বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে যাকাত দিলে আদায় হবে কি?
আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ প্রিয় পাঠক! আশা করছি ভাল এবং সুস্থ আছেন ৷ বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের যাকাত ফান্ড নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে ৷ একজন বিধর্মীর নেতৃত্বাধীন এই প্রতিষ্ঠানকে যাকাত দেয়া যাবে কিনা? দিলে আদায় হবে কিনা? বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে যাকাত দিলে আদায় হবে কি? এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে ৷ আমরা এ নিয়ে নির্মোহ আলোচনা করতে চাই ৷ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এই যাকাতের বিধান আদায়ে আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার ৷ পুরো আর্টিকেল পড়ুন ৷ সাথেই থাকুন ৷
আরও পড়ুনঃ ১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে যাকাত দিলে আদায় হবে কি?
আমরা যারা ইসলাম সম্পর্কে তেমন বেশি জানি না তারা ছোটবেলাতেও ইসলাম শিক্ষা বইয়ে পড়েছি ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটি। কালেমা, নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাত। কালেমা কীভাবে পড়তে হবে, নামাজ কীভাবে পড়তে হবে, রোযা কীভাবে রাখতে হয়, ভাঙতে হয়, হজ্ব কোথায় গিয়ে করতে হয়, যাকাত কাকে দিতে হয়, কখন দিতে হয় এগুলোর জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম আছে।
মনে করুন, আপনি নামাজ আদায় করবেন। জামাআতে গিয়ে নামাজ পড়ার জন্য মনঃস্থির করলেন। মসজিদে গিয়ে দেখলেন মহাত্মা গান্ধী এসেছেন ইমামতি করতে। আপনার এলাকা, আশেপাশের এলাকায় অনেক মসজিদ তিনি তৈরি করে দিয়েছেন, অনেক মাদ্রাসা তিনি চালান। উনাকে অনেক মানবিক ভাবেন, দানশীল ভাবেন তবুও আপনি কি তার ইমামতি মেনে সালাত আদায় করবেন? অমুসলিম ইমামের পেছনে সালাত আদায় করলে সেই সালাত হবে?
যদিও সে অনেক দানশীল, যে মসজিদে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছেন সেটাও তার বানানো, সে অনেক মানবিক তবুও শরীয়ত বলছে ইমামতির জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে ব্যক্তি মুসলমান হতে হবে। খুব সহজ বিষয় তাই না? আরেকটা জিনিস যুক্ত করি।
গান্ধী সাহেবের ইমামতি না মেনে আপনি যখন চলে যাচ্ছেন তখন মসজিদের ইমামসহ কয়েকজন আলেম বললেন আমরাও উনার পেছনে নামাজ পড়বো। আপনি নিশ্চিন্তে পড়তে পারেন।
তখনো আপনি সেখানে থাকবেন নাকি চলে আসবেন? নিশ্চয়ই চলে আসবেন!
একইভাবে যাকাতের ক্ষেত্রেও এমন সুস্পষ্ট বিধান আছে। টাকা দান করলেই যাকাত হবে না। যাকাতের পরিমাণ, খাত সবকিছু সুনির্ধারিত। সালাতের মতো এটাও সামর্থ্যবানের জন্য ফরজ ইবাদত। যাকাতের হিসাবও সুক্ষ্ম হিসাব। বেশি দিলে গুনাহ নেই তবে কম দিলে গুনাহ হবে।
আবার যাকাত যাদেরকে দিতে পারবেন না তাদেরকে যাকাতের অর্থের চেয়ে দশগুণ বেশি দিলেও আপনার যাকাত আদায় হবে না। ফরজ শব্দের অর্থ অবশ্যপালনীয়, না পালন করলে গুনাহ হবে। দান, সদকাহ যাকাতের অন্তর্ভুক্ত না, সেটা আলাদা বিষয়। মানবিক হয়ে আপনি যে-কোনো ধর্মের মানুষকে দান করতে পারবেন তবে যাকাত সবাইকে দেয়া যাবে না, এটা শুধুমাত্র মুসলিমদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
নামাজের ঘটনাটা সবাই বুঝলেও যাকাতের বেলায় জিনিসটা অনেকে মেনে নিতে পারে না। অনেকেই ভাবে, “বিদ্যানন্দ মানবিক সংগঠন। আমার যাকাত আমি এখানেই দিব।” অথচ ইবাদত একগুঁয়েমি দেখানোর জায়গা না ভাই। আপনি ইবাদত পালন করবেন কিন্তু আল্লাহর নিয়মের বাইরে গিয়ে সেটা করতে গেলে কখনোই ইবাদত পালন করা হবে না।
বিদ্যানন্দ হলো ইসকনের একটি সংগঠন। ইসকন হলো হিন্দুদের মধ্যে বিশেষ এক সম্প্রদায়। এই সংগঠনের টাকা ইফতারের জন্য, গরিবের জন্য ব্যয় হয় আবার পূজার সময়, বিভিন্ন ধর্মের অনুষ্ঠানের সময় নানা ধর্মের মানুষকেও সহায়তা করা হয়। যাকাতের জন্য এই প্রতিষ্ঠান কখনোই নির্ভরযোগ্য না। এইটুকু অনেকেই সহজে বুঝতে পারেন।
সমস্যাটা হয় যখন কিছু আলেম কিংবা ইসলামী ব্যক্তিত্বকে এই সংগঠনের যাকাতের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দেখেন তখন দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যান। প্রথমত, বিদ্যানন্দ যেভাবে যাকাতের টাকা নেয় সেটা আলাদাভাবে হিসাব রাখা সম্ভব না। টাকাটা কোথায় যাবে সেটা সেই দায়িত্বশীল ব্যক্তি ঠিক করে দিতে পারলেও আপনার যাকাতের টাকা কিংবা মুসলমানদের যাকাতের মোট টাকার হিসাব রাখাটা জটিল, দায়িত্বশীলদের সবাই ইসলামের জ্ঞান রাখে না বিধায় টাকাগুলো যথাযথ খাতে ব্যবহার না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
দ্বিতীয়ত, এসব আলেম কিংবা ইসলামী ব্যক্তিত্ব অনেকসময় নিজের প্রচার-প্রসারের জন্য, মিডিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হওয়ার জন্য কিংবা অজ্ঞতাবশত এসব প্রতিষ্ঠানের যাকাতের দায়িত্বে থাকে। এই সরল আলোচনার পর আপনিও পরিষ্কার হওয়ার কথা যে যাকাত কেন বিদ্যানন্দে দেয়া আপনার জন্য নিরাপদ না। শায়েখ আহমদউল্লাহসহ অনেক আলেমের স্পষ্ট ফতোয়া আছে এই ব্যাপারে যে বিদ্যানন্দে যাকাত দেয়া যাবে না।
পরিশেষে বলা যায়, যাকাতটা আল্লাহর দেয়া নিয়মে আদায় করতে হলে এই ব্যাপারে বিস্তারিত পড়াশোনা করা জরুরি। সর্বোত্তম হলো যাকাতের যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে নিজেই যাকাত পৌঁছে দেয়া। সেটা সম্ভব না হলে কোনো সংস্থার সাহায্য নেয়া যায়।
সেক্ষেত্রে মিডিয়ার সামনে সামাজিক কাজ করলেই সেটাকে একমাত্র যাকাতের জন্য যোগ্য সংগঠন ভাবা উচিত না। আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, সা’বা সানাবিল ফাউন্ডেশন, প্রজেক্ট দশ টাকা সহ বিভিন্ন ইসলামী সামাজিক সংস্থা আছে যারা যাকাতের ব্যাপারে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে যাকাত দিলে আদায় হবে কি?
বিভিন্ন দূর্যোগ, বিপর্যয়, রমাদানে ইফতার পৌঁছে দেয়াসহ মানুষের সার্বিক সহায়তায় এসব প্রতিষ্ঠান গোপনে, প্রকাশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নাম যদি না শুনে থাকেন তবে এর কারণ হলো উনারা প্রচারবিমুখ, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আড়ালে থেকেও কাজ করে যাচ্ছেন আলহামদুলিল্লাহ।
যাকাতের আমানত তার কাছেই পৌঁছে দিন যারা যাকাতের জ্ঞান রাখে, যারা বিশ্বস্ত, যারা যাকাতের বিধানের মালিকের ইবাদত করে।
যাকাত একটি ফরয ইবাদত। এটি বিদ্যানন্দের মতো ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান/আদায় করা বৈধ নয়। সাধারণ দান-খয়রাত, অনুদানের কোনো অংশ তাদেরকে দেওয়া যেতে পারে। যাকাত এবং এ-জাতীয় ওয়াজিব কোনো আর্থিক দান তাদেরকে দেওয়াটা কোনো ভাবেই জায়েয নয়।
গুনাহের কাজে দান-সহায়তা করা হারাম ও কবিরা গুনাহ
জাকাত বা সাদকা নিজে বিতরণ করুন কিংবা বিশ্বাসী আস্থাভাজন আলেমগণের মাধ্যমে প্রদান করুন।
অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি, সংগঠন বা সংস্থাকে জাকাত-সাদকা দিলে তা আদায় হবে না।
মনে রাখবেন, জাকাত দেওয়া যেমন ফরজ, এটি শরীয়ত নির্ধারিত খাতে দেওয়া ফরজ। পাশাপাশি গ্রাহক যে জাকাতের হকদার সেটি নিশ্চিত হওয়ার পরই তাকে জাকাত দেওয়া ফরজ। ইচ্ছে মতো যার তার হাতে জাকাত তুলে দিলে জাকাতের ফরজ আদায় হবেনা।
বিধর্মী লোককে বা ধর্মহীন সংস্থাকে জাকাত সাদকা বন্টনের দায়িত্ব দিলে, আদায় তো হবেইনা বরং ইবাদতের মধ্যে মারাত্মক অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে শক্ত গুনাহ হবে। শির্ক, কুফর বা কবিরা গুনাহের কাজে অর্থ সাহায্য করা হারাম।
বর্তমানে কত টাকা থাকলে থাকলে যাকাত ফরজ হয়
যাকাতের পরিমাণ হবে দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণের পর সাড়ে বায়ান্ন তোলা পরিমাণ রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ স্বর্ণ থাকলে অথবা এর সমমূল্যের ব্যবসার মালিকানা থাকলে মোট সম্পদের আড়াই শতাংশ হারে যাকাত দিতে হবে।
শেষ কথা
সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷
আসসালামু আলাইকুম, বিদ্যানন্দ ইসকনের সংগঠণ এটার ব্যাপারে কি আপনি শতভাগ নিশ্চিত? যদি না হয়ে থাকেন তাহলে না জেনে একটা বিসয় বলে আপনি যে মিথ্যাচারটি করলেন এর সপক্ষে কোনো যুক্তি দিতে পারবেন?