ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস | কে কোরবানী হয়েছিল, ইসমাইল নাকি ইসহাক?

ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস | কে কোরবানী হয়েছিল, ইসমাইল নাকি ইসহাক?

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ৷ সুপ্রিয় পাঠক! সবাইকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা ৷ আজ আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই ৷ ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের কোরবানির ইতিহাস ৷ ইবরাহীম আ. তাঁর বড় পুত্র ইসমাঈল আ.কে কুরবানী করার বিষয়ে আদেশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এ আদেশ ছোট পুত্র ইসহাক আ. সম্পর্কে ছিল না। এটিই অকাট্য সত্য। কুরআন করীম দ্বারা এটিই প্রমাণিত এবং এর উপরই প্রতি যুগের মুহাক্কিক-মনীষীগণের ইজমা প্রতিষ্ঠিত। এর বিপরীতে ইসহাক আ.কে ‘যবীহুল্লাহ’ সাব্যস্ত করা সম্পূর্ণ মনগড়া কথা, যার ভিত্তি হল ইহুদীদের তাহরীফ ও অপব্যাখ্যা।

আরও পড়ুনঃ হাবিল কাবিলের কোরবানী

ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস

ইবরাহীম আ.-এর কুরবানী ৷ আমরা জানি কুরবানী শুরু ও সূচনা হযরত আদম আ.-এর দুই পুত্র হাবিল কাবিল থেকেই হয়েছিল। কিন্তু আমাদের এ কুরবানীর সম্পর্ক হযরত ইবরাহীম আ.-এর পুত্র কুরবানীর অবিস্মরণীয় ঘটনার সাথে। আর সে ঘটনার স্মারক হিসেবেই উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর কুরবানী ওয়াজিব করা হয়েছে। হযরত ইবরাহীম আ.-এর সে ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে এক নজিরবিহীন, অবিস্মরণীয় ও শিক্ষণীয় ঘটনা। কুরবানীর তাৎপর্য ও উদ্দেশ্য বুঝবার জন্য এ ঘটনাই হলো একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু।

হযরত ইবরাহীম আ. জীবনের প্রায় পুরোটাই কাটিয়ে দেন নিঃসন্তান অবস্থায়। অবশেষে তার বয়স যখন ৮৬ বছর তখন একদিন তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করলেন-
رَبِّ ہَبۡ لِیۡ مِنَ الصّٰلِحِیۡنَ
“পরওয়ার দেগার! আমাকে সৎ পুত্র সন্তান দান কর।”

তার এ দুআ কবুল হয় এবং আল্লাহ তাআলা তাকে একটি পুত্র সন্তানের সুসংব দেন। ইরশাদ হচ্ছে-
فَبَشَّرۡنٰہُ بِغُلٰمٍ حَلِیۡمٍ
‘অতঃপর আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম ৷
সহনশীল বলে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এ নবজাত তার জীবনে সবর, ধৈর্য ও সহনশীলতার এমন পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করবে যার দৃষ্টান্ত দুনিয়ার কেউ কোনদিন পেশ করতে পারবে না।

বৃদ্ধাবস্থায় ইবরাহীম আঃ-এর পুত্রলাভ

হযরত ইবরাহীম আ.-এর স্ত্রী হযরত সারা যখন দেখলেন যে, তার গর্ভে কোন সন্তান হচ্ছে না, তখন তিনি নিজেকে বন্ধ্যাই মনে করলেন। এদিকে মিশরের সম্রাট ফিরআউন তার কন্যা হাজেরা অন্যমতে তার দাসীকে হযরত সারার খিদমাতের জন্য দান করলেন। হযরত সারা হাজেরাকে ইবরাহীম আ.-এর খিদমাতের জন্য দিয়ে দিলেন। অতঃপর তিনি তাঁকে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ করে নিলেন। এ হাজেরার গর্ভেই এই পুত্র জন্মগ্রহণ করলেন। হযরত ইবরাহীম আ. তার নাম রাখলেন ইসমা’ঈল। অবশ্য হযরত সারার গর্ভে পরবর্তীতে হযরত ইবরাহীম আ.-এর দ্বিতীয় পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেন যার নাম রাখেন তিনি ইসহাক। এ সময় হযরত ইবরাহীম আ.-এর বয়স হয়েছিল একশ’ বিশ বছর ও সারার বয়স হয়ে ছিল নিরানব্বই বছর।

ইসমাইলের কুরবানীর ঘটনা

লালন-পালনের দীর্ঘ কষ্ট সহ্য করার পর যখন বিপদে-আপদে কাজে-কর্মে সন্তান পিতার পাশে দাঁড়াবার বয়সে পৌঁছল তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ হলো, পুত্রকে কুরবানী করার। এ ঘটনাকে কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা এভাবে বর্ণনা করেছেন-

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَہُ السَّعۡیَ قَالَ یٰبُنَیَّ اِنِّیۡۤ اَرٰی فِی الۡمَنَامِ اَنِّیۡۤ اَذۡبَحُکَ فَانۡظُرۡ مَاذَا تَرٰی ؕ قَالَ یٰۤاَبَتِ افۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُ ۫ سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰہُ مِنَ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۰۲﴾

“অতঃপর যখন পুত্র পিতার সঙ্গে চলা ফেরার মত বয়সে উপনীত হলো, তখন ইবরাহীম আ. বললেন, হে আমার পুত্রধন! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে যবেহ করছি। তুমি ভেবে দেখ, কী করবে? সে বললো, হে পিতা! আপনাকে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা আপনি পালন করুন। ইনশা আল্লাহ! আপনি আমাকে সবরকারীদের মধ্যে পাবেন।

[সূরা সাফ্ফাত : আয়াত-১০২]

এ নির্দেশ ছিল হযরত ইবরাহীম আ.-এর জীবনে এক অগ্নিপরীক্ষা। আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে স্বপ্নের মাধ্যমে না বলে সরাসরি ইবরাহীম আ.-কে হুকুম দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। কারণ এটাও একটা পরীক্ষা ছিল যে, স্বপ্নের হুকুমের মাঝে মানব মনে বিভিন্ন রকম অর্থ করার যথেষ্ট অবকাশ থাকে। এখানেও ইবরাহীম আ.-এর অন্তরের হালাত যাচাই করা উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু ইবরাহীম আ. কোন রকম ব্যাখ্যার সুযোগ নিলেন না। ছেলেকে পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিলেন যে, আমি তোমাকে স্বপ্নে যবেহ করতে দেখেছি। তাফসীর বিশারদগণ বলেন, সে সময় হযরত ইসমা’ঈল আ.-এর বয়স হয়েছিল ১৩ বছর। কেউ কেউ বলেন, তিনি সাবালক অর্থাৎ, পরিণত বয়সে উপনীত হয়েছিলেন ।

কুরবানির ঐতিহাসিক ঘটনা

ইসমা’ঈল আ. জবাব দিলেন—
قَالَ یٰۤاَبَتِ افۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُ
হে পিতা! আপনাকে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা করে ফেলুন।’ এতে হযরত ইসমা’ঈল আ.-এর বিনয় ও আত্মনিবেদনের পরিচয় তো পাওয়াই যায়, তদপুরি প্রতীয়মান হয় যে, এমন কচি বয়সে আল্লাহ তাআলা তাকে কী পরিমাণ মেধা ও জ্ঞান দান করেছিলেন যে, তিনি হযরত ইবরাহীম আ.-এর স্বপ্নের কথা শুনেই বুঝে ফেললেন যে, নবীর স্বপ্ন সে তো ওহী। তাই তিনি স্বপ্নের জবাবে নির্দেশের কথা বললেন-

افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ

‘আপনাকে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা করে ফেলুন।’ পিতাকে এ আশ্বাসও দিলেন-

سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰہُ مِنَ الصّٰبِرِیۡنَ

“ইনশাআল্লাহ! আপনি আমাকে সবরকারীদের মধ্যে পাবেন।’

এ বাক্যে তিনি “ইনশাআল্লাহ আমাকে সবরকারী পাবেন” না বলে সবরকারীদের মধ্যে পাবেন বলে এদিকে ইশারা করেছেন যে, এ সবরও সহনশীলতা একা আমারই কৃতিত্ব নয়; বরং দুনিয়তে আরও বহু সবরকারী আছেন। ইনশাআল্লাহ আমিও তাঁদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো। এবার পিতা-পুত্র উভয়ে কুরবানীর জন্য প্রস্তুত হলেন।

ইরশাদ হচ্ছে-
فَلَمَّاۤ اَسۡلَمَا وَ تَلَّہٗ لِلۡجَبِیۡنِ
“অতঃপর তাঁরা যখন উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং ইবরাহীম আ. তাকে (ইসমাঈল) যবেহ করতে শায়িত করলেন ।

ইবরাহীম আঃ এর পরীক্ষা

এরপর কী হলো, তা এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়নি। তাফসীরের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, অবশেষে তারা উভয়ে যখন কোরবানগাহে পৌঁছলেন, তখন হযরত ইসমা’ঈল আ. পিতাকে বললেন, পিতা! আমাকে খুব শক্ত করে বেঁধে নিন যাতে আমি বেশি ছটফট করতে না পারি। আপনার পরিধেয় বস্ত্রও শামলে নিন আমার রক্তের ছিঁটা তাতে না লাগে। এতে সওয়াব হ্রাস পেতে পারে। এ ছাড়া রক্ত দেখলে আমার মা অধিক ব্যাকুল হবেন। আর আপনার ছুরিটাও একটু ধার দিয়ে নিন এবং তা আমার গলায় দ্রুত চালান। যাতে আমার প্রাণ সহজে বের হয়ে যায়। কারণ মৃত্যু বড় কঠিন ব্যাপার! আপনি আমার মায়ের কাছে পৌঁছে আমার সালাম বলবেন। যদি আমার জামা তার কাছে নিয়ে যেতে চান, তবে নিয়ে যাবেন। এতে হয়ত তিনি সান্ত্বনা খুঁজে পাবেন। এরপর ইবরাহীম আঃ পুত্রকে চুমু খেলেন এবং অশ্রুপূর্ণ নেত্রে তাঁকে বেঁধে নিলেন। এবং কাঁৎ করে এমনভাবে শায়িত করলেন যেন কপালের একপাশ মাটি স্পর্শ করে। এরপর তিনি স্বজোরে ছুরি চালানো শুরু করলেন। কিন্ত কাটছে না! এ অবস্থা দেখে ফিরিশতাকুল দু’আ তাসবীহ ও তাহমীদ পাঠসহকারে চিৎকার করে বলতে লাগলো- হে আমাদের প্রভু! হে আমাদের মাওলা! এ বৃদ্ধ ভদ্র লোকটির প্রতি রহম কর এবং ছোট্ট বালকটির জীবন রক্ষা কর।

ইব্রাহিম আঃ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

অতঃপর আল্লাহ তাদের প্রার্থনা কবুল করলেন এবং ডাক দিয়ে বললেন-

وَ نَادَیۡنٰہُ اَنۡ یّٰۤاِبۡرٰہِیۡمُ ﴿۱۰۴﴾ۙقَدۡ صَدَّقۡتَ الرُّءۡیَا ۚ اِنَّا کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۱۰۵﴾
‘আমি তাঁকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই পুণ্যবানদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এটা একটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে যবেহ করার জন্য দিলাম এক মহান জন্তু।

হযরত জিবরাঈল আ. এক বেহেশতী দুম্বা নিয়ে উপস্থিত হলে । অবশেষে তাই কুরবানী করলেন হযরত ইবরাহীম আ.। এ থেকে এলো আমাদের এ কুরবানী। কুরবানীর মূলকথাটা হলো, বান্দার জান-মাল, ইবাদত-বন্দেগী, জীবন-মরণ সবকিছুই আল্লাহর হুকুমের সামনে সমর্পণ করা । ইরশাদ হচ্ছে-

قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۶۲﴾ۙ
” আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ, সবই রাব্বুল আলামীনের জন্য নিবেদিত । ”

মোটকথা, আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম আ.-এর সুমহান ত্যাগের আদর্শকে পৃথিবীতে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্যই সামর্থ্যবান মু’মিন মুসলমানের ওপর কুরবানী ওয়াজিব (অবশ্য পালনীয়) করেছেন। এ মহান কুরবানী আমাদের সামনে সমাগত। আমরা এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করবো এবং দুআ করবো যেন আমরা ইবরাহিমী আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে কুরবানী করতে পারি।

ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস | কে কোরবানী হয়েছিল, ইসমাইল নাকি ইসহাক?
ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস | কে কোরবানী হয়েছিল, ইসমাইল নাকি ইসহাক?

কোরবানীর জন্য কাকে নেওয়া হয়েছিল—ইসমাঈল আ. নাকি ইসহাক আ.?

ইসলামী আকিদা হচ্ছে—নবী ইব্রাহিম (আ.) এর বড় ছেলে ইসমাঈল (আ.)কে কুরবানীর জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল অর্থাৎ ইসমাঈল (আ.) হচ্ছেন ‘জবিহুল্লাহ’। কুরআন দ্বারা এটি প্রমাণিত এবং এ ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর ইজমা রয়েছে।

অপরদিকে বাইবেল বলে যে, ইব্রাহিম (আ.) এর অন্য ছেলে ইসহাক (আ.) কে কুরবানীর জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল। বাইবেলের Old Testament বা ‘পুরাতন নিয়ম’ অংশটিকে ইহুদি ও খ্রিষ্টান উভয় ধর্মালম্বীরা নিজ ধর্মগ্রন্থ হিসাবে স্বীকার করে। তাদের এ বিশ্বাসের উৎস হচ্ছে পুরাতন নিয়ম অংশের গ্রন্থ আদিপুস্তক (Genesis) এর বর্ণনা। কাজেই এ নিয়ে মুসলিমদের বিশ্বাস এক এবং ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস আরেক। নাস্তিকরা মূলত ইসলামের বিরোধিতা করে এবং অনেক সময়েই অটোমেটিক চয়েস হিসাবে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের অবস্থানকে সমর্থন করে। আমরা এখন কুরআন-হাদিস এবং বাইবেল সকল প্রকারের উৎস থেকেই ইব্রাহিম (আ.) এর কুরবানীর ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে আলোচনা করব এবং দেখব আসলে কে কুরবানির জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন—ইসমাঈল (আ.) নাকি ইসহাক (আ.)।

কুরআনে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে যে ইব্রাহিম (আ.) এর বড় ছেলে অর্থাৎ ইসমাঈল (আ.)কে কুরবানী দেবার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

“এবং সে [ইব্রাহিম আঃ] বললঃ “আমি আমার প্রভুর দিকে চললাম, তিনি অবশ্যই আমাকে সৎ পথে পরিচালিত করবেন। হে আমার প্রভু, আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন।” অতঃপর তাঁকে আমি পরম ধৈর্যশীল একজন পুত্র সন্তানের [ইব্রাহিম আঃ এর ১ম সন্তান] সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর সে যখন তার পিতার সাথে কাজ করার মত বয়সে উপনীত হল তখন সে [ইব্রাহিম আঃ] বললঃ “হে প্রিয় পুত্র, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত।” সে বলল, “হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। আপনি আমাকে ইনশাআল্লাহ অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।” যখন তাঁরা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং সে তাঁর পুত্রকে কাত করে শায়িত করল – তখন আমি তাকে আহবান করে বললাম, “হে ইব্রাহিম আঃ, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ।“ নিশ্চয়ই আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই এটা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান কুরবানীর বিনিময়ে। আর তার জন্য আমি পরবর্তীদের মধ্যে সুখ্যাতি রেখে দিয়েছি। ইব্রাহিমের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। সে ছিল আমার মু’মিন বান্দাদের অন্যতম। এবং আমি তাঁকে সুসংবাদ দিয়েছিলাম ইসহাকের [ইব্রাহিম (আ.) এর ২য় সন্তান], সে ছিল এক নবী, সৎকর্মশীলদের অন্যতম।” [আল কুরআন, সুরা আস সফফাত: ৯৯-১১২]

ইব্রাহিম আঃ কাকে কোরবানির উদ্দেশ্যে নিয়ে গিয়েছিলেন?

এখানে পুরো কুরবানীর ঘটনা বর্ণনা করার পরে ১১২নং আয়াতে ২য় সন্তান অর্থাৎ ইসহাক(আ.) এর জন্মের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ঐ ঘটনার সময়ে ইসহাক(আ.) এর জন্মই হয়নি।

“আর অবশ্যই আমার ফেরেশতারা সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহিমের কাছে আসলো। তারা বলল, “সালাম।” সেও বলল, “সালাম।” বিলম্ব না করে সে একটি ভুনা গো বাছুর নিয়ে আসল। অতঃপর যখন সে দেখতে পেল, তাদের হাত এর [খাবারের] প্রতি পৌঁছছে না, তখন তাদেরকে অস্বাভাবিক মনে করল এবং সে তাদের থেকে ভীতি অনুভব করল। তারা বলল, “ভয় করো না, নিশ্চয়ই আমরা লুতের সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরিত হয়েছি।” তাঁর স্ত্রীও নিকটেই দাঁড়িয়েছিল, সে হেসে ফেলল। অতঃপর আমি তাঁকে ইসহাকের জন্মের সুখবর দিলাম এবং ইসহাকের পরের ইয়া’কুবেরও।” [আল কুরআন, হুদ:৬৯-৭১]

এখানে স্পষ্টত বলা হচ্ছে ফেরেশতারা একই সাথে ইব্রাহিম (আ.) কে ইসহাক (আ.) ও ইয়া’কুব (আ.) এর সুসংবাদ দেন। ইসহাক(আ.) যদি জবিহুল্লাহ হয়ে থাকেন, তাহলে ইয়া’কুব (আ.) এর সংবাদ কিভাবে দেওয়া হবে? তিনি তো কুরবানীই হয়ে যাবেন! তাহলে তো ইব্রাহিম (আ.)কে কোন পরীক্ষা করা হল না। পরীক্ষার ফল আগে থেকেই জানা, ইসহাক (আ.) বেঁচে যাবেন ও তাঁর ছেলে ইয়া’কুব (আ.) নবী হবেন!

আল কুরআনের তথ্যের ভিত্তিতে এভাবে মুসলিম উম্মাহ নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করে ইসমাঈল (আ.) হচ্ছেন জবিহুল্লাহ।

 

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস | কে কোরবানী হয়েছিল, ইসমাইল নাকি ইসহাক?
ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস | কে কোরবানী হয়েছিল, ইসমাইল নাকি ইসহাক?

One thought on “ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস | কে কোরবানী হয়েছিল, ইসমাইল নাকি ইসহাক?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *