আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে এবং গাড়ী দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের হিসাব হবে কি?

[box type=”shadow” align=”aligncenter” class=”” width=””]আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে এবং গাড়ী দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের হিসাব হবে কি?[/box]

 

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিন ৷ আজ আমরা গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিকে কথা বলব ৷ আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে এবং গাড়ী দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের হিসাব হবে কি? তারা কি শহীদ? ইসলাম তাদের ব্যাপারে কি বলে? আমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করার প্রয়াস চালাবো ইনশাআল্লাহ ৷ পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পাঠ করুন ৷ আশা করছি এ সম্পর্কে আর কোন প্রশ্নই আপনার থাকবে না ইনশাআল্লাহ ৷

দেশে বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ৷ বিভিন্ন জায়গায় এ ঘটনায় অনেক লোক হতাহত হয় ৷ অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ৷ চকবাজার ট্রাজেডি ৷ সীতাকুন্ড ট্রাজেডিসহ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের প্রায়সই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ৷ এবং সেখানে বহু লোক হতাহত হয় ৷ ইন্তিকাল করে ৷ আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায় ৷ এসকল লোকেরা কি শহীদ হিসেবে গণ্য হবে? তারা কি শাহাদাতের মর্যাদা পাবে?

[box type=”shadow” align=”aligncenter” class=”” width=””]শহীদ কারা?[/box]

আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে এবং গাড়ী দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের হিসাব হবে কি?
শহীদ কারা?

দুনিয়ায় আল্লাহর দ্বীনকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ৷ বা বিজয়ী করতে গিয়ে কাফেরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে যেসব মুমিন ব্যক্তি নিহত হয় তাদেরকে শহীদ বলা হয়। নিচের হাদীসটি লক্ষ্য করুন ৷

حَدَّثَنَا أَبُو مُوسَى الأَشْعَرِيُّ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ أَعْرَابِيٌّ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلْمَغْنَمِ، وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِيُذْكَرَ، وَيُقَاتِلُ لِيُرَى مَكَانُهُ، مَنْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَقَالَ ‏ “‏ مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا فَهْوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ‏”‏‏.‏

আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত :

তিনি বলেন, এক বেদুঈন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট প্রশ্ন করল যে, ‘কেউ যুদ্ধ করে গনীমত লাভের জন্য, কেউ যুদ্ধ করে খ্যাতি অর্জনের উদ্দেশ্যে আর আর যুদ্ধ করে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য, এদের মধ্যে কে আল্লাহ্‌র পথে যুদ্ধ করল?’ তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কালিমা উচ্চ করার উদ্দেশ্যে জিহাদ করে, সেই আল্লাহ্‌র রাহে জিহাদকারী।’

আরও পড়ুনঃ হজ্ব না করার পরিণাম

আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে এবং গাড়ী দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের হিসাব হবে কি?

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত :
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: ঋণ ব্যতীত শহীদের সকল গুনাহই ক্ষমা করে দেয়া হবে। (ই.ফা. ৪৭৩০, ই.সে. ৪৭৩১)

সাহ্‌ল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত :
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর নিকট শাহাদাত প্রার্থনা করে আল্লাহ তা’আলা তাকে শহীদের মর্যাদায় অভিষিক্ত করবেন যদিও সে আপন শয্যায় ইন্তিকাল করে। (ই.ফা. ৪৭৭৭, ই.সে. ৪৭৭৮)

[box type=”shadow” align=”aligncenter” class=”” width=””]শহীদ কত প্রকার?[/box]

আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে এবং গাড়ী দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের হিসাব হবে কি?
শহীদ কত প্রকার

আল্লামা ইবনে হাজার আসকলানী রহ: বলেছেন, শহীদ দুই প্রকার। এক. যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছেন। তারা হাকীকি শহীদ ৷ দুই. যারা দুনিয়াতে আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়নি। কিন্তু পরকালে শহীদের মর্যাদা লাভে ধন্য হবেন। তারা হুকমি শহীদ ৷

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত :
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তোমাদের মধ্যকার কাদেরকে শহীদ বলে গণ্য কর? তারা বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে নিহত হয় সেই তো শহীদ। ” তিনি বললেনঃ তবে তো আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা অতি অল্প হবে। তখন তারা বললেন, তা হলে তারা কারা ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ রাহে নিহত হয় সে শহীদ। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ। যে ব্যক্তি প্লেগে মারা যায় সে শহীদ যে ব্যক্তি উদরাময়ে মারা যায় সেও শহীদ। ইব্‌ন মিকসাম (রাঃ) বলেন, আমি তোমার পিতার উপর এ হাদীসের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আরও বলেছেন, এবং পানিতে ডুবে মারা যায় এমন ব্যক্তিও শহীদ। সহিহ মুসলিম : ৪৮৩৫

[box type=”shadow” align=”aligncenter” class=”” width=””]শহীদের মর্যাদা[/box]

আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে এবং গাড়ী দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের হিসাব হবে কি?
শহীদের মর্যাদা

আল্লাহ বলেছেন, যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় তাদের তোমরা মৃত বলো না। তারা জীবিত কিন্তু মানুষ তা বুঝতে পারে না। (সূরা বাকারা : ১৫৪) অন্য এক আয়াতে এসেছে, তারা রবের পক্ষ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত।

প্রকৃত শহীদদের মর্যাদা আল্লাহর দরবারে এত বেশি যে, নিহত হওয়ার পর তাদের গোসল দেয়ার প্রয়োজন নেই। তারা রক্ত মাখা শরীর নিয়ে রক্ত ঝরা অবস্থায় বিচার দিবসে আল্লাহর সামনে হাজির হবেন। কুরআনে এসেছে, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা হলো নবীদের, এরপর সিদ্দিকীন, এরপরেই শহীদদের মর্যাদা। (সূরা নিসা : ৬৯)

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে এবং গাড়ী দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের হিসাব হবে কি?[/box]

আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে এবং গাড়ী দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের হিসাব হবে কি?
আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে এবং গাড়ী দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের হিসাব হবে কি?

চলুন আগে একটি হাদীসে নজর বুলাই ৷ জাবির ইবনু আতীক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন, “ আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছে এরূপ ব্যক্তি ছাড়াও সাত শ্রেনীর লোক শহীদের মর্যাদা পাবে ।

  • (১) মহামারীতে মৃত ব্যাক্তি শহীদ
  • (২)ডুবে মারা গেছে এরূপ ব্যাক্তি শহীদ
  • (৩) যাতুল জানব বা শ্বাসকষ্ট রোগে যে মারা গেছে সে শহীদ
  • (৪) পেটের রোগে মৃত ব্যাক্তি শহীদ
  • (৫) যে ব্যাক্তি পুড়ে মারা গেছে সে শহীদ
  • (৬) কোন কিছু চাপা পরে মারা যাওয়া ব্যাক্তি শহীদ এবং
  • (৭) প্রসব কষ্টে মৃত নারী শহীদ । ” (আহমদ, আবু দাউদ, নাসঈ-হাদীস সহীহ, আলবানী) )

উল্লেখিত হাদীসে আমরা দেখতে পাই ৷ যারা যুদ্ধের ময়দানে কোন অংশ নেয়নি ৷ কিন্তু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৷ আগুনে পুড়ে বা পানিতে ডুবে ইন্তেকাল করেছে ৷ তাদেরকে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শহীদ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ৷ অর্থাৎ এ সকল ব্যক্তিরা ঈমান ও আমলের সাথে যদি এই দুর্ঘটনায় ইন্তিকাল করে থাকে ৷ তাহলে তারা শহীদের মর্যাদা লাভ করতে পারবে ৷

অন্যথায় পাপাচার কোন ব্যক্তি ৷ আল্লাহর নাফরমানী করা ব্যক্তি ৷ যদি এভাবে কোনো জটিল কঠিন রোগে আক্রান্ত হয় ৷ অথবা আগুনে পুড় বা পানিতে ডুবে মারা যায় ৷ এতে তার হিসেব নিকেশ যে হবে না তা নয় ৷ বরং এটাকে তার আযাব বা গজব হিসেবে গণ্য করা হবে ৷ কেননা নাফরমান ব্যক্তি কোনভাবেই শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করতে পারে না৷৷ এটা কেবল ঈমানদারদের জন্য প্রযোজ্য ৷

আপনি পড়ছেনঃ আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে এবং গাড়ী দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের হিসাব হবে কি?

অন্য এক হাদীসে এসেছে, হযরত আবুল আওয়ার সাইদ ইবনে যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়ল (আশারাহ মুবাশশিরাহ অর্থাৎ পৃথিবীতে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ১০ জন সাহাবীর অন্তর্ভুক্ত) বর্ণনা করেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার ধনমালের হেফাজতের কারণে নিহত হয়েছে সে শহীদ। আর যে ব্যক্তি নিজের জীবনের হেফাজতের কারণে নিহত হয়েছে সেও শহীদ। যে ব্যক্তি স্বীয় দ্বীনের হেফাজতকালে নিহত হয়েছে সেও শহীদ আর যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রী-সন্তাদের হেফাজতকালে নিহত হয়েছে সেও শহীদ। (আবুদাউদ, তিরমিযি- ইমাম তিরমিযি বলেন হাদিসটি হাসান সহিহ)

শেষ কথাঃ

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে কাজ করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *