ইতেকাফের ফজিলত | ইতেকাফের নিয়ম ও ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ

ইতেকাফের ফজিলত | ইতেকাফের নিয়ম ও ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু! সুপ্রিয় পাঠক!  আমাদের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা নিন ৷ আশা করছি অত্যন্ত ভাব গাম্ভীর্যের সাথে সিয়াম সাধনা করছেন ৷ অনেকেই নিয়ত করেছেন ইতেকাফ করার ৷ এতেকাফ সংক্রান্ত যাবতীয় মাসআলা মাসায়েল জানার জন্য আপনি চেষ্টা করছেন ৷ বক্ষমাণ আর্টিকেলে আমরা ইতিকাফ সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার সমাধান নিয়ে কথা বলব ৷ ইতেকাফের ফজিলত | ইতেকাফের নিয়ম ও ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ

আরও পড়ুনঃ ফিতরা আদায়ের নিয়ম

ইতেকাফ কাকে বলে?

ইতেকাফ শব্দের শাব্দিক অর্থ অবস্থান করা, কোনো বস্তুর ওপর স্থায়ীভাবে থাকা।
শরীয়তের পরিভাষায় ইতেকাফ বলা হয়, ইতেকাফফের নিয়তে পুরুষের ওই মসজিদে অবস্থান করা, যেখানে নির্ধারিত ইমাম ও মুয়াজ্জিন আছে এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয়; অথবা কোনো মহিলার স্বীয় ঘরের নামাযের স্থানে অবস্থান করা।

ইতেকাফকারী ব্যক্তি সিয়াম সাধনা করে ব্যক্তিগত ও জাগতিক প্রয়োজন বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে নিজেকে মসজিদে আটকিয়ে রাখে এবং আল্লাহর দরজায় নিবেদন করে। এ জন্য এ আমলের নাম ইতেকাফ। এ আমল সুন্নাত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছর শেষ দশকে ইতেকাফে বসতেন।

অতএব ইতেকাফ হলো, প্রেমাস্পদের দরজায় প্রেমিকের হৃদয়-মথিত হাহাকার ও কান্না পেশ করা। ইতেকাফ আদায়কারী নিজেকে আল্লাহর দরবারে সর্বতোভাবে আবদ্ধ করে, যেন একজন সকাতর ভিক্ষুক কারো দরজায় বসে পড়ে এবং প্রয়োজন পূরণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সে দরজায় অবিচল থাকে। অথবা একজন খাঁটি প্রেমিক যে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত অবস্থায় জগতের সকল প্রয়োজন উপেক্ষা করে প্রেমাস্পদের দর্শন লাভের প্রত্যাশায় তার দরজায় আসন গেড়ে বসে পড়ে। প্রেমাস্পদ যতক্ষণ মুখ না দেখায়, ততক্ষণ এ দুয়ার থেকে সে সরে না। এ অন্ধ প্রেমিক সকল আনন্দ ও ভোগবিলাসিতা দুই পায়ে মাড়িয়ে প্রেমাস্পদের দরজায় মাথা রেখে দেয়।

এতেকাফ
ইতেকাফ

ইতেকাফের ফজিলত | ইতেকাফের নিয়ম ও ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ

ইতেকাফের ফজিলত

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ فِي الْمُعْتَكِفِ: ” إنَّهُ مُعْتَكِفُ الذُّنُوبِ، وَيَجْرِي لَهُ مِنَ الْأَجْرِ كَأَجْرِ عَامِلِ الْحَسَنَاتِ كُلِّهَا
“হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতেকাফকারী সম্পর্কে বলেছেন, সে গোনাহ পরিত্যাগকারী। সবসময় কোনো পুণ্যের কাজে অংশগ্রহণকারীর মতো সে সওয়াব পাচ্ছে।” (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৬৭৮)

আরেক হাদিসে এসেছে :
مَنِ اعْتَكَفَ عَشْرًا فِي رَمَضَانَ كَانَ كَحَجَّتَيْنِ وَعُمْرَتَيْنِ
“যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশদিন ইতেকাফ করবে, সে দুটি হজ ও দুটি উমরার সওয়াব পাবে।” (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৬৮১)

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন :
كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْتَكِفُ فِى كُلِّ رَمَضَانَ عَشْرَةَ اَيَّامٍ، فَلَمَّا كَانَ الْعَامُ الَّذِىْ قُبِضَ فِيْهِ اِعْتَكَفَ عِشْرِيْنَ.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রমজানে দশদিন ইতেকাফ করতেন; কিন্তু যে বছর তিনি ইনতিকাল করেন, সে বছর বিশদিন ইতেকাফ করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৪৪)

হযরত উবাই ইবনে কাব রা. বলেন,
اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْاَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ، فَسَافَرَ عَامًا، فَلَمَّا كَانَ مِنَ الْعَامِ الْمُقْبِلِ اِعْتَكَفَ عِشْرِيْنَ يَوْمًا.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা রমজানের শেষ দশদিন ইতেকাফ করতেন; কিন্তু এক বছর তিনি সফর করেছিলেন, সে জন্যে পরের বছর বিশ দিন ইতেকাফ করেছেন। (সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস ১৭৭০)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,
مَن اعتَكَفَ يَوْمًا اِبتغَاءَ وَجهِ اللهِ تَعَالٰى جَعَلَ اللهُ بَينَه وَبينَ النَّارِ ثَلَاثَ خَنَادِقَ اَبعَدَ مَا بَينَ الْخافِقَينِ.
“যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতেকাফ করবে, আল্লাহ তাআলা তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। অর্থাৎ আসমান ও জমিনের মাঝে যে পরিমাণ দূরত্ব আছে তার চেয়েও বেশি দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। (শুআবুল ঈমান, হাদিস ৩৯৬৫)

 ইতেকাফকারী অবসর সময়ে কোনো আমল না করলেও তার দিনরাত মসজিদে অবস্থান করাটাই ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।

 ইতেকাফের কারণে অনেক গোনাহ ও পাপাচারিতা থেকে বেঁচে থাকা সহজ। নাফরমানির সয়লাব থেকে দূরে থাকার জন্য আল্লাহর ঘর একটি মজবুত দুর্গ।

 ইতেকাফকারী নিজেকে দুনিয়ার নানারকম ঝামেলা হতে মুক্ত করে পুরোপুরি আল্লাহর কাছে সমর্পণ করে। রোযার কারণে সারাদিন পানাহার ও যৌনকর্ম বর্জন করার দ্বারা ফেরেশতাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য তৈরি হয়। আর ইতেকাফ দ্বারা ২৪ ঘণ্টা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়। ফলে ইতেকাফকারীর মাঝে ফেরেশতাদের গুণাবলি শক্তিশালী হয়।

 রোযার যাবতীয় হক ও আদব আদায়ের জন্য ইতেকাফের ভূমিকা অপরিসীম। সুতরাং যাদের সময় ও সুযোগ আছে তাদের জন্য ইতেকাফে বসলে রোযা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

ইতেকাফের স্থান

পুরুষদের ইতেকাফ শুধু মসজিদেই হতে হবে। মহিলারা ইতেকাফ করবে নিজের ঘর-বাড়ির নির্দিষ্ট স্থানে। ইতেকাফের জন্য সর্বোত্তম স্থান হলো মসজিদে হারাম। দ্বিতীয় হলো মসজিদে নববী। তৃতীয় হলো মসজিদে আকসা। চতুর্থ হলো যে-কোনো জামে মসজিদ।
জামে মসজিদে ইতেকাফ উত্তম হওয়ার কারণ হলো, জুমুআর নামায আদায়ের জন্য অন্য মসজিদে যাওয়ার দরকার পড়ে না। তবে ইতেকাফের জন্য জামে মসজিদ হওয়া আবশ্যক নয়, পাঞ্জেগানা মসজিদ হলেও চলবে। (বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮০, রদ্দুল মুহতার ২/৪৬৯)

ইতেকাফের আদব

ইতেকাফের উদ্দেশ্য হচ্ছে সর্বপ্রকার কাজকর্ম ও ধ্যান ধারণা হতে মুক্ত হয়ে শুধু আল্লাহ তাআলার ধ্যানে মগ্ন হয়ে থাকা। তাই ইতেকাফ অবস্থায় অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, অনর্থক কাজকর্ম ও ফোনালাপ ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা উচিত। যথাসম্ভব নফল নামায, তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলীল ইত্যাদি ইবাদতে মশগুল থাকা।

আরও পড়ুনঃ বিদ্যানন্দকে যাকাত দিবেন কেনো? 

ইতেকাফের প্রকারভেদ

ইতেকাফ তিন প্রকার : ১. সুন্নত। ২. নফল বা মুস্তাহাব। ৩. ওয়াজিব।
সুন্নত ইতেকাফ : রমজানের শেষ দশকে ২১ তারিখ রাত (২০ তারিখের সূর্যাস্তের আগে) থেকে ঈদের চাঁদ দেখা পর্যন্ত ইতেকাফ করা। যেহেতু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবছর এ দিনগুলোতে ইতেকাফ করতেন তাই এটাকে সুন্নত ইতেকাফ বলা হয়।
নফল ইতেকাফ : বছরের যে-কোনো সময়ে মসজিদে ইতেকাফের নিয়তে অবস্থান করা হচ্ছে নফল বা মুস্তাহাব ইতেকাফ। সুতরাং রমজানের শেষ দশকে পূর্ণ দশদিনের কম সময়ের জন্য ইতেকাফ করাও নফল হিসেবে গণ্য হবে।
ওয়াজিব ইতেকাফ : মান্নত করার কারণে যে ইতেকাফ করতে হয়। তদ্রƒপ সুন্নত ইতেকাফ ফাসেদ হওয়ার কারণে যে ইতেকাফ কাজা করতে হয় এটাও ওয়াজিব।

ইতেকাফের রুকন

ইতেকাফের প্রধান রুকন হলো, ইতেকাফকারী সর্বদা মসজিদের সীমানার ভেতর অবস্থান করবে। অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া একটু সময়ের জন্যও বাইরে যেতে পারবে না। বাইরে গেলে ইতেকাফ বিনষ্ট হয়ে যাবে।

মসজিদের সীমানা বলতে কী বোঝায়?

শরিয়তের দৃষ্টিতে ‘মসজিদ’ বলতে কেবল এতটুকু অংশকে বোঝায় যতটুকুকে মসজিদ নির্মাতাগণ ‘মসজিদ’ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং অজুখানা, গোসলখানা, জানাযার নামাযের জায়গা, ইমাম সাহেবের কক্ষ ইত্যাদি জায়গা মসজিদের অংশ নয়। শরিয়ত সমর্থিত কারণ ছাড়া এসব স্থানে গেলেও ইতেকাফ ভেঙে যাবে। সাধারণভাবে আমরা এতটুকু বুঝি যে, যেখানে নামায হয় বা যতটুকু জায়গায় নামায পড়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, এতটুকু জায়গা মসজিদ হিসেবে পরিগণিত হবে। এর বাইরে মসজিদের জায়গা।
ইতেকাফকারী ইতেকাফে বসার আগে মসজিদের সীমানা জেনে নেয়া আবশ্যক। নইলে অজ্ঞাতসারে তার ইতেকাফ ভেঙে যেতে পারে।

ইতেকাফকারী কী কী কারণে বের হওয়া জায়েয?

শরিয়তসম্মত কিছু কারণে ইতেকাফকারী মসজিদের বাইরে যেতে পারবে। এসব কারণ ছাড়া বাইরে গেলে তার ইতেকাফ ভেঙে যাবে।

 পেশাব-পায়খানার প্রয়োজন।

 ফরজ গোসল বা জুমুআর গোসলের জন্য বাইরে যাওয়া।

 অজু না থাকলে অজুর জন্য বাইরে যেতে পারবে। চাই এমন কোনো আমলের জন্য অজু করতে মনস্থ করুক যা অজু ছাড়াও করা যায়। সুতরাং নামায ও কুরআন স্পর্শ ছাড়া সাধারণ নফল আমলের জন্য কিংবা শুধু পবিত্রতার নিয়তে অজু করার জন্য মসজিদের বাইরে যেতে পারবে। তবে অজু থাকা অবস্থায় নতুন অজু করার জন্য মসজিদ হতে বের হতে পারবে না। বের হলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে।

 মসজিদে খাবার পৌছে দেয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকলে খাবারের প্রয়োজনে ইতেকাফকারী মসজিদের বাইরে যেতে পারবে। কিন্তু মসজিদে এনে খেতে হবে। এ অবস্থায় ইতেকাফকারী এমন সময় বের হবে যেন গিয়ে খাবার প্রস্তুত পায়। খাবার প্রস্তুত না পেলে সামান্য সময় খাবারের জন্য অপেক্ষা করলে সমস্যা হবে না।

 আযানের জায়গা মসজিদের বাইরে হলে ইতেকাফকারী আযান দেয়ার জন্য সেখানে গমন করতে পারবে।

 ইতেকাফকারী এমন মসজিদে ইতেকাফ করল যেখানে জুমুআর নামায হয় না, তাহলে জুমুআর জন্য জামে মসজিদে যেতে পারবে। তবে এমন সময় বের হবে যখন সেখানে গিয়ে চার/ছয় রাকাত পড়ার পর খুতবা শুরু হয়। আর ফরজের পর চার বা ছয় রাকাত নামায পড়ার সময় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতে পারবে।

 মসজিদ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিলে কিংবা তার জীবনের আশঙ্কা দেখা দিলে মসজিদ হতে বের হতে পারবে।

 ইতেকাফকারী জানাযার নামায পড়া ও রোগী দেখার জন্য বের হতে পারবে না।

(কিতাবুল আসল ২/১৮৩, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৪৬, আল-মুগনী ৪/৪৮৪, কেফায়াতুল মুফতী ৪/২৩২, শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৪৭৫)

ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ

 ইতেকাফ অবস্থায় যেসব কারণে বাইরে যাওয়া জায়েয এগুলো ছাড়া যে-কোনো প্রয়োজনে বাইরে গেলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে। ইচ্ছাকৃত বাইরে গেলেও ইতেকাফ ভাঙবে, আবার অনিচ্ছাবশত বা ভুলবশত বাইরে গেলেও ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
 রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করা সুন্নত। এই সুন্নত ইতেকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত। হযরত আলী, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আয়েশা এবং উরওয়া রা. বলেন, রোযা ছাড়া কোনো ইতেকাফ নেই।
(আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৭৩)
তাই কেউ রোযা ভেঙে ফেললে ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। কোনো অসুবিধার কারণে রোযা ভাঙলেও ইতেকাফ ভেঙে যাবে।

 ইতেকাফ অবস্থায় স্ত্রীসহবাস করা নাজায়েয। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ
“আর স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না, যখন তোমরা মসজিদে ইতেকাফরত থাকো।” (সুরা বাকারা ১৮৭)

কখন ইতেকাফ ভাঙা জায়েয?

 ইতেকাফকারীর এমন রোগ হয়েছে, যার চিকিৎসা মসজিদ হতে বের হওয়া ছাড়া সম্ভব নয়। তখন ইতেকাফ ভাঙা জায়েয।
 ডুবন্ত ব্যক্তি বা অগ্নিদগ্ধকে বাঁচানো বা আগুন নেভানোর জন্য ইতেকাফ হতে বের হওয়া বৈধ। মাতা-পিতা বা ছেলেমেয়েদের কেউ ভীষণ অসুস্থ হলে এবং ইতেকাফকারী ছাড়া আর কেউ নেই চিকিৎসা করানোর মতো, তখন সে মসজিদ হতে বের হতে পারবে।
এসব কারণে মসজিদ হতে বের হলে গোনাহ হবে না, তবে ইতেকাফ ভেঙে যাবে। (আল-বাহরুর রায়েক ২/৩২৬)

ইতেকাফ ভেঙে গেলে করণীয়

 উল্লিখিত যে-কোনো কারণে সুন্নত ইতেকাফ ভেঙে গেলে যেদিনের ইতেকাফ ভেঙেছে, কেবল ওইদিনের ইতেকাফ কাজা করতে হবে। পূর্ণ ১০ দিনের কাজা করার প্রয়োজন নেই।

কাজা আদায়ের পদ্ধতি হলো, যদি চলতি রমজান মাসেই সময় থাকে তাহলে সূর্যাস্তের আগে মসজিদে ইতেকাফের নিয়তে প্রবেশ করবে এবং পরের দিন সূর্যাস্তের পর বের হবে। এখানে অবশ্য কাজার নিয়ত করতে হবে। যদি চলতি রমজানে সময় না থাকে বা রমজানে কাজা করা সম্ভব না হয়, তাহলে যে-কোনো দিন রোযা রেখে ইতেকাফ কাজা করতে পারবে।

আগামী রমজানে কাজা করলেও হবে। তবে যেহেতু জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই, তাই বিলম্ব না করে যথাসম্ভব দ্রুত কাজা করা উচিত।

 সুন্নত ইতেকাফ নষ্ট হওয়ার পর মসজিদ হতে বের হয়ে যাওয়া জরুরি নয়। বরং বাকি দিনগুলো নফলের নিয়তে ইতেকাফ করতে পারবে। যদি অনিচ্ছাকৃত কোনো ভুলে ইতেকাফ ভেঙে যায় তাহলে মসজিদ হতে বের না হওয়াই উচিত। কেননা, অসম্ভব নয় যে আল্লাহ তাআলা তাঁর বিশেষ মেহেরবানিতে সুন্নত ইতেকাফের সওয়াবই দিয়ে দিতে পারেন। তাই ইতেকাফ ফাসেদ হওয়ার পরও মসজিদ হতে বের না হয়ে শেষ দিন পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করাই উত্তম। যদিও তখন মসজিদ হতে বের হয়ে যাওয়া জায়েয।

মহিলারা কোথায় এবং কীভাবে ইতেকাফ করবেন 

  •  মহিলাগণ তাদের ঘরে নামাযের স্থানে ইতেকাফ করবে। ঘরে নামাযের জায়গা আগে থেকে নির্দিষ্ট না থাকলে ইতেকাফের সময় নির্ধারণ করে নিবে।
  •  মহিলাগণ বিনা প্রয়োজনে ইতেকাফের ঘর হতে অন্যত্র এমনকি অন্য রুমেও যেতে পারবে না। গেলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে।
  •  যে মহিলার স্বামী বৃদ্ধ, অসুস্থ অথবা তার ছোটো বাচ্চা আছে এবং তাদের সেবা ও যত্ন করার মতো কেউ নেই, তাহলে তার জন্য ইতেকাফ করার চেয়ে তাদের সেবাযত্ন করা উত্তম ৷
  •  মাসিক বা ঋতুস্রাব অবস্থায় ইতেকাফ করা বিশুদ্ধ নয়। কারণ, একে তো অপবিত্রতার অবস্থা, দ্বিতীয়ত এ অবস্থায় রোযা রাখা যায় না। আর সুন্নত ইতেকাফের জন্য রোযা রাখা জরুরি।
  •  মহিলাগণ স্বামীর অনুমতি নিয়ে ইতেকাফ করবে। স্বামীর উপস্থিতিতে তাঁর অনুমতি ছাড়া ইতেকাফ করা জায়েয হবে না।

(আল-বাহরুর রায়েক ২/৩০১, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১১, বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৪)

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

ইতেকাফের ফজিলত | ইতেকাফের নিয়ম ও ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ
ইতেকাফের ফজিলত | ইতেকাফের নিয়ম ও ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *