আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্যই বিশ্ব মানবতার মুক্তির একমাত্র পথ । আবার বিশ্বনবির অনুসরণকে আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা লাভের পূর্বশর্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কুরআনুল কারিমে এমনই ঘোষণা দেয়ার পর আল্লাহ বলেন, ‘(হে রাসুল!) আপনি বলে দিন, আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য প্রকাশ কর। আর যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ৩২)
আরও পড়ুনঃ নবীজীর হিজরত ও আমাদের শিক্ষা
রাসূলুল্লাহ সা.-এর আনুগত্য ও অনুকরণের অপরিহার্যতা
বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ সা. কে বিশ্বাস করা ঈমানের অঙ্গ ৷ এই বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো, জীবনের সর্বক্ষেত্রে সুন্নাতের পরিপূর্ণ আনুগত্য করা। জীবনের সকল বিষয়ে সব ক্ষেত্রে মহানবির শিক্ষা, বিধান ও নির্দেশ দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নেয়া। এজন্য কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে, “আর তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাক তাহলে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য কর।” (সূরা আনফাল-১) তাই রাসূল (সা.)- এর আদর্শ বা সুন্নাহ অনুসরণ না করা বা অবহেলা করা কিংবা বিরুদ্ধাচরণ করা প্রকারান্তে আল্লাহর নির্দেশের অবজ্ঞা প্রদর্শনের শামিল।
কেউ কেউ নবিজির সুন্নাহ অস্বীকার করে শুধু কুরআনকে মানার কথা বলেন ৷ তাদের সম্পর্কে বিশ্বনবি সা. বলেন, ‘অচিরেই তোমাদের মধ্যকার কোন ব্যক্তি তার গদি আঁটা আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকাবস্থায় তার নিকট আমার নির্দেশিত কোন কর্তব্য বা নিষেধাজ্ঞা পৌছাবে, তখন সে বলবে, আমি অবহিত নই। আমরা যা আল্লাহ্র কিতাবে পাবো শুধু তারই অনুসরন করবো। [আবু দাউদ: ৪৬০৫]
রাসূল সা. এর উক্ত ভবিষ্যদ্বাণী হিজরী দ্বিতীয় শতকের শেষের দিকে বাস্তবে দেখা দেয়। এ সময় এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটে, যারা সুন্নাতকে অস্বীকার করে। ইমাম শাফেঈ এমন একজন হাদীস অস্বীকারকারী ব্যক্তির সাথে তার মুনাযারার কথা উল্লেখ করেছেন (কিতাবুল উম্ম ৭/২৮৭-২৯২)।
সেখানে তিনি তার দাবীর অসারতা প্রমাণ করেছেন। অতঃপর দীর্ঘ এগারো শত বছর হাদীস অস্বীকারকারীদের অস্তিত্বের কোন প্রমাণ মিলেনি। বিগত শতাব্দী তথা ত্রয়োদশ হিজরীতে এই ফিৎনার পুনরাবির্ভাব ঘটে মিসর, ইরাক এবং ভারতে ৷ বর্তমানে বাংলাদেশেও এই ভ্রষ্ট আকীদার কিছু ব্যক্তির আবির্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা থেকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
সীমালংঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত :
রাসূল (সা.) সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম পথিকৃৎ। তিনিই বিশ্বমানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ। বিশ্ব শান্তির প্রত্যক্ষ প্রতীক একমাত্র তিনিই। তাই বিশ্বমানবতার শান্তি, সমৃদ্ধি এবং মুক্তিলাভের ক্ষেত্রে প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাতের অনুসরণ ব্যতীত বিকল্প অন্য কোনো পথ নেই। অন্যথায় সুন্নাতের অবহেলা বা বিরুদ্ধাচারণ করার কারণে নিশ্চিত ভয়াবহ শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে। তারা সীমালংঘনকারী ৷
আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তারা যদি আপনার ডাকে সাড়া না দেয়, তাহলে জানবেন তারা তো শুধু নিজেদের খেয়াল-খুশীরই অনুসরণ করে। (সূরা আল কাসাস-৫০)
আল্লাহর রহমাত থেকে বঞ্চিত
যারা সুন্নাহর অনুসারী হয় তাদের প্রতি সর্বদা আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত থাকে এবং আল্লাহ তাদের প্রিয়ভাজনে পরিণত হন। তাছাড়া সুন্নাতের অনুসারীরা সহজেই আল্লাহর সন্তুষ্টিপাতে সমর্থ হন। অন্যদিকে সুন্নাহর প্রতি অবহেলা বা বিরুদ্ধাচরণকারী মহান রাব্বুল আলামিনের অবারিত রহমতের প্রবাহধারা থেকে বঞ্চিত হন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,’আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসুলের, যাতে তোমাদেরকে দয়া করা হয়। (সূরা আল ইমরান-১৩২)
জান্নাতে প্রবেশাধিকার লাভে ব্যর্থ
রাসূল (সা.)-এর সুন্নাত অনুসরণকারী জান্নাত লাভের যোগ্যতা অর্জন করে। অপরপক্ষে সুন্নাহর অবমাননাকারী কিংবা এর বিরুদ্ধাচরণকারী জান্নাত লাভের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি অস্বীকার করে। সেই ব্যক্তি ব্যতীত আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে, সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! কোনো ব্যক্তি অস্বীকার করে? উত্তরে তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্য, সে ব্যক্তিই অস্বীকার করে। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৬৮৫১, মুসলিম, ১৮৩৫)
সুতরাং যে ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর অবাধ্য হয় এবং তাঁর সুন্নাহর বিরুদ্ধাচরণ করে, সে ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করতে অস্বীকার করে, আর সে আবদ্ধ হয় জাহান্নামের প্রচণ্ড হুমকির জালে।
কঠিন শাস্তি ভোগ
যারা নবি সা. এর সুন্নাহর বিরুদ্ধাচরণ করবে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে কঠিন শাস্তির হুমকি প্রদান করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে, ‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি প্রদানে অত্যন্ত কঠোর। (হাশর-০৭)
পার্থিব জীবনে দূর্ভোগ
যে ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহর বিরুদ্ধাচরণ করবে। সে ব্যক্তি পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত দুটি বিষয়ের কোনো একটির দ্বারা কঠিন হুমকির সম্মুখীন হবে। প্রথমত সুন্নাহর বিরুদ্ধাচরণের মাধ্যমে শুধু পার্থিব জীবনে মানসিক বিপর্যয় নয়। বরং জীবননাশের ভয় এবং জটিল রোগব্যাধিও তাকে গ্রাস করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন- অর্থাৎ, “তাদের উপর আপতিত হবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সূরা নূর-৬৩)
সুতরাং উল্লেখিত আয়াতে শাস্তি শব্দটির দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হত্যা, রোগ-ব্যাধি ও ধ্বংসের মাধ্যমে দুনিয়ার শাস্তি, যা ঐসব কাফিরদের বেলায় প্রযোজ্য হয়েছিল যারা রাসূল (সা.)-এর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করেছে।
পারলৌকিক জীবনে শাস্তি
রাসূল (সা.)-এর সুন্নাতের বিরুদ্ধাচরণ করলে মানসিকভাবে বিপর্যয়ের শিকার হওয়া নিশ্চিত। ফলে সে সত্য থেকে বিচ্যুত হবে। ইমানের পর কুফুরী করবে এবং ভ্রষ্টতা ও গোমরাহীর মাধ্যমে তার হৃদয় বিপর্যস্ত হবে, সুতরাং এরপর সে সত্য পথের সন্ধান আর পাবে না। ফলে অসম্মান হবে তার একমাত্র প্রাপ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘কাজেই যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে। (সূরা নূর-৬৩)
ইহলৌকিক শান্তি, সমৃদ্ধি এবং পারলৌকিক জীবনে মুক্তির মিছিলে সমবেত হওয়ার ক্ষেত্রে সুন্নাহর অনুসরণ ব্যতীত বিকল্প কোনো পথ নেই।
লেখকঃ দীদার মাহদী, প্রধান শিক্ষক, দারুলহুদা মডেল মাদরাসা, কোদালপুর ৷