পীর ধরা কি ফরয? পীর ধরা জায়েজ না নাজায়েজ

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]পীর ধরা কি ফরয[/box]

 

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় বন্ধুরা! কেমন আছেন? আজ আমরা অত্যন্ত বহুল প্রচলিত একটি বিষয় নিয়ে আলোকপাত করব ৷ পীর ধরা কি ফরয?

বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত ধর্মপরায়ন ৷ ধর্মের বিষয়টি তাদের কাছে খুবই সেনসিটিভ ৷ সে কারণে সময়ে-অসময়ে দেখা গেছে ধর্মকে নিয়ে একশ্রেণীর মানুষ ব্যবসা করা শুরু করেছে ৷ যার নাম দিয়েছে পীর ব্যবসা ৷ মাজার ব্যবসা ৷ পুঁজি ছাড়া যে ব্যবসা খুবই জমজমাট ৷ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে তারা ৷ সহায় সম্পত্তি ছাড়াও ঈমানের মতো মূল্যবান জিনিসও লুট করছে তারা ৷

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]ভন্ডপীর চেনার উপায়[/box]

ভন্ডপীর চেনার উপায়
ভন্ডপীর চেনার উপায়

একশ্রেণীর অপরাধী ও পাপীতাপী ব্যক্তিরা পরকালের নাজাতের আশায় এই সকল ভন্ড লম্পট ও চরিত্রহীন ব্যক্তিদের কাছে নিজেদের ঈমানকে বিকিয়ে দিচ্ছে ৷ অপর একশ্রেণীর রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তাদের সকল অপকর্মকে ঢাকার জন্য এ সকল নামধারী ঈমান লুণ্ঠনকারী ব্যক্তিদের কাছে যাতায়াত করছে ৷ এবং হাদিয়া তোহফা দিচ্ছে ৷ এসব করে তারা মনে করছে দুনিয়াতে আমরা যতই অপরাধ অপকর্ম করি না কেন ৷ আমি যদি অমুকের মুরিদ হতে পারি তাহলে পীর বাবা তাকে যে কোনোভাবেই হোক মুক্তি পাইয়ে দেবে ৷ সে নাজাত পাবে এবং বেহেশতে যেতে পারবে ৷ তাই জায়গায় জায়গায় গড়ে উঠেছে পীরের খানকা, মাজার ইত্যাদি ৷

এই ভন্ড পীরদের দৌরাত্ম্যের কারণে মানুষ খাঁটি এবং আসল পীরদেরকেও ভন্ড বলা শুরু করেছে ৷ ভন্ড পীররা তাদের লালসা চরিতার্থ করার জন্য পীরের ভান ধরে নিজেকে আল্লাহর অলি বলে দাবি করে ৷ এ সকল ব্যক্তিরা মূলত তাদের আখের গোছানোর জন্য এগুলো করছে ৷ তারা যখন দেখল মূর্খ নাদান ব্যক্তিদেরকে মুরিদ বানিয়ে যেমন খুশি তেমন চালানো যায় ৷ আঙুলের ইশারায় নাচানো যায় ৷ নিজের অঘোষিত একটি রাজত্ব কায়েম করা যায় ৷ মুরিদের অর্থবিত্ত এবং চরিত্রগত বিষয়ে নাক গলানো যায় ৷ তখনই তারা তাদের জন্য এই বাজে পথটিই বেছে নিয়েছে ৷

ফলে যারা ইসলামের জন্য কাজ করছে ৷ প্রকৃতপক্ষে যারা উম্মাহর কল্যাণে কাজ করছে ৷ জাতিকে জাহান্নামের অতল গহবর থেকে বের করে নাজাতের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে ৷ তাদেরকেও মানুষ আছে ভন্ড ভাবতে শুরু করেছে ৷ আসল এবং খাঁটি জিনিসের যেমন দুই নম্বর মাল তৈরি হয়ে যায় ৷ ঠিক তেমনি আসল এবং খাটি পীরের ছায়ায় মন্দ এবং ভন্ড পীরের আবির্ভাব ঘটেছে ৷

আরও দেখুনঃ তাওবা ইস্তেগফার করার নিয়ম

[box type=”shadow” align=”aligncenter” class=”” width=””]পীর কাকে বলে?[/box]

পীর ধরা কি ফরয
পীর ধরা কি ফরয

পীর শব্দটি কুরআন হাদীসে নেই ৷ এটি ফারসি শব্দ ৷ এর অর্থ বৃদ্ধলোক ৷ আরবিতে এর প্রতিশব্দ শায়খ ৷ পরিভাষা হিসেবে জ্ঞানী অভিজ্ঞ ৷ আমাদের দেশের ওস্তাদ অর্থেই শায়ক শব্দটি ব্যবহার করা হয় ৷ যেমন শাইখুল হাদিস মানে হাদিসের উস্তাদ ৷

এমন কোন কাজ নেই যা ওই কাজে অভিজ্ঞ জ্ঞানী লোকের কাছ থেকে শিখতে হয় না ৷ ইসলাম জানার ক্ষেত্রেও সে কথা সত্য ৷ অর্থাৎ দ্বীন ইসলামের জ্ঞানে যারা ওস্তাদ হবার যোগ্য তাদের কাছ থেকে ইসলামকে বুঝতে হবে ৷ যিনি ইসলামের শিক্ষক তাকে ওস্তাদ, পীর, বুজুর্গ এবং অলি যাই বলা হোক ৷ তাতে আপত্তি নেই ৷ কিন্তু শর্ত হলো দীন তার কাছ থেকেই শিখতে হবে যিনি দীনের ওস্তাদ হবার যোগ্য ৷

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]খাঁটি পীর চেনার উপায়[/box]

খাঁটি পীর চেনার উপায়
খাঁটি পীর চেনার উপায়

পীর হবেন শরীয়তের আদেশ নিষেধ পালন করার প্রশিক্ষণদাতা। আর যিনি সে প্রশিক্ষণ নিতে চায় সে শিক্ষার্থীর নাম হল “মুরীদ”।

সুতরাং যে ব্যক্তি নিজেই শরীয়তের বিধান মানে না, নামায পড়ে না, পর্দা করে না, সতর ঢেকে রাখে না বা শরীয়তের আবশ্যকীয় কোন বিধান পালন করে না, সে ব্যক্তি কিছুতেই পীর তথা মুর্শীদ হতে পারে না। কারণ তার নিজের মাঝেই যখন শরীয়ত নেই, সে কিভাবে অন্যকে শরীয়তের উপর আমল করা প্রশিক্ষণ দিবে? নিজেইতো প্রশিক্ষিত নয়।

আর পীর মুরীদির এ পদ্ধতি রাসূল সাঃ থেকে চলে আসছে। রাসূল সাঃ সাহাবাদের আল্লাহমুখী হওয়ার প্রশিক্ষণ দিতেন। সাহাবারা রাসূল সাঃ এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতেন। বলা যায় রাসূল সাঃ হলেন সবচে’ প্রথম ও বড় পীর, ও সাহাবায়ে কিরাম হলেন প্রথম মুরীদ।

মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পীর হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন ৷ তার মধ্যে তিনটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে ৷

প্রথম শর্ত হলো কোরআন ও হাদীসের জ্ঞান ৷ কুরআনের জ্ঞান এক্ষেত্রে কমপক্ষে তাফসীরে জালালাইনের মতো সংক্ষিপ্ত তাফসীরের জ্ঞানটুকু থাকা দরকার ৷ হাদিসের বেলায় অন্তত মিশকাত শরীফ ভালো করে পড়ে থাকা দরকার ৷ এতটুকুও যার নেই তার হাতে বায়াত হওয়া মানে ঈমানের ডাকাতের হাতে নিজেকে তুলে দেয়া ৷

দ্বিতীয় শর্ত হলো সহীহ আমল ৷ মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহমতুল্লাহি এবং তার পীর মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহ আলাইহি ছিলেন এমন পীর ৷ যারা মুরিদের হাদিয়াকে রোজগারের সম্বল বানাননি ৷

এক্ষেত্রে একটা উদাহরন দেয়া হলো ৷ একবার মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কাছে কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা একজন ছাত্র দোয়া চেয়ে দশটি টাকা মানি অর্ডার করে পাঠায় ৷ হযরত থানবী রহঃ তার দশ টাকা ফেরত পাঠিয়ে দেন আর লিখে দেন আমি দোয়া করেছি ৷ কিন্তু আমি দোয়া বিক্রি করি না ৷

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]যার পীর নাই তার পীর শয়তান[/box]

যার পীর নাই তার পীর শয়তান
যার পীর নাই তার পীর শয়তান

পীর ধরা ছাড়া পরকালে মুক্তি নেই এ কথাটি কোন অর্থে বলা হয়? অশিক্ষিত লোকদের পক্ষের দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা এবং জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে কোরআন হাদিস মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই ৷ তারা নিজ এলাকার মসজিদের ইমাম থেকে জানার চেষ্টা করেন ৷ ইমাম তেমন যোগ্য মনে না হলে কোন বড় আলেম খোঁজ করতে বাধ্য হন ৷ কোন লোকের পক্ষে এমন অসহায় ভাবে দীনি জীবনযাপন করা অসম্ভব ৷ এ অবস্থায় কোন আলেম যদি পীরের দায়িত্ব নিয়ে কোন লোককে সাহায্য করে ৷ তাহলে এটা দীনের বড় খেদমত বলেই গণ্য হওয়া উচিত ৷ দীনের ব্যাপারে এরকম কোন পথপ্রদর্শক ছাড়া সাধারণ লোকের উপায় কি? এ অর্থে যদি বলা হয় পীর ধরা ছাড়া মুক্তি নেই ৷ তাহলে এ কথাটি অযৌক্তিক নয় ৷

 

কারো যদি নিজে নিজে কুরআন ও সুন্নাহ অনুপাতে স্বীয় আত্মশুদ্ধি হয়ে যায়, তাহলে কোন পীর বা শিক্ষকের কাছে যাবার কোন প্রয়োজন নেই। যদি না হয়, তাহলে পীর বা শিক্ষকের কাছে গিয়ে স্বীয় নফসের শুদ্ধায়ন করা আবশ্যক। বাকি উস্তাদের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে যেমন আমরা দেখি উক্ত বিষয়ে শিক্ষক নিজে প্রাজ্ঞ কি না?

তেমনি দ্বীনী শরীয়ত অনুসরণে মনকে আত্মাশুদ্ধি করতে গিয়ে অবশ্যই ভাল করে যাচাই করতে পীর সাহেব নিজের আত্ম শুদ্ধ করেছেন কিনা? এর সহজ পথ হল, পীর সাহেব কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে অভিজ্ঞ কিনা? তিনি সুন্নাতের পাবন্দ কি না? তার চেহারা, তার আখলাক, তার পরিবার, তার আমল, তার জীবনের বাঁকে বাঁকে সুন্নাতের অনুসরণ আছে কি না? তিনি দুনিয়াবিমুখ কিনা? তাকে কোন আল্লাহ ওয়ালা উস্তাদ বা পীর পীর মুরিদী তথা শিক্ষকতা করার অনুমোদন প্রদান করেছেন কি না? পর্দাসহ যাবতীয় শরীয়তের মাসায়েলের কঠোর পাবন্দ কি না? ইত্যাদি সমস্ত বিষয় দেখতে হবে।

যদি কোন একটি বিষয়েও তাকে গাফেল দেখা যায়, তাহলে এমন পীর বা শিক্ষকের কাছে শিখতে যাওয়া, নিজের ঈমান আমলকে ধ্বংস করার শামিল হবে। তাই দেখে শুনে, যাচাই করে পীরের কাছে যাওয়া উচিত।

আর যে ব্যক্তি নিজেই শরীয়তের বিধান মানে না, নামায পড়ে না, পর্দা করে না, সতর ঢেকে রাখে না বা শরীয়তের আবশ্যকীয় কোন বিধান পালন করে না, সে ব্যক্তি তো পীরই হতে পারে না। কারণ তার নিজের মাঝেই যখন শরীয়ত নেই, সে কিভাবে অন্যকে শরীয়তের উপর আমল করা প্রশিক্ষণ দিবে!

পীর ধরা ফরয নয় ৷ সবার জন্য পীর ধরা বৈধ নয় ৷ অশিক্ষিতরা আলেমদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে মাসআলা জানবে ৷ দেওয়ানবাগী, কুতুববাগী, রাজারবাগী, সুরেশ্বরী, ফরীদপুরী, এনায়েতপুরী, চন্দ্রপুরী, কামাল্লার ভন্ড পীর, মাইজভান্ডারী, কেল্লাবাবা, খাজাবাবা, রেজভী, এসব ভন্ড ও ঈমানবিধ্বংসী পীরের কাছে গেলে আখেরাত ধ্বংস হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই পীর ধরার ক্ষেত্রে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। স্থানীয় হক্কানী কওমী মাদরাসা পড়ুয়া বড় কোন আলেমের পরামর্শে পীর ধরতে যান। নিজে নিজে পন্ডিতী করে ভন্ড পীরের খপ্পরে পরে নিজের দ্বীন ও ঈমান ধ্বংস করবেন না।

শেষ কথাঃ

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *