মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু ৷ সুপ্রিয় পাঠক! আমার ওয়েবসাইটে আপনাদের স্বাগতম ৷ আজ আমরা পৃথিবীর সেরা এবং বিখ্যাত মহামানব বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবনী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব ৷ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লামের জীবনী ছোট এই নিবন্ধ প্রকাশ করা সম্ভব না ৷ তবুও আমরা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহানবী সাঃ এর ভূমিকা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ ৷
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুহাম্মাদ সাঃ এর আদর্শ
দীদার মাহদী
মূলত পৃথিবী থেকে সবরকমের জুলুমের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব উপহার দিতেই আগমন করেছিলেন হযরত মুহাম্মাদ সাঃ ৷ ইসলামের এই মহান দিশারি শান্তির পয়গাম নিয়ে ৫৭০ সালে ১২ রবিউল আউয়াল মক্কার সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে শান্তি, নিরাপত্তা ও কল্যাণের মূর্ত প্রতীক ৷ কুরআনের ভাষায় ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’।
মানবসমাজের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলা শান্তির বাণীবাহক ও দূতস্বরূপ রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। তিনি মানবগোষ্ঠীর প্রতি সত্য প্রচারে নিবিষ্ট হন এবং তাদের সরল, সঠিক ও শান্তির পথে পরিচালিত করেন। যাতে তারা জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে আর ইহকালীন শান্তি ও পারলৌকিক সৌভাগ্য লাভ করতে সক্ষম হয়।
আর অশান্ত পৃথিবীতে শান্তির স্নিগ্ধ-বাতাস বইয়ে দেওয়ার জন্যেই তো—মহান বিধাতা আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছিলেন। তাই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ছুটেছেন শান্তির ফেরি করে। শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় করেছেন নিরন্তর সংগ্রাম ও সাধনা।নবী করিম (সা.)-কে শান্তি, মুক্তি, প্রগতি ও সামগ্রিক কল্যাণের জন্য বিশ্ববাসীর রহমত হিসেবে আখ্যায়িত করে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমতরূপে প্রেরণ করেছি।’ [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭]
আরও পড়ুনঃ সফল হওয়ার গোপন কৌশল
গোত্রনেতাদের স্বেচ্ছাচারিতা-হঠকারিতা, কুলিনদের দাম্ভিকতা, পুঁজিবাদীদের আগ্রাসী থাবা কত মারাত্মক-ভয়ঙ্কর এবং মনাবসমাজ ও জীবনযাত্রা অশান্তি, নিরাপত্তাহীনতার গহ্বরে তলিয়ে যেতে পারে তা তিনি কৈশোরেই আঁচ করেছিলেন। তাই মানব-প্রকৃতি থেকে হয়তো তিনি পণ করেছিলেন, পৃথিবীতে শান্তির আবহ ও পরিবেশ গড়ে তুলতেই হবে। যে পেরশানী নিয়ে তিনি আগমন করেছেন, তা বাস্তবায়নে ছিলেন সদা তৎপর ৷
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকাঃ
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মহানবী সাঃ এর ভূমিকা অনন্য ও অসাধারণ ৷ আরবের বিশৃংখল জাতিকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন তার সুমহান আদর্শ দিয়ে ৷ সকল প্রকার দল-মত ও গোত্রপ্রীতিকে ছাপিয়ে ধর্মবর্ণের ভেদাভেদ ভুলে তাদের সাথে শান্তি ও সন্ধিচুক্তি করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন ৷ তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করেছেন ৷ মদীনা সনদ ও হুদাইবিয়ার সন্ধি পৃথিবী খ্যাত শান্তি প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ৷
আপনি পড়ছেনঃ মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা
শান্তির নিমিত্ত যার জন্ম, আজীবন সে ঠিকানায় তিনি ছুটে চলবেন—এটাই স্বাভাবিক। তাই তো বোধহীন শৈশবে, দুরন্ত ও রাঙা কৈশোরে, উদীপ্ত তারুণ্যে এবং জীবনসায়াহ্নে তিনি ছুটেছেন একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে। লক্ষ্যে সদা অবিচল থেকে একটি সোনালী সমাজ বিনির্মাণে তার তুলনা সত্যিই বিরল ৷ শত বাধা বিপত্তি, শত জুলুম পেরিয়ে তিনি সফলতার মঞ্জিলে পৌঁছেছিলেন ৷
হিলফুল ফুজুল ও বিশ্বনবী
আরবরা ছিলো যুদ্ধবাজ জাতি ৷ ঠুনকো ঠুনকো বিষয় নিয়ে তারা বিবাদে লিপ্ত হতো ৷ যুগের পর যুগ এ যুদ্ধ চলতে থাকতো ৷ শত শত মানুষ প্রাণ হারাতো ৷ বিশ্বনবী সাঃ এর তারুণ বয়সে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামের শান্তিসংঘ গঠন করে তিনি এসব অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
যার মৌলিক স্লোগান ছিলো, আর্তের সেবা করা ৷ অত্যাচারীকে প্রতিরোধ করা ৷ অত্যাচারিতকে সহযোগিতা করা ৷ শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা এবং গোত্রীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা ৷ মানুষের কল্যাণে তার গড়া স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সাংগঠনিক রীতিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
এই সংগঠনের কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে আজো মানুষ সেবামূলক সংগঠন তৈরী ও জনকল্যাণে নিবোদিত প্রাণ হচ্ছে ৷
মদীনা সনদের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা
মক্কার মুশরিকদের তুমুল বিরোধিতা ও মাত্রাতিরিক্ত জুলুমের কারণে শান্তিপূর্ণভাবে দাওয়াতি কাজ যখন ব্যহত হলো তখন আল্লাহর নির্দেশে তিনি মদীনায় হিজরত করেন ৷ মদিনায় গিয়ে তিনি শান্তিপূর্ণ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দেখতে পান মদিনায় বসবাসরত মুসলমান, ইহুদি, খৃস্টান, পৌত্তলিক প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাজমান কলহ-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষপূর্ণ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ৷ ঘুণেধরা এই সমাজ পরিবর্তনের চিন্তা করেন তিনি ৷
আপনি পড়ছেনঃ মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা
বিশ্বনবী সাঃ একটি ইসলামী সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার সংকল্প করেন। তিনি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতাদের আহ্বান করে একটি বৈঠকে বসে তাদের বিশ্বমানবতার ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আবশ্যকতা বুঝিয়ে একটি সনদ প্রস্তুত করেন। মদিনায় বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সবাই এ সনদ মেনে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এভাবে তিনি মদিনার জীবনে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করে শান্তি স্থাপনের বলিষ্ঠ উদ্যোগ নেন। যেটা মানব ইতিহাসে প্রথম লিখিত সংবিধান ৷
হুদায়বিয়ার সন্ধির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা
পারতপক্ষে নিজে ঠকে যেই চুক্তি সংগঠিত হয়েছিলো, তা হুদাইবিয়ার সন্ধিচুক্তি ৷ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.) এর অনবদ্য ভূমিকার অনন্য স্মারক এই হুদায়বিয়ার সন্ধি। আল্লাহর রাসুল সাহাবিদের প্রবল মনোরোষ ও বিরোধিতা সত্ত্বেও কোরাইশদের সঙ্গে এক অসম চুক্তিতে উপনীত হলেন। বাহ্যিক পরাজয়মূলক হওয়া সত্ত্বেও কেবল শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে তিনি এ সন্ধিতে স্বাক্ষর করেন।
চুক্তির ছয়টি ধারার প্রতিটি ছিল চরম মানবতাবিরোধী ও বৈষম্যমূলক। চরম অপমানজনক ও বিদ্বেষপূর্ণ। চুক্তির ধারাগুলো পর্যালোচনা করলে সামান্য বোধের মানুষের মনেও প্রশ্নের উদয় হওয়ার কথা, হযরত মুহাম্মদ (সা.) কেন এমন চুক্তি স্বাক্ষর করলেন? তিনি তা করেছিলেন শুধুই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। বস্তুত অল্প সময়ের মধ্যেই তা প্রমাণিত হয়েছিল।
মক্কা বিজয়ে বিশ্বনবীর বিশ্ববার্তা
শান্তিপূর্ণভাবে চূড়ান্ত মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) পবিত্র কাবার চৌকাঠে হাত রেখে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন তার সামনে অতীতের সব জঘন্য অপরাধ নিয়ে অবনত মস্তকে দাঁড়িয়ে ছিল মক্কার অধিবাসীরা। তাদের ঘিরে নির্দেশের অপেক্ষায় তীক্ষ্ণ তরবারি হাতে মুসলিম সেনাদল দাঁড়িয়েছিল।
মক্কার অপরাধীদের সে সঙ্গীন মুহূর্তে মহানবী (সা.) চাইলে বলতে পারতেন, ‘যে হাত শান্তিকামী তাওহিদবাদীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছিল, ওই হাতগুলো কেটে দাও! যে চোখগুলো অসহায় মুসলমানদের দিকে হায়েনার হিংস্রতা নিয়ে তাকাত, সে চোখগুলো উপড়ে ফেলো! যে মুখ আল্লাহ, তার রাসুল ও মুমিনদের বিরুদ্ধে শুধুই মিথ্যা অপবাদ, বিষোদগার ও কুৎসা রটনা করে বেড়াত, সে জিবগুলো কেটে ফেলে দাও!’
তিনি চাইলে আরো ঘোষণা করতে পারতেন, ‘আজ থেকে কোরাইশ জালিমদের পুরুষরা বিজয়ী মুসলিম বাহিনীর গোলাম আর নারীরা দাসী হিসেবে গণ্য হবে। ’
কিন্তু না ৷ অত্যন্ত আশ্চর্যজনক হলো, কোরাইশরাও তাদের প্রাপ্য এমনটা ছিল বলে বিশ্বাস করেছিল; কিন্তু মহানবী (সা.) অপার বদান্যতা ও অনুপম মহানুভবতা দেখালেন। তিনি বলেছিলেন, ‘লা-তাছরিবা আলাইকুমুল ইয়াওম, ওয়া আন্তুমুত্তুলাক্বা। ’ অর্থাৎ ‘আজ তোমাদের কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, তোমরা সবাই মুক্ত-স্বাধীন। ’
শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে মক্কার জীবন ও মদিনার জীবন—সর্বত্রই ষড়যন্ত্র, সংঘাত, যুদ্ধ ও মুনাফেকি মোকাবেলা করতে হয়েছে তাকে। শত অত্যাচার-নির্যাতন ও যুদ্ধ করে আজীবন যে জাতি নবী করিম (সা.)-কে সীমাহীন কষ্ট দিয়েছে, সেসব জাতি ও গোত্রকে মক্কা বিজয়ের দিন অতুলনীয় ক্ষমা প্রদর্শন করে এবং তাদের সঙ্গে উদার মনোভাব দেখিয়ে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন। এভাবেই তিনি একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বসমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বুনিয়াদ রচনা করে গিয়েছিলেন ৷
আরও পড়ুনঃ দোয়া কি ভাগ্য পরিবর্তন করে?
তিনি প্রকৃত একজন শান্তির বার্তাবাহক
শুধু মুসলিম নয়, যুগে যুগে শত শত অমুসলিম পন্ডিতরা পর্যন্ত বিশ্বনবী সাঃ এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলো ৷ তার চারিত্রিক উৎকর্ষতার স্বীকৃতি তারা দিয়েছিলো, আজ দিচ্ছে ৷ খৃস্টান পন্ডিত মাইকেল এইচ হার্ট বিশ্বের সেরা একশো মণীষীর জীবনী রচনা করতে গিয়ে বিশ্বনবীকে এক নাম্বারে রেখেছে ৷
গুরু দত্ত সিং নবীজীকে ভালোবেসে বই রচনা করেছে ৷ যার বাংলা ‘তোমাকে ভালোবাসি হে নবী’ নামে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ৷ যতই বিশ্বনবীকে সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা হোক, তা বুমেরাং হবে ৷ তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ মহামানব ৷ শ্রেষ্ঠ বীর ৷ আল্লাহ আমাদের তার আদর্শ ধারন ও বাস্তবায়নের তাওফিক দিন ৷ আমীন ৷