ঈদের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত | মাওলানা দীদার মাহদী

ঈদের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সুপ্রিয় পাঠক! সবাই কেমন আছেন? আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি পবিত্র ঈদের শুভেচ্ছা ৷ ঈদ মুবারক ৷ তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম ৷ মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা ৷ ঈদুল আযহা থেকে ঈদুল ফিতরের আনন্দ থাকে অনেক অনেক বেশি ৷ যার কারণ হচ্ছে দীর্ঘ একটি মাস মুসলমানরা সিয়াম সাধনা করে ৷ না খেয়ে থেকে তাকওয়া অবলম্বন করে ঈদের দিন দিনের বেলা খেতে পারে ৷ তাই আনন্দটা একটু বেশি ৷

আরও পড়ুনঃ ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য ও শিক্ষা

ঈদের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

ঈদের নামাজ যেহেতু বছরে দুইবার পড়া হয় ৷ যার কারণে অনেকেই এই নামাজের নিয়ম ভুলে যান ৷ আর যেহেতু এই নামাজে নিয়ম অন্যান্য নামাজ থেকে একটু ব্যতিক্রম ৷ অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর দিতে হয় ৷ অনেকেই তাকবীর দিতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন ৷ তাকবীর কখন দিবেন? কয়টি দিবেন? এই নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করতে থাকে ৷ বক্ষমান নিবন্ধে ঈদের নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয় তা নিয়ে বিস্তারিত কথা হবে ৷ ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আয অভয় ঈদের নামাজের নিয়ম একই সুতরাং আমরা দুই ঈদের নামাজ নিয়ে কথা বলব ৷ একটি নিয়ম শিখলে দুই ঈদের নামাজ পড়তে পারবেন ইনশাআল্লাহ ৷

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
ঈদের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব

হানাফী মাযহাব অনুসারে ঈদের নামাজ ওয়াজিব ৷ মালিকি ও শাফেয়ী মাযহাব অনুসারে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ৷ এবং হাম্ববলী মাযহাব অনুসারে ঈদের নামাজ ফরজ। কোনো কোনো ইসলামী পণ্ডিতের মতে ঈদের নামাজ ফরজে আইন এবং কোনো কোনো ফকীহের মতে ঈদের নামাজ ফরজে কেফায়া। কিন্তু কারো কারো মতে ঈদের দুই রাকায়াত নামাজ নফল।

ঈদের নামাজ কয় রাকাত?

ঈদের নামাজ ২ রাকাত ৷ ৬ তাকবিরে আদায় করতে হয়।

প্রথম ঈদের নামাজ কত খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয়?

৬২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ঈদ উদযাপন করা হয়েছিল। হিজরী দ্বিতীয় সনে ঈদের প্রবর্তন করা হয়েছিল।

ঈদুল ফিতরের দিন কয়টি কাজ করা ওয়াজিব?

ঈদুল ফিতরের দিন দু’টি কাজ করা ওয়াজিব- (১) ফিতরা দেওয়া এবং (২) ঈদের দুই রাকাত সালাত ছয় তাকবিরের সাথে আদায় করা।

ঈদুল ফিতরের দিন ১৩টি কাজ করা সুন্নাত

  • (১) শরীয়তের মধ্যে থেকে যথাসাধ্য সুসজ্জিত হওয়া,
  • (২) গোসল করা,
  • (৩) মিসওয়াক করা,
  • (৪) যথাসম্ভব উত্তম কাপড় পরা,
  • (৫) খুশবো ব্যবহার করা,
  • (৬) ভোরে ঘুম থেকে ওঠা,
  • (৭) ফজরের নামাজের পরই সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া,
  • (৮) মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া (ঈদগাহে যাওয়ার আগে),
  • (৯) ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতরা আদায় করা,
  • (১০) ঈদের নামাজ মসজিদে না পড়ে ঈদগাহে গিয়ে পড়া,
  • (১১) ঈদগাহে এক রাস্তায় যাওয়া ও অন্য রাস্তায় ফিরে আসা,
  • (১২) ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং
  • (১৩) ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবির বলতে বলতে যাওয়া।

ঈদের ইতিহাস

ঈদ মুসলিম উম্মাহর জাতীয় অনুষ্ঠান। ঈদ অর্থ খুশি, আনন্দ, উৎসব ইত্যাদি। প্রকৃতপক্ষে ঈদ অর্থ ফিরে আসা। যেহেতু ঈদ প্রতিবছর মুসলমানদের ঘরে ফিরে আসে, তাই একে ঈদ বলে। বছরে দুটি ঈদ অনুষ্ঠিত হয়। একটি ঈদুল ফিতর, অন্যটি ঈদুল আজহা। এই দুই দিনে মুসলমানেরা আনন্দিত হয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালন করে এবং সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ধনী-গরিব এক কাতারে শামিল হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে। এ দুটি অনুষ্ঠানই মুসলমানদের সর্বোচ্চ আনন্দানুষ্ঠান।

মহানবী (সা.)-এর মক্কার তেরো বছরের জীবনে রোজা ও ঈদের বিধান প্রচলিত ছিল না। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মহান আল্লাহর নির্দেশে মদিনা হিজরত করেন। মদিনায় তাঁর আগমনের আগে নওরোজ ও মেহেরজান নামক দুটি উৎসব প্রচলিত ছিল। মদিনাবাসীরা নববর্ষ উপলক্ষে নওরোজ ও বসন্তকাল উপলক্ষে মেহেরজান অনুষ্ঠান পালন করত এবং সেখানে নানাবিধ আনন্দ-ফুর্তি ও খেল-তামাশা করত। যার মধ্যে অশ্লীলতা, মদপান ও বেহায়াপনা মিশ্রিত ছিল।

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

মহানবী (সা.)-এর দাওয়াতে অনেক মদিনাবাসী ইসলাম কবুল করে। ইসলাম কবুলের কারণে তাদের জন্য নওরোজ ও মেহেরজান নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তারা মহানবী (সা.)-এর কাছে এমন উৎসব কামনা করেন, যেখানে বৈধভাবে উৎসব করা যায়। এরই মধ্যে দুটি বছরও কেটে যায় এবং ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে রমজানের রোজা ফরজ হয়। এ সময় আল্লাহ তাআলা জাহিলি যুগের দুটি উৎসবের পরিবর্তে ইসলামে দুটি উৎসব প্রবর্তন করেন। একটি ঈদুল ফিতর অন্যটি ঈদুল আজহা। (নাসায়ি)

এই দুই উৎসবে মুসলমানরা পারস্পরিক ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ব, প্রীতি ও সৌহার্দ্যের অনুপম দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে। ভুলে যায় সব ভেদাভেদ। আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদিকে এমন দুটি বরকতময় উৎসব উপহার দিয়েছেন, যা অতীতের কোনো উম্মতকে দেননি। ঈদুল ফিতর সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি উপবাস ভঙ্গের (ঈদুল ফিতর) আনন্দ অন্যটি হলো (আখিরাতে) আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের আনন্দ।’

ঈদের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

ঈদের নামাজের জন্য প্রথমে নিয়ত করে নিবেন । আর নিয়তটি সংক্ষেপে এভাবে করুন – আমি ঈদুল ফিতরের বা আজহার দু’রাকাত নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবীরের সাথে ইমামের পিছনে আদায় করছি ৷

নিয়ত করার পর অন্যান্য নামাজের মত তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে হাত বেধে ছানা পড়বেন । সানার পর অতিরিক্ত তিন তাকবীর দিবেন‌ । প্রথম তাকবীর বলার সময় উভয় হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠাবেন এবং তাকবীর শেষে হাত না বেঁধে ছেড়ে দিবেন। তিন বার সুবহানাল্লাহ বলা যায় এ পরিমাণ সময় বিলম্ব করে উভয় হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠিয়ে দ্বিতীয়বার তাকবীর দিবেন ।

তারপর হাত ছেড়ে দিবেন । এবারও ওই পরিমাণ বিলম্ব করে আবার তাকবীর দিবেন । তারপর হাত না ছেড়ে বেঁধে নিবেন । এবার ইমাম সাহেব যথানিয়মে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ে সূরা ফাতিহা পড়বেন এবং অন্য একটি সূরা মিলাবেন । আর মুক্তাদীগণ চুপ করে থাকবেন । শুধু মনোযোগ দিয়ে শুনবেন । তারপর যথানিয়মে ইমাম তাকবীর দিয়ে রুকুতে যাবেন এবং রুকু সিজদা সমাপ্ত করে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠে দাঁড়াবেন ।

 

দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা পড়বেন । আর মুক্তাদীগণ চুপ করে থাকবেন । খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবেন । ইমামের কেরাত সমাপ্ত হওয়ার পর রুকুতে যাওয়ার আগে পূর্বের নিয়মে ইমামের সাথে তিনটি অতিরিক্ত তাকবীর দিবেন ।

এবং প্রতিবার তাকবীরে তাহরীমাই হাত ছেড়ে দিবেন। এরপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে ইমামের সাথে রুকুতে যাবেন । নামাজের অন্যান্য তাকবীরের মত অতিরিক্ত ছয় তাকবীর ইমাম-মুক্তাদী উভয়ে দিবেন ৷ তবে ইমাম উচ্চস্বরে আর মুক্তাদীগণ অনুচ্চস্বরে তাকবীর দিবেন ৷ এরপর যথা নিয়মে নামাজ শেষ করবেন । এবং নামাযের পর খুতবা শুনবেন । খুতবা শোনা ওয়াজিব ।

ঈদের নামাজ ও জানাযার নামাজ

ঈদের নামাজ ও জানাজার নামাজ এক নয় ৷ ঈদের নামাজে অতিরিক্ত তাকবীর দিতে গিয়ে হাত ছেড়ে দিতে হয় ৷ আর জানাযার নামাজে অতিরিক্ত তাকবীর দিতে গিয়ে হাত ছাড়তে হয় না ৷ বরং অতিরিক্ত সবগুলো তাকবীরে এক একটা কাজ রয়েছে ৷ অনেকেই ঈদের নামাজ এবং জানাজার নামাজকে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন ৷ এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী ৷

 

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

ঈদের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
ঈদের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *