সম্পত্তিতে নারীর অধিকার | বাবার সম্পদে মেয়ের অধিকার

সম্পত্তিতে নারীর অধিকার | বাবার সম্পদে মেয়ের অধিকার

উত্তরাধিকার হচ্ছে মৃতের রেখে যাওয়া সম্পদে জীবিতদের অধিকার। এটাকে আরবিতে মিরাস বলা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তরাধিকার লাভের মূলভিত্তি হচ্ছে- জন্মগত সম্পর্ক ও নিকটাত্মীয়তা। ইসলাম আবির্ভাবের আগে নারীদের কোনো উত্তরাধিকার ছিল না। এমতাবস্থায় রাসূল (সা.) তাদের পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি উত্তরাধিকারে নারীদের স্বত্ব লাভ নিশ্চিত করেন। আর কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কারা কতটুকু অংশ পরে তা মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। অবস্থাভেদে এ অংশ ও অধিকারের হেরফের হয়। কিন্তু কারও বঞ্চিত হওয়ার কোনো উপায় ইসলামে নেই ।

আরও পড়ুনঃ দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম

ইসলামের আলোকে নারীর উত্তরাধিকার লাভের অধিকার

মানব সমাজ নারী পুরুষের একটি সংমিশ্রিত রূপ। ইসলাম আগমনের আগে পৃথিবীতে নারী ছিল লাঞ্ছনার প্রতীক। ইসলাম কন্যা সন্তানকে অভিহিত করেছে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা সন্তান লালন-পালন করেছে, পুত্র সন্তানকে কন্যাদের ওপর প্রাধান্য দেয়নি, তাদেরকে আদর্শ শিক্ষা দিয়েছে, তাদেরকে বিয়ে দিয়েছে, তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেছে, সে জান্নাত লাভ করবে। (আবু দাউদ) ৷

ইসলামের আগমনের আগে নারীর সম্পত্তির অধিকার ছিল না। সভ্যতার দাবিদার ইংল্যান্ডে ডাইনি বলে নারীকে পুড়িয়ে মারে। আইন রদ করা হয় ১৭০৬ সালে। ১৮৮২ এর আগ পর্যন্ত সেদেশের আইনে নারীর সম্পত্তি ছিল অবৈধ। বিয়ের আগেও যদি কোনে নারী চাকরি বা অন্য কোনো কাজ করে অর্থ উপার্জন করতো তাহলে তার বিয়ে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব সম্পত্তির মালিক হয়ে যেতো তার স্বামী।

জার্মানী নারীদের ১৯০০ সাল, সুইস নারীদের ১৯০৭, অস্ট্রেলীয় নারীদের ১৯১৯ সালের আগে ছিল না কেন। উত্তরাধিকার সম্পত্তি। অথচ ইসলামের নবি, বিশ্বমানবতার পরম বন্ধু হজরত মুহাম্মাদ (সা.) সভ্য পৃথিবীরও ১৪০০ বছর আগে মরুভূমির প্রান্তে দাঁড়িয়ে উত্তরাধিকারসহ সম্পত্তিতে নারীর অধিকারের কথা ঘোষণা করেছিলেন দীপ্তকণ্ঠে। একজন পূর্ণ বয়স্ক মুমিন নারী, তিনি বিবাহিত হন বা নাই হন, কারো সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই সম্পদের মালিক হতে পারেন। রয়েছে তার মাতাপিতার পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে ন্যায়সঙ্গত অধিকার।

শুধু মেয়েসন্তান থাকলে সম্পত্তি কীভাবে ভাগ হবে

উত্তরাধিকারে নারীর অধিকারের কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে পবিত্র কুরআন। যদি কোনো নারীর কোনো ভাই না থাকে তাহলে তিনি (একা হলে) পিতার ত্যাজ্য সমুদয় সম্পত্তির অর্ধেক পাবেন। আর যদি তারা দুই বোন বা ততধিক হন এবং কোনে ভাই না থাকে তাহলে তারা তাদের পিতা/মাতার সমুদয় সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ পাবেন। যদি এক বোন এবং এক ভাই হয় তাহলে একজন ভাইয়ের অংশের অর্ধেক পাবেন একজন বোন। অর্থাৎ যদি কেউ এমতাবস্থায় মারা যায় যে তার এক পুত্র ও এক কন্যা ( কোনো উত্তরাধিকারী নেই) আছে তাহলে সমুদয় সম্পত্তি তিন ভাগে ভাগ করে দুই ভাগ পাবে পুত্র আর এক ভাগ পাবে কন্যা। এর পুত্র ও দুই কন্যা থাকলে সমুদয় সম্পত্তি চার ভাগে ভাগ করে দুই ভাগ পাবেন পুত্র। আর বাকি দুই ভাগ পাবেন দুই কন্যা (প্রত্যেক কন্যা এক ভাগ করে)।

সম্পত্তিতে নারীর অধিকার | বাবার সম্পদে মেয়ের অধিকার

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-

یُوۡصِیۡکُمُ اللّٰہُ فِیۡۤ اَوۡلَادِکُمۡ ٭ لِلذَّکَرِ مِثۡلُ حَظِّ الۡاُنۡثَیَیۡنِ ۚ فَاِنۡ کُنَّ نِسَآءً فَوۡقَ اثۡنَتَیۡنِ فَلَہُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَکَ ۚ وَ اِنۡ کَانَتۡ وَاحِدَۃً فَلَہَا النِّصۡفُ ؕ وَ لِاَبَوَیۡہِ لِکُلِّ وَاحِدٍ مِّنۡہُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَکَ اِنۡ کَانَ لَہٗ وَلَدٌ ۚ فَاِنۡ لَّمۡ یَکُنۡ لَّہٗ وَلَدٌ وَّ وَرِثَہٗۤ اَبَوٰہُ فَلِاُمِّہِ الثُّلُثُ ۚ فَاِنۡ کَانَ لَہٗۤ اِخۡوَۃٌ فَلِاُمِّہِ السُّدُسُ مِنۡۢ بَعۡدِ وَصِیَّۃٍ یُّوۡصِیۡ بِہَاۤ اَوۡ دَیۡنٍ ؕ اٰبَآؤُکُمۡ وَ اَبۡنَآؤُکُمۡ لَا تَدۡرُوۡنَ اَیُّہُمۡ اَقۡرَبُ لَکُمۡ نَفۡعًا ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَلِیۡمًا حَکِیۡمًا ﴿۱۱﴾

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ; আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার মাতা পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিছ হয় তার মাতা পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সুরা নিসা : ১১)

স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর অধিকার

স্বামী যদি বেঁচে না থাকেন, তবে একজন মুসলিম স্ত্রী তাঁর মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে নির্ধারিত অধিকার ভোগ করেন। স্বামীর অবর্তমানে স্ত্রীকে তাঁর প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। এমনকি নিজের সন্তানদেরও কোনো ক্ষমতা নেই তাঁকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করার। যদি স্ত্রীকে তাঁর মৃত স্বামীর সম্পত্তি এবং তাঁর অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাহলে তিনিও আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।

স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তিতেও রয়েছে নারীর অধিকার। ইসলামে স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর অধিকার খুব মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। যদি কারো স্বামীর ইন্তিকাল হয় আর সে স্বামীর কোনো সন্তান না থাকে তাহলে স্বামীর সমুদয় সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবেন স্ত্রী। আর যদি স্বামীর সন্তান থাকে তাহলে স্ত্রী পাবেন এক-অষ্টমাংশ (আট ভাগের এক ভাগ)।

পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ বলেন, “স্ত্রীদের জন্য তোমাদের ত্যাজ্য সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ, যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি স্বামীর সন্তান থাকে, তাহলে তাদের জন্য হবে ওই সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ।” (সুরা নিসা-১২)

এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রাপ্য সম্পত্তি তাঁকে বুঝিয়ে দিতে হবে। তবে তিনি স্বেচ্ছায় অন্য কোথাও থাকতে চাইলে তাঁকে বাধা দেওয়া যাবে না। কেউ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চাইলে কিংবা তাঁর সম্পত্তি দখল করে নিলে তিনি আদালতের আশ্রয় নিতে পারবেন।

দেওয়ানি আদালতে বণ্টনের মোকদ্দমা করার অধিকার তাঁর রয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পর স্বামী ব্যাংকে কোনো টাকা রেখে গেলে কিংবা সঞ্চয়পত্র কিনে রাখলে সম্পত্তির অংশ যে অনুসারে পেতেন, সে অনুযায়ী এই টাকাও পাবেন। এ জন্য আদালত থেকে উত্তরাধিকার সনদ পেতে তিনি আবেদন করার অধিকারও রাখেন। স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত অংশ একজন বিধবা স্ত্রী স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
একজন বিধবা নারী তাঁর স্বামীর পরিশোধ করে না যাওয়া দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী। স্বামীর মৃত্যু হলেই যে দেনমোহর পাবেন না, তা নয়। দেনমোহর ঋণের মতো, স্বামীর অবর্তমানে স্বামীর উত্তরাধিকারীরা তা পরিশোধ করতে বাধ্য।

সন্তানদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে মায়ের অধিকার

মা-বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁদের সন্তান যদি মারা যায়, তাহলে মুসলিম আইন অনুযায়ী মৃত সন্তানের সম্পত্তির ভাগ তার মা-বাবা পাবেন। এ সন্তান ছেলে বা মেয়ে—এটা বিবেচ্য নয়। সন্তান যে-ই হোক না কেন, তাদের নিজস্ব যেকোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি থাকলেই তাতে মা-বাবা অংশ পাবেন। সন্তানের ভবিষ্যৎ বংশধরেরা কোনোভাবেই মা কিংবা বাবার সম্পত্তির ভাগ থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না। মৃত সন্তানের সম্পত্তির অংশ পাওয়ার পর মা-বাবা তাঁদের ইচ্ছেমতো এ সম্পত্তি ভোগদখল করতে পারবেন, কাউকে দান বা বিক্রি করে দিতে পারবে। এতে কেউ বাধা দিতে পারবে না।

অনেকে মনে করেন, কোনো বিবাহিত মেয়ে যদি মারা যান এবং তাঁর নিজের নামে যদি কোনো সম্পত্তি থাকে, তাহলে এ সম্পত্তি শুধুই তাঁর স্বামী, সন্তান কিংবা শ্বশুরবাড়ির লোকজন পান—মেয়েটির মা-বাবা কোনো সম্পত্তি পাবেন না। এটা ঠিক নয়। মেয়ে বিবাহিত হলেও মেয়ের সম্পত্তিতে মা-বাবার অংশ রয়েছে। মা-বাবাকে যদি তাঁর মৃত সন্তানের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাহলে মা-বাবা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। দেওয়ানি আদালতে বণ্টনের মামলা এবং মালিকানার জন্য মামলা করতে পারেন।

মা জীবিত থাকা অবস্থায় সন্তানের ইন্তিকাল হলে সন্তানের যদি কোনো সন্তান-সন্ততি না থাকে তাহলে সেই সন্তানের সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পাবেন মা। আর যদি মৃত সন্তানের কোন সন্তান-সন্ততি থাকে তাহলে মা সেই (মৃত) সন্তানের সম্পত্তির একটি ষষ্টমাংশ (ছয় ভাগের এক ভাগ) পাবেন। পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
“মৃতের কোনো পুত্র থাকলে পিতামাতার প্রত্যেকের জন্য (সস্তানের) ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ। যদি থাকে এবং পিতামাতাই ওয়ারিশ হয়, তবে মাতা পাবেন তিন ভাগের এক ভাগ।” (সুরা নিসা : ১১)

এভাবেই ইসলাম সম্পত্তিতে ও উত্তরাধিকারে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে।

ইসলামে বাবার সম্পদে মেয়ের অংশ কতটুকু

কোরআনে নির্ধারিত অংশের উত্তরাধিকারী হলো ১২ জন, যার মধ্যে ৪ জন পুরুষ এবং ৮ জনই মহিলা। তাই কোরআনে নির্ধারিত অংশে অংশীদারের সংখ্যা বিবেচনায়ও নারীর সংখ্যা পুরুষের দ্বিগুণ।

নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারও উত্তরাধিকার হরণ করে, আল্লাহতায়ালা তার জান্নাতের উত্তরাধিকার হরণ করবেন।’ সুনানে ইবনে মাজাহ

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, আল্লাহ প্রত্যেকের জন্য তার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছেন। সুতরাং কোনো উত্তরাধিকারীর জন্য অসিয়ত করা যাবে না। জামে তিরমিজি

উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে নারীদের বঞ্চিত করার ভয়াবহ পরিণাম

এই আইন অমান্য করা আল্লাহকে অমান্য করার শামিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলেই নারীরা তাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। আইন অনুসারে কন্যাসন্তানকে সম্পত্তির অংশ দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তারা এর সুফল পাচ্ছেন না। দেশের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চল ছাড়া প্রায় সবখানেই কন্যাসন্তানদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার একটি সামাজিক প্রচলন তৈরি হয়ে গেছে।

সম্পত্তিতে নারীর অধিকার | বাবার সম্পদে মেয়ের অধিকার
সম্পত্তিতে নারীর অধিকার | বাবার সম্পদে মেয়ের অধিকার

পৈতৃক সম্পত্তি থেকে নারীদের বঞ্চিত করার ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে বিভিন্ন প্রথা গড়ে উঠেছে। কোনো কোনো সমাজের নিয়ম হলো, উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনের সময় নারীকে তার অংশ দেওয়া হয়; কিন্তু নারী তার সম্পত্তি গ্রহণ না করে ভাইদের জন্য তার অংশটুকু ছেড়ে দেন। এটাই সামাজিকতা! এটাই সমাজের নিয়ম! এই প্রথার বাস্তবায়নে নারীদের মধ্যে স্বার্থবাদী সমাজ এক বিশেষ ধারণা তৈরি করেছে। তা হলো, পিতার সম্পত্তির অংশ গ্রহণ করলে ভাইদের কাছে ভবিষ্যতে বোনদের আর কোনো দাবিদাওয়া থাকবে না।

মা-বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের ভাগ

মসজিদে জামাতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করেন। হজ করেছেন, প্রতি বছর জাকাতও দেন। সুদ-ঘুষ খান না, মদ পান করেন না। নষ্টামি নোংরামিতে জড়িত নন। ছেলে-মেয়েদের মাদরাসায় পড়িয়েছেন, নিজেকে দ্বীনদার ও পরহেজগার বলে দাবি করেন, কিন্তু জেনে-বুঝে, স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে মেয়েদের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে— সব ছেলেদের নামে লিখে দেন। সামজে এ রকম নিষ্ঠুর, হৃদয়হীন, অমানবিক ও বিবেকহীন পিতার এখন অভাব নেই।

বাবা-মায়ের সম্পদে ছেলে যেমন হকদার, মেয়েও অনুরূপ হকদার। আল্লাহর বিধানমতে মেয়ে পাবে ছেলের অর্ধেক। অনেক বাবা-মাকে এই অংশটুকুও দেন না। বাবা-মায়ের সমুদয় সম্পদ ছেলেদের দিয়ে মেয়েদের বঞ্চিত করেন। বাবা-মা তাদের কিছু না দেওয়ার কারণে বাবা-মায়ের সম্পদ থেকে তারা বঞ্চিত হয়। আর এ কারণে অনেক মেয়ে সন্তান বাবা-মাকে ভালো দৃষ্টিতে দেখে না। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর মেয়েদের খোঁজ-খবর কেউ নেয় না। যারা মেয়ে সন্তানকে তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তারা সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে। যারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করল তাদের শাস্তি ভয়াবহ। অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার চেয়ে আত্মীয়ের সম্পদ গ্রাস করার শাস্তি দ্বিগুণ হবে।

মেয়েদের বাবার বাড়ির সম্পদ গ্রহণ করার ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?

নারীদের বাবার সম্পত্তির অধিকার ইসলাম দিয়েছে। মেয়েদের এ সম্পত্তি গ্রহণের নির্দেশ ইসলাম দিয়েছে। এখন গ্রহণ না করা হলো ইসলাম পরিপন্থি কাজ। আপনি গ্রহণ করে বা মালিক হয়ে আপনার সম্পত্তি কী করবেন না করবেন বা কাকে দেবেন সেটা আপনার দায়িত্ব। মেয়েদের বাবার সম্পত্তি গ্রহণ করা হলো ওয়াজিব। মেয়েদের বাবার সম্পত্তি গ্রহণ করা নিয়ে ইসলাম কী বলবে এই প্রশ্নই করা উচিত নয়। কারণ ইসলাম তো এটা নির্দিষ্ট করেই দিয়েছে। বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের হক আছে। এটা তার প্রাপ্য হক। তাই এই হক গ্রহণ করাই বিধান। তার প্রথম কাজ তিনি হক গ্রহণ করবেন। এরপর তিনি যদি মনে করেন, তার আর্থিকভাবে সমস্যা নেই তখন তিনি ভাই-বোন যাকে ইচ্ছে দিতে পারেন। ইসলাম এটা নিয়ে নারীদের পরিপূর্ণ অধিকার দিয়েছেন। এই ক্ষেত্রে কেউ তাকে জোর করতে পারবে না।

উপসংহার : আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, নারী পরম শ্রদ্ধেয় মা, আদরের বোন, প্রেমময় স্ত্রী কিংবা পরম স্নেহভাজন কলা হিসেবে পুরুষের চিত্রজগৎকে আলোকিত করে। অঘোষিতভাবে মহান আল্লাহর সৃষ্টির সহজাত প্রক্রিয়ায় নারী ব্যতীত বা নারীর সাম উপস্থিতি ছাড়া একটি সুন্দর, ভারসাম্যপূর্ণ ও সৃজনশীল সমাজ আশা করা যায় না। তাই ইসলাম নারীকে শুধু সামাজিক মাসের দেয়নি, দিয়েছে অর্থনৈতিক অধিকারও। সর্বোপরী ইসলাম উত্তরাধিকারে নারীকে যথাযথ অধিকার প্রদান করেছে।

সম্পত্তিতে নারীর অধিকার | বাবার সম্পদে মেয়ের অধিকার
সম্পত্তিতে নারীর অধিকার | বাবার সম্পদে মেয়ের অধিকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *