১৫ আগস্ট ইসলামী শিক্ষা দিবস | শহীদ আব্দুল মালেক এর জীবনী
আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! কেমন আছেন? আজ আমরা ইসলামিক শিক্ষা দিবসের ইতিহাস এবং শহীদ আব্দুল মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর জীবনী সম্পর্কে জানব ৷ কি কারনে শহীদ আব্দুল মালেককে হত্যা করা হয় ৷ এবং কেন ১৫ ই আগস্ট ইসলামিক শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয় ৷ এ বিষয়টি আমরা সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করব ৷ এবং শহীদ আব্দুল মালেককে নিবেদিত একটি ছড়া ও একটি গান আমরা জানবো ইনশাআল্লাহ ৷
১৫ আগস্ট ইসলামী শিক্ষা দিবস | শহীদ আব্দুল মালেক এর জীবনী
১৫ আগস্ট ঐতিহাসিক একটি দিন। আবদুল মালেকের শাহাদাত দিবস। তৎকালীন আদর্শিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার এক সংগ্রামী দিন। জনাব আবদুল মালেকের শাহাদাতের ঘটনাটি ছিল বাম এবং ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্রের ফসল। তৎকালীন আদর্শিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একজন জীবন উৎসর্গ কারীর নাম আব্দুল মালেক ।
১৯৬৯ সালে আব্দুল মালেক সহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তানের তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী এয়ার মর্শাল নুর খানের সাথে সাক্ষাত করে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর দাবি করেন। তারই ফলশ্রুতিতে অল্প কিছুদিনের মধ্যে সরকার একটি শিক্ষানীতি ঘোষণা করে। এতে কিছু ক্রুটি বিচ্যুতি থাকলেও এতে ইসলামী আদর্শের প্রাধান্য পরিলতি হয়। কিন্তু এতে বাধসাধে সমাজতন্ত্রী ও ধর্মনিরপেক্ষবাদিরা।
১৫ আগষ্ট ঐতিহাসিক একটি দিন। আবদুল মালেকের শাহাদাত দিবস
সমাজতন্ত্রী ও ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা শিক্ষানীতি বাতিলের দাবি জানায়। এটি ছিল পাকিস্তান আমলের সর্বশেষ শিক্ষা কমিশন। এরই প্রেক্ষাপটে শিক্ষা ব্যবস্থার আদর্শিক ভিত্তি কি হবে তা নিয়ে জনমতে জরিপের আয়োজন করা হয়। জনমত জরিপের অংশ হিসেবে ২রা আগষ্ট ১৯৬৯, ন্যাশনালইনষ্টিটিউট অব পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন (নিপা) ভবনে (বর্তমান ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ) এ শিক্ষানীতির উপর ১ টি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনা সভায় বামপন্থীদের বিরোধিতামূলক বক্তব্যের মধ্যে শহীদ আব্দুল মালেক মাত্র ৫ মিনিট বক্তব্য রাখার সুযোগ পান ।
শহীদ আব্দুল মালেক এর জীবনী প্রামাণ্য চিত্র ভিডিও
অসাধারন মেধাবী বাগ্মী আব্দুল মালেকের সেই ৫ মিনিটের যৌক্তিক বক্তব্যে সভার মোটিভ পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়ে যায় । তিনি স্পষ্ট করে সেদিন বলেছিলেন, , “Pakistan must aim at ideological unity, not at ideological vacuum- it must impart a unique and integrated system of educatiuon which can impart a common set of cultural values based on the precepts of Islam.”
We need Common set of cultural values, not one set of cultural values– তার বক্তব্যের এ ধারণাটিকে তিনি যুক্তি সহকারে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছিলেন।
উপস্থিত শ্রোতা, সুধীমন্ডলী এবং নীতি নির্ধারকরা আব্দুল মালেকের বক্তব্যের সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করে ইসলামী শিক্ষার পক্ষে মত দেন। আব্দুল মালেকের ত্বত্ত্ব ও যুক্তিপূর্ণ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ক্ষিপ্ত করে দেয় ইতোপূর্বে বক্তব্য রাখা বাম, ধর্মনিরপেক্ষ ও ইসলাম বিরোধী বক্তাদের। সকল বক্তার বক্তব্যের মাঝ থেকে নীতি নির্ধারক এবং উপস্থিত শ্রোতা-সুধীমন্ডলী যখন আবদুল মালেকের বক্তব্যকে পুর্ণ সাপোর্ট দেয় ৷ তখন আদর্শের লড়াইয়ে পরাজিত বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর সকল রাগ এবং ক্ষোভ গিয়ে পড়ে আব্দুল মালেকের উপর।
সভার এক পর্যয়ে জৈনক ছাত্রনেতা ইসলামী শিক্ষার প্রতি কটাক্ষ করে ৷ শ্রোতারা এর তীব্র বিরোধিতা করে ইসলামী শিক্ষার পক্ষে স্লোগান দেয়। সন্ত্রাসীদের ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আব্দুল মালেক তার সাথীদের স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেন। এসময় সকল সংগীকে নিরাপদে বিদায় দিয়ে শহীদ আব্দুল মালেক ২/৩ জন সাথীকে সাথে নিয়ে টিএসসির পাশ দিয়ে তার হলে ফিরছিলেন। হলে ফেরার পথে লোহার রড-হকিস্টিক নিয়ে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নরপিশাচ ধর্মনিরপেক্ষ ও বাম সন্ত্রাসীরা। এক পর্যায়ে তাকে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নিয়ে মাথার নিচে ইট দিয়ে, ইটের উপর মাথা রেখে উপরে ইট ও লোহার রড- হকিষ্টিক দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে রক্তাক্ত ও অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়।
আব্দুল মালেককে আহত এবং সংগাহীন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার তিনদিন পর ১৫ আগষ্ট শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পক্ষে যুক্তিপুর্ণ বক্তব্য দেয়া ইসলামের এই সুমহান বক্তা ।
শহীদ আব্দুল মালেক
দীদার মাহদী
একটি মানুষ জন্ম নিলে
মরতে হবে তাকে,
ছাড়তে হবে মায়ার ভূবন
মহান প্রভূর ডাকে ৷
হয় স্বাভাবিক মৃত্যু যাদের
ভাবায় না তা তেমন,
অস্বাভাবিক মৃত্যুগুলো
সবকে ভাবায় যেমন ৷
আর যদি সে মৃত্যুটা হয়
আদর্শেরি জন্য,
সেই সে মহান ব্যক্তিগুলো
মরেও অমর ধন্য ৷
শহীদ আব্দুল মালেক হলেন
মহান তাদের মতো,
দীন ইসলামের জন্য তিনি
ছিলেন সদা রতো ৷
ইসলামেরি দুশমনেরা
করলো শহীদ তাকে,
আন্দোলনের কর্মীদেরকে
কে দমিয়ে রাখে?
তার মরণে হাজার মালেক
জন্ম নিছে দেশে,
আল কোরআনের রাজ কায়েমে
আনবে বিজয় শেষে ৷
দীন ইসলামী শিক্ষা তারা
বাস্তবায়ন করে,
মালেক ভাইয়ের স্বপ্ন পুরণ
করবে ঘরে ঘরে ৷
আদর্শকে যায় না মারা
জুলুম যতই আসে,
মুমিন ব্যক্তি জেল জুলুম
কাদে না সে হাসে ৷
আল্লাহ তুমি মালেক ভাইকে
জান্নাত নসিব করো,
দীন ইসলামের বিজয় দিয়ে
হৃদয়টাকে ভরো ৷
শহীদ আব্দুল মালেককে নিয়ে ছড়া আবৃত্তি
পুনশ্চঃ আজ ইসলামী শিক্ষা দিবস ৷
শহীদ আব্দুল মালেক ভাই ইসলামী শিক্ষার
পক্ষে জ্বালাময়ী ভাষণ দিতে গিয়ে আজকের এই দিনে শাহাদাত বরণ করেন ৷
তার স্মরণে এই ক্ষুদ্র প্রয়াস ৷
শহীদ আব্দুল মালেক ভাইকে
উৎসর্গিত গান
দীদার মাহদী
মালেক আজ নেই তবে আছে তার সাথীরা,
এক বাতি নিভলেও আছে লাখ বাতিরা ৷
খুন গুম করে কভু দমানো তো যায়নি,
ধ্বংস তো হবে ওই রাক্ষুসে হায়নি,
প্রস্তুত রয়েছে আগামীর জাতিরা— ঐ
ধরা পরে জালিমই মজলুম বেঁচে যায়,
মালেকের জীবনীতে মুক্তি খুঁজে পায়,
আবাবিলে ধ্বংস হবে ওই হাতিরা— ঐ
মুক্তির মঞ্জিলে যাবে এই কাফেলা,
ডুববেনা যতো হোক নড়বড়ে এ ভেলা,
সাথে সব শ্রেণি পেশা আরো ওই তাঁতিরা— ঐ
আপনার জন্য আরও কিছু আর্টিকেল
- ক্যারিয়ার ও সংগঠন এবং সঠিকভাবে ক্যারিয়ার গঠনের উপায়
- ইসলামী সাহিত্য চর্চার কৌশল
- উপস্থিত বক্তৃতা দিবেন কীভাবে?