মা দিবস রচনা | মাকে নিয়ে গল্প | Mother’s Day
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! কেমন আছেন আপনি? আশা করছি আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা’আলা আপনাকে ভালোই রেখেছেন। আজ মাকে নিয়ে একটি অনুচ্ছেদ ও গল্প লিখছি ৷ মা দিবস রচনা | মাকে নিয়ে গল্প | Mother’s Day ৷ আমাদের সাথেই থাকুন ৷
আরও পড়ুনঃ দ্রুত বিয়ের আমল ও দোয়া
মা দিবসের ইতিহাস
জন্মদাত্রী হিসেবে আমার, আপনার, সকলের জীবনে মায়ের স্থান সবার ওপরে৷ তাই তাঁকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানানোর জন্য একটি বিশেষ দিনের হয়ত কোনো প্রয়োজন নেই৷ তারপরও আধুনিক বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারটিকে ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে, যার সূত্রপাত ১৯১৪ সালের ৮ই মে থেকে৷
সন্তানের জন্য মায়ের যে আত্মত্যাগ তা কোনোভাবেই পূরণ হবার নয় ৷ সন্তান এক থেকে দশ বছর পর্যন্ত মায়ের প্রতি নির্ভর থাকে ৷ বিশেষত পাঁচ বছর পর্যন্ত ৷ এ সময়টা একজন মা তার সকল আরাম, আয়েশ ও আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে সন্তানকে লালনপালন করেন ৷ তার বিনিময় হবে কী দিয়ে? বছরে একটা দিন মাকে ভালোবাসবো? না ৷ এটা একটা দিবস মাত্র ৷ একজন মুসলিম তার মাকে প্রতিদিন ভালোবাসে ৷ প্রতি মুহূর্তেই তার প্রতি শ্রদ্ধা নিংড়ে দেয় ৷
ইসলামে মায়ের মর্যাদা
একমাত্র ইসলাম ধর্মেই মা কে দেওয়া হয়েছে অভাবনীয় মর্যাদা। মহান আল্লাহপাক রাসূল (সাঃ) এর পরে মাকে সর্বোচ্চ আসন দিয়েছেন। বলা হয়েছে “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”
হযরত মুহাম্মদ (সা:) নিকট এক সাহাবী জানতে চাইলেন আমার উপর কার অধিকার সবচেয়ে বেশি? রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন- তোমার মায়ের। এভাবে তিনবার প্রশ্ন করলে তিনবারই তিনি উচ্চারণ করেন মা। চতুর্থবার রাসুলুল্লাহ (সা:) উচ্চারণ করেন বাবা।
রাসূলে কারিম (সা:) বলেছেনঃ নারীর প্রতি সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার স্বামীর, আর পুরুষের উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার মায়ের। ( কানযুল উম্মালঃ ৪৪৭৭১, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ২৫৪ )
“আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো।” (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৬)।
‘আর আমি (আল্লাহ) মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছি তারা যেন তাদের পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করে; তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছেন ও অতিকষ্টে প্রসব করেছেন এবং লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)।
মা দিবস রচনা | মাকে নিয়ে গল্প | Mother’s Day
মা ৷ একটি অক্ষর ৷ একটি আকার ৷ এই ছোট্ট শব্দটির মাঝে কত কিছু লুকিয়ে আছে ৷ মরু প্রান্তরে প্রাণ ফিরে পাওয়ার মতো শব্দ ৷ সকল ভালোবাসার রেখা যেনো ওই মা শব্দে গিয়ে মিলিত হয়েছে ৷ কি চমৎকার! কি মধুমাখা এক শব্দ ৷ তুলনাহীন অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক ভালোবাসার উৎসের জায়গা মা ৷ মা মা-ই ৷ তার সাথে তুলনা করার কিছু নাই পৃথীবিতে ৷ মায়ের ভালোবাসার ওজন অনেক গভীর ৷ তা তলিয়ে দেখার ক্ষমতা কারো নেই ৷ রাব্বুল ইজ্জত এতো ভালোবাসা দিয়েই মাকে বানিয়েছেন ৷ সকল ভালোবাসার কাছে মায়ের ভালোবাসা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় নিমিষেই ৷ কোনো ভালোবাসাই এখানে টিকে না ৷ টিকতে পারে না ৷ কেবল মা-ই নিঃস্বার্থভাবে সন্তানকে ভালোবাসেন ৷ নিজের হাজারো কষ্ট দুঃখের মাঝে সন্তানের ভালো চান ৷ কল্যাণ কামনা করেন ৷ যন্ত্রণায় থেকেও সন্তানকে জান্নাতি হাসি উপহার দেন ৷ নিজের জীবনকে সন্তানের জন্য উৎসর্গ করে দেন ৷ মাথা পেতে নেন সব বিপদ আপদ ৷ একমাত্র মায়ের দ্বারাই এতো কিছু সম্ভব ৷
মায়ের গল্প
সাইফ এভাবেই তার মাকে নিয়ে ভাবছিলো কথাগুলো ৷ সাইফরা তিন ভাই ৷ কোনো বোন নাই ৷ সাইফই বড়ো ৷ আম্মু মেট্রিক পাশ ৷ আব্বু ইন্টার পাশ ৷ আম্মুর মেট্রিকের বছর বিয়ে হয় ৷ পরীক্ষার আগেই জন্ম হয় সাইফের ৷ পরীক্ষা দেয়া না দেয়ার দোলাচলে যখন আম্মু ভুগছিলেন, তখন আব্বুর কড়া সিদ্ধান্ত পরীক্ষা দিতে হবে ৷ সবকিছুর ব্যবস্থা আব্বুই করে দেন ৷ আম্মু ছোট্ট সাইফকে নিয়ে অবর্ণনীয় কষ্ট করে এসএসসি পরীক্ষা দেন ৷ সম্মানের সাথেই পাশ করেন ৷ জীবনটা ভালোই যাচ্ছিলো সাইফ ও তার আম্মুর ৷ জীবনের রঙ তখনই বদলালো ৷ যখন আম্মু সাইফদের বাড়িতে গেলেন ৷ সেখানে গিয়ে শুনতে পান সাইফের আব্বু আগে আরেকটি বিয়ে করেছেন ৷ সামাজিকভাবে নয় গোপনে ৷ সে মহিলার বাড়ি কাছেই ৷ মহিলাকে নিয়ে ঢাকা থাকে ৷
মায়ের কষ্টের গল্প
সাইফের আম্মুর মনটা খারাপ হয়ে গেলো ৷ তিনি মনে ভীষণ আঘাত পেলেন ৷ সাধারণত মহিলারা এই ধরণের পুরুষদের সংসার করতে মোটেও প্রস্তুত নন ৷ যারা একাধিক বিয়ে করেন ৷ এর কারণও আছে ৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইনসাফ করতে পারেন না পুরুষটি ৷ ইসলামও এই অসমতাকে সমর্থন করে না ৷ যদিও ইসলাম চারটি পর্যন্ত বিয়ের অনুমতি দিয়েছে ৷ সাথে এটাও বলেছে ইনসাফ করতে না পারলে একের অধিক নয় ৷ আর স্বামীর ভাগ অন্যকে কে-ই বা দিতে চাইবে! সাইফের আম্মু বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে নিলেন না ৷ তিনি সাইফের আব্বুকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করলেন ৷ আব্বু অস্বীকার করলেন ৷ না, কিছুতেই না ৷ অসত্য কথা ৷ যে বা যারা বলছে, মিথ্যা বলছে ৷ মোটেই এমনটা নয় ৷ মহিলা আমার কাছে কিছু টাকা পাবে ৷ এর বেশি কিছু নয় ৷
দুঃখিনী মায়ের গল্প
সাইফের আম্মুর কাছে তার বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো না ৷ অনেকেই ডিভোর্স দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল ৷ ভালো সম্বন্ধও এসেছিলো! এই প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলো, সাইফকে আপন সন্তানের মতো লালন পালন করবে ৷ সাইফের আম্মু ভীষণ শক খেলেন ৷ তদুপরি শুধুমাত্র, কেবলমাত্র, একমাত্র সাইফের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি অন্যকোন সিদ্ধান্ত নেননি ৷
ক্রমেই পরিষ্কার হচ্ছিল, সাইফের আব্বুর দ্বিতীয় বিবাহের কথা ৷ যদিও ওই স্ত্রীকে তিনি বাড়িতে উঠাতে পারবেন না ৷ সেও উঠবে বলে মনে হয় না ৷ বয়স্কা মহিলা ৷ আগেও দুটো বিয়ে হয়েছে ৷ সে ঘরে সন্তান আছে ৷ সাইফের আম্মু ভেবে পান না ৷ এই কি ছিলো ভাগ্যে! সবকিছু মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিলেন ৷ এরপর সাইফের আরো দুটি ভাই এলো ৷ তার বাবার সুমতি ফিরলো বলে মনে হলো না ৷ হঠাৎ কি হলো! সাইফের আব্বু নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন ৷ তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলো না ৷ জীবনের ছন্দপতন ঘটলো ৷ জীবন ক্রমেই দূর্বিসহ হয়ে উঠলো সাইফের আম্মুর ৷ জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রত্যয়ে হাল ছাড়লেন না তিনি ৷ অবর্ণনীয় কষ্ট ক্লেশ করে সন্তানদের লেখাপড়া করিয়ে যাচ্ছিলেন ৷
সাইফ জেডিসি পরীক্ষা দিবে সেবার ৷ বাড়ি থেকে বহুদূর কেন্দ্র ৷ থেকে পরীক্ষা দিতে হবে ৷ সবার কাছ থেকে বিদায় নিলেও আম্মু পিছু ছাড়ছেন না ৷ অনেক দূর পর্যন্ত আসলেন ৷ অভয় দিলেন ৷ দোয়া করলেন ৷ সবিশেষ বিদায়ে তিনি কেঁদে ফেললেন ৷ সাইফের চোখও ছলছল ৷ এই মহিলাটি বাবার অভাব পুরণ করছেন ৷ কত না কষ্ট সহ্য করেছেন ৷ খেয়ে না খেয়ে ৷ পুরোনো কাপড়ে ঈদ করে ৷ আমাদের যথেষ্ট দিয়েছেন ৷ একজন মা হিসেবে যা করার তার চেয়েও বেশি করেছেন ৷ করছেন ৷ সাইফ কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললো, মা! তোমার চোখের পানি সহ্য হয় না ৷ তুমি কেঁদো না ৷ আমরা তোমার এই দিন বদলিয়ে দেবো, ইনশাআল্লাহ ৷ তোমার সুখের দিন সামনে অপেক্ষা করছে ৷ তুমি শুধুই দোয়া করো ৷
জীবনের পরতে পরতে ঘটে যাওয়া স্মৃতিগুলো মনে পরছে সাইফের ৷ ও ঘুমিয়ে পরেছিল ৷ ঘুমিয়ে পরেছিল পুরো পৃথীবি ৷ এ বাড়ি ও বাড়ি কেউ জেগে নেই ৷ নীরব, নিস্তব্ধ পুরো এলাকা ৷ সাইফের ঘুম ভেঙে গেলো ৷ কান্নার শব্দে ৷ কান খাড়া করলো সাইফ ৷ এতে গভীর রাতে কে কাঁদে! হ্যাঁ, কান্নার আওয়াজ আম্মুর ঘর থেকে আসছে ৷ সাইফ উঠে বসলো ৷ তার সবকিছু মনে হতে লাগলো ৷ আজ দীর্ঘদিন যাবৎ সাইফের ছোটো ভাই রিফাত অসুস্থ ৷ কিছুতেই রোগ সারছে না ৷ আম্মু এই গভীর রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে কাঁদছে ৷ স্পষ্টই শোনা যাচ্ছে ৷ সাইফের দুচোখ দিয়ে দরদর করে গড়িয়ে পরলো কয়েক ফোটা অশ্রু ৷ স্বগোক্তি করতে লাগলো, মা মা-ই ৷ তুমি খোদার এক অপার বিস্ময় সৃষ্টি! এতো ভালোবাসা, দরদ, মোহাব্বত দিয়ে প্রভূ তোমায় সৃষ্টি করেছে যা ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব ৷ আল্লাহর পরেই তো তোমার স্থান ৷ তোমার পায়ে আমার জান্নাত ৷
শেষ কথা
সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷