অভিযানের সময় ইলিশ মাছ ধরা ও ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ কি?

অভিযানের সময় ইলিশ মাছ ধরা ও ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ কি?

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ৷ প্রিয় পাঠক! সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ৷ বর্তমানে চলছে ইলিশ মাছ ধরার সরকারী নিষেধাজ্ঞা ৷ এই সময়টায় সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের মুখোমুখি হই অভিযানের সময় ইলিশ মাছ করায় করা জায়েজ হবে কিনা? অভিযানের সময় অনেক বেশি মাছ ধরা পরে ৷ এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় পুলিশ প্রহরার কারণে একটা আশঙ্কা কাজ করে ৷ তাই ইলিশ মাছের দাম কিছুটা কম হয় ৷ সে কারণে অনেকেই এই সময়টায় বেশি করে ইলিশ মাছ কিনে ফ্রিজে রেখে দেয় ৷ প্রশ্ন হল, এই নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ মাছ কিনে খাওয়া জায়েজ আছে কি?

আরও পড়ুনঃ ঈদে মিলাদুন্নবি পালন করা তি বিদাত? 

অভিযানের সময় ইলিশ মাছ ধরা ও ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ কি?

সরকার বছরের নির্দিষ্ট কিছু দিন যে সব নদ-নদীতে ইলিশের প্রজনন হয় সে সব নদ-নদীতে সর্ব প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে থাকে যেন মা ইলিশ স্বচ্ছন্দে ডিম পড়ার সুযোগ পায়। জনগণের কল্যাণেই মূলত এই নিষেধাজ্ঞা ৷

অভিযানের সময় ইলিশ মাছ ধরা ও ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ কি?
অভিযানের সময় ইলিশ মাছ ধরা ও ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ কি?

ইলিশ গবেষকরা বলেছেন, “এই সময়ে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মা ইলিশ রক্ষা করা, যাতে তারা নিরাপদে নদীতে ডিম ছাড়তে পারে। এই ডিম রক্ষা করতে পারলে তা নিষিক্ত হয়ে জাটকার জন্ম হবে। সেই জাটকা রক্ষা করা গেলে দেশে বড় আকারের ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।”

মোট ২২ দিন ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রে ইলিশসহ সব ধরণের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসময় দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় এবং মজুতও নিষিদ্ধ থাকবে।

উল্লেখ্য, প্রতিবছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে মিলিয়ে মোট ১৫ থেকে ১৭ দিন হচ্ছে ইলিশের ডিম ছাড়ার আসল সময়। এসময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নদীতে ছুটে আসে। এই সময়কে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময় ইলিশকে স্বাচ্ছন্দ্যে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতেই সরকার দেশের সব নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

অভিযানের ইলিশ মাছ ধরা কি জায়েজ? 

সুতরাং সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত সময়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বা চুরি করে ইলিশ ধরা বৈধ নয়।

ইসলাম মানুষকে নীতি-নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা বোধ শেখায়। সুতরাং বৃহত্তর স্বার্থে জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রণীত সরকারী আইন-কানুন অনুসরণ করা প্রতিটি নাগরিকের জন্য আবশ্যক। অন্যথায় আইন লঙ্ঘন করার কারণে আল্লাহর নিকট গুনাহগার হওয়ার পাশাপাশি সরকারী আইনে জেল-জরিমানার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে তার অর্থ এই নয় যে, এ সময় ইলিশ খাওয়া যাবে না বা ক্রয় করা যাবে না। কেননা হয়ত ব্যবসায়ীগণ অনুমোদিত সময়ে ইলিশ ধরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করেছিল। এখন অতিরিক্ত লাভের আশায় সেগুলো নন মৌসুমে বিক্রয় করছে।

যাহোক, আপনি যদি নিশ্চিতভাবে জানতে পারেন যে, মাছ বিক্রেতা চোরাইভাবে নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরেছে বা জেলেদের নিকট থেকে মাছ ক্রয় করেছে তাহলে তাদের কাছে তা ক্রয় করা বৈধ নয়। কারণ তা অন্যায় কাজে সহায়তা করার শামিল। আর ইসলামে অন্যায়, দুর্নীতি ও চোরাকারবারিতে সহায়তা করা হারাম। (সূরা মায়িদা: ২) তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু না জানা গেলে যে কোনও সময় বাজার থেকে ইলিশ ক্রয় করতে কোনও আপত্তি নাই ইনশাআল্লাহ।

অনৈসলামিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় আইন মানা কি ফরজ?

অনৈসলামিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় আইন মানা কি ফরজ?
অনৈসলামিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় আইন মানা কি ফরজ?

জনপ্রশাসন সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন প্রতিটি নাগরিকের জন্য মান্য করা আবশ্যক-যতক্ষণ না তা শরিয়া বিরোধী হয়। যেমন: ট্রাফিক আইন, রাস্তাঘাট ও বাজার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইন, শিল্প ও নির্মাণ সংক্রান্ত আইন, বিয়ে ও জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, জায়গা-জমি, দোকানপাট রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি মানুষের কল্যাণে এবং বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে প্রণীত প্রতিটি আইন।

শাইখ বিন বায রাহ. বলেন,
أن القوانين إذا كانت لا تخالف الشرع فلا بأس بها، النظم تسمى بالقوانين وتسمى بالنظم، فكل قانون ونظام ينفع المسلمين ولا يخالف شريعة الله لا بأس به، من المرور أو في القضاء أو في أي الدوائر الحكومية أو في أي مكان.

“আইন-কানুন যদি শরিয়ত বিরোধী না হয় তাহলে তাতে কোনও সমস্যা নাই। শৃঙ্খলাকে আইন বলা হয়। সুতরাং যে সকল আইন-শৃঙ্খলা মুসলিমদের উপকার করে ও আল্লাহর আইন লঙ্ঘন করে না তাতে কোনও সমস্যা নাই। যেমন: ট্রাফিক, বিচার বিভাগ, সরকারি অফিস বা অন্য যে কোন স্থানে হোক না কেন।”

সুতরাং যে সকল আইন-কানুন জনমানুষের কল্যাণ এবং বিশৃঙ্খলা রোধের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। কোনও নাগরিকের জন্য এ সকল আইন লঙ্ঘন করা বৈধ নয়। অন্যথায় গুনাহগার হতে হবে। কেননা, এ সব আইন অনুসরণ না করলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, জান-মালের ক্ষতি এবং নানা দুর্ভোগে পতিত হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর মানুষের নিরাপত্তা, কল্যাণ সাধন এবং বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব-যা শরিয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া কেউ যদি এসব আইন লঙ্ঘন করে তাহলে সে নিজেকে নানা বিপদাপদ, শাস্তি ও লাঞ্ছনার মধ্যে নিক্ষেপ করবে-যা ইসলামে নিষেধ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لا ينبغِي للمؤمنِ أن يُذلّ نفسهُ قالوا : وكيف يُذلّ نفسهُ ؟ قال : يتعرّضُ من البلاءِ لمَا لا يطيقُ- رواه الترمذي، وصححه الألباني.
“কোনও ইমানদারের জন্য নিজেকে লাঞ্ছিত করা উচিৎ নয়। তারা (সাহাবিগণ) প্রশ্ন করলেন, মানুষ কিভাবে নিজেকে লাঞ্ছিত করে?
তিনি বললেন, সে নিজেকে এমন বিপদের মুখোমুখি করে যা তার সহ্য ক্ষমতার বাইরে।” [তিরমিযী, শাইখ আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন-সাহাবি হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান থেকে বর্ণিত।]

দেশে ইসলামী শাসন না থাকলে করণীয়

 

প্রথম কথা হচ্ছে আল্লাহর আইন মানা তো আমাদের জন্য ফরজ এবং সেটি মানতেই হবে। আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে বলেছেন, যারা আল্লাহর আইন দিয়ে শাসন করে না তারা কাফির, জালিম এবং তারা ফাসেক।

আল্লাতায়ালা জনগণকে বলেছেন, ‘তারা কী ধারণা করে ইমানের নিচে যে কোরআন নাজিল করেছি এবং পূর্বের কিতাবের ওপরে, তাদের আদেশ করা হয়েছে আল্লাহর আইনের কাছে যাওয়ার জন্য, কিন্তু তারা তাবতের আইনের নিকট যায়।’

দেশে যদি আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত না থাকে, তাহলে যতটুকু আমার পক্ষে সম্ভব আল্লাহর আইন দিয়ে নিজের জীবনকে, পরিবারকে পরিচালিত করা, আমার  সমাজে যতটুকু সম্ভব সেই চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

আল্লাহ তো কাউকে তার সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে কাজ করতে বলেননি।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

অভিযানের সময় ইলিশ মাছ ধরা ও ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ কি?
অভিযানের সময় ইলিশ মাছ ধরা ও ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ কি?

One thought on “অভিযানের সময় ইলিশ মাছ ধরা ও ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ কি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *