সালাম দেওয়ার সঠিক নিয়ম | সালামের উত্তর

সালাম দেওয়ার সঠিক নিয়ম | সালামের উত্তর

السلام عليكم ورحمه الله وبركاته সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা নিন ৷ সালাম নিয়ে বিস্তারিত একটি কন্টেন্ট লেখার ইচ্ছে অনেক দিনের ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক সালাম নিয়ে কটুক্তি করার পরে তার জবাব দেয়া প্রয়োজন ছিল ৷

নামাজ না পড়ার শাস্তি কী? 

মাঝে মাঝেই এ সকল শিক্ষিত ব্যক্তিরা যখন বিতর্কিত মন্তব্য করে বসে তখন তাদের প্রতি আমাদের করুনা হয় ৷ ইসলামের সালামের মর্যাদা এবং গুরুত্ব সালাম দেওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আমরা বর্তমানে আলোচনা করার প্রয়াস চালাবো ৷ ইনশাআল্লাহ ৷ শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন ৷

সালাম দেওয়ার সঠিক নিয়ম | সালামের উত্তর

সালাম দেওয়ার সঠিক নিয়ম | সালামের উত্তর
সালাম দেওয়ার সঠিক নিয়ম | সালামের উত্তর

সালাম শুধু সম্ভাষণ নয়, একটি ইবাদতও ৷ السلام عليكم ورحمه الله وبركاته বলে শুদ্ধ উচ্চারণে পূর্ণ সালাম দিলে সালামদাতার জন্য ৩০ নেকি এবং সালামের সঙ্গে (সাক্ষাৎ কালে) দুই হাতে হাত মিলিয়ে মুসাফাহা করা হলে ৯০ (রহমত) নেকি। আর সালামের উত্তরদাতার জন্য কুরআন ও হাদিসে প্রশংসা করা হয়েছে। সালামদাতার সমপরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি শব্দ যােগ করে জবাব দেওয়ার প্রতি খুব গুরুত্বারােপ করা হয়েছে।

সালাম দিলে কত নেকি?

 

মুসাফাহাসহ উত্তরদাতার জন্য ১০ নেকির কথা কিতাবে উল্লেখ আছে। (সূত্র: সুরা নিসা: আয়ত: ৮৬, আবু দাউদ, হাদিস: ৫১৯৫, শুয়াবুল ঈমান ১১/২৯১)।

সালামদাতা যদি বলে السلام عليكم তাহলে উত্তর দাতা। জবাবে শুধু وعليكم السلام নয় বরং وعليكم السلام ورحمه الله وبركاته বলে জবাব দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।

কুরআন হাদিসে সালামের পদ্ধতি

সালামের পদ্ধতি
কুরআন হাদিসে সালামের পদ্ধতি

সালামের জবাব কীভাবে দিতে হবে পবিত্র কুরআনে তা সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وإذا حييتم بتحية فحيوا بأحسن منها أو ردواها إن الله كان على كل شيء حسيبا
অর্থঃ কেউ যদি তােমাদেরকে সালাম দেয় (দোয়া করে) তাহলে (তােমরাও তার সালামের জবাব দাও;তার জন্য দোয়া কর) তার চেয়ে উত্তম সালাম অথবা তারই মতো পিরিয়ে বলো ৷ [নিসা:৮৬]

সালামের উত্তর দিবে কীভাবে? 

 

আল্লামা ইবনে কাছির এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-

অর্থঃ কোন মুসলমান যদি (তােমাকে সালাম দেয় তাহলে সালাম দাতা যে শব্দ প্রয়ােগে তােমাকে সালাম দিয়েছে তুমি তার চেয় উত্তম শব্দে তাকে জবাব দাও। অথবা সে যেভাবে সালাম দিয়েছে তুমি তার অনুরূপ (শব্দ প্রয়ােগে) উত্তর দাও। সালাম দাতার শব্দের চেয়ে জবাব দাতার উত্তরে শব্দ বৃদ্ধি করে জবাব দেওয়া মুস্তাহাব। আর সালামের অনুরূপ বা সমপরিমাণ শব্দে উত্তর দেওয়া ওয়াজিব ৷

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবেত্তা ইমাম বায়যাবি রহ. বলেন—
অর্থ: সালামদাতা যে শব্দ ব্যবহার করে সালাম দিয়েছেন সালামের উত্তরদাতা অনুরূপ সমপরিমাণ শব্দ বা তার চেয়ে বেশি শব্দ ব্যবহার করে সালামের উত্তর দেওয়া। আয়াতটি এ প্রসঙ্গেই। এটাই জুমহুর আলেমের অভিমত। সালামদাতার চেয়ে উত্তমভাবে তথা তার চেয়ে বেশি শব্দে অথবা সালামদাতার শব্দের সমপরিমাণ শব্দে সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব।

উত্তম জবাব হল সালামদাতা যদি বলে السلام عليك তাহলে উত্তরদাতা বলবে وعليك السلام ورحمة الله আর সালামদাতা যদি বলে السلام عليكم ورحمة الله তাহলে উত্তরদাতা বলবে وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته উত্তরদাতা এর পর আর শব্দ বাড়াবে না।

وبركاته ই উত্তরে বাড়ানাের সর্বশেষ শব্দ। আর সমপরিমাণ শব্দে সালামের জবাব দেওয়া হবে তখন, যখন সালামদাতা সালামের পুরাে শব্দ ব্যবহার করে সালাম। দিবে এবং উত্তরদাতা বাড়িয়ে বলার জন্য কোনও শব্দ ছাড়বে না।

সালাম পিক আরবি

সালাম পিক আরবি
সালাম পিক আরবি

সালাম সম্ভাষণ: আদম আ. থেকে জান্নাত পর্যন্ত

সালাম সম্ভাষণ আরবদের অনুসরণে কোন সম্ভাষণ রীতি নয়। সালাম একটি পবিত্র সম্ভাষণ। একটি দোয়া। একটি ইবাদত। এর শেকড় আদম আ. ও ফেরেশতাদের আলােপচারিতা জুড়ে ছড়িয়ে আছে। আর শিখর বা শীর্ষ বিন্দু গিয়ে পৌছেছে জান্নাতের প্রবেশদ্বারে। হাদিসে এসেছে।

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবিজি সা. বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.) কে তার আকৃতিতে (দুনিয়ায় প্রেরণকালে ও দাফন কালে আকৃতি) সৃষ্টি করেছেন। তার উচ্চতা ষাট হাত।

অতঃপর যখন তাকে সৃষ্টি করা হল, তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে। বললেন, যাও। উপবিষ্ট ফেরেশতাদের ওই দলটিকে সালাম দাও। অতঃপর তারা তােমাকে কী সম্ভাষণ করে তা মনােযােগ দিয়ে শােনো। কেননা, এটাই তােমার এবং তােমার সন্তানদের সম্ভাষণ।

অতঃপর তিনি গিয়ে বললেন, ‘আস-সালামু আলাইকুম’ জবাবে ফেরেশতারা বললেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। (বুখারি; ৩৩২৬, মেশকাত; ৪৬২৮)।

সালাম শুধু দুনিয়ায় নয়, জান্নাতেও আছে

জান্নাতিদেরকে আল্লাহ তায়ালা বা ফেরেশতারা স্বাগত জানাবেন সালাম দিয়ে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন—

دعواهم فيها سبحانك اللهم وتحيتهم فيها سلام واخر دعواهم ان الحمد لله رب العالمين
অর্থ: সেখানে (জান্নাতে) তাদের প্রার্থনা হল, পবিত্র তােমার সত্তা হে আল্লাহ! আর শুভেচ্ছা হল ‘সালাম’ আর তাদের প্রার্থনার সমাপ্তি হয় সমস্ত প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর জন্য। [সুরা ইউনুস; ১০]

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন—
ان اصحاب الجنه اليوم في شغل فاكهون- هم وازواجهم في ظلال على الارائك متكئون- لهم فيها فاكهه ولهم ما يدعون- سلام قولا من رب رحيم

অর্থ: এই দিন জান্নাতবাসীগণ আনন্দে মগ্ন থাকবে। তারা এবং তাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়ায় সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে থাকবে তাদের জন্য বাঞ্ছিত সকল কিছু। করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে (জান্নাতিদেরকে) বলা হবে ‘সালাম। (সুরা ইয়াসিন আয়াত:৫৫-৫৮)

জান্নাতে ফেরেশতারা জান্নাতবাসীদের বাসগৃহে প্রবেশ করবে। সালাম দিয়ে তাদের জন্য দোয়া করবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরাআনে। বলেন—
والذين صبروا ابتغاء وجه ربهم واقاموا الصلاه وانفقوا مما رزقناهم سرا وعلى نيات ويدرؤون بالحسنه السيئه اولئك لهم عقب الدار -جنه عدن يدخلونها ومن صلح من ابائهم وازواجهم وذرياتهم والملائكة يدخلون عليهم من كل باب سلام عليكم بما صبرتم فنعم عقب الدار

অর্থ: যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্য ধারণ করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে জীবনােপকরণ দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা ভাল দ্বারা মন্দ দূরীভূত করে, এদের জন্য শুভ পরিণাম- স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং

তাদের পিতা-মাতা,স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও এবং ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে এবং বলবে- তােমাদের সবরের কারণে তােমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হােক। আর তােমাদের এ পরিণাম-গৃহ কতই না চমৎকার। [সুরা রা’দ : ২২-২৪]

সালাম কুরআন ও হাদিসের অংশ। একটি ইবাদত ও দোয়া। সালাম অনেক কল্যাণের সমন্বয়ক। সালাম প্রদানকারী জান্নাতি। সাক্ষাতে আগে সালাম প্রদানকারী আল্লাহর কাছে প্রিয় ও আল্লাহর নিকটবর্তী। সালাম আত্মার রােগের প্রতিষেধক। হাদিসে এসেছে প্রথম সালামকারী অহংকারমুক্ত। সালাম জান্নাতের স্বাগত সম্ভাষণ। তাই সালাম নিয়ে কেউ ঠাট্টা করলে বুঝতে হবে সে কুরআন ও হাদিসের দুশমন। ইসলামধর্ম ও এ ধর্মের রীতিনীতি তার পছন্দ নয়। সে ইসলামের শত্রুদের দালাল বা নিরেট মূখ।

সালাম নিয়ে কটুক্তির জবাব

 

আরব-অনারব নয়, কুরআন-হাদিস
মুসলিম সভ্যতার মাপকাঠি

আজকাল অনেক পণ্ডিত আলােচক বা তার্কিক ব্যক্তিদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রসূত মন্তব্যে বেশ মর্মাহত হই। তারা আরব অনারবের সম্ভাষণ প্রথা টেনে বুঝাতে চান সালাম আরবদের সভ্যতা, বাঙালির সভ্যতা নয়। আমরা বলতে চাই সালাম- আরব-অনারবের সভ্যতা নয়, এটা ইসলামি সভ্যতা। মুসলমান মাত্রের-ই সাক্ষাতে সম্ভাষণ-বাক্য ও কল্যাণের প্রার্থনা। এতটুকু বােধ ও বুদ্ধি যাদের নেই তারা কীভাবে মিডিয়াতে টক-শােতে সালাম নিয়ে কথা বলে?

তাদের কর্মকাণ্ডে প্রকাশ পায়-সালাম তাদের ভাল লাগে না। নবির সুন্নত তাদের ভাল লাগে না। তারা হাই হ্যালাে, আদাবনমস্কারের বন্দনা করে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়। এসব মূর্খ পণ্ডিতদের মূর্খতা সমাজকে মূখর্তার দিকেই ঠেলে দেয়। আজ সালামকে বলছে জঙ্গিবাদের উপসর্গ, কাল অনাহারীর মুখে খাবার তুলে দিলে বলবে এটাও জঙ্গিবাদের উপসর্গ। কারণ সালামের সাথে সাথে অনাহারীকে খাবার খাওয়ানাের কথাও হাদিসে এসেছে।

যুগে যুগে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ফায়দা ধরে রাখার জন্য কিছু মূর্খ পণ্ডিত ‘মই’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এদের কাজই হল ভাল কাজ ও ভাল মানুষের থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ফেরানাের জন্য বাহানা তালাশ করা। ঘৃণার কোনো তকমা লাগিয়ে মানুষকে বিশেষত ধর্ম-কর্ম থেকে দূরে রাখা। কাজেই আমাদের যুগ সচেতন হতে হবে। যার তার কথা বাছ-বিচার ছাড়া গ্রহণ করা যাবে না।

অমুসলিমদের সালাম দেওয়ার বিধান

সালাম একজন মুসলিম ভাইয়ের উপর অপর মুসলিম ভাইয়ের অধিকার। সুতরাং একজন মুসলিম ভাই কেবল আরেক মুসলিম ভাইকেই দিতে পারবে। কোনো অমুসলিমকে সালাম দেওয়া যাবে না। এ মর্মে আল্লাহর রাসুল (সা.) স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের আগে বাড়িয়ে সালাম করো না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২১৬৭)

অমুসলিম সালাম দিলে

তবে কোনো অমুসলিম আগে সালাম দিয়ে ফেললে— উত্তরে তাকে ‘ওয়া আলাইকুম’ বলবে। কেননা, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন- “আহলে কিতাবগণ তোমাদের সালাম দিলে, তার উত্তরে তোমরা শুধু ‘ওয়া আলাইকুম’ বলবে। অর্থাৎ তোমাদের প্রতিও।” (বুখারি, হাদিস : ৬২৫৮; মুসলিম, হাদিস : ২১৬৭)

উল্লেখ্য, কোনো অমুসলিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সৌজন্য প্রদর্শনস্বরূপ তার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে বা অন্য কোনভাবে যেমন, হাতের দ্বারা ইশারা করে কুশল বিনিময় করা এক ধরনের সৌন্দর্য। সে হিসেবে তাকে ‘আদাব’ বলা যেতে পারে। তবে কোনভাবেই তাকে ‘নমস্কার’ বা ‘নমস্তে’ বলা যাবে না। (রহিমিয়া : ৬/১২৬; কিফায়াতুল মুফতি : ৯/১০৬)

কেননা, ‘নমস্কার’ বা ‘নমস্তে’ শব্দটি হিন্দুদের বিশেষ সম্ভাষণবাচক শব্দ। সুতরাং এ শব্দ বলে কোনো হিন্দুকে সম্ভাষণ করা যাবে না। করলে গোনাহগার হতে হবে ৷ হিতে বিপরীত ৷  (আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ১/৫৪)

সালাম বিপদ নয়, রহমত

সালাম যদি অধ্যাপকের ভাষ্যমতে জঙ্গিবাদের উপসর্গ হয়, তাহলে তাে মহামসিবত! সালাম মানুষের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়াবে। রাস্তায় কেউ শুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দিলে ডান-বাম না তাকিয়ে দৌড়ে পালাবে বা আড় চোখে তাকাবে। সালাম তাে এমন বিপদ নয়। সালাম তাে শান্তির কথা বলে।

সালাম তাে একে অন্যের জন্য মঙ্গল কামনা করার নাম। সালাম তাে সম্মান-ভালবাসায় ভক্তি শ্রদ্ধা ও হৃদয়ের গভীর থেকে ওঠে আসা একটি সহাস্য স্বাগত সম্ভাষণ। এটাকে যারা ভীতিকর শব্দ বানাতে চায় তারা নিঃসন্দেহে ইসলামের দুশমন। আল্লাহ তাদের হেদায়াত দান করুক। দীনের সঠিক বােঝ দান করুক।

সালাম জান্নাতের খােশবু ছড়ায়

জান্নাতি হওয়ার জন্য এবং পৃথিবীতে জান্নাতি পরিবেশ কায়েম করার জন্য, পারস্পারিক হৃদ্যতা বৃদ্ধি করার জন্য নবিজি সা. ব্যাপকভাবে সালাম প্রচার করতে বলেছেন। বিষয়টা এমন- সালাম যত প্রচারিত হবে জান্নাতি খােশবু তত ছড়িয়ে যাবে। নবিজি সা. বলেছেন,

অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল সা. কে প্রশ্ন করল কোন ইসলাম (মুসলমান) উত্তম? তিনি বললেন, তুমি (অভাবীকে) খাবার খাওয়াও এবং পরিচিত- অপরিচিত সবাইকে সালাম দাও। [বুখারি ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৯, আল মাকতাবাতুল আশরাফিয়া, দেওবন্দ]

অর্থ. হযরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, নবিজি সা. বলেছেন, আল্লাহর কাছে মানুষের মধ্যে উত্তম সে ব্যক্তি, যে সালাম দিয়ে কথা শুরু করে। ইমাম আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ রহ. প্রমুখ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। (মেশকাত, হাদিস: ৪৬৪৬)

ব্যাপক হারে সালাম প্রদানকারী এবং সালামের ব্যাপক প্রসারকারী জান্নাতি হবে। হাদিস থেকে এমনটাই জানা যায়।

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবিজি সা. বলেছেন, তােমরা অতি দয়াময় আল্লাহর ইবাদত কর, (ক্ষুধার্তকে) খাবার খাওয়াও এবং সালামের প্রসার ঘটাও, তাহলে শান্তি সম্ভাষণের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি শরিফ)।

ইসলামে সালাম এতই গুরুত্বপূর্ণ, সালামের ব্যাপক প্রসারকারীর জন্য আল্লাহ তায়ালা দৃষ্টিনন্দন জান্নাত সৃষ্টি করে রেখেছেন। হাদিসের ভাষ্য একথারই ইঙ্গিত বহন করে।

অর্থ: আবু মালেক আল আশয়ারি রা, হতে বর্ণিত। নবিজি সা. বলেছেন, নিশ্চয়ই জান্নাতে এমন কতগুলাে কক্ষ রয়েছে, যার ভেতর থেকে বাহির দেখা যায় এবং বাহির থেকে ভেতর দেখা যায়। সেই জান্নাত মহান আঃ তার জন্য সৃষ্টি করেছেন, যে ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ায়, সালামের ব্যপক প্রসার ঘটায় এবং যখন সকল মানুষ বিভাের ঘুমে আচ্ছন্ন তখন সে (তাহাজ্জুদ) নামাজ পড়ে। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব: ২/হাদিস:১৩৯৯,ইবনে হিব্বান: হাদিস:৫০৯)

সালাম পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা বন্ধুত্ব ও হৃদ্যতা তৈরি করে। সালাম মানুষের কাছে প্রিয় করে তুলে এবং সালামের মাধ্যমে মানুষ কামেল মােমেন হয়ে জান্নাতের পথে এগিয়ে যায়।
আবু দাউদ শরিফে হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে

অর্থ: ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, তােমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না মােমেন হও এবং তােমরা মােমেনও হতে পারবে না যতক্ষণ না তােমরা একে অপরকে ভালবাস। আমি কি তােমাদের বলে দিব না এমন একটি বিষয়, যদি তােমরা তা কর তা হলে একে অপরকে ভালোবাসবে? তোমরা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও। (মুসলিম : ৫৪)

ইসলামপূর্ব কালে আরবের সম্ভাষণ-রীতি

ইসলামপূর্ব কালে আরবের লােকেরা একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ হলে বলতো (হাইয়্যাকাল্লাহু) যার অর্থ আল্লাহ তােমাকে জীবিত রাখুন। কিংবা (আন আমাল্লাহু বিকা আইনান) অথবা (আনআমা সবাহান) ইত্যাদি সম্ভাষণে সালাম করত।

ইসলাম আরবদের এ সম্ভাষণ রীতি পরিবর্তন করে ব্যাপক ও তাৎপর্যপূর্ণ দোয়াবিশিষ্ট একটি সম্ভাষণ বাক্যের মাধ্যমে নতুন সালাম প্রথা চালু করে। চালু করে আস-সালামু আলাইকুম’ বলার রীতি। এর অর্থ হল সাক্ষাতে একজন অন্যজনের জন্য এই প্রার্থনা করা যে, তুমি সর্ব প্রকার কষ্ট ও বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকো।

আসসালামুআলাইকুম পিক

আসসালামুআলাইকুম পিক
আসসালামুআলাইকুম পিক

সালাম আসলে কী? সালামের নিগূঢ় রহস্য কোথায়? ইমাম ইবনে উয়াইনার একটি ব্যাখ্যা থেকে সালামের উপকারিতামূলক গভীরতা উপলব্ধি হয় কিছুটা ৷ ইবনে আরাবি আহকামুল কুরআন গ্রন্থে ইমাম ইবনে উয়াইনার একটি উক্তি উল্লেখ করেছেন ৷
أتدري ماالسلام؟ يقول أنت أمن مني

অর্থাৎ সালাম কী জিনিস? তুমি কি জান? সালামদাতা ব্যক্তি বলে যে আমার পক্ষ থেকে বিপদমুক্ত। এখানে সালাম এর অর্থ হচ্ছে রাকীবু অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তােমাদের সংরক্ষক। (মাআরিফুল কোরআন মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ.)।

সালামের অর্থ-ব্যাপকতা ও উপকারিতা

ইসলাম ধর্মের সালাম-সম্ভাষণ যতটা ব্যাপক অর্থজ্ঞাপক অন্য কোন সালামসম্ভাষণ ততটা ব্যাপক অর্থবােধক নয়। কেননা ইসলামি সালাম শব্দের মধ্যে শুধু ভালবাসাই প্রকাশিত হয় না, বরং এর মধ্যে ভালবাসার পূর্ণ হকও। আদায় করা হয়।

সালামের অর্থঃ (১) আল্লাহর কাছে সালামকারী সাক্ষাতে অপর ভাইয়ের জন্য এই দোয়া করা যে, “আল্লাহ আপনাকে সকল বিপদ থেকে নিরাপদে রাখুন”। এটি একটি যথার্থ দোয়া। হায়াতে তাইয়্যেবা এর দোয়া। পবিত্র জীবন প্রার্থনা করা। পক্ষান্তরে আরবরা শুধু জীবিত থাকার দোয়া করত।

(২) السلام عليكم এর অর্থ যখন رقيب عليكم তখন এদিকে ইঙ্গিত করা হয় যে, আমরা ও তােমরা সকলে মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী। তার অনুমতি ছাড়া আমরা একে অন্যের উপকার করতে পারি না। সুতরাং সালাম বান্দার অক্ষমতা ও মহান রবের অমুখাপেক্ষিতাকে স্মরণ করিয়ে দেয় ইসলামি সালামের অর্থগত ব্যাপ্তি রয়েছে। যেমন

  • ১. সালাম মানে আল্লাহর যিকির।
  • ২. আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া।
  • ৩. মুসলমান ভাইয়ের প্রতি ভালবাসা ও সম্প্রীতি প্রকাশ।
  • ৪. মুসলমান ভাইয়ের জন্য সর্বোত্তম দোয়া।
  • ৫. মুসলমান ভাইয়ের সাথে চুক্তি করা যে, আমার হাত ও মুখ দ্বারা আপনার কোনও কষ্ট হবে না।

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠক! ইসলামি সম্ভাষণ-রীতি ‘সালাম’ গভীর তাৎপর্যপূর্ণ ও ব্যাপ্তিময় অর্থবােধক একটি সম্ভাষণ। যা অন্য কোনও সম্ভাষণে নেই। হাই হ্যালােতেও নেই। শুভ সকাল, শুভ বিকালেও নেই। সালাম নিজেদের মধ্যে ভালবাসাশ্রদ্ধা-ভক্তিকে গভীর ও দৃঢ় করে।

সালাম নিরাপত্তার প্রার্থনা ও চুক্তি। আল্লাহপাক আমাদেরকে সাক্ষাৎকালে শুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দেওয়ার তাওফিক দান করুন। সালামের সকল উপকারিতা হাসিল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
وماعلينا إلا البلاغ

দীদার মাহদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *