লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! আজ অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এক লঞ্চ ভ্রমণের কাহিনী আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব ৷ লঞ্চে অনেকই যাত্রা করে থাকেন ৷ লঞ্চ ভ্রমণের মজাই আলাদা ৷ তবে এতে আনন্দ ও ভয়ংকর অভিজ্ঞতা রয়েছে সমান সমান ৷

লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা
লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

লঞ্চ ভ্রমণ করতে গিয়ে অনেক মজা এবং অনেক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি অনেককে হতে হয় ৷ আমি এমনই একটি ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলাম ৷ বক্ষমান নিবন্ধে আপনাদের সেই ঘটনার বিস্তারিত জানানোর প্রয়াসে চালাবো ইনশাআল্লাহ ৷

লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

মরণ দেখেছি
দীদার মাহদী

রমজানে তারাবীহর উদ্দেশে ঢাকা আসবো ৷ বাহন ঠিক করেছি লঞ্চ ৷ বাড়ি থেকে লঞ্চঘাট আসলাম সাইকেল চালিয়ে ৷ পেছনে ছোটো ভাই দেলোয়ারকে নিয়ে এসেছিলাম সাইকেল নিয়ে যেতে ৷ ও চলে গেলো ৷ লঞ্চের অপেক্ষায় বসে আছি ৷ সময় পাস করতে ফেসবুকে ঢুঁ মারছি মাঝে মাঝে ৷ হঠাৎ এপাশ থেকে একজন বলে উঠলো আজ লঞ্চ একটি ৷

আগেই বলে রাখি আমি মাদারীপুরের লাইনের লঞ্চের কথা বলছি ৷ কারণ আমি কারণবশত বাঁশগারি থেকে লঞ্চে উঠছি ৷ আমি অবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকালাম, বলে কি! কিছুই জিজ্ঞেস করলাম না ৷ ওই লাইনে প্রতিদিন দুটো লঞ্চ থাকে ৷ একটি বড়ো আরেকটি ছোটো ৷ ভাবলাম – আজকাল লোকজন হয়তো গাড়িতেই যাতায়ত করে বেশি ৷ লঞ্চে ভীর কম ৷ যাত্রী কম হওয়ায় বোধহয় একটি লঞ্চ ৷ তবে বড়টি হবে হয়তো ৷ পরমুহূর্তেই একটি লঞ্চ আসতে দেখা গেলো ৷

লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

 

অপেক্ষমাণ যাত্রীদের চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠলো ৷ সবার মাঝে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলো ৷ নড়েচড়ে উঠলো সবাই ৷ ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে প্রস্তুত হচ্ছিলো ৷ আমি উঠে দাঁড়ালাম ৷ লঞ্চটির দিকে দু’চোখ মেলে ধরলাম ৷ ভালো করে খেয়াল করে আৎকে উঠলাম! এ দেখি ছোটো লঞ্চ ৷ ঘাটে ঘাটে এত্ত যাত্রী সামাল দেবে কীভাবে! চোখেমুখে প্রশ্ন এসে ভীর করছিলো ৷

আমার পাশে বসা লোকজন বলাবলি করছিলো -কীভাবে জায়গা দখল করবে? একজন বললো, আমি লাফিয়ে লঞ্চে উঠবো শুধু বিছানা চাদর নিয়ে ৷ ব্যাগ নিয়ে তোমরা উঠবে আস্তে ধিরে ৷ তাদের কথা শুনে আশংকা -উদ্বেগ বাড়ছিল আমার ৷ আতঙ্কিত হচ্ছিলাম ৷ জায়গা কি পাবো! ভাবছিলাম ৷ আকাশকোণে মেঘ জমা হচ্ছিলো ৷ উৎকন্ঠা বাড়ছিলোই ৷ আমিও প্লান করলাম ৷ লঞ্চ ঘাটে ভিড়তেই দৌঁড়ে লঞ্চে উঠবো ৷ আজ আমাকে যেতেই হবে ৷

আরও পড়ুনঃ দোয়া কি ভাগ্য পরিবর্তন করে? 

আগামীকাল ন’টায় এ+ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে ৷ ততক্ষণে লঞ্চ কাছাকাছি চলে এসেছে ৷ আমি ব্যাগটা কাঁধে জড়িয়ে নদীর পারে গিয়ে দাঁড়ালাম ৷ লঞ্চ ঘাটে ভিড়েছে ৷ লোকজন ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছে ৷ সিঁড়ি বাদ দিয়ে লাফিয়ে কার্নিশ দিয়ে উঠলাম ৷ ছুটে চললাম ভিতরে ৷ দোতলায় উঠবো নিয়ত ৷ কিন্তু একটা ছেলেকে হতাশ হয়ে হাতে বিছানা চাদর নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখলাম ৷ তৎক্ষণাৎ বুঝে নিলাম দোতলা ফিলাপ ৷ নিচতলায় জায়গা নিতে হবে ৷ ছুটছি আমি ৷ বুকটা দুরুদুরু কাঁপছে ৷ একটু জায়গা পেলাম ৷ কিনারে ৷ একটুপর বুঝতে পারলাম – এখান দিয়ে লোকজন পেছনে যাতায়ত করবে ৷ ওজু ইস্তেঞ্জা সারতে যাবে ৷ রাতে ঘুমানো মুশকিল হয়ে পরবে ৷

লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

 

দেখলাম দূর সম্পর্কের এক ভাই লঞ্চে উঠেছে ৷ আমার পাশেই জায়গা নিয়েছে ৷ সে বললো – এদিক দিয়ে লোকজন হাঁটাহাঁটি করবে ৷ তারচে ভালো চল আমরা ওইপাশে যাই ৷ দেখলাম কথায় যুক্তি আছে ৷ বিছানা চাদর আর ব্যাগ নিয়ে ছুটলাম ৷ অপর পানে জায়গা নিয়ে বসলাম ৷

আসর আজান হয়েছে ৷ ওজু ছিলো ৷ নামাজ পড়তে ছাদে উঠলাম ৷ মেঘ অনেকটা কেটে গেছে ৷ ঝিরঝিরে বাতাস হচ্ছিলো ৷ দুপাশের পানি কেটে তিরতির করে এগিয়ে চলছে আমাদের লঞ্চ অন্যতমা ৷ কিছুক্ষণ বসে ইব্রাহিম ভাইর সাথে গল্প করলাম ৷ লঞ্চ আরেকটি ঘাট ধরবে ৷ আমি আমার বিছানা ও ব্যাগের নিরাপত্তার কথা ভেবে চলে এলাম ছাদ থেকে ৷ যদিও মিষ্টি বাতাস ও মনোরম পরিবেশ থেকে উঠতে মন চাচ্চিলো না ৷

এসে দেখি আমার ছোট্ট বিছানাটা গোঁচানো ৷ পাশেই এক ভদ্রলোক ব্যাগ থেকে বিছানা চাদর বের করছে ৷ আমাকে ঠেলে বিছাবে ৷ মানুষের প্রতি আমার বেশ দরদ আছে ৷ লঞ্চ একটা তাও আবার ছোটো ৷  দু লঞ্চের মানুষ একটায় যেতে হবে ৷ কষ্ট আজ করতেই হবে ৷ কিন্তু এখনো তো ছাদ খালি আছে ৷ ছাদ ভরবে এতে কোনো সন্দেহ নাই ৷ আমার বিছানাটা একজনের ৷ পাঠক বুঝতে পেরেছেন তা নিতান্তই ছোটো ৷ লঞ্চে দুজন থাকা যাবে ৷ তারওপর লোকটা বিছানা করতে চাইছে ৷

আমি বললাম – দুঃখিত ভাই! এখানে সম্ভব নয় ৷ অন্য কোথাও চেষ্টা করুন ৷ লোকটি নাছোড়বান্দা ৷ কাকুতি-মিনতি শুরু করেছে ৷ ভাই! আপনিও ঢাকা যাবেন আমিও যাবো ৷ এক রাতের ব্যাপার ৷ একটু বসতে দেন ৷ শীতকাল হয় চাপাচাপি করে থাকা যায় ৷ প্রচন্ড গরম ৷ কী করি! লোকটিকে নিয়ে বিপদে পরলাম ৷ একটুও নড়ছে না ৷ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ৷ আর বলেই চলছে – একটু জায়গা দিন ৷

আমি বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করছি ৷ ভাই! দেখুন, আমরা দুজন লোক এ অল্প জায়গায় থাকবো ৷ আপনাকে কীভাবে হেল্প করি? দয়া করে অন্যত্র দেখুন ৷ লোকটি দাঁড়িয়েছে রইছে ৷ ততক্ষণে ইব্রাহিম ভাই চলে এসেছে  ৷ আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম ৷ রাগ হচ্ছিলাম কিন্তু কড়া কথা বলতে বিবেক বাধ সাধছিলো ৷ এবার বিষয়টি ইব্রাহিম ভাইই সামলাবে ৷

লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

 

লোকটি আবার বলছে, ভাই! আপনি একা? আমি বললাম, না ৷ দুজন! তবুও একটু বসতে দিবেন? বললাম ইব্রাহীম ভাই! দেখুন লোকটি কী বলে! ব্যাপারটি আমার ঘাড় থেকে নামলো ৷ ইব্রাহিম ভাই কড়া ভাষায় কিছু বলে দিলেন ৷ লোকটা চলে গেলো ৷ মাগরিব হয়ে গেছে ৷ ছাদে গেলাম নামাজ পড়তে ৷ জামায়াতের সাথে নামাজ হলো ৷ লোকজনে লঞ্চ ডিবিডিবি ৷ প্রতিটি ঘাট থেকেই লোক উঠছে ৷ লঞ্চে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়েছে বহু আগেই ৷ কয়েকগুণ হয়েছে যাত্রী ৷ ভীড় ঠেলে বহু কষ্টে সিটে এসে বসলাম ৷

লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

 

ইব্রাহিম ভাই নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে ঢাকা যাচ্ছে ৷ কামিল ফলপ্রার্থী ৷ নিবন্ধন গাইড বের করলেন ব্যাগ থেকে ৷ আমিও উঁকিঝুঁকি মেরে দেখলাম ৷ খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস করে জেনে নিলাম ৷ ভাবলাম, আমিও কি কখনো নিবন্ধন পরীক্ষা দিবো? মৌলিক চারটি বিষয়ে এমসিকিউ পরীক্ষা হবে ৷ একশ নাম্বারে ৷ চল্লিশে পাশ ৷ সতর্ক বার্তা হলো – ভুল উত্তর দেয়া যাবে না এতে মার্ক কাটা যাবে ৷ সাধারণ জ্ঞান, বাংলা, অংক এবং ইংরেজি ৷ ইব্রাহিম ভাই অনেক আগে করা অংক ভুলে গেছেন ৷ আমি কিছু কিছু অংক তাকে বুঝিয়ে দিলাম ৷ কিছুদিন আগে করা টেনের অংকই বেশি ৷ বেশ কিছুক্ষণ পড়া ও গল্প চললো ৷

এশার আজান হয়েছে ৷ নামাজে চলে গেলাম ছাদে ৷ ফাঁক ফোকর সব ভরে গেছে লোকে ৷ ঠাঁই নাই ৷ ছাদেও লোকে লোকারণ্য ৷ নামাজ পড়তে সিরিয়ালে দাঁড়াতে হলো ৷ প্রচন্ড বাতাস বইছিলো ৷ নামাজ পড়ে নিচে চলে এলাম ৷ ভাবলাম ইস্তেঞ্জা সেরেই যাই ৷ লঞ্চের পেছনে চলে এলাম ৷ সেখানেও ভীড় ৷ কে দাঁড়িয়ে থাকে! কার্নিশে গিয়ে প্রস্রাব সেরে ট্যিসু ইউজ করছি আর ভাবছি— হায়! ছোট্টো লঞ্চ ৷ ইঞ্জিন একটা ৷ একবার ঈদে বাড়ি যাওয়ার পথে বোয়ালিয়া এসে লঞ্চের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায় ৷ সে কি দুর্ভোগ! ট্রলারে করে যেতে হয় ৷ বলা যায় না কখন কী হয়! তাই দুটো ইঞ্জিন থাকলে নিরাপদ থাকা যায় ৷

ইস্তেঞ্জা শেষ ৷ ভাবতে ভাবতে ইঞ্জিন রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছি ৷ কিন্তু ইঞ্জিন রুমে অতিরিক্ত লোকজন আসা যাওয়া করায় আমার সন্দেহ হলো ৷ উঁকি মেরে ঘটনা বোঝার চেষ্টা করছি ৷ হোয়াট ইঞ্জিন নষ্ট?! আমার আশঙ্কা সত্যে পরিণত হলো! আমি বিস্ময়ে হতবাক! এ কী হলো! এখন কী হবে? হাই কোয়ালিটির জেনারেটর চলার কারণে বোঝাই যায় না যে লঞ্চ চলছে না বন্ধ! এতো আওয়াজ ৷ সামনের দিকে এগিয়ে দেখি লঞ্চ পারে ভিড়ানো ৷ সিটে এসে বসলাম ৷ নানাজনের নানা কথা ৷ এই লঞ্চ আর ঠিক হবে না আজ ৷ কালকে অন্য লঞ্চ এলে সেটায় যেতে হবে ৷ নানান গুঞ্জন শুনে বিরক্তবোধ করছিলাম ৷

লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

 

লঞ্চ নাকি মাত্র ঢালিবাড়ি পর্যন্ত এসেছে ৷ ঢাকা সেতো বহুত দূর হ্যায় ৷ প্রচন্ড গরম লাগছিলো ৷ মানুষের গাদাগাদিতে গরমের তীব্রতা আরো বাড়ছিল ৷ ছাদে ঠাঁই নাই যে সেখানে গিয়ে বসবো ৷ পাঞ্জাবি খুলে ফেললাম ৷ ব্যাগটাকে বালিশ বানিয়ে শুয়ে পরলাম ৷ গল্প চললো কিছুক্ষণ ৷ ঢাকা আসবো বলে সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম ৷ ক্লান্তি চেপে ধরছিল আমায় ৷ চোখের পাতায় ঘুম নেমে এলো ৷ ঘুমিয়ে পরলাম আমি ৷

কেটে গেছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা ৷ ইব্রাহিম ভাইর ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো ৷ ধড়মড় করে উঠলাম ৷ চোখ কচলাতে কচলাতে বসলাম কী হয়েছে? ইব্রাহিম ভাই চিৎকার করে বললো, আরে ইঞ্জিন ঠিক হয়েছে ৷ কান খাড়া করে দেখলাম, হু ঠিকই বলেছে ৷ কেটে গেলো আরো কিছু সময় ৷ প্রায় ঘণ্টা তিনেক পর লঞ্চ চলতে শুরু করলো ৷ আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম ৷ আলহামদুলিল্লাহ ৷

সকলেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম ৷ একটু দেরি হলেও আমরা কাল সকালেই ঢাকা পৌঁছতে পারবো ইনশাআল্লাহ ৷ আরও কিছুক্ষণ গল্প চললো ৷ ইব্রাহিম ভাই সব খবরই জানাচ্ছিল তার নতুন স্ত্রীকে ৷ বেচারী টেনশন ফিল করছিল বেশ ৷ আবার ঘুমিয়ে পরলাম ৷ শেষ রাতে কিছুটা শীতের আমেজ ছিল ৷ ঘুম যখন ভাঙলো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সূর্য ওঠার বিশ মিনিট বাকি ৷ দ্রুত ওজু সেরে দৌঁড়ে ছাদে উঠলাম ৷ নামাজ পড়ে সেখানেই বসে রইলাম ৷ তাসবিহ তাহলীল পড়ে সূরা ইয়াসিন পড়লাম ৷

লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

 

ছাদে বসে নদীর চারদিকটা দেখা যায় স্বাচ্ছন্দে ৷ ঝিরঝিরে কোমল হাওয়া বইছিলো ৷ এমন সুন্দর প্লেজ ছেড়ে উঠতে মন চাচ্ছিল না ৷ হঠাৎ বায়েজীদ হোসাইন ভাইয়ের ফোন ৷ কথা হলো দীর্ঘক্ষণ ৷ মেঘে মেঘে পুরো আকাশ কালো হয়ে উঠেছে ৷ কখন যে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে বলা মুশকিল ৷

মোবাইলে সাইমুম সিরিজের বইগুলোর সফটওয়্যার ছিলো ৷ দশ নাম্বার সিরিজ পড়ছিলাম আমি ৷ বলকানের কান্না ৷ বের করে পড়তে শুরু করলাম ৷ হঠাৎ কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি এসে চোখেমুখে আছড়ে পরলো ৷ শুরু হলো টিপটিপ বৃষ্টি ৷ দৌঁড়ে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে আসলাম ৷ সাইমুম সিরিজের বইগুলো এমন যে পড়তে শুরু করলে শেষ না করলে ভালো লাগে না ৷ সিটে এসে পড়তে থাকলাম ৷ ইব্রাহিম ভাই বললো, কী পড়িস? তাকে বুঝিয়ে বললাম ৷ এখন সেও পড়বে ৷ তার হাতে মোবাইল দিলাম সে জোর আওয়াজে পড়তে লাগলো ৷

লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

 

বাইরে অলরেডি বৃষ্টি শুরু হয়েছে ৷ আমরা লঞ্চের একপাশে হওয়ায় বাতাসে বৃষ্টির ছিটেফোঁটা আমাদের গায়ে এসে লাগছে ৷ বিছানা গুটিয়ে লঞ্চের মাঝের দিকে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছিলাম ৷ প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে ৷ আমরা পোলাও খেলাম ৷

লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

এরিমধ্যে কাঠপট্টি এসে লঞ্চ ঘাট দিয়েছে ৷ তখন সকাল ছয়টা ৷ আমরা অনুমান করলাম আর দুইঘন্টা লাগতে পারে সদরঘাট পৌঁছতে ৷ সেখান থেকে ছাড়তে না ছাড়তেই তুমুল বৃষ্টি ৷ সাথে বাতাস ৷ আমরা ভিজে যাচ্ছিলাম ৷ মূলত আমাদের দিক থেকে বাতাস আসায় এ সমস্যায় পরছিলাম ৷ কেউ কেউ অন্যপাশে গেলেও আমরা যাইনি ৷ লঞ্চ কিছুদূর এগিয়েছে ৷ একটা গোঁজার কাছে এসে পৌঁছেছে লঞ্চ ৷ কয়েকটা নদীর মুখ সেখানে এসে মিলিত হয়েছে ৷ ওখানে পৌঁছতে না পৌঁছতেই শুরু হলো তুমুল ঝড় ৷ বৃষ্টির সাথের বাতাসের প্রচন্ড প্রকোপে লন্ডভন্ড অবস্থা ৷ লঞ্চ দুলতে শুরু করেছে ৷ এবার উল্টো দিক থেকে ঝড়ো হাওয়া বইছে ৷ লঞ্চের প্রতিটি যাত্রী ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছে ৷ বাতাসের তীব্রতা বেড়েই চলেছে ৷ এই বুঝি লঞ্চ ডুবে গেলো ৷ গেলো ৷ গেলো ৷ এক ভীবিষিকাময় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ৷ ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছিলাম সবাই ৷

মহিলা-পুরুষ কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে সবাই ৷ চোখে পানি ৷ মুখে দোয়া পড়ছে সবাই— লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনাজ জলিমীন ৷ সবার মুখে মুখে একই দোয়া ৷ কেউ কেউ মূর্খতা বশতঃ “দোহাই সলেমান নবী ” বলছিলো ৷ এক ভীতিময় পরিবেশের উদ্ভব হয়েছিল ৷ ঝড়ের প্রচন্ডতা ক্রমেই ভয়ংকর রূপ ধারণ করছিলো ৷ বাতাস যে কত শক্তিশালী তা তখন কিছুটা অনুভব করা যাচ্ছিল ৷ লঞ্চটাকে কাগজের নৌকার মতো দুলতে দেখে আমি আতঙ্কে পাথর হয়ে যাচ্ছিলাম ৷ জীবনের মায়া একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছিলাম ৷ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝি ইহলীলা শেষ হবে ৷ কী ভীতিকর সে মুহূর্তটা ৷

তখনকার অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে এখন আমার বুক কাঁপছে ৷ হাত কাঁপছে ৷ আমি ভিজে একাকার হয়ে গেছি ৷ তবুও ঝড়ের সামনে শক্ত করে দাঁড়িয়ে, কখনো বসে ভয়াবহ সময়টা পার করছিলাম ৷ তাওবাহ তো প্রতিদিনই করি ৷ তখন তাওবাহ ইস্তেগফার করলাম ৷ একবার খাস দিলে কালিমায় তাইয়েবাহ পড়লাম ৷ এরপর দেয়ায় ইউনূস পড়তে থাকলাম ৷ প্রচন্ড ঝড়ের মধ্য দিয়ে লঞ্চ হেলেদুলে এগিয়ে চলছে ৷ প্রতিটি মুহূর্ত একেক দিনের মতো মনে হচ্ছিলো ৷ ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেছে সবার ৷

মানুষ মৃত্যুকে কতইনা ভয় পায় ৷ এভাবে দশ থেকে পনের মিনিট চললো ৷ লঞ্চ তখনো রাক্ষুসে ঝড় তুফানের মোকাবেলা করে পানি কেটে এগিয়ে চলছে ৷ হঠাৎ আশার আলো উদ্ভাসিত হলো ৷ নদীর পাড় দৃষ্টিগোচর হলো ৷ হ্যাঁ, লঞ্চ সেদিকেই যাচ্ছে ৷ পাড়ে এসে ভিড়ালো লঞ্চ ৷ যাত্রীরা আশান্বিত হলো ৷ আমি মরণ দেখে এলাম ৷ ভাবলাম, আমি একা ৷ কিন্তু যারা পরিবার নিয়ে এসেছে! তারা কতটা ভয় এবং হতাশার মধ্যে ছিলো ৷ যাদের সাথে নারী ও শিশু ছিলো! তারা কতটা আতঙ্কে ছিল! আল্লাহ এক মহাবিপর্যয় ও বিপদ থেকে আমাদের রক্ষা করলেন! আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম ৷ আলহামদুলিল্লাহ ৷

বৃষ্টি তখনো পরছিলো ৷ বাতাসের গতি কিছুটা কমে এসেছে ৷ লঞ্চ আবার ছাড়লো ৷ ধীরে ধীরে নদীর কুল ঘেঁষে ৷ সোয়া ন’টায় সদরঘাট এসে লঞ্চ ভিড়লো ৷ এরপর আমরা আমাদের গন্তব্যে ছুটলাম ৷ কিন্তু দূর্ভাগ্য আমার! এ+ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারিনি ৷ যার জন্য এতো তাড়াহুড়ো করে ঢাকা এলাম!

শেষ কথাঃ

সুপ্রিয় পাঠক! আমার জীবন থেকে লেখা গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো? কমেন্ট বক্সে জানান ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *