হযরত হারেসুল আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণিত সংগঠন সংক্রান্ত হাদিস
সুপ্রিয় পাঠক! আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ আশা করছি আপনি ভালো এবং সুস্থ আছেন ৷ আজ আমরা গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদিসের ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও তাৎপর্য আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ ৷ হাদীসটি খুবই পরিচিত ৷ বিশেষত দ্বীন কায়েমের আন্দোলন এবং সংগঠন যারা করেন তাদের কাছে এ হাদীসটির সুপরিচিত ৷ হাদীসটিকে অনেকেই হাদিসে হারিসুল আশআরী বলে থাকেন ৷ হযরত হারেসুল আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণিত সংগঠন সংক্রান্ত হাদিস ৷ যেহেতু এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন হযরত হারিসুল আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু ৷ প্রথমে আসুন হাদীসটির আরবি ইবারত পাঠ করি ৷
আরও পড়ুনঃ ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ
হযরত হারেসুল আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণিত সংগঠন সংক্রান্ত হাদিস
সংগঠন সংক্রান্ত হাদীসের আরবি ইবারত
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا أَبَانُ بْنُ يَزِيدَ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ سَلاَّمٍ، أَنَّ أَبَا سَلاَّمٍ، حَدَّثَهُ أَنَّ الْحَارِثَ الأَشْعَرِيَّ حَدَّثَهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِنَّ اللَّهَ أَمَرَ يَحْيَى بْنَ زَكَرِيَّا بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ يَعْمَلَ بِهَا وَيَأْمُرَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا وَإِنَّهُ كَادَ أَنْ يُبْطِئَ بِهَا فَقَالَ عِيسَى إِنَّ اللَّهَ أَمَرَكَ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ لِتَعْمَلَ بِهَا وَتَأْمُرَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا فَإِمَّا أَنْ تَأْمُرَهُمْ وَإِمَّا أَنَا آمُرُهُمْ . فَقَالَ يَحْيَى أَخْشَى إِنْ سَبَقْتَنِي بِهَا أَنْ يُخْسَفَ بِي أَوْ أُعَذَّبَ فَجَمَعَ النَّاسَ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ فَامْتَلأَ الْمَسْجِدُ وَقَعَدُوا عَلَى الشُّرَفِ فَقَالَ إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ أَعْمَلَ بِهِنَّ وَآمُرَكُمْ أَنْ تَعْمَلُوا بِهِنَّ أَوَّلُهُنَّ أَنْ تَعْبُدُوا اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَإِنَّ مَثَلَ مَنْ أَشْرَكَ بِاللَّهِ كَمَثَلِ رَجُلٍ اشْتَرَى عَبْدًا مِنْ خَالِصِ مَالِهِ بِذَهَبٍ أَوْ وَرِقٍ فَقَالَ هَذِهِ دَارِي وَهَذَا عَمَلِي فَاعْمَلْ وَأَدِّ إِلَىَّ فَكَانَ يَعْمَلُ وَيُؤَدِّي إِلَى غَيْرِ سَيِّدِهِ فَأَيُّكُمْ يَرْضَى أَنْ يَكُونَ عَبْدُهُ كَذَلِكَ وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَكُمْ بِالصَّلاَةِ فَإِذَا صَلَّيْتُمْ فَلاَ تَلْتَفِتُوا فَإِنَّ اللَّهَ يَنْصِبُ وَجْهَهُ لِوَجْهِ عَبْدِهِ فِي صَلاَتِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ وَآمُرُكُمْ بِالصِّيَامِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ فِي عِصَابَةٍ مَعَهُ صُرَّةٌ فِيهَا مِسْكٌ فَكُلُّهُمْ يَعْجَبُ أَوْ يُعْجِبُهُ رِيحُهَا وَإِنَّ رِيحَ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ وَآمُرُكُمْ بِالصَّدَقَةِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَسَرَهُ الْعَدُوُّ فَأَوْثَقُوا يَدَهُ إِلَى عُنُقِهِ وَقَدَّمُوهُ لِيَضْرِبُوا عُنُقَهُ فَقَالَأَنَا أَفْدِيهِ مِنْكُمْ بِالْقَلِيلِ وَالْكَثِيرِ . فَفَدَى نَفْسَهُ مِنْهُمْ وَآمُرُكُمْ أَنْ تَذْكُرُوا اللَّهَ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ خَرَجَ الْعَدُوُّ فِي أَثَرِهِ سِرَاعًا حَتَّى إِذَا أَتَى عَلَى حِصْنٍ حَصِينٍ فَأَحْرَزَ نَفْسَهُ مِنْهُمْ كَذَلِكَ الْعَبْدُ لاَ يُحْرِزُ نَفْسَهُ مِنَ الشَّيْطَانِ إِلاَّ بِذِكْرِ اللَّهِ ” . قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” وَأَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللَّهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالْجِهَادُ وَالْهِجْرَةُ وَالْجَمَاعَةُ فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الإِسْلاَمِ مِنْ عُنُقِهِ إِلاَّ أَنْ يَرْجِعَ وَمَنِ ادَّعَى دَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهُ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ ” . فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ قَالَ ” وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ فَادْعُوا بِدَعْوَى اللَّهِ الَّذِي سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ الْمُؤْمِنِينَ عِبَادَ اللَّهِ ” . هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ . قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الْحَارِثُ الأَشْعَرِيُّ لَهُ صُحْبَةٌ وَلَهُ غَيْرُ هَذَا الْحَدِيثِ .
সরল অনুবাদ
মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল (রহঃ) ….. হারিছ আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহু তা’আলা ইয়াহ্ইয়া ইবন যাকারিয়া (আঃ)-কে নিজে আমল করতে এবং বনূ ইসরাঈলকেও আমল করতে বলার জন্য পাঁচটি কথার নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি (লোকদের) বিষয়গুলো জানাতে প্রায় বিলম্বই করে ফেলেছিলেন। তখন ঈসা (আঃ) তাকে বললেনঃ আপনি নিজে আমল করতে এবং বনূ ইসরাঈলকেও আমল করার জন্য বলতে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ আল্লাহ্ তা’আলা আপনাকে দিয়েছিলেন। হয় আপনি লোকদের এগুলো করতে নির্দেশ দিন, না হয় আমিই তাদের সেগুলো করতে নির্দেশ দিব।
ইয়াহ্ইয়া (আঃ) বললেনঃ আপনি যদি এই বিষয়ে আমার অগ্রগামী হয়ে যান তবে আমার আশংকা হয় যে আমাকে ভূমিতে ধসিয়ে দেওয়া হবে বা অন্য কোন আযাব দেওয়া হবে। অনন্তর তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসে লোকদের একত্রিত করলেন। মসজিদ লোকে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। এমন কি বুরুজগুলোতে গিয়েও তারা বসল।
তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে পাঁচ বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন, যেন আমি নিজেও সেগুলোর উপর আমল করি এবং তোমাদেরকেও সেগুলোর উপর আমলের নির্দেশ দিই। প্রথম হল, আল্লাহর ইবাদত করবে তাঁর সঙ্গে কিছুর শরীক করবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে তার উদাহরণ হল, সেই ব্যক্তির মত যে তার সোনা বা রূপা নির্ভেজাল সম্পদ দিয়ে একটি দাস ক্রয় করল।
আপনি পড়ছেনঃ হযরত হারেসুল আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণিত সংগঠন সংক্রান্ত হাদিস
তাকে বলল, এ হল আমার বাড়ি আর এ হল আমার কাজ। তুমি কাজ কর এবং আমাকে আমার হক দিবে। অনন্তর সে কাজ করতে থাকল কিন্তু তার মালিক ভিন্ন অন্যের হক আদায় করল। তোমাদের মধ্যে কেউ কি এই কথার উপর রাযী আছে যে, তার দাস এ ধরনের হোক?
আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদেরকে সালাতের নির্দেশ দিয়েছেন, সুতরাং তোমরা যখন সালাত (নামায) আদায় করবে তখন এদিক-সেদিক তাকাবে না। কেননা যতক্ষণ বান্দা এদিক-সেদিক না তাকায় ততক্ষণ সারাতে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নেক দৃষ্টি তাঁর বান্দার চেহারার দিকে নিবিষ্ট করে রাখেন।
তোমাদের আমি সিয়ামের নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির মত, যে ব্যক্তি একটি দলে অবস্থান করছে। তার সঙ্গে আছে মিশক ভর্তি একটি থলে। দলের প্রত্যেকের কাছেই এ সুগন্ধি ভাল লাগে। আল্লাহ্ তা’আলার কাছে মিশকের সুগন্ধি অপেক্ষা সিয়াম পালনকারীর (মুখের) গন্ধ অনেক বেশী সুগন্ধময়।
তোমাদের আমি সাদাকা-এর নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সে ব্যক্তির মত যাকে শত্রুরা বন্দী করে তার ঘাড় পেঁচিয়ে তার হাত বেঁধে ফেলেছে এবং গর্দান উড়িয়ে দেওয়ার জন্য বধ্যভূমিতে নিয়ে চলেছে। তখন সে ব্যক্তি বললঃ আমার কম বেশী যা কিছু আছে সব কিছু মুক্তিপণ হিসাবে তোমাদের দিচ্ছি। অনন্তর সে এভাবে তাদের থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিল। (সাদাকার মাধ্যমেও মানুষ নিজেকে আযাব থেকে মুক্ত করে নেয়।)
তোমাদের আমি আল্লাহর যিকরের নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সে ব্যক্তির মত যাকে তার দুশমণ দ্রুত পশ্চাদ্ধাবণ করছে। শেষে সে একটি সুন্দর কেল্লার ভিতরে এসে নিজেকে শত্রুদের থেকে হেফাজত করে নিল। এমনি ভাবে বান্দা আল্লাহর যিকরের কেল্লা ছাড়া নিজেকে হেফাযত করতে পারে না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমিও তোমাদের পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি যেগুলোর নির্দেশ তিনি আমাকে দিয়েছেনঃ কথা শুনবে ও ফরমাবরদারী করবে। জিহাদ, হিজরত এবং মুসলিমদের জামা’আত অবলম্বন করবে। কেননা, যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণও জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল সে তার গলা থেকে ইসলামের বেড়ী খুলে ফেলে দিল- যতক্ষণ না সে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে এসেছে। যে ব্যক্তি জাহেলী যুগের ডাকে ডাকবে সে হল জাহান্নামীদের দলভুক্ত।
জনৈক ব্যক্তি তখন বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! সে যদি সালাত (নামায) ও সিয়াম পালন করে তবুও? তিনি বললেনঃ যদিও সে সালাত (নামায) আদায় করে এবং সিয়াম পালন করে। সুতরাং মুসলিম, মুমিন, আল্লাহর বান্দা রূপে যে নামে আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের নামকরণ করেছেন সেই আল্লাহর ডাকেই তোমরা নিজেদের ডাকবে।
সহীহ, মিশকাত ৩৬৯৪, তা’লীকুর রাগীব ১/১৮৯-১৯০, সহিহুল জামি’ ১৭২৪, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৮৬৩ [আল মাদানী প্রকাশনী]
হাদিসটি হাসান-সহীহ-গারীব। মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল বুখারী (রহঃ) বলেছেনঃ হারিছ আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংসর্গে পেয়েছেন। এ হাদীসটি ছাড়াও তাঁর বর্ণিত আরো হাদীস রয়েছে।
আপনি পড়ছেনঃ হযরত হারেসুল আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণিত সংগঠন সংক্রান্ত হাদিস
আরও পড়ুনঃ দোয়া কি ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে?
হাদীসের গুরুত্ব
এই হাদীসে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি নির্দেশ দেয়া হয়েছে ৷ ইসলামের এমন পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যা বাদ দিলে ইসলামী সমাজের অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না। ইসলামের যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য তাও ব্যর্থ হতে বাধ্য। ইসলামের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া সম্ভব নয়। তাই উল্লেখিত হাদীসটি গুরুত্ব অত্যন্ত অপরিসীম ৷
আপনি পড়ছেনঃ হযরত হারেসুল আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণিত সংগঠন সংক্রান্ত হাদিস
দারসুল হাদীস
হাদীসের ব্যাখ্যা
হাদীসটির শুরুতেই রাসূল (সা:) আল্লাহ কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে এ আদেশ দিয়েছেন।
১. জামায়াত বদ্ধ হওয়াঃ মূল শব্দের অর্থ হচ্ছে বিক্ষিপ্ত কোন বস্তুকে একত্রিত করা ৷ এর থেকে অর্থ দল, জামায়াত বা সংগঠন।
وَلۡتَکُنۡ مِّنۡکُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۰۴﴾
আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম। (আল ইমরান-১০৪)
আপনি পড়ছেনঃ হযরত হারেসুল আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণিত সংগঠন সংক্রান্ত হাদিস
কুরআনের ভাষায় সংগঠন
১)
وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰہِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا ۪ وَ اذۡکُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰہِ عَلَیۡکُمۡ اِذۡ کُنۡتُمۡ اَعۡدَآءً فَاَلَّفَ بَیۡنَ قُلُوۡبِکُمۡ فَاَصۡبَحۡتُمۡ بِنِعۡمَتِہٖۤ اِخۡوَانًا ۚ وَ کُنۡتُمۡ عَلٰی شَفَا حُفۡرَۃٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنۡقَذَکُمۡ مِّنۡہَا ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمۡ اٰیٰتِہٖ لَعَلَّکُمۡ تَہۡتَدُوۡنَ ﴿۱۰۳﴾
আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেল। আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বয়ান করেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও। (আল ইমরান-১০৩)
২)
وَ کَیۡفَ تَکۡفُرُوۡنَ وَ اَنۡتُمۡ تُتۡلٰی عَلَیۡکُمۡ اٰیٰتُ اللّٰہِ وَ فِیۡکُمۡ رَسُوۡلُہٗ ؕ وَ مَنۡ یَّعۡتَصِمۡ بِاللّٰہِ فَقَدۡ ہُدِیَ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ﴿۱۰۱﴾٪
আর কিভাবে তোমরা কুফরী কর, অথচ তোমাদের কাছে আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হচ্ছে এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে তাঁর রাসূল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে তাকে অবশ্যই সরল পথের দিশা দেয়া হবে। (আল ইমরান-১০১)
৩)
اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الَّذِیۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِہٖ صَفًّا کَاَنَّہُمۡ بُنۡیَانٌ مَّرۡصُوۡصٌ ﴿۴﴾
নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে যেন তারা সীসা ঢালা প্রাচীর।
(সফ-৪)
৪)
وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ تَفَرَّقُوۡا وَ اخۡتَلَفُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَہُمُ الۡبَیِّنٰتُ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ ﴿۱۰۵﴾ۙ
আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর আযাব। ( আল ইমরান-১০৫)
আপনি পড়ছেনঃ হযরত হারেসুল আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণিত সংগঠন সংক্রান্ত হাদিস
ইসলামী সংগঠনের বৈশিষ্ট্য
ইসলামী সংগঠনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ৩টি। যথা-
- ক. ইসলামী নেতৃত্ব
- খ. ইসলামী কর্মী বাহিনী
- গ. ইসলামী পরিচালনা বিধি।
ক. ইসলামী নেতৃত্বঃ
ইসলামী নেতৃত্বকে খলিফা, ইমাম বা আমীর হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। কুরআনী একটি পরিভাষা হলো উলিল আমর।
ইসলামের নামে কোনো দল খুলে তার প্রধান হয়ে বসলেই তাকে ইসলামী নেতৃত্ব বলে না। আর ইসলামী নেতৃত্ব কোন পদের নাম নয়। বরং ইসলামী কর্মীবাহিনী কর্তৃক নির্বাচিত একটি পদ। এর মর্যাদা ও গুরুত্ব রয়েছে ৷
আপনি পড়ছেনঃ হযরত হারেসুল আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণিত সংগঠন সংক্রান্ত হাদিস
নেতৃত্বের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য
জ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বঃ
রাসূল (সা:) বলেন- “জনগণের নেতা হবে সে যে আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞান রাখে।” (মিশকাত)
উন্নত আমলঃ
یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ ذَکَرٍ وَّ اُنۡثٰی وَ جَعَلۡنٰکُمۡ شُعُوۡبًا وَّ قَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوۡا ؕ اِنَّ اَکۡرَمَکُمۡ عِنۡدَ اللّٰہِ اَتۡقٰکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ ﴿۱۳﴾
হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। ( হুজরাত-১৩)
নম্র ব্যবহারঃ
“যে ব্যক্তি আলাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন ভালো ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।” (বুখারী)
ধৈর্য্যঃ
“নিশ্চয়ই আলাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে থাকেন। (বাকারা)
সাহসিকতাঃ
রাসূল (সা:) বলেন, “যে ব্যক্তি আলাহকে ভয় করে দুনিয়ার সবকিছু তাকে ভয় করে আর যে আলাহকে ভয় করেনা দুনিয়ার সবকিছু তাকে ভয় দেখায়। পরিশ্রম প্রিয়তা। কর্মীদের মাঝে ইনসাফ কায়েম।
আপনি পড়ছেনঃ হযরত হারেসুল আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণিত সংগঠন সংক্রান্ত হাদিস
পরামর্শ ভিত্তিক সিদ্ধান্তঃ
সৎ কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করা। কোন বিষয়ে তোমার মত সুদৃঢ় হয়ে গেলে আলাহর উপর ভরসা করো। (আল ইমরান)
ইসলামী নেতৃত্বের জবাবদিহিতা
১. জনগনের কাছে।
২. আল্লাহর কাছে।
খ. ইসলামী কর্মী বাহিনীঃ
এদের বৈশিষ্ট্য দুটি-
- ১. নেতার কথা মন দিয়ে শুনবে
- ২. তার আদেশ মেনে চলবে।
১) “হে ঈমানদারগণ! তোমরা রাসূলকে সম্বোধন করে রায়িনা বলোনা বরং তোমরা বল উনযুরনা এবং তার কথা মন দিয়ে শোন। (বাকারা-১০৪)
ভালো আদেশের আনুগত্য-
১ ৷ “নেতা যে পর্যন্ত কোন পাপকাজের আদেশ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার আদেশ শোন ও মেনে নেয়া প্রত্যেকটি মুসলমানের জন্য ফরজ তা তার পছন্দ হোক বা অপছন্দ হোক। তবে সে যদি কোন পাপকাজের আদেশ দেয় তবে তার আদেশ কোন বা আনুগত্য করা যাবেনা।” (বুখারী-মুসলিম)
২. “হে মূমিনগন তোমরা আলাহর আনুগত্য করো, রাসূলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের নেতার আনুগত্য করো।” (নিসা-৫৯)
রাসূল (সা:) বলেন : “যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে আলাহর আনুগত্য করল। যে আমার হুকুম অমান্য করল সে আলাহর হুকুম অমান্য করল। যারা আমীরের আনুগত্য করল তারা আমার আনুগত্য করল। আর যারা আমীরের আদেশ অমান্য করল তারা প্রকৃতপক্ষে আমার আদেশ অমান্য করল।” (বুখারী-মুসলিম)
“পাপ কাজে কোন আনুগত্য নেই, আনুগত্য কেবল ভালো কাজের ব্যাপারে।”
“আমীর যদি কালো কুৎসিত হাবশী কৃতদাসও হয়, যার মাধা আঙ্গুরের মতো সে যদি নির্দিষ্ট সীমার ভেতর থেকে নেতৃত্ব দেয় তবে অবশ্যই তার আনুগত্য করতে হবে।” (আল-হাদীস)
৩. ইসলামী পরিচালনা বিধিঃ
পরিচালনার মৌলিক উৎস দুটি– কুরআন ও সুন্নাহ। কুরআন সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিধান।
“শাসন হুকুমের অধিকার একমাত্র আলাহর। তার নির্দেশ তোমরা আলাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব ও আনুগত্য করতে পারবে না।” (ইউসুফ-৪০)
“রাসূল তোমাদের জন্য যেসব বিধি বিধান ও আইন-কানুন এনেছেন তা গ্রহণ করো এবং যেসব বিষয়ে নিষেধ করেছেন তা থেকে দূরে থাকো।” (হাশর-৭)
“যারা আলাহর বিধান দিয়ে বিচার ফায়সালাকরেনা তারাই কাফের।” (মায়েদা-৪৫)
৪. হিজরতঃ
চতুর্থ কাজ হলো হিজরত করা। হিজরত অর্থ- ত্যাগ করা, কোন জিনিস বা স্থান ত্যাগ করা, সম্পর্কচ্ছেদ করা।
পরিভাষায়ঃ একমাত্র আলাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দারুল হরর থেকে দারুল ইসলামে প্রবেশ করা।
রাসূল (সা:) বলেন-
“শরীয়তের নিষিদ্ধ কাজ সমূহ পরিত্যাগ করা।”
৫. আল্লাহর পথে জিহাদঃ
জিহাদ অর্থ- সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম, চুড়ান্ত সাধনা ইত্যাদি।
পারিভাষিকঃ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তার দ্বীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা চালানোর জিহাদ বলে।
জিহাদ সম্পর্কে কুরআন-
“জিহাদ তোমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে যদিও তা তোমাদের নিকট রহস্য মনে হচ্ছে।”
“আলাহর পথে জিহাদ কর যেমন জিহাদ করা উচিত।” (হাজ্জ-৭৮)
“ঈমানদাররা লড়াই করে আলাহর পথে আর কাফিররা লড়াই করে তাগুতের পথে।” (নিসা-৭৬)
রাসূল (সা:) বলেন-
“যে ব্যক্তি জিহাদ করল না, জিহাদের চিন্তা ভাবনাও করলনা; আর এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল সে যেন মুনাফিকের মৃত্যু বরণ করল।” (মুসলিম)
জিহাদ কখনও ফরজে আইন, কখনও ফরজে কিফায়া।
শিক্ষাঃ
১. ইসলাম কখনই এককভাবে পালনের নিমিত্তে অবতীর্ণ নয় বরং জামায়াতদ্ধতার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি জীবনে পালনীয় বিষয়।
২. যোগ্য নেতৃত্ব, আদেশ ও আনুগত্যের ভারসাম্য ইসলামী সংগঠনের প্রাণ।
৩. জিহাদের মাধ্যমে সমাজ বিপব এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য।
হারেসুল আশয়ারী হাদিস pdf
সুপ্রিয় পাঠক! আমরা হযরত হারেসুল আশয়ারী কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটির পুরো লেখাটির একটি পিডিএফ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি ৷ পিডিএফ পেতে আপনারা নিচের লিংকে ক্লিক করুন ৷
একটি মজবুত সংগঠনের পরিচয়
আদর্শিক ভিত্তিতে কোন ভূখন্ডের সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হলে একটি শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক। বলিষ্ঠ সংগঠিত উদ্যোগ ছাড়া কায়েমী স্বার্থবাদের অকটোপাস থেকে সমাজকে মুক্ত করা কিছুতেই সম্ভব নয়। সেই জন্যই আদর্শিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে দীর্ঘ সময় ধরে একটি শক্তিশালী বা মজবুত সংগঠন গড়ে তোলার জন্য অহর্নিশ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কোন সংগঠন ক্রমশঃ শক্তি অর্জন করে গণ মানুষের সংগঠনে পরিণত হলেই কাংখিত পরিবর্তনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এখানে আমরা সংক্ষেপে একটি মজবুত সংগঠনের পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
১. সুযোগ্য নেতৃত্বের সমাবেশ
একটি সংগঠনের কেন্দ্র থেকে শুরু করে শিকড় পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্ব দানের জন্য উল্লেখ যোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিত্বের সমাবেশ প্রয়োজন। যেহেতু সংগঠনের কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সংগঠন পরিচালনার দায়িত্ব এই সকল ব্যক্তিই পালন করে থাকেন সেহেতু তাঁদের যোগ্যতার মান অনুযায়ীই সংগঠনের পরিকল্পনা প্রণীত হয় এবং তাঁদের যোগ্যতার মান অনুযায়ীই তা বাস্তবায়িত হয়ে থাকে ।
সংগঠনের যেই স্তরে বা যেই অঞ্চলে সুযোগ্য ব্যক্তিবর্গ থাকেন সেই স্তরে বা সেই অঞ্চলে কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়, পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জিত হয় এবং কর্ম এলাকায় তাঁদের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে ।
সংগঠনের কোন স্তরে বা কোন কর্ম এলাকায় নেতৃত্ব দানের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিগণ দুর্বল হলে সেখানে গিয়ে কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়তে বাধ্য। শুধু তাই নয় সেখানে গিয়ে কাজ থমকেও দাঁড়াতে পারে। ফলে পরবর্তী স্তরে কাজ সম্প্রসারিত হওয়া অথবা সাংগঠনিক তৎপরতার প্রাণবন্যা নিম্ন পর্যায়ে পৌছানো দারুণভাবে বিঘ্নিত হয় ।
অতএব সংগঠনের অগ্রগতির স্বার্থে এর সকল স্তরে সুযোগ্য নেতৃবর্গের সমাবেশ অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রকৃতপক্ষে এটিই হচ্ছে সাংগঠনিক মজবুতির প্রথম ও সর্ব প্রধান শর্ত।
২. নবীনদেরকে সম্পৃক্ত করার সক্ষমতা
এটা সত্য যে, প্রবীনের অভিজ্ঞতার কোন বিকল্প নেই। তেমনিভাবে এটাও সত্য যে,নবীনদের কর্মোদ্দীপনার কোন বিকল্প নেই । কাজেই একটি সংগঠনে প্রবীন ওনবীনের সম্মিলন প্রয়োজন। যেই সংগঠন ক্রমান্বয়ে তরুণ তাজাদেরকে সংগঠনের সর্বস্তরে সম্পৃক্ত করে নিতে পারেনা তা এক পর্যায়ে এসে গতিশীলতা হারিয়ে ফেলতে বাধ্য।
যোগ্যতাসম্পন্ন নবীন কর্মীগণ যাতে সংগঠনে সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় সেইদিকে নজর রাখা সংগঠনের সকল স্তরের নেতৃবর্গের একটি বিশেষ কর্তব্য। বস্তুতঃ কোন সংগঠনে নবীনদের বিপুল সমাবেশ ঘটলে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে সেই সংগঠন সাংগঠনিক মজবুতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করলো।
৩. ব্যবস্থাপনায় যোগ্য ব্যক্তিদের সমাবেশ
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে মূল নেতৃত্ব ছাড়াও বিভিন্ন বি
ভাগীয় দায়িত্ব পালনের জন্য অনেক লোক নিয়োগ করতে হয়। অফিস পরিচালনা, গ্রন্থাগার পরিচালনা, হিসাব রক্ষণ ইত্যাদি কাজের জন্যও বেশ কিছু লোকের প্রয়োজন। এই সব কাজের পদগুলো বাহ্যতঃ ছোট বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এইগুলোও খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ। এইসব পদে যাঁরা থাকেন তাঁরাই মূল নেতৃত্বকে ব্যাক আপ সার্ভিস দিয়ে থাকেন। তাঁরা যদি সঠিক সময়ে এবং সঠিক মানে ব্যাক আপ সার্ভিস দিতে না পারেন তাহলে মূল নেতৃত্ব সঠিক সময়ে এবং সঠিক মানে তাঁদের ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হওয়ার আশংকা রয়েছে। সেই জন্য এই পদগুলোতেও যাতে দক্ষ ব্যক্তিত্বের সমাবেশ ঘটতে পারে সেইদিকে মূল নেতৃত্বকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ‘একজন কর্মী বেকার। কোথাও কর্মসংস্থান করা যাচ্ছে না। কাজেই সংগঠনের অফিসে ঢুকিয়ে দাও’-এই ধরনের দৃষ্টিভংগিতে কোন ব্যক্তিকে ব্যবস্থাপনার কোন দায়িত্ব দেয়া সমীচীন নয়। বেকার কর্মীর জন্য প্রয়োজন বোধে কল্যাণ ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু তাই বলে অযোগ্য বা কমযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে ব্যাক আপ সার্ভিস দেবার মতো কোন পদে কিছুতেই নিয়োগ করা উচিত নয়। সঠিক পদে সঠিক ব্যক্তির নিয়োগও একটি মজবুত সংগঠনের অন্যতম বৈশিষ্ট ।
৪. প্রয়োজনীয় ও উন্নততর উপকরণের সমাবেশ
দিনের পর দিন মানুষের বস্তু জ্ঞান বিস্তৃতি লাভ করছে। মানুষ জীবনকে সহজ ও গতিশীল করার জন্য নিত্য নতুন উপকরণ আবিষ্কার করছে। এইগুলোর ব্যবহারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে দূরতম অঞ্চলের সাথে যোগাযোগসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা মানুষ লাভ করছে। দুনিয়ার অপরাপর সংগঠন সেইগুলো ব্যবহার করে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে আর একটি ইসলামী সংগঠন সেইগুলো ব্যবহার না করে পিছিয়ে থাকবে এটা মোটেই অভিপ্রেত নয়। টেলিফোন, টেলেক্স, অডিও ভিডিও ইকুইপমেন্টস, ফটোষ্ট্যাট মেশিন, কম্পিউটার মেশিন, মোটর সাইকেল,মোটর গাড়ী ইত্যাদি বর্তমান কালে অতীব গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় উপকরণ। প্রয়োজনের তীব্রতা সামনে রেখে সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে এইগুলোর সমাবেশ ঘটাতে হবে ক্রমান্বয়ে। এইগুলোর সমাবেশ নিঃসন্দেহে একটি গতিশীল সংগঠনের পরিচয় বহন করে।
৫. শিকড় পর্যায় পর্যন্ত সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ
একটি ভূখন্ডের প্রতিটি এলাকা সংগঠনের আওতাভুক্ত হওয়া প্রয়োজন। সংগঠনের আদর্শিক ধ্যান-ধারণা, এর দৃষ্টিভংগী এবং বক্তব্য গণ-মানুষের কাজে সঠিক ভাবে পৌছাতে হলে নিম্নতম স্তর পর্যন্ত এর প্রতিনিধি থাকা প্রয়োজন। শিকড় পর্যায় পর্যন্ত সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটানো ছাড়া এটি নিশ্চত করা সম্ভব নয়। তদুপরি একটি সংগঠনতো শেষাবধি গণমানুষের সংগঠন হতে চায়। তাই গণমানুষ যতো জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সংগঠনের শাখা সেখান পর্যন্ত বিস্তৃত হতে হবে। সংগঠন গণমানুষের বহুমুখী সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব পালন করবে, জনগণকে সাথে নিয়েই কায়েমী স্বার্থবাদের ভিত কাঁপিয়ে তুলবে। আর সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংগঠন গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত থাকতে হবে। রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্র সংগঠনের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠলে, ধরে নিতে হবে সংগঠন সাংগঠনিক মজবুতির আরেকটি জরুরী শর্ত পূরণ করতে পেরেছে।
৬. নেতৃত্ব ও কর্মীদের সুসম্পর্ক
কোন সংগঠনে নেতৃবৃন্দ যদি বস্ সেজে যান এবং কর্মীগণকে ভৃত্য মনে করেন তাহলে সেই সংগঠন বেশী দিন বেঁচে থাকার কথা নয়। এই ধরনের কোন সংগঠনে একজন কর্মী দুনিয়াবী কোন স্বার্থে হয়তোবা বাহ্যিকভাবে নেতৃত্বের আনুগত্য করতে পারে। কিন্তু তার অন্তরে নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকার কথা নয় । এবং তার অন্তরে নেতৃত্বের প্রতি সীমাহীন ঘৃণাই বাসা বেঁধে থাকার কথা। যেই সংগঠনে নেতৃত্ব এবং কর্মীদের মধ্যকার সম্পর্কের ধরন এই সেই সংগঠনকে মজবুত সংগঠন বলার কোন উপায় নেই।
যেই সংগঠনের নেতৃত্ব কর্মীদেরকে আন্তরিকভাবেই ভাই মনে করেন, তাদেরকে
অন্তর দিয়ে ভালোবাসেন এবং সুখে-দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়ান সেই সংগঠনের কর্মীবৃন্দ স্বাভাবিকভাবেই নেতৃত্বকে আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা করবে, ভালোবাসবে, অকাতরে তাঁর বা তাঁদের নির্দেশ মেনে নেবে এবং নেতৃত্বের নির্দেশে যেই কোন ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাইতো স্বাভাবিক। সাংগঠনিক কর্মকান্ডে এই কর্মীদের ভূমিকা ভাড়াটে কর্মীদের ভূমিকার মতো হবেনা। এমতাবস্থায় সংগঠনের কাজকে তারা নিজেদেরই কাজ মনে করবে এবং সর্বোত্তমভাবে সেই কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে। তাই নেতৃত্ব ও কর্মীদের সুসম্পর্ক সাংগঠনিক মজবুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ।
৭. কর্মীদের পারস্পরিক সুসম্পর্ক
কোন সংগঠনে বহুসংখ্যক কর্মীর সমাবেশ ঘটলেই তাকে মজবুত সংগঠন বলা যায় না যদিনা সেই সংগঠনের কর্মীদের মাঝে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বিরাজ করে। পারস্পরিক সুসম্পর্ক থাকলেই এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তির সুখ-দুঃখের সাথী হতে পারে, নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অপরের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে পারে।
যেই সংগঠনের কর্মীগণ নিজের প্রয়োজনের ওপর অপরের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে পারে সেই সংগঠনের শক্তি অনেক। সেই সংগঠনের কর্মীদের মাঝে হিংসা বিদ্বেষ থাকে না। সেই কারণেই থাকেনা পরনিন্দা। আর হিংসা-বিদ্বেষ এবং পরনিন্দার অনুপস্থিতি সঠিক অর্থেই একটি সংগঠনের পরিপূর্ণ সুস্থতার লক্ষণ। কাজেই কোন সংগঠনের কর্মীদের মাঝে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বিরাজ করলে সেই সংগঠন সাংগঠনিক মজবুতির অত্যাবশ্যকীয় একটি বৈশিষ্ট অর্জন করতে পেরেছে, এই কথা জোর দিয়েই বলা যায়।
৮. ভারসাম্যপূর্ণ বহুমুখী তৎপরতা
একটি সংগঠনের থাকে নানামুখী কাজ। বিশেষ করে একটি আদর্শিক সংগঠন বহু ব্যাপক কর্মসূচী নিয়ে কাজ করে থাকে। আদর্শিক কনসেপ্টগুলোর উপস্থাপনার মাধ্যমে চিন্তা জগতে আলোড়ন সৃষ্টি, ব্যক্তির স্বকীয়তায় আমূল পরিবর্তন সাধন, সামাজিক ব্যাধি ও সমস্যাগুলো নিরসনকল্পে পরিচালিত সংস্কারধর্মী কর্মকান্ড এবং সমাজ ও রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে সৎ ব্যক্তিদের উদ্বর্তন প্রয়াস একটি বাস্তবধর্মী সংগঠনের কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই কর্মসূচীর বাস্তবায়নের জন্য পরিচালিত হয় বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ড। এইসব কর্মকান্ডের কোন একটি দিকও না বাহুল্য, না অপ্রয়োজনীয়। এইগুলোকে সামনে রেখেই সংগঠন কর্ম এলাকায় কর্ম তৎপরতা চালায়, সংগঠনের মাঠ-কর্মীরা মাঠ চষে বেড়ায়। কিন্তু এই মাঠ চষে বেড়ানোর কাজটা একপেশে হয়ে গেলেই সমস্যা। সবগুলো কাজই যদি যুগপতভাবে সম্পাদিত হয় তবেই সোনায় সোহাগা। সামগ্রিক কর্মকান্ডে যাতে পরিপূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা পায় সেইদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন সংগঠনেরপরিচালকবৃন্দ। কোন একটি দিককেও উপেক্ষা বা অবহেলা না করে ভারসাম্য রক্ষা করে যদি সংগঠন কর্মতৎপরতা চালাতে পারে তাহলে এই সংগঠন মজবুত সংগঠন নামে আখ্যায়িত হওয়ার দাবী করতে পারে সংগতভাবেই ।
৯. আর্থিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা
একটি সংগঠনের বিভিন্নমুখী তৎপরতা পরিচালনার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। অর্থাভাবে যদি কোন সাংগঠনিক কাজ ব্যাহত হয় এটা নিঃসন্দেহেই দুর্ভাগ্যজনক। তদুপরি এটা সাংগঠনিক দুর্বলতার পরিচায়কও বটে।
একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান এর গোটা কর্মী বাহিনীকেই দিতে হবে। এর জন্য কর্মী বাহিনীর মধ্যে অব্যাহতভাবে মটিভেশন প্রদানের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। তবে কর্মী বাহিনীর বাইরেও সংগঠনের প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত ধনী ব্যক্তিদেরকে এই সংগঠনে অর্থদানের মর্যাদা এবং প্রয়োজনীয়তা সঠিকভাবে বুঝাতে হবে। তাহলে তাঁরাও এই সংগঠনের তহবিলে অকাতরে দান করতে এগিয়ে আসবেন বলে আশা করা যায়।
মোট কথা, অর্থাভাবে সংগঠনকে পংগু করে রাখার কোন উপায় নেই। শুভাকাংখীদের কাছ থেকে কোন অর্থ পাওয়া না গেলেও সংগঠনের প্রয়োজনীয় অর্থ যোগাড় করতে হবে এবং তা করতে হবে সংগঠনের কর্মীদের কাছ থেকেই। কোন সংগঠন যখন এর কর্ম এলাকায় বিভিন্নমুখী কর্মকান্ড পরিচালনা করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান নিজেই দিতে পারে তখন একে শক্তিশালী সংগঠন গণ্য করার একটি মজবুত ভিত্তি পাওয়া যায় ।
১০. কর্ম এলাকায় নেতা ও কর্মীদের ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি
সংগঠন যেই ভূখন্ডে বা যেই অঞ্চলে কাজ করে থাকে সেই ভূখন্ড বা অঞ্চলে এর নেতৃবৃন্দ এবং কর্মী বাহিনীর ব্যাপক প্রভাব থাকা প্রয়োজন। অবশ্য এই প্রভাব এমনিতেই সৃষ্টি হয় না। সংগঠন যখন বহুমুখী তৎপরতা চালিয়ে জনগণের আস্থাভাজন হতে পারে তখনই এই প্রভাবের বিস্তৃতি ঘটে। আসলে সমাজের প্রতিটি মানুষই কল্যাণের কাংগাল। তারা যখন নিশ্চিত হতে পারে যে এই সংগঠন এবং এর নেতৃত্ব ও কর্মীবাহিনী সত্যিকার অর্থেই তাদের কল্যাণকামী তখন তারা এই সংগঠনের দিকে মানসিকভাবে ঝুঁকে পড়ে। তখন তারা তাদের দুঃখ-দুর্দশা জানাবার জন্য এদের কাছেই ছুটে আসে। তাদের নানাবিধ সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য এদেরই সহযোগিতা কামনা করে। এই অবস্থাতে সংগঠন যদি তাদের প্রতি অর্থবহ কোন সহযোগিতা নিতে পারে তাহলে তারা কাগজ কলমে না হলেও আন্তরিকভাবেই এই সংগঠনেরই লোক হয়ে যায়।কর্ম-এলাকায় এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হলে নির্দ্বিধায় বলা চলে যে সংগঠন একটি মজবুত সংগঠন হওয়ার অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
১১. বৈরী শক্তিগুলোর চক্রান্ত নস্যাৎ করার ক্ষমতা
বৈরী শক্তিগুলোর ইসলামী সংগঠনের উপস্থাপিত আদর্শের বিরুদ্ধে বলার কিছু নেই । কেন না যেই কোন যুক্তি-তর্কে এটাই প্রমাণিত হয় যে ইসলামই সর্বোত্তম সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনাদর্শ। যারা এর কল্যাণকারিতা এবং সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারে না তারা অন্যায়ভাবে কোমর বেঁধে এর বিরোধিতায় নেমে পড়ে। যেহেতু তারা আদর্শিকভাবে একে মুকাবিলা করতে পারে না সেহেতু তারা একটি ভয়াল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে এই সংগঠনের কর্মী বাহিনী এবং জনগণের মাঝে একটা ব্যবধান সৃষ্টি করতে চায়। তদুপরি মিথ্যা প্রচারণার ঝড় তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস চালায়।
বৈরী শক্তিগুলোর এই চক্রান্তজাল ছিন্ন করেই ইসলামী সংগঠনকে সামনে এগুতে হবে। একে অবশ্যই জনগণের কাছে পৌঁছতে হবে। জনগণ যাতে বিরুদ্ধবাদীদের অপপ্রচারে প্রভাবিত হতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সেই জন্য ব্যাপক গণ-সংযোগ, বিপুল সংখ্যক প্রচার পত্র বিতরণ, পত্র-পত্রিকা প্রকাশনা ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
মোট কথা বৈরী শক্তিগুলোর যাবতীয় অপকৌশল ভন্ডুল করে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্তি মুক্ত রেখে জনগণ এবং সংগঠনের মধ্যে একটি দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন ও বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সংগঠন যদি এটি নিশ্চিত করতে পারে তাহলে বুলন্দ কণ্ঠেই বলা যাবে যে সংগঠন মজবুতির আরেকটি প্রধান শর্ত পূরণ করতে পেরেছে।
শেষ কথাঃ
সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও আমাদের জানাতে পারেন ৷
মাশাআল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো লাগলো।
ALHAMDULILLAH ALL THE MOST AND ALL THE WAY. THANKS EVERY BODY.
I am in fact thankful to the holder of this web page who has shared this fantastic
piece of writing at at this place.
Hi there, just became aware of your blog through Google, and
found that it’s truly informative. I am gonna watch out for brussels.
I’ll appreciate if you continue this in future.
Lots of people will be benefited from your writing. Cheers!
I used to be able to find good info from your blog articles.