পোশাক সম্পর্কে ইসলামের বিধান

পোশাক সম্পর্কে ইসলামের বিধান

আসসালামুআলাইকুম! সুপ্রিয় পাঠক! কেমন আছেন? তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে পোশাক নিয়ে ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় মূর্খ শিক্ষার্থী পোশাকের স্বাধীনতাতে মানববন্ধন করছে ৷ তারা যে সকল কথাবার্তা উগরে দিচ্ছে তা কতটা মানব সভ্যতার সাথে সামঞ্জস্য তা সচেতন মহল যথেষ্ট অবগত আছেন ৷

তাদের মধ্যে একজন ব্লাউজহীন শাড়ি পড়ে তার পিঠ হাতের কর্নার প্রদর্শন করে পোশাকের স্বাধীনতা চাচ্ছে ৷ এর পেছনে সে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছে তার দাদি এরকম পোশাক পরতো ৷ আদিম যুগে তো গাছেল বাকল ইত্যাদি পরতো লোকেরা ৷ সে কি তাতে ফিরে যাবে?

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]পোশাক সম্পর্কে ইসলামের বিধান[/box]

আসলে একটা সময় এরকম ছিল যখন পুরনো সভ্যতায় মানুষ পোশাক-আশাক সম্পর্কে অতটা আধুনিক হতে পারেনি ৷ আধুনিক কল-কারখানা হওয়ার সুবাদে পোশাক পরিচ্ছেদের বাহারি রং নানা ঢং চলে আসছে ৷ মানুষ সভ্য হতে শিখেছে ৷ তারা সুলভ মূল্যে পোশাক পরিচ্ছেদ কিনতে পারছে ৷

পোশাক সম্পর্কে ইসলামের বিধান
পোশাক সম্পর্কে ইসলামের বিধান

আগের সময় মানুষ এতটা উন্নতির শিখায় পৌছতে পারেনি বলে টয়লেট বা বাথরুম ব্যবহারে তারা অনভিজ্ঞ ছিল ৷ এবং কাঁচা ল্যাট্রিন তারা ব্যবহার করত ৷ ধীরে ধীরে মানুষ সভ্য হতে শিখেছে ৷ তারা কাঁচা ল্যাট্রিন ছেড়ে এখন পাকা, স্বাস্থ্যসম্মত বাথরুম ব্যবহার করছে ৷ এখন কেউ যদি এসে সেই পুরনো সভ্যতার দিকে কাউকে আহবান জানায় সেজে কতটা অবিবেচক এবং মূর্খ তা সহজেই অনুমান করা যায় ৷ তাকে নিয়ে মাতামাতি বা লাফালাফি করার প্রয়োজন নেই ৷ এই মেয়েটি আসলে মূর্খ এবং সমাজের কীট ৷

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]মেয়েদের পোশাক নিয়ে হাদিস[/box]

সমাজে দুটি শ্রেণি রয়েছে নারী এবং পুরুষ ৷ নারী নারীর মতো পোশাক পরিচ্ছেদ পরবে ৷ নারী নারীর মতো চালচলনে অভ্যস্ত হবে ৷ এটাই স্বাভাবিক ৷ আর পুরুষ তার কর্মক্ষেত্র তার পোশাক পরিচ্ছেদে পৌরুষের পরিচয় দিবে এটাই তো হওয়ার কথা ৷ কিন্তু কোন নারী যদি পুরুষের বেশভূষা এবং তার আচার-আচরণ ধারণ করতে চায় ৷ আর কোন পুরুষ যদি কোন নারীর চাল চলন বেশভূষা কর্মক্ষেত্র ধারণ করতে চায় ৷ এটা তাদের হীনমন্যতার বহিঃপ্রকাশ ৷

মেয়েদের পোশাক সম্পর্কে হাদীস
মেয়েদের পোশাক সম্পর্কে হাদীস

কারণ পুরুষ পুরুষের জায়গায় সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ ৷ আর নারী নারীর জায়গায় মহিমান্বিত ও শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার ৷ কেউ কাউকে টপকানোর কিছু নেই ৷ পুরুষ নারী একে অপরের পরিপূরক ৷ একজনকে বাদ দিয়ে অপরজনকে নিয়ে চলা সম্ভব নয় ৷ রাসুলুল্লাহ (সা.) ওই সব পুরুষকে অভিশাপ দিয়েছেন, যারা নারীদের অনুকরণ করে। আবার ওই সব নারীকে অভিশাপ দিয়েছেন, যারা পুরুষদের অনুকরণ করে। (বুখারি: ৫৫৪৬)

আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর। আর তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-৯১) মানুষের সৌন্দর্য, রুচিবোধ ও ব্যক্তিত্ব যার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায় তা হলো পোশাক। বাংলায় পোশাক শব্দটির কুরআন-হাদিসের ভাষা হলো ‘লিবাস’। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বনি আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে আর অবতীর্ণ করেছি সাজ-সজ্জার পোশাক; আর তাকওয়ার পোশাকই উত্তম।’ (আল কুরআন-৭ : ২২)

স্বাধীন পোশাকের অনুমতি ইসলামে আছে কি?
স্বাধীন পোশাকের অনুমতি ইসলামে আছে কি?

আল্লাহর নিয়ম মেনে জান্নাতে সর্বপ্রথম পোশাক পরেছিলেন হজরত আদম ও হাওয়া আ:। আর তা কৌশলে খোলার ব্যবস্থা করেছিল মানবতার প্রকাশ্য শত্রু ইবলিশ। আজকে শয়তানের প্রেতাত্বারাও নগ্ন পোশাক পরিধানের জন্য আন্দোলন করছে ৷ পোশাক খুলে নগ্ন করে দেয়ার বিষয়টি খুবই ন্যক্কারজনক বলেই মহান আল্লাহ তায়ালা তা কুরআনে স্থান দিয়ে বলেন, ‘অতঃপর প্রতারণাপূর্বক তাদেরকে সম্মত করে ফেলল। অনন্তর যখন তারা বৃক্ষ আস্বাদন করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের সামনে খুলে গেল এবং তারা নিজের ওপর বেহেশতের পাতা জড়াতে লাগল।’ (আল কুরআন-৭:২২) তাহলে দেখা গেল পোশাক যদি নাও থাকে মুসলমানদের নগ্ন থাকা যায় না। গাছের পাতা দিয়ে হলেও লজ্জা রক্ষার চেষ্টা করতে হয়।

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]ইসলামে পুরুষের পোশাকের বিধান[/box]

 

যেসব পোশাক পরা জায়েজ নেই

  • রেশমি কাপড়,
  • শরীরের অভ্যন্তর দেখা যায় এমন পাতলা কাপড়, অন্য ধর্মের ধর্মীয় পোশাক,
  • বেদ্বীনদের সংস্কৃতির অংশ এমন পোশাক,
  • এমন পোশাক যা পরলে উলঙ্গ মনে হয়,
  • বিপরীত লিঙ্গের পোশাক,
  • এতটুকু কাপড় পরা যাতে সতর ঢাকে না,
  • অতিমাত্রায় লাল ও হলুদ রঙের,
  • বিকৃত রুচির,
  • শরীরের আকৃতি প্রকাশ করে এমন আঁটসাঁট পোশাক,
  • কৃপণতা প্রকাশ করে এমন পোশাক এবং অহঙ্কারের পোশাক নিষেধ করেছেন।
ইসলামে পুরুষের পোশাকের বিধান
ইসলামে পুরুষের পোশাকের বিধান

সবচেয়ে প্রশংসনীয় পোশাক হলো যে রঙ, কাটিং ও ডিজাইন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা: পরেছেন। ইসলামে অননুমোদিত পোশাক যেহেতু চিহ্নিত তাই পোশাকের স্বাধীনতার সীমানা ব্যাপক ও সীমাহীন।

আর তিনি মুমিন মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন এমন কিছু পোশাক যা তার পুরো দেহের কোনো অংশকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রকাশ করে। কারণ নারীর আপাদমস্তক যৌনাঙ্গের ন্যায় ঢেকে রাখার হুকুম রাখে।

তার বৈধ পোশাকও এতটা আকর্ষণীয় হবে না যা অন্যকে আকর্ষণ করে। শ্রমজীবী, কর্মজীবী বা গৃহিণী যে-ই হোক না কেন একই হুকুম সমানভাবে প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে যে নারী নিজ দেহের যতটুকু যতবার যতদিন গাইরি মাহরামের সামনে প্রকাশ করবে সে ততটুকু ততবার ততদিন হারাম কাজের পাপী হবে।

শুধু তা-ই নয়, এরকম নারী পরিবার ও সমাজের জন্য অভিশাপের কারণ। ইসলাম নির্দেশিত পোশাক পরা নিছক কোনো সংস্কৃতি নয়, কোনো দলের বা মতের ইউনিফর্ম নয়, এটা সুস্পষ্ট ইবাদত। যা পালনে রয়েছে সওয়াব ও পালন না করলে রয়েছে নিন্দা বা জাহান্নাম। কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রের নিয়ম দ্বারা এ ইবাদত সীমাবদ্ধ হবে না। ইসলামে অনুমোদিত সব পোশাকই ইসলামী। কোনো সন্ত্রাসী, বেদ্বীন কাফির-মুশরিক যদি ইসলামের পোশাক পরে কোনো অপকর্ম করে তবে সে দায় ইসলাম ও মুসলমানের নয়।

আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু লেখা

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *