিংবা মেটাবোলিক অসঙ্গতির কারণে ও মাথাব্যথার উৎপত্তি হয় ।

মাথা ব্যাথার দোয়া | মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার
মাথা ব্যাথার দোয়া | মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার

মাথা ব্যথার কারণগুলো কি কি?

মাথাব্যথা সৃষ্টির পিছনে লুকিয়ে আছে বহু কারণ। তার মধ্যে কয়েকটি, যেমন-

  • অজ্ঞাত কারণটিও একটি বড় কারণ।
  • অস্থিরতা, উত্তেজনা, অশান্তি, মানসিক অবসাদগ্রস্ততা, আকর্ষণ, বিচ্যুতি প্রভৃতি কারণে মাথাব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার হার খুব বেশি ।
  • সংবেদশীল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, চোখ, কান, গলা, নাক ও সাইনাসের ব্যাধির কারণে মাথাব্যথা হতে পারে।
  • মস্তিষ্কের টিউমারও মাথা ব্যথার একটি ভয়াল কারণ।
  • উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-একলামসিয়া, একলামসিয়া, ফিওক্রে। মোসাইটোমা, স্ট্রোক, মেনিনজাইটিস, সারভাইকেল স্পন্ডিলাইসিস, করোটির ভিতরে ফোঁড়া ইত্যাদি অনেক নির্দিষ্ট কারণ ও মাথা ব্যথার সাথে সংশ্লিষ্ট।

মাথা ব্যথা নিরাময়ের জন্য এসব ক্ষেত্রে দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। মাথাব্যথার নানাধরণের শ্রেণী বিন্যাস রয়েছে। পুরো বিষয়টি এখানে আলোচ্য নয়। সবচেয়ে বেশি ঘটে এমন ধরনের মাথা ব্যথা এখানে আলোচিত হলো।

টেনশনে মাথাব্যাথা

মাথাব্যাথায় আক্রান্ত দশজন রোগীর ভিতর নয়জনই টেনশন মাথাব্যাথায় ভুগে থাকে। আক্রান্তের হার প্রায় চৌদ্দ শতাংশ। ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রেও টেনশনের কারণে মাথা ব্যাথা বেশি হয়ে থাকে। ব্যাথাটি সাধারণত স্থায়ী, মাথার চতুর্দিকে হতে পারে, তবে প্রধানত ঘাড়ে বেশি অনুভূত হয় ৷ ব্যাথার ধরনটি মৃদু, তবে করোটির কেন্দ্রস্থলে একটা টানটান পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাখে ৷ মনে হবে একটা ভারি বোঝা মাথার উপর চেপে বসে আছে, অথবা মনে হতে পারে মাথার চারপাশে একটা বেন্ট শক্ত করে কেউ বেঁধে দিয়েছে ৷

বিরতিহীন ভাবে এই ব্যাথা সপ্তাহ বা মাসব্যাপী চলতে পারে, তীব্রতা কখনো বাড়ে, কখনো কমে ৷ এই ব্যাথা সৃষ্টি হচ্ছে করোটির আবরণীর প্রসারণের কারণে। টেনশন মাথা ব্যাথার সময় বমি হয় না কিংবা আলো সংবেদনশীলতা সৃষ্টি হয় না। রোগী সাধারণত স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারে। এমনকি তারা ব্যথার ব্যপারে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকতে পারে।

কাজের চাপ, মানসিক অস্থিরতা সাধারণত একজনকে এই অস্বস্তিকর অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়। কোন কোন সময় অবসাদগ্রস্ততা থেকেও এই ব্যাথার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ মানসিক যাতনা বহুদিন ধরে একজনকে কুরে কুরে খেতে পারে, যা মাথাব্যাথার ইন্ধন জুগিয়ে থাকে, রোগী অনেক সময় ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।

টেনশন মাথাব্যথার চিকিৎসা

এ ধরনের ব্যথা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার উপায় হচ্ছে, দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন । যদি ও বর্তমান সময়ে এটি কঠিন ব্যাপার ৷ মাংসপেশী শিথিল করার জন্য পাঁচ মি. গ্রা. একটি ডায়াজিপাম ট্যাবলেট কিংবা দুশ্চিন্তা নিরাময়কারী ওষুধ, দশ মি. গ্রা. এর একটি ক্লোবাজাম টেবলেট খেয়ে নিন। সাথে তিনশ’ মি. গ্রা. এর একটি বা দু’টি দ্রবণীয় অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট কিংবা প্যারাসিটামল খেতে পারেন। পেপটিক আলসার থাকলে সাবধানতার সাথে ভরা পেটে খেতে হবে।

দুশ্চিন্তা দূর করার কতিপয় উপায়

ছাত্র-ছাত্রীরা সাধারণত পরীক্ষার পূর্বে পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এই দুশ্চিন্তা অনেক সময় ভাল রেজাল্ট-এর ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে পড়ে। তাই এখানে দুশ্চিন্তা দূর করার কতিপয় আলোচনা করা হল । আপনার যদি কোন দুশ্চিন্তা আর সমস্যা থাকে তাহলে উইলিস এইচ. ক্যারিয়ারের পরামর্শ কাজে লাগান ।

১. নিজেকে প্রশ্ন করুন, সবচেয়ে খারাপ কি ঘটতে পারে?

২. যা ঘটবেই তা সহজভাবে গ্রহণ করতে তৈরি হোন।

৩. তারপর শান্তভাবে চেষ্টা করুন, খারাপ অবস্থা থেকে কিভাবে উন্নতি করা যায়।

ডেল কার্নেগী তার একটি বইতে দুশ্চিন্তা সম্পর্কে লিখেছেন-আমি শতকরা নব্বই ভাগ দুশ্চিন্তাই নিচের চারটি উপায় অবলম্বন করে দূর করতে পারি।

১. পরিষ্কার লিখে ফেলা- কি জন্য দুশ্চিন্তা হচ্ছে।

২. কি করতে পারি- তা লিখে ফেলা।

৩. কি করবো ঠিক করে ফেলা।

৪. সিদ্ধান্তটি সঙ্গে সঙ্গে কাজে লাগানো।

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া

এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি— কোনো বিপদগ্রস্ত লোক তা পাঠ করলে, আল্লাহ তাআলা তার সেই বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস (আ.)-এর দোয়া। দোয়াটি হলো—

لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি নিজের প্রতি অবিচার করেছি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫০৫)

রাসুল (সা.) চিন্তা ও পেরেশানির সময় একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো—

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجزِ وَالكَسَلِ، وَالبُخلِ وَالجُبنِ، وَضَلَعِ الدَّينِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজু বিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।’

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন। (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

মাথা ব্যাথার দোয়া | মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার
মাথা ব্যাথার দোয়া | মাথা ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *