নারীদের ঈদের নামাজ ও মসজিদে জামাতে অংশগ্রহণে ইসলামী বিধান

নারীদের ঈদের নামাজ ও মসজিদে জামাতে অংশগ্রহণে ইসলামী বিধান

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু ৷ সুপ্রিয় পাঠক! আপনাদের সবাইকে পবিত্র ঈদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ৷ আমাদের কাছে অনেকেই জানতে চেয়েছেন ঈদের সালাত পুরুষরা তো ঈদগাহে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করবে ৷ এটা তাদের জন্য ওয়াজিব ৷ কিন্তু নারীদের ঈদের নামাজ পড়তে হবে কিনা? নারীদের ঈদের নামাজের বিধান কি? এ সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন ৷ জানতে চেয়েছেন ৷ আমরা বক্ষমান আর্টিকেলে ঈদের নামাজের নিয়ম ৷ নারীদের ঈদের নামাজ পড়ার বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করব ৷ ইনশাল্লাহ ৷ আমাদের সঙ্গে থাকুন ৷ সহীহ ইলম শিক্ষায় মনোনিবেশ করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খায়ের ৷

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]নারীদের জন্য ইসলামের বিধান[/box]

নারীদের জন্য ইসলামের বিধান
নারীদের জন্য ইসলামের বিধান

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা ৷ এতে যেমনিভাবে পুরুষের জন্য বিধান নাযিল হয়েছে ৷ ঠিক তেমনি ভাবে নারীদের জন্যও ৷ মূলত পুরুষকে সম্বোধন করে নারীদেরকেও বিধান এর আওতাভুক্ত করা হয়েছে ৷ সালাত, সিয়াম, জাকাত ও হজসহ যাবতীয় এবাদত বন্দেগী পুরুষদের নির্দেশ দেয়ার মাধ্যমে নারীদের উপর ফরয করা হয়েছে ৷

সৎ কাজের আদেশ ৷ অসৎ কাজের নিষেধ ৷ ভালো ও কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতা করা ৷ মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা পুরুষদের জন্য যেমনিভাবে ইসলাম ফরজ করেছে ৷ নারীদের জন্য ঠিক তেমনি একই নির্দেশের আলোকে ফরজ করা হয়েছে ৷

তবে কিছু কিছু আমলের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য কিছু ব্যতিক্রম ইসলাম দিয়েছে ৷ ইসলাম কোন কোন কারণে নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেছে ৷ আবার কখনও কখনও কষ্ট সহিষ্ণুতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে নারীদেরকে পুরুষদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা দিয়েছে ৷

আল কোরআনে সালাত কায়েম করার অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে আদায়ের বাধ্যবাধকতা বর্ণিত হয়েছে নারী-পুরুষ সকলের জন্য। শুধু পুরুষের জন্য নয়। আর নারীদের ঈদের জামাতে অংশ গ্রহণ করার ব্যাপারে রাসূলের (সাঃ) নির্দেশনা রয়েছে। এর ভিতর দিয়ে কল্যাণে, ধর্মীয় জ্ঞান আহরণে ও ইসলামী বিধান পালনে তারা পুরুষের মতো নিজেদের এগিয়ে রাখার সুযোগ নিশ্চিত করতে পারে।

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]নারীদের মসজিদে এসে নামাজের দলীল[/box]

নারীদের মসজিদে এসে নামাজের বিধান
নারীদের মসজিদে এসে নামাজের বিধান

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ لاَ تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللَّهِ مَسَاجِدَ اللَّهِ وَلَكِنْ لِيَخْرُجْنَ وَهُنَّ تَفِلاَتٌ ‏”‏ ‏.

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত :

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর বাঁদীদেরকে আল্লাহর ঘরে (মসজিদে) যেতে নিষেধ করো না। তবে তারা বের হওয়ার সময় যেন সুগন্ধি ব্যবহার না করে।

হযরত আয়েশা (রা) বলেন, ‘রাসূল (সা:) ফজর সালাত আদায় করতেন, তখন তাঁর সাথে মুমিন নারীরা চাদর পেঁচিয়ে নামাজ আদায় করতেন, তারপর তারা ফিরতেন, তাদেরকে কেউ চিনতে পারতো না।’ এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে তিনটি অনুচ্ছেদে উল্লেখিত হয়েছে। [বুখারী, খ. ১, পৃ. ৯৯; পৃ. ২০৮,খ. ৩, পৃ. ১৩০-১৩১]

سَمِعَ سَالِمًا، يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيهِ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِذَا اسْتَأْذَنَتْ أَحَدَكُمُ امْرَأَتُهُ إِلَى الْمَسْجِدِ فَلاَ يَمْنَعْهَا ‏”‏ ‏.‏

সালিম থেকে তার পিতার সূত্রে থেকে বর্ণিত :

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো স্ত্রী তার স্বামীর কাছে মাসজিদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে সে যেন তাকে নিষেধ না করে। (ই. ফা. ৮৭০, ই. সে. ৮৮৩)

أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ لاَ تَمْنَعُوا نِسَاءَكُمُ الْمَسَاجِدَ إِذَا اسْتَأْذَنَّكُمْ إِلَيْهَا ‏”‏ ‏.‏ قَالَ فَقَالَ بِلاَلُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ وَاللَّهِ لَنَمْنَعُهُنَّ ‏.‏ قَالَ فَأَقْبَلَ عَلَيْهِ عَبْدُ اللَّهِ فَسَبَّهُ سَبًّا سَيِّئًا مَا سَمِعْتُهُ سَبَّهُ مِثْلَهُ قَطُّ وَقَالَ أُخْبِرُكَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَتَقُولُ وَاللَّهِ لَنَمْنَعُهُنَّ ‏.‏

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত :

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের স্ত্রীরা মাসজিদে যাওয়ার জন্য তোমাদের কাছে অনুমতি চাইলে তাদের বাধা দিও না।

রাবী (সালিম) বলেন, বিলাল ইবনু ‘আবদুল্লাহ বললেনঃ আল্লাহর শপথ! অবশ্যই আমরা তাদেরকে বাধা দিব। রাবী ( সালিম) বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) তার দিকে ফিরে তাকে অকথ্য ভাষায় তিরস্কার করলেন। আমি তাকে এর আগে কখনো এভাবে গালিগালাজ করতে শুনিনি। তিনি আরো বলেন, আমি তোমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশ সম্পর্কে অবহিত করছি, আর তুমি বলছঃ আল্লাহর শপথ, অবশ্যই আমরা তাদেরকে বাধা দিব। ( ই. ফা. ৮৭১, ই. সে. ৮৮৪)

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]নারীদের ঈদের নামাজের বিধান[/box]

নারীদের ঈদের নামাজের বিধান
নারীদের ঈদের নামাজের বিধান

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরের দিন নবী করিম (সা:) সালাত আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন, প্রথমে সালাত আদায় করলেন, তারপর খুতবা দিলেন। ভাষণ শেষে মিম্বর থেকে নেমে তিনি মহিলাদের কাছে আসলেন, অতঃপর তাদেরকে উপদেশ দিলেন, এ সময় তিনি বেলালের (রা:) হাতে ভর দিয়েছিলেন। আর বেলাল (রা:) কাপড় মেলে ধরেছিলেন, যাতে নারীরা সাদাকা দিচ্ছিলেন।

আমি [ইবনে জুরাইজ] ‘আতাকে বললাম: [নারীরা কি] সাদাকা ফিতরা [আদায় করছিলেন]? আতা বললেন, না, এটি ছিল ওই সময় দানকৃত বিশেষ সাদাকা; রমণীরা নিজেদের আংটি খুলে দিচ্ছিলেন। আমি বললাম, বর্তমানে ইমামের কি উচিত হবে মহিলাদেরকে উপদেশ দেয়া? তিনি বললেন, এটি তাদের কর্তব্য, কেন তা তারা তা করবে না? [বোখারী, খ.১, পৃ.২৩৪]

হাদীসটি কমপক্ষে ছয়টি স্থানে বুখারীতে উল্লেখ করা হয়েছে। চারটিতে ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বাকী দুটিতে জাবির বিন আব্দিল্লাহ (রা:) হতে।

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]মহিলাদের জামাতে নামাজ আদায়ের বিধান[/box]

নারীদের জামাতে নামাজ পড়ার বিধান
নারীদের জামাতে নামাজ পড়ার বিধান

নারীদের জামায়াতের সাথে সালাত আদায় করা জায়েয ৷ তবে এটি ওয়াজিব নয় ৷ বিনা প্রয়োজনে মসজিদে এসে জামায়াতে অংশগ্রহণ করা মাকরূহ ৷

أَنَّ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ لَوْ أَدْرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا أَحْدَثَ النِّسَاءُ لَمَنَعَهُنَّ الْمَسْجِدَ كَمَا مُنِعَهُ نِسَاءُ بَنِي إِسْرَائِيلَ ‏.‏ قَالَ يَحْيَى فَقُلْتُ لِعَمْرَةَ أَمُنِعَهُ نِسَاءُ بَنِي إِسْرَائِيلَ قَالَتْ نَعَمْ ‏.‏

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহধর্মিনী ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত :

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি আজকের মহিলাদের এরূপ অবস্থা দেখতেন (যেমন সুগন্ধি লাগানো, বেপর্দা চলা), তাহলে অবশ্যই তিনি তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করে দিতেন। যেরূপ নিষেধ করে দেয়া হয়েছিল বনী ইসরাইলের মহিলাদের।

বর্ণনাকারী ইয়াহইয়াহ বলেন, আমি আমরাহকে বললাম, বনী ইসরাইলের মহিলাদের কি নিষেধ করা হয়েছিল? তিনি  বললেন হ্যাঁ।  –আবু দাউদ: ৫৬৯

এবার ভেবে দেখুন-রাসূল সাঃ এর তিরোধানের পর মুসলিম নারীরা এমন কি পোশাক পড়তেন, যার কারনে আম্মাজান হযরত আয়শা রাঃ একথা বলেছেন? আর বর্তমান নারীদের পোশাকের দৃশ্য দেখলে আম্মাজান আয়শা রাঃ কী বলতেন?

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ صَلاَةُ الْمَرْأَةِ فِي بَيْتِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلاَتِهَا فِي حُجْرَتِهَا وَصَلاَتُهَا فِي مَخْدَعِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلاَتِهَا فِي بَيْتِهَا ‏”‏ ‏.‏

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত :

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নারীদের জন্য ঘরের আঙ্গিনায় সলাত আদায়ের চেয়ে তার গৃহে সলাত আদায় করা উত্তম। আর নারীদের জন্য গৃহের অন্য কোন স্থানে সলাত আদায়ের চেয়ে তার গোপন কামরায় সলাত আদায় করা অধিক উত্তম। -আবু দাউদ: ৫৭০

আব্দুল্লাহ বিন সুয়াইদ আল আনসারী রাঃ তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু হুমাইদ আস সায়িদী এর স্ত্রী রাসূল সাঃ এর কাছে এসে  বললেন হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আমি আপনার সাথে নামায পড়তে পছন্দ করি। তখন নবীজী সাঃ বললেন-আমি জেনেছি যে, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে পছন্দ কর।  অথচ তোমার একান্ত রুমে নামায পড়া উত্তম তোমার জন্য তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়া উত্তম তোমার বাড়িতে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বাড়িতে নামায পড়া উত্তম তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়া উত্তম আমার মসজিদে [মসজিদে নববীতে] নামায পড়ার চেয়ে।  তারপর তিনি আদেশ দিলেন তার গৃহের কোণে একটি রুম বানাতে। আর সেটিকে অন্ধকারচ্ছন্ন করে ফেললেন। তারপর সেখানেই তিনি নামায পড়তেন মৃত্যু পর্যন্ত।

সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৬৮৯,

নারীদের ঈদের নামাজ ও মসজিদে জামাতে অংশগ্রহণে ইসলামী বিধান

নারীদের ঈদের নামাজ পড়ার বিধান
নারীদের ঈদের নামাজ পড়ার বিধান

সুপ্রিয় পাঠক! উল্লেখিত হাদীসগুলো পাঠে আমরা একটা সমাধানে পৌঁছতে পারি ৷ নারীদের জন্য জামায়াতে সালাত আদায় এবং ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয় ৷ ঐচ্ছিক ৷ ঋতুবতী মহিলাগণও ঈদগাহে উপস্থিত হতো। অথচ, শরীয়তে ঋতুবতী মহিলাদের জন্য নামাজ পড়া সম্পূর্ণ হারাম। সুতরাং, তাদের ঈদগাহে বা জামাতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি যদি শুধুমাত্র নামাজের জন্য হতো, তবে ঋতুবতী মহিলাগণ ঈদগাহে উপস্থিত হতো না।

মূলতঃ প্রথম যুগে নামাজসহ অনুষ্ঠানাদিতে মহিলাদের উপস্থিত হওয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল বেদীনদের সম্মুখে মুসলমানদের জনসংখ্যা ও জনশক্তি বৃদ্ধি করা ৷ এবং তালিম গ্রহণ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিত্যনতুন আদেশ নিষেধ নাজিল হতো, তা যেন পুরুষ-মহিলা সকলে সমভাবে জানতে পারে, সে কারণে তাদেরও উপস্থিত হওয়ার অনুমতি ছিল।

পড়ুনঃ স্বামীকে ভাই অথবা স্ত্রীকে বোন ডাকার শরঈ বিধান

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে মহিলাদের যথারীতি মসজিদে এসে জামাতের মাধ্যমে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা ছিল। তখন প্রথমে পুরুষ এরপর বাচ্চা ছেলেরা ও এরপর মহিলারা নামাজ পড়তে দাঁড়াতেন। পরবর্তীতে পর্দার হুকুম নাজিল হয় এবং মহিলাদের জামাতে আসতে নিরূৎসাহিত করা হয়। যার প্রমাণ নীচের হাদীসটি ৷

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لاَ تَمْنَعُوا نِسَاءَكُمُ الْمَسَاجِدَ وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ ‏”‏ ‏.‏

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত :

তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের নারীদের মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম। -আবু দাউদ: ৫৬৭

নবীজী সা: এর যুগেই নারীরা মসজিদে আগমনে বিশৃংখলা এড়াতে সুগন্ধী মেখে আসতে নিষেধ করা হয় ৷

পরবর্তী সময়ে হযরত উমর (রা.) এর খিলাফতকালে পর্দার গুরুত্ব ও মহিলাদের ঘরে নামাজ পড়ার উৎসাহ ও ফজিলতপূর্ণ হাদীস শরীফের দিকে লক্ষ রেখে আমীরুল মো’মেনীন হযরত ওমর (রা.) ইজতেহাদ করে মহিলাদের মসজিদে এসে জামাতে নামাজ পড়তে নিষেধ করে দেন। তখন তাতে কোন সাহাবীই আপত্তি করেননি। এতে প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এই নিষেধাজ্ঞায় সম্পূর্ণ একমত ছিলেন। মহিলারা হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) এর নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন, তখন হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যদি হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের এ অবস্থায় পেতেন, তবে অবশ্যই তিনিও তোমাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করতেন’ (সহিহ বুখারী, হাদীস: ৮৬৯, মুসলিম, হাদীস: ৪৪৫, আবু দাউদ, হাদীস: ৫৬৯)।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলেও দেখা যায়, সাহাবীগণের অনেকেই মহিলাদের মসজিদে আসার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে পরিস্থিতির আলোকে হযরত উরওয়া (রহ.), হযরত কাছিম (রহ.), হযরত ইব্রাহীম নাখয়ী (রহ.) প্রমুখ বিশিষ্ট তাবিঈ নিষেধের পক্ষে চলে যান। ইমাম ও মুজতাহিদগণ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কোনো কোনো নামাজে আসতে মত প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে শুধু বয়স্কা বৃদ্ধা মহিলাদের জন্য অনুমতি ব্যক্ত করেন।

এই দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে বর্তমান সময়ের ওলামায়ে কেরামগণ মহিলাদের মসজিদে জামাতের সাথে নামাজ আদায় ৷ অথবা ঈদের জামায়াত ও জুমার সালাতের নয় বরং বাসায় নামাজ পড়াকে উত্তম বলে গণ্য করেন ৷ তবে কোন মসজিদে যদি পর্দার ব্যবস্থা থাকে এবং সেখানে মহিলারা স্বতঃস্ফূর্ত নামাজ আদায় করতে আসেন এবং কোন ফেতনার আশঙ্কা না থাকে তবে সেখানে মহিলারা এসে ঈদের নামাজ জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতে পারবেন ৷

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]মসজিদে নারীদের পৃথক নামাজের ব্যবস্থা থাকা উচিত[/box]

মসজিদে নারীদের পৃথক নামাজের ব্যবস্থা থাকা
মসজিদে নারীদের পৃথক নামাজের ব্যবস্থা থাকা

নারীরা আমাদের সমাজের একটা অংশ ৷ এবং তারা বৃহৎ একটি অংশ ৷ বিভিন্ন প্রয়োজনে তাদের বাইরে বেরোতে হয় ৷ বর্তমানে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মুসলিম নারীদের অনেককেই পড়াশোনা, চাকরি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, বিভিন্ন সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে ঘরের বাইরে অবস্থান করতে হয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় মসজিদগুলোতে নামাজের ব্যবস্থাপনা না থাকাতে তাদের অধিকাংশ সময় পথের নামাজগুলো কাজা হয়ে যায় ৷ এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় ৷

তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, কোনো ধর্মপ্রাণ নারী তার স্বামী, সন্তান, পিতা বা ভাইয়ের সাথে কেনাকাটা করতে বা কোথাও বেড়াতে বের হয়ে থাকেন। এ অবস্থায় পুরুষরা নিকটবর্তী মাসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারলেও নারীদের জন্য পৃথক কোনো নামাজের জায়গা না থাকায় প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা নামাজ আদায় করতে পারছেন না।

এ কারণে বিশেষত জনসমাগম এবং বাজার ঘাট বিভিন্ন যাত্রাপথের মসজিদগুলোতে নারীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থাপনা থাকা উচিত ৷ যাতে করে তারা বাজার ঘাট করতে আসলে অথবা কোথাও প্রয়োজনের তাগিদে যাত্রাপথে থাকতে তাদের নামাজ কাজা হয়ে না যায় ৷ তাঁরা স্বচ্ছন্দে পুরো পর্দার ব্যবস্থার সাথে নামাজ গুলো আদায় করতে পারে ৷

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অফিস-আদালত, শিল্পকারখানা, শপিং সেন্টার, বাসস্টেশন, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, যানবাহন-যাত্রাপথ, পর্যটন এলাকা, বিনোদন কেন্দ্র, হোটেল-মোটেলসহ সব জায়গায়ই পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যেন শরিয়তসম্মতভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন সে ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবেন।

শিক্ষা
১) কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও কিয়াসের বাইরে কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়।

(২) প্রথম যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য বেদ্বীনদের সম্মুখে মুসলমানদের জনসংখ্যা ও জনশক্তি বৃদ্ধি দেখানো এবং তালীম গ্রহণ করা।

(৩) মহিলাদের জন্য ঘরে নামাজ পড়া অধিক ফজিলত।

(৪) হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করেন ও উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) তা সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করেন।

(৫) পরবর্তীতে ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বিনা শর্তে মহিলাদের জামাতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী ফতওয়া দেন এবং এর উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়।

(৬) শহরে, নগরে, ব্যস্ততম এলাকায় ও যাত্রাপথে, স্টেশনে নারীদের পৃথক নামাজের ব্যবস্থা থাকা উচিত ৷

শেষ কথাঃ

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *