শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

 

আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! আশা করছি ভালো এবং সুস্থ আছেন ৷ পবিত্র লাইলাতুল বারাআত এর বরকতময় শুভেচ্ছা ৷ এই রাতের বিশেষ মাহাত্ম্য ও ফজিলত সম্পর্কে জানার জন্য অনেকে আগ্রহী হয়ে আছেন ৷ এবং এ রাতের আমলগুলো কিভাবে করবেন তাও জানার চেষ্টা করছেন ৷ শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত জানার আগ্রহ পোষণ করছেন ৷ শবে বরাতের নামাজের নিয়ত সম্পর্কে জানতে চান ৷ এ সকল বিষয়ে যারা আগ্রহ পোষণ করছেন তাদের জন্য আমাদের আজকের এই আর্টিকেল ৷ আমরা শবে বরাতের বিশুদ্ধ আমল সম্পর্কে আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ ৷

আরও পড়ুনঃ শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত বিস্তারিত

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

শাবান মাসের ১৪ তারিখের দিবাগত রাতকে শবে বরাত বলা হয়। হাদিসে ভাষায় এই রাতকে লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রজনী বলা হয়েছে।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে কোরআন মাজিদে সরাসরি নির্দেশনা না থাকলেও হাদিস শরিফে নির্ভরযোগ্য সনদ বা বর্ণনাসূত্রে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

 

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া

 

সম্মানিত পাঠক! আমাদের দেশে শবেবরাত নিয়ে উচ্চ মাত্রায় বাড়াবাড়ি এবং ছাড়াছাড়ি রয়েছে ৷ কেউ কেউ শবেবরাতের পক্ষে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি করছেন ৷ জাল জঈফ হাদিস উল্লেখ করে শবেবরাত প্রতিষ্ঠার তুমুল আন্দোলন সংগ্রামে নেমেছেন ৷ অবান্তর অবাস্তব অনেক বিষয়ে শবেবরাতের সাথে সম্পর্কযুক্ত করছেন ৷ এটা যেমন নিন্দনীয়, ঘৃণিত ৷ অপরদিকে আরেক পক্ষ শবে বরাতকে অস্বীকার করে এর বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন ৷ শবে বরাতের আমল সম্পর্কে অবান্তর, অবাস্তব ঘৃণিত শব্দ উচ্চারণ করে মিথ্যা প্রচারণায় মেতেছেন ৷ এটাও চরম লজ্জাজনক, হতাশা জনক এবং নিন্দনীয় কাজ ৷

 

যারা সবে বরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন তাদের বক্তব্য অনেকটা এরকম এ রাত্রি হচ্ছে ভাগ্য রজনী ৷ এই রাতে আগামী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারিত হয় ৷ আগামী একটি বছর আপনি কিভাবে কাটাবেন ৷ আপনার রিজিক কতটুকু হবে ৷ আপনার সমস্যা সম্ভাবনা, ভালো-মন্দ যাবতীয় বিষয় এই রাতে নির্ধারিত হয়ে থাকে ৷ এ রাতে ভালো খাবার খেলে আগামী এক বছর ভালো খাবার খাওয়া যাবে ৷ তাই এ রাতে গরুর গোশত রুটি পিঠা ইত্যাদির আয়োজন করে থাকেন ৷ এগুলো সবই নিজেদের মনগড়া বানানো কথা এবং প্রচলন ৷ এর সাথে ইসলামের নূন্যতম কোন সম্পর্ক নেই ৷ বরং ভাগ্য রজনী বলা যায় লাইলাতুল কদরকে ৷

 

বিখ্যাত সাহাবি মুয়াজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তার সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। ’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস,  ৫৬৬৫)

 

শবে বরাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ সময় নিয়ে নফল নামাজ পড়তেন। এ বিষয়ে এক হাদিসে আম্মাজান হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন—

‘একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এতো দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো- তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না- হে আল্লাহর রাসুল। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।

 

তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত)। আল্লাহ তায়ালা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩/৩৮২-৩৮৩; তাবারানি: ১৯৪)

 

শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত?

 

সমাজে প্রচলন আছে শবে বরাতে ১২ রাকাত নামাজ ও ছয়শো দোয়া পড়তে হয় ৷ কিন্তু বিষয়টি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় ৷ এ রাত বরকতপূর্ণ ও ক্ষমাপ্রাপ্তির রাত হওয়ায় বিভিন্ন নফল আমল করা যায় ৷ ১২ রাকাত নামাজ নির্ধারণ করার সুযোগ নাই ৷ যার যত রাকাত পড়ার ইচ্ছা পড়তে পারে ৷ নফল নামাজ পড়ার পাশাপাশি কুরআন তিলাওয়াত করা যেতে পারে ৷ তাহাজ্জুদের আমল প্রশংসনীয় বটে ৷ দান সদকাও করা যায় ৷

 

শবে বরাতের নামাজের দোয়া

 

শবে বরাতে একজন মুসলিম যেসব ইবাদত করবেন তার পুরোটাই নফল। এ রাতে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, নামাজ সব নফল। কোনোটাই ফরজ, ওয়াজিব বা অন্ততপক্ষে সুন্নতে মুয়াক্কাদাও নয়।

এজন্য কেউ এ রাতে নফল নামাজ পড়লে তা অন্যান্য যেকোনো সময়ের নফল নামাজের মতো পড়বে, নফল নামাজে সানা, সূরা ফাতিহা, সূরা মিলানো, বৈঠক, তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা, সব স্বাভাবিক নিয়মে পালন করতে হবে।

 

নামাজ শেষে চাইলে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করতে পারেন। তবে এ রাতের নফল নামাজের জন্য নির্দিষ্ট করে আলাদা কোনো দোয়া নেই। তাই শবে বরাতে কারো জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া করা উচিত হবে।

 

তবে রজব ও শাবান মাসে আল্লাহর রাসূল বরকত চেয়ে আল্লাহর কাছে যে দোয়াটি করেছেন চাইলে তা পড়া যেতে পারে। দোয়াটি হলো-

আরবি :

اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান

অর্থ : হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৫৯)

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *