নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত ৷ মাওলানা দীদার মাহদী

নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! আশা করছি ভাল এবং সুস্থ আছেন ৷ আজ আমরা ইসলামের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ রোকন নিয়ে কথা বলব ৷ আর সেটি হচ্ছে নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত ৷ বক্ষমান নিবন্ধে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ ৷

আরও পড়ুনঃ মৃত মাবাবার জন্য করণীয় আমল

নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

ঈমানের পর চারপ্রকার ইবাদতের মধ্যে সালাত হচ্ছে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ৷ ফযীলত পূর্ণ এবং মুমিনের সবচে প্রিয় ইবাদত। সালাতের গুরুত্ব তাে এই পরিমাণ যে, হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مفتاح الجنة الصلاة ومفتاح الصلاة الطهور
(وفي سنن الترمذي الوضوء مكان الطهارة)

জান্নাতের চাবি হলাে সালাত, আর সালাতের চাবি হলাে তাহারাত ৷ (মুসনাদে আহমদ, হাদীছ নং ১৪৬২, তিরমিযি, হাদীছ নং ৩)

এখানে চাবির উপমাটি বড়ই তাৎপর্যপূর্ণ। চাবি ছাড়া যেমন তালা খােলা যায় না তেমনি তাহারাত ছাড়া সালাত আদায় হয় না।

তাে যেহেতু সালাতের জন্য তাহারাত হচ্ছে শর্ত ৷ সেহেতু তাহারাতকে চাবির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আবার সালাতকে বলা হয়েছে জান্নাতের চাবি। সুতরাং যে ব্যক্তি সালাতের পাবন্দ সে যেন চাবিহাতে জান্নাতের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাে এবং দরজা খুলে জান্নাতে প্রবেশ করলাে। আর যে সালাতের পাবন্দি করে না সে যদি কোনভাবে জান্নাতের দরজার সামনে পৌঁছেও যায়, চাবির অভাবে সে দরজা খুলতে পারবে না ৷ এবং জান্নাতে দাখেল হতে পারবে না।

 

হাদীস শরীফে আছে,
الصلاة عماد الدين فمن تركها فقد هدم الدين

সালাত হচ্ছে দ্বীনের বুনিয়াদ সুতরাং যে তা তরক করলাে সে দ্বীনকেই বরবাদ করলাে।
এমনকি সালাতই হচ্ছে ইসলাম ও কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী একমাত্র অমল।

হাদীস শরীফে এসেছে
بين الكفر و الإيماني ترك الصلوۃ
সালাত তরক করাই হচ্ছে কুফুর ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্যকারী।
(তিরমিযি হাদীস নং ২৬১৮)

সালাত এমনই মাহবূব ও প্রিয় আমল যে, হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
جعلت قره عيني في الصلاه
আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে নামাযের মধ্যে। (নাসাঈ, নং ৩৯৫০)

অন্য এক হাদীসের মযমূনমতে যখন সালাতের সময় হতাে তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতেন, হে বিলাল, সালাতের ইন্তিযাম করে আমাকে শান্তি দাও। অর্থাৎ সালাতই ছিলাে তাঁর চোখের শীতলতা এবং তাঁর দিলের শান্তি। আর কোন ইবাদত সম্পর্কে আল্লাহর পেয়ারা হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ বলেননি।

হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী (রহ) বলেন, দুনিয়াতে সালাতের মরতবা হলাে আখেরাতে আল্লাহর দীদারের সমান। এখানে নৈকট্যের চূড়ান্ত হলাে সালাতের মধ্যে, আর ওখানে নৈকট্যের চূড়ান্ত হবে দীদার লাভের সময়।

জনৈক অন্তর্জ্ঞানী বলেছেন,

মাছের জন্য পানি যেমন মুমিনের রূহের জন্য সালাতও তেমন। শিশুর জন্য মায়ের কোল যেমন মুমিনের জন্য সালাতও তেমন।

নামাজকে বলো না কাজ আছে

নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
নামাজকে বলো না কাজ আছে

সালাত কখনো মাফ হয় না

যাকাত সবার উপর ফরয নয়। যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ মালের মালিক শুধু তার উপর বছরে একবার তা ফরয ৷ এবং তাও নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পাওয়া যাওয়ার পর। তদ্রপ রােযা সারা বছর ফরয নয়, বরং শুধু রামাযান মাসে ফরয। তদ্রুপ হজ্জ শুধু সক্ষম ও সামর্থ্যবান মুসলমানের উপর ফরয এবং তাও জীবনে মাত্র একবার।

পক্ষান্তরে সালাত এমন এক ইবাদত যা সারা জীবনের জন্য ফরয ৷ এবং প্রতিদিন পাঁচওয়াক্তের জন্য ফরয এবং প্রত্যেক ‘আকিল, বালিগ মুমিন নর-নারীর উপর সর্বাবস্থায় ফরয। সুস্থ ব্যক্তির উপর যেমন ফরয তেমনি ফরয অসুস্থ ব্যক্তির উপর। মুকীমের উপর যেমন ফরয তেমনি ফরয মুসাফিরের উপর, এমনকি জিহাদের মত কঠিন সফরের হালাতেও তা ফরয। দুশমন যখন মুসলমানদের উপর হামলা করছে তখনাে তা ফরয। যুদ্ধের ময়দানেও প্রয়ােজনে বিশেষ হালাতের সালাত আদায় করতে হবে ৷ শরী’আতে যার নাম হলাে সালাতুল খাওফ বা ভয়-ভীতির সালাত।

তদ্রপ সুস্থ ব্যক্তির উপর যেমন তা ফরয তেমনি অসুস্থ ব্যক্তির উপরও একই রকম ফরয। এমনকি যদি কেউ এত অসুস্থ হয় যে, দাঁড়িয়ে সালাত পড়তে পারে না ৷ তাকে বসে পড়তে হবে ৷ যদি বসে পড়তে না পারে তাহলে শােয়া অবস্থায় পড়বে এবং ইশারার মাধ্যমে রুকু-সিজদা আদায় করবে।

সালাত এমন এক ফরয যা আধ্যাত্মিকতার সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত হওয়ার পরও কোন অলী-বুযুর্গের উপর থেকে তা রহিত হয় না ৷ যদি কেউ এমনটা দাবি করে সে সুস্পষ্ট গোমরা ৷ এমনকি সালাত নবীরাসূলগণের উপর থেকেও কখনাে রহিত হয়নি।

সীরাতের কিতাবে বর্ণিত আছে, গাযওয়াতুল খান্দাকের কঠিন দুর্যোগের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চার ওয়াক্ত নামায কাযা হয়েছিলাে ৷ যা তিনি পরে আদায় করেছেন। এমনকি সাহাবা কেরাম তাে জামাতেরও এত ইহতিমাম করতেন যে, দুজন মানুষের কাঁধে ভর দিয়ে হলেও তারা মসজিদে হাযির হতেন। খােল্লামখােল্লা কোন মুনাফিকই শুধু জামাতে গায়রে হাযির থাকার দুঃসাহস করতাে ৷ নচেৎ গােপন মুনাফিক যারা, তারাও মুনাফিকি প্রকাশ পাওয়ার ভয়ে জামাতে হাযির থাকার চেষ্টা করতাে।

নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম

নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম
নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম

সমগ্র জীবনের উপর সালাতের প্রভাব

সালাত এমনই এক ইবাদাত যার সুফল ও সুপ্রভাব মুমিনের জীবনের সর্বক্ষেত্রে অনুভূত হয় ৷ বাস্তবে এমনটাই দেখা যায় ৷ যার সালাত সুন্দর তার সবকিছুই সুন্দর ৷ এমনকি তার আখেরাতের পথ সুগম হবে ৷ যেমন হাদীস শরীফে এসেছে

عن عبد الله بن قرط رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلی الله عليه وسلم : أول ما يحاسب به العبد يوم القيامة الصلاة، فإن صلحت صلح سائر عمله، وإن فسدت فسد سائر عمله .
رواه الطبراني في المعجم الأوسط، الرقم : ۱۸۸۰)

হযরত আব্দুল্লাহ বিন কুরত রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি। ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন বান্দার প্রথম যে আমলের হিসাব নেয়া হবে তা হলাে সালাত। তাে সালাত যদি বিশুদ্ধ হয় তাহলে অন্য সমস্ত আমলও বিশুদ্ধ হবে ৷ আর সালাত যদি নষ্ট হয় তাহলে অন্য সমস্ত আমলও নষ্ট হবে।

কোরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে
اتل ما أوحى إليك من الكتب وأقم الصلوة إن الصلؤة تنهى عن الفحشاء والمنكر ولذكر الله أكبر والله يعلم ما
تصنعون

(হে রাসূল) যে কিতাব আপনার কাছে অহীযােগে পাঠানাে হয়েছে আপনি তা তিলাওয়াত করুন এবং সালাত কায়েম করুন। নিঃসন্দেহে সালাত অশ্লীল কাজ ও মন্দ কর্ম থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর যিকির (ও স্মরণই) হলাে সবচে বড় বিষয়। আর আল্লাহ জানেন যা তােমরা করছো। (আল-আনকাবুত: ৪৫)

আফসােস, এখন তাে আমাদের যিন্দেগিতে সালাতের কোন আছরই যায় না। বেনামাযী যেমন মন্দ কর্ম ও ফাহেশা কাজে লিপ্ত হয় ৷ পাচ ওয়াক্ত সালাতের মুসল্লীও তাতে লিপ্ত হয়। সালাতী ও বে-সালাতীর জীবনে এখন তেমন কোন পার্থক্যই বাকি নেই। এর কারণ আর কিছু নয়, শধু এই যে, আমাদের সালাতের বাহ্যিক আকার-আকৃতিটুকুই শুধু কিছুটা বাকি আছে। সালাতের হাকীকত ও রূহানিয়াত এবং খুশু-খুযু বিলকুল হারিয়ে গেছে। নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত ভুলে গেছে ৷

তাে মুরদা সালাতের কী আর আছর হতে পারে মুযল্লীর যিন্দেগিতে?! আমাদের গাফলতের কারণে আজ অমুসলিমদের চোখেও সালাত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। তারাও এখন বলতে সাহস পায় যে, কোরআনের আয়াত কীভাবে সত্য হলাে? কোরআন বলছে, সালাত অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখে ৷ অথচ সালাতী ও বে-সালাতীকে আমরা একই রকম অশ্লীল ও মন্দ কর্মে লিপ্ত দেখতে পাই।

তাে আসল কথা হলাে, আল্লাহর কালাম চিরসত্য। সালাত অবশ্যই মুমিনকে অশ্লীলতা ও মন্দ কর্ম থেকে বিরত রাখে ৷ তবে সালাতকে হতে হবে হাকীকতওয়ালা সালাত, রূহানিয়াতওয়ালা জানদার সালাত।

নফল নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

আল্লাহ তাআলার ইরশাদ হলাে
قد أفلح المؤمنون- الذين هم في صلاتهم خاشعون
ঐ মুমিনগণ সফলকাম যারা তাদের সালাতে খুশখুযু অবলম্বন করে।
(আল-মু’মিনূন, ২৩ : ১- ২)

পক্ষান্তরে যারা লােকদেখানাের উদ্দেশ্যে গাফলতের সালাত পড়ে তাদের সম্পর্কে তাে বলা হয়েছে
فويل للمصلين – الذين هم عن صلاتهم ساهون – الذين هم رآئون- ويمتعون الماعون

তাে অভিসম্পাত ঐ মুসল্লীদের উপর যারা তাদের সালাতের প্রতি উদাসীন ৷ যারা ‘লােকদেখায়’, আর (মানুষকে) সামান্য কিছু দিতেও কুণ্ঠিত হয়। (আল মাউন, ১০৭: ৪ – ৭)

অন্য আয়াতে মুনাফিকদের সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে

واذا قاموا إلى الصلوة قاموا كسالى يرآئون الناس ولا يذكرون الله إلا قليلا

আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়, অলসভাবে দাঁড়ায়, মানুষকে দেখায় । আল্লাহকে তারা খুব কমই স্মরণ করে। (আন্-নিসা, ৪: ১৪২)

এখন বুকে হাত রেখে নির্জনে বসে আমরা একটু চিন্তা করি, এই যে সালাতের প্রতি গাফলত ও অলসতার কথা বলা হয়েছে, আমাদের বর্তমান অবস্থা তার থেকে কতটা ভিন্ন?

এক হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করে এবং ওয়াক্তমত সালাত আদায় করে ৷ এবং খুশু-খুযূর সঙ্গে কিয়াম ও রুকু-সিজদা পূর্ণরূপে আদায় করে ৷ তার সালাত শুভ্র-সুন্দর সুরত ধারণ করে রওয়ানা হয় ৷ আর যাওয়ার সময় বলে, তুমি যেমন আমাকে হেফাযত করেছে, তেমনি আল্লাহ তােমাকে হেফাযত করুন।

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সময় গড়িয়ে যাওয়ার পর মন্দভাবে সালাত পড়ে ৷ তার সালাত কালাে অন্ধকার সুরত ধরে রওয়ানা হয় ৷ আর যাওয়ার সময় তাকে বলে, আল্লাহ তােমাকে বরবাদ করুন যেমন তুমি আমাকে বরবাদ করেছাে ৷ আর ঐ যালাতকে মুসল্লীর মুখের উপর নােংরা নেকড়ার মত ছুঁড়ে মারা হয়। (তাবারানী, আল-মুজামূল আওসাত, ৩১৯০)

এক হাদীছে আছে
أسوء الناس سرقة الذي يسرق صلاته، قالوا : يارسول الله، وكيف يسرق صلاته؟ قال : لايتم ركوعها ولا سجودها .
ورواه أحمد في مسنده، الرقم : ۲۲۰۹۰)

সবচে’ নিকৃষ্ট চোর হলাে সে যে সালাত চুরি করে। সাহাবা কেরাম আরোজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, সালাত কীভাবে চুরি করে? তিনি বললেন, রুকু সিজদা পূর্ণরূপে আদায় করে না। (হাকিম, নং ৮৩৫, মুআত্তা, নং৪১০)

তো যে সালাত তার মুসল্লীর প্রতি সন্তুষ্ট নয় বরং তাকে বদদোয়া দেয় ৷ যে সালাতকে মুসল্লির দিকে নোংরা নেকড়ের মতো ছুড়ে মারা হয় ৷ যে সালাত দ্বারা মুসল্লী নিকৃষ্টতম চোর খেতাব পায় ৷ এমন সালাত কিভাবে জিন্দেগির উপোর উত্তম প্রভাব রাখতে পারে ৷

সুতরাং আমার ভাই! দোষ সালাতের নয় ৷ দোষ মুসল্লির ৷ আল্লাহ যেন আমাদের এমন সুন্দর সালাত নসিব করেন যা মুসল্লির জন্য অনেক দোয়া করে ৷ আর ঐ কালো অন্ধকার সালাত থেকে হেফাজত করেন যা মুসল্লির জন্য বদ দোয়া করে ৷

নামাজে মনযোগী হওয়ার উপায়

নামাজে মনযোগী হওয়ার উপায়
নামাজে মনযোগী হওয়ার উপায়

আমাদের কর্তব্য হলাে সালাতের হাকীকত এবং অন্তর্নিহিত মর্ম ও সৌন্দর্য অনুভব করে সালাত আদায় করা। জীবনভর চেষ্টা করে যেতে হবে যেন আমাদের সালাত নববী সালাতের নিকট থেকে নিকটতর হতে থাকে ৷ যেমন পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন
صلوا كما رأيتموني أصلي
তােমরা পড়াে সালাত যেমন দেখাে আমাকে সালাত পড়তে। (বুখারী হাদীস নং ৬৩১)

সাহাবা কেরাম তাে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তাঁর পিছনে সালাত আদায় করেছেন। খুব নিকট থেকে তাঁকে তাঁরা সালাত আদায় করতে দেখেছেন। দেখে দেখে নিজেদের সালাতকে নববী সালাতের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ করার চেষ্টা করেছেন। ফলে তাঁদের সালাত নববী সালাতের কাছাকাছি হতে পেরেছিলাে ৷ বাইরের আকার-আকৃতিতে যেমন তেমনি ভিতরের গুণ ও প্রকৃতিতে।

এখন প্রশ্ন হলাে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাল্লু আদেশ তাে শুধু সাহাবা কেরামের প্রতি ছিলাে না ৷ ছিলাে যুগে যুগে কেয়ামত পর্যন্ত আনেওয়ালা পুরা উম্মতের প্রতি। তাহলে পরবর্তী উম্মত এবং এ যুগের আমরা কীভাবে দেখতে পাবাে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত? কীভাবে আমাদের সালাত হতে পারে নববী সালাতের সাদৃশ্যপূর্ণ?

বস্তুত এই একটি প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই নিহিত রয়েছে পরবর্তী উম্মতের বহু প্রশ্নের উত্তর এবং বহু সমস্যার সমাধান। উত্তর এই যে সালাত দেখার সিলসিলা চলতে থাকবে। সাহাবা কেরাম দেখেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত। তাদের সালাত দেখেছেন তাবেঈন কেরাম ৷

সাহাবা-সালাতের দর্পণে আসলে তারা দেখেছেন নববী সালাতেরই ছায়া। ফলে তাদেরও সালাত হয়েছে নববী সালাতের সঙ্গে সাদশ্যপূর্ণ। তাবেঈনে কেরামের সালাত দেখেছেন তাবয়ে তাবেঈন এবং তাদের সালাত সম্পর্কেও একই কথা।

আরও দেখুনঃ ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম

এভাবে প্রত্যেক যুগের উম্মত দেখেছে পূর্ববর্তী উম্মতের ছালাত ৷ যাতে সেই সালাতের আয়নায় অবলােকন করা যায় নববী সালাতের ছায়া। ফলে তাঁদেরও সালাতে ঘটতাে নববী সালাতের ছায়াপাত।

তাে আমাদের কর্তব্য হলাে এযুগের সেই সব ভাগ্যবান লােকদের সালাত অবলােকন করা যারা তাদের পূর্ববর্তীদের সালাত অবলােকন করে নববী সালাতের ছায়া গ্রহণের চেষ্টা করেছেন। সালাত শুধু কিতাব পড়ে শেখার জিনিস নয়; সালাত হচ্ছে যুগের আদর্শ মুসল্লী যারা তাদের সালাত দেখে শেখার জিনিস ৷ যাতে আমাদের সালাতও যুগ যুগের নিরবচ্ছিন্ন সিলসিলার মাধ্যমে নববী সালাতের নিকট থেকে নিকটতর হতে পারে।

দ্বিতীয়ত গভীর চিন্তাভাবনার মাধ্যমে সালাতের হাকীকত ও মর্ম অনুধাবন করতে হবে। সালাতের আহকাম ও বিধান পড়ে পড়ে ও শুনে শুনে জানতে হবে ৷ এবং জানতে হবে সালাতের ফাযায়েল ও নূরানিয়াত ৷ যাতে দিলের মধ্যে সালাতের শাওক ও জায়বা জাগ্রত হয় এবং গভীর থেকে গভীর হয়।

ফজর নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজেরই আল্লাহ তায়ালা বিশেষ কিছু ফজিলত দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম ফজরের সালাত। ফজরের নামাজে দাঁড়ানো, সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার সমান।

হাদিসে হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করলো, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়লো। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়লো, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়লো। -সহিহ মুসলিম: ১০৯৬

সাহাবি হজরত জুনদব ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সুফিয়ান আল বাজালি (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করলো, সে আল্লাহর জিম্মায় চলে গেল। অতএব আল্লাহ যেন তার জিম্মার বিষয়ে তোমাদেরকে কোনোরূপ অভিযুক্ত না করেন। -সুনানে তিরমিজি: ২১৮৪

হজরত আবু যুহাইর উমারা ইবনে রুয়াইবা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (ফজর ও আসরের নামাজ) আদায় করবে, সে কখনও জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। -সহিহ মুসলিম: ৬৩৪

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুনাফেকদের ওপর ফজর ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হতো। -সহিহ বোখারি: ৬৫৭

জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

জুমার গুরুত্ব আল্লাহ তায়ালার কাছে এত বেশি যে, কোরআনে ‘জুমা’ নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা কোরআনে ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং বেচা-কেনা (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম ছেড়ে দাও।

জুমার নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের দৃষ্টিতে পবিত্র জুমা ও জুমাবারের রাত-দিন অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ। জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে। এ নামাজ ছেড়ে দিলে হাদিসে ভয়াবহ ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি মুসলিমকে অবশ্যই জুমার নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে পড়া উচিত। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, জুমা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ দিবস। পবিত্র কোরআনে সূরা আল জুমায় ইরশাদ করা হয়েছে,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

‘মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।’ (সূরা: আল জুমা, আয়াত: ৯)

ফজিলতের কারণে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে। জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন সপ্তাহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৮৪)

নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

শেষ কথাঃ

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *