প্রতিভা বিকাশে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা

প্রতিভা বিকাশে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা

আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! আশা করছি ভাল এবং সুস্থ আছেন ৷ আজ আমরা শিক্ষা রিলেটেড একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আপনাদের সাথে শেয়ার করছি ৷ একজন শিক্ষক এবং একটি প্রতিষ্ঠান ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা ও প্রতিভা বিকাশে কি ভূমিকা নিতে পারে? আমরা বর্তমান আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ ৷

পড়তে পারেনঃ ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল

পুরো আর্টিকেলটি পড়লে আশা করছি আপনি একজন শিক্ষক ও একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে আপনার ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা বিকাশে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবেন ৷ ইনশাআল্লাহ ৷ শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন ৷  পড়ার সাগরে ডুব দিন ৷

প্রতিভা বিকাশে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
প্রতিভা বিকাশে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা

প্রতিভা বিকাশে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা

 

পড়াশােনার জন্য আজকাল যেভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, অতীতে তা ছিল না, আসহাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূলের কাছেই শিখেছেন। তিনি চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে, খেতে, পান করতে, ঘুমাতে, ঘুম থেকে উঠতে যুদ্ধের ময়দানে, বিচারের মজলিস, বিবাহ ও খাবার অনুষ্ঠানে তথা সবখানেই তার সঙ্গীসাথীদের শেখাতেন।

যখনই কারাে মধ্যে কোনাে দুর্বলতা দেখতেন বা জাহেলী রুসম-রেওয়াজের প্রচলন দেখতেন তখনই তা সংশােধন করে দিতেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আসহাবে রাসূলের সার্বক্ষণিক শিক্ষক এবং তাঁর সাহাবীরা ছিলেন বিশ্বনবীর সার্বক্ষণিক ছাত্র।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় যায়েদ ইবনে আরকামের ঘরে দীনের প্রশিক্ষণ দিতেন। দারুল আরকামই ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। হযরত আবুবকর, হযরত ওমর, হযরত ওসমান, হযরত আলী (রা) প্রমুখ উক্ত প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলেন। হযরত ওমর (রা) এ বাড়িতেই ঈমান কবুল করেন। আল্লাহর রাসূল মদীনায় হিজরত করার পর মসজিদে নববীর একটি অংশ পাঠশালা হিসেবে ব্যবহার করেন।

সেখানে যারা দীন শেখার জন্য বিশ্বনবীর সান্নিধ্যে থাকতেন তাদেরকে আসহাবে সুফফা বলা হয়। আসহাবে সুফফার পাঠ্যক্রম ছিল কুরআন ও হাদীস। এছাড়া বিদেশী ভাষা শেখাও তাদের কারাে কারাে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল। যেমন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত যায়েদ ইবনে সাবেতকে সুরিয়ানী ভাষা শেখার নির্দেশ দেন। এ ভাষায় আল্লাহর রাসূলের কাছে কোনাে চিঠি এলে তিনি। অনুবাদ করে শােনাতেন ৷

আসহাবে সুফফার সদস্যদেরকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাদানের জন্যও পাঠাতেন। আল্লাহর রাসূলের ওফাতের পর সাহাবায়ে কেরাম পরস্পর পরস্পরের কাছ থেকে শিক্ষা। লাভ করতেন। সাহাবায়ে কেরাম আরবীভাষী হলেও কুরআন বােঝা ও ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে সকলের যােগ্যতা সমান ছিল না। একজনের কাছে যা অস্পষ্ট ছিল। আরেকজনের কাছে তা স্পষ্ট ছিল। তাই তারা পরস্পরের সাথে আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে কুরআনের ব্যাখ্যা জানার চেষ্টা করতেন।

তাবেয়ীদের যুগ থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশােনা ব্যাপকতা লাভ করে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের শাখা-প্রশাখা বাড়তে থাকে।

অতীতে শিক্ষককেন্দ্রিক পড়াশােনার প্রচলন থাকলেও বর্তমানে শিক্ষক কর্তৃক বিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষা দেওয়ার প্রচলন খুব একটা নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েই সাধারণত পড়াশােনা করতে হয়। ছাত্রছাত্রীর প্রতিভা বিকাশে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিভা বিকাশে শিক্ষকের ভূমিকা
প্রতিভা বিকাশে শিক্ষকের ভূমিকা

প্রতিভা বিকাশে শিক্ষকের ভূমিকা

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। এই মেরুদণ্ড ঠিক রাখার মহান পেশায় যারা নিয়ােজিত তারা হচ্ছেন শিক্ষক। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকে শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি। শিক্ষকগণই হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকের চলাফেরা, উঠা-বসা, কথাবার্তা, আচার-আচরণ সকল কিছু একজন ছাত্রের উপর প্রভাব ফেলে, তাই শিক্ষককে সদা সতর্ক থাকতে হয় এবং ছাত্রের প্রতিভা বিকাশে যত্নশীল ভূমিকা পালন করতে হয়। কারণ একটি ফুলের বাগান তত্ত্বাবধায়কের অবহেলা কিংবা অযত্নের কারণে অনেক ফুলের কলি ঝরে যেতে পারে।

তেমনি শিক্ষকের যথাযথ ভূমিকা, সহযােগিতা, তত্ত্বাবধান ও সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে অনেক ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবন বিনষ্ট হতে পারে। অপরদিকে একজন শিক্ষকের একটু উৎসাহ-উদ্দীপনা ও দিকনির্দেশনার ফলে একজন ছাত্রছাত্রী নিজের জীবন গঠন করে শুধু দেশের নয়, সমগ্র মানবতার কল্যাণে অবদান রাখতে পারে।

শিক্ষকের উৎসাহের পরিবর্তে নেতিবাচক মন্তব্যের কারণে অনেক প্রতিভাবান ছাত্রেরই প্রতিভা বিকশিত হয় না। দু’জন কাঠমিস্ত্রিকে একখণ্ড কাঠ দিয়ে একই ধরনের আসবাব তৈরি করতে দেওয়া হলে একজনের চেয়ে আরেকজনেরটা অধিক সুন্দর হয়, উভয়ের আসবাব সমান সুন্দর হয় না। উভয়ের ক্ষমতা, অভিজ্ঞতা ও কর্মকৌশলের পার্থক্যের কারণে এটা হয়। অনুরূপভাবে একজন মেধাবী ছাত্র কোনাে শিক্ষকের উত্তম তত্ত্বাবধানের ফলে জীবনে বেশ ভালাে করতে পারে।

আর আরেকজন শিক্ষকের আচরণে পড়াশােনাই ত্যাগ করতে পারে। যে শিক্ষকের সংস্পর্শে একজন ছাত্রছাত্রীর মেধার বিকাশ ঘটে, তিনিই আদর্শ শিক্ষক। একজন আদর্শ শিক্ষক ছাত্রছাত্রীর মেধার বিকাশে কয়েক ধরনের ভূমিকা রাখেন ৷

জানার আগ্রহ সৃষ্টি

শিক্ষক একজন ছাত্রকে সবকিছু শিখিয়ে দিতে পারেন না। তবে তিনি শেখার আগ্রহ সৃষ্টি এবং ছাত্রের চিন্তার দিগন্ত প্রসারিত করতে পারেন। কোনাে শিক্ষক ছাত্রদের মধ্যে জানার আগ্রহ সৃষ্টি করতে সক্ষম হলে ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই লিখে নেয়। এতে ছাত্রছাত্রীর চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং একাডেমিক সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষকের অপেক্ষা করে না; বরং নিজেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। ছাত্রছাত্রীকে পড়াশােনার প্রতি আকৃষ্ট করতে হলে শিক্ষককে সহজ ভাষায় আকর্ষণীয়ভাবে বিষয় উপস্থাপন করতে হবে ৷

এ প্রসঙ্গে রাসূল (স) বলেছেন,
علموا ولا تعنفوا فان اله
و هم فان المعلم خير من المعنف.
‘ইলম শিক্ষা দাও, কঠোরতা করাে না, কারণ শিক্ষক কঠোরতাকারীর চেয়ে উত্তম ৷ (বায়হাকী)

শিক্ষককে ছাত্রদের সব সময় উৎসাহিত করা ভালাে। ছাত্র মানেই শেখার বয়স, একজন সবকিছু জানলে প্রতিষ্ঠানে পড়তে আসতাে না। তাই ছাত্রদের সামান্য ভুল ভ্রান্তির জন্য তিরস্কার না করে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেওয়া উচিত ৷ এবং ছাত্রছাত্রীদের ভালো কাজের প্রশংসা ও পুরস্কার দান করা দরকার। পুরস্কারের জন্য সব সময় অর্থ খরচ করতে হয় না। অনুপ্রেরণাদায়ক সুন্দর একটি মন্তব্য একজন ছাত্রের জীবনের গতি পরিবর্তন করে দিতে পারে।

বাস্তব উদাহরণ : ইংল্যান্ডে জনৈক ছাত্র ক্লাসে ভুল উত্তর দেয়। উত্তরে শিক্ষক সরাসরি বলেননি যে, তুমি ভুল বলেছ। এর পরিবর্তে ছাত্রকে উৎসাহ দিয়ে বলেন, “তুমি খুবই দারুণ কথা বলেছ এজন্য তােমাকে ধন্যবাদ। তবে আমার মনে হয় এইভাবে আরও চমৎকার হয়।” কোনাে প্রশ্নের ভুল উত্তর বলা হলেও ছাত্রছাত্রীকে লজ্জিত না করে সঠিক উত্তর বলে দেওয়া হলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশােনার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।

মেধার মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

ছাত্রের প্রতিভা শিক্ষকের কাছে স্পষ্ট থাকে। কখনও কখনও দেখা যায়, একজন ছাত্র সব বিষয়ে ভালাে কিন্তু অংকে কাঁচা । আবার কোনাে ছাত্র অংকে ভালাে কিন্তু ইংরেজিতে কাঁচা। আবার কোনাে ছাত্র কোনাে বিষয়ই পড়তে আগ্রহী নয় তবে কারিগরি কাজ করতে পছন্দ করে। তাই শিক্ষক শুধু শ্রেণীকক্ষে পাঠদানই করেন না, পাঠদানের সাথে ছাত্রের ঝোকপ্রবণতা ও প্রতিভা মূল্যায়ন করেন এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

প্রস্তুতি নিয়ে পাঠদান

কখনও কখনও দেখা যায় শিক্ষক পাঠদানের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নন। তারপরেও ক্লাসে যান, কিন্তু মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকার কারণে ছাত্রদের ভালােভাবে পড়াতে সক্ষম হন না। ফলে ছাত্রছাত্রী পড়াশােনার প্রাক্ত আকৃষ্ট হয় না। পড়ার বিষয় আগেই ছাত্রছাত্রীদেরকে জানিয়ে দেওয়া ভালাে, তাহলে তারা পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে ক্লাসে আসতে পারে।

ইতিবাচক মনােভাব পােষণ

ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের সামনে ইতিবাচক মনোভাব পােষণ করা উত্তম। ছাত্রছাত্রীদের নেতিবাচক সমালােচনা করলে তারা পড়াশােনা আকৃষ্ট হয় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনাে একজন ছাত্র কোনাে প্রশ্নের ? লিখলে সেটা দুইভাবে বলা যায়-

  • ক. তুমি একটি বােকা ছেলে। তােমার মেধা বলতে কিছুই নেই। সামান্য একটি বিষয়ও বুঝতে পারাে না।
  • খ. তুমি একজন মেধাবী ছেলে। সব বিষয় যেভাবে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাে ৷ আমি আশা করেছিলাম এই প্রশ্নের উত্তর আরও চমৎকারভাবে লিখবে ।

প্রথম উপস্থাপনায় ছাত্রের মনে তার মেধা সম্পর্কে নেতিবাচক মনােভাব সৃষ্টি হয়। আর দ্বিতীয় উপস্থাপনায় ছাত্রটি আরও সুন্দরভাবে লেখার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করবে।

বাস্তব ঘটনা : জনৈক ছাত্র বাংলাদেশের একটি মাদরাসায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়াশােনার সময় বিদায়ী ছাত্রছাত্রীদের অনুষ্ঠানে আরবীতে বক্তব্য প্রদান করে। জীবনে প্রথমবারের মতাে হলভর্তি শ্রোতার উপস্থিতিতে ৫-৬ মিনিট আরবীতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নাহু ছরফে কিছু ভুলত্রুটি হয়। অনুষ্ঠান শেষ হলে মাদরাসার উপাধ্যক্ষ অন্যান্য শিক্ষকের সামনে এই ভাষায় তিরস্কার করেন যে, “নাহু ছরফে ভুল করে তােমাকে আরবীতে বক্তব্য দিতে বলেছে কে?”

ছাত্রটি আরবীতে বক্তব্য দেওয়ায় তাকে উৎসাহ দেওয়ার পরিবর্তে নেতিবাচক মন্তব্যের কারণে উক্ত ছাত্রের মধ্যে আরবীতে কথা বলার আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে সেই ছাত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবী মাধ্যমে মাস্টার্স পর্যন্ত লেখাপড়া করে ভালাে রেজাল্ট করলেও জীবনে আর কখনও আরবীতে বক্তব্য প্রদান করেনি। কিন্তু যদি ছাত্রটি আরবীতে কথা বলার চর্চা অব্যাহত রাখতাে, তাহলে পরবর্তী সময়ে নাহু ছরফের ত্রুটি , দূর হতাে এবং আরবীতেও অনর্গল কথা বলতে পারতাে।

স্টাডি গ্রুপ

শিক্ষক দুই-তিনজন ছাত্রছাত্রীর সমন্বয়ে স্টাডি গ্রুপ করতে পারেন। স্টাডি গ্রুপের সদস্যরা একে অপরের ভুল সংশােধন করবে, পরস্পর আলােচনা করবে। উদাহরণ : বাংলাদেশের পাটশিল্প বিষয়ে রচনা লেখার জন্য শিক্ষক কয়েকটি গ্রুপ করতে পারেন।

  • গ্রুপ ক. পাটশিল্পের গুরুত্ব;
  • গ্রুপ খ. পাটশিল্পের সমস্যা;
  • গ্রুপ গ. সমস্যা উত্তরণের উপায়;
  • গ্রুপ ঘ. পাটশিল্প সম্পর্কে সুপারিশমালা ইত্যাদি।

প্রত্যেক গ্রুপ নির্দিষ্ট সময় আলােচনা করে গ্রুপের মতামত ক্লাসে উপস্থাপন করবে। এতে ছাত্রছাত্রীদের জানার আগ্রহ ও বােঝার শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

স্টাডি ট্যুরের ব্যবস্থা করা

প্রায় প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে বিভিন্ন সময় ‘স্টাডি ট্যুর’ বা শিক্ষা সফর হয়। এ সকল শিক্ষা সফরও ছাত্রছাত্রীদের প্রতিভা বিকাশ ও চিন্তার দিগন্ত প্রসারিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে। স্ট্যাডি টুরের জন্য দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থানের পাশাপাশি উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভ্রমণের কর্মসূচিও রাখা দরকার। ইংল্যান্ডে ক্যাম্ব্রিজ ইংলিশ সার্টিফিকেট কোর্সের ছাত্রছাত্রীদের কোর্স শুরুর সাথে সাথে ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হয়।

কোর্সটি ছিল উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী। বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের জন্য । কোর্সের সূচনায় ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রমণের কর্মসূচি রাখার কারণ ছিল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করা যে, তারাও ভবিষ্যতে ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা নিতে পারবে। কোর্সের ছাত্রছাত্রীদের মনে এই ধরনের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হওয়ার ফলে তারা পড়াশোনায় মনােযােগী হয়। উচ্চশিক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে তাদের চিন্তার দিগন্ত প্রসারিত হয় ।

দেশে প্রাইমারি স্কুলে যারা পড়ে তাদেরকে মাঝে মধ্যে সেরা সেরা হাইস্কুল ও কলেজ ভ্রমণে নিয়ে গেলে তাদের চিন্তার রাজ্য প্রসারিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টাডি ট্যুরে নিয়ে তাদের মনে এই ধারণা দিতে হবে যে, ভবিষ্যতে তার হাইস্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে পদার্পণ করবে। আর কলেজজীবনশেষে বিশ্ববিদ্যান মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে উচ্চশিক্ষা নেবে।

যশস্বী ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময়

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ট্যুরের পাশাপাশি মাঝে মধ্যে যশস্বী ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ করে ছাত্রছাত্রীদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠান, সংবর্ধনাসভা, আলােচনাসভার আয়ােজন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে একেক সময় একেক পেশার যশস্বীদের আমন্ত্রণ জানানাে ভালাে। ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের বক্তব্য শুনে আপন আপন ক্যারিয়ার গঠনে সচেষ্ট হবে।

ছাত্রছাত্রীদের মৌলিক দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা

প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর মধ্যে অনেক মেধা ও দক্ষতা আছে। ছাত্রদের সুপ্ত মেধা অংকুরিত করার ক্ষেত্রে শিক্ষককে ডুবুরীর দায়িত্ব পালন করতে হয়। একজন ডুবুরী পাতালপুরীতে গিয়ে জিনিস অনুসন্ধান করে। অনুরূপভাবে একজন শিক্ষককে ছাত্রছাত্রীর ভেতরে প্রবেশ করে তার প্রতিভা খুঁজে বের করতে হয়।

হতাশ ছাত্রছাত্রীর সাথে পৃথকভাবে আলােচনা

কিছু ছাত্রছাত্রী পড়াশােনায় দুর্বল থাকে। তারা জীবন সম্পর্কে হতাশায় ভােগে। এই ধরনের ছাত্রছাত্রীর সাথে একান্তে আলােচনা করে তাদের সমস্যা উপলব্ধি করে এবং বাস্তবসম্মত পরামর্শ দেওয়া হলে তারা হতাশার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আশার আলাে দেখতে পায়। হতাশ ছাত্রছাত্রীদের সামনে আল্লাহর বাণী তুলে ধরতে হবে। আল্লাহ রাব্বল আলামীন ইরশাদ করেন-
ولا تيئسوا من روح الله انه لا ييئس من روح الله الا القوم الكافرون –
“আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়াে না। তার রহমত থেকে একমাত্র কাফেররাহ। হয়ে থাকে।”

ছাত্রছাত্রীদের সাথে বন্ধুর মতাে আচরণ করা

ছাত্রছাত্রী নির্ভয়ে একা সমস্যার কথা শিক্ষকদের সামনে বলতে পারলে তাদের মেধা বিকাশে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় তা সহজেই দূর করা সম্ভব হয়। এজন্য শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত।

ছাত্রদের পরামর্শ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করা

অনেক সময় ছাত্ররাও একাডেমিক বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারে। ছাত্রছাত্রীদের পরমার্শ ইতিবাচক মনােভাব নিয়ে গ্রহণ করা উচিত।

ক্লাসের বাইরে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দেখা হলে তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া

শিক্ষকের সাথে ছাত্রের সম্পর্ক শুধু ক্লাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, ক্লাসের বাইরেও ছাত্রছাত্রীর সাথে দেখা হলে পড়াশােনা ও ব্যক্তিগত খোঁজ-খবর নেয়া যায়। এতে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশােনার প্রতি আকৃষ্ট হয়।

স্টুডেন্ট মেন্টরিং

ইংল্যান্ডে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের স্টুডেন্ট মেন্টর করা হয়। তাদের কাজ হচ্ছে নিচের ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় সহযােগিতা করা। এজন্য প্রত্যেক স্টুডেন্ট মেন্টরকে দুই-তিনজন ছাত্রছাত্রীর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের পরস্পর সহযােগিতার মনােভাব সৃষ্টি হয়, দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, ছাত্রছাত্রীদের পরস্পরের প্রতি ভালােবাসা ও শ্রদ্ধা বাড়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়াশােনার গুণগত মান উন্নত হয়।

ছাত্রজীবন শেষ হলেও শিক্ষকের সাথে সম্পর্ক বহাল থাকে

শিক্ষক আমরণ শ্রদ্ধার পাত্র। ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষকের সাথে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় না। শিক্ষাজীবন সমাপ্ত হলেও শিক্ষকের কাছ থেকে মূল্যবান উপদেশ পাওয়া যায়। তাই শিক্ষকদের সাথে সব সময় যােগাযােগ রক্ষা করা উচিত।

তবে সময়-অসময়ে যোগাযোগ করে মূল্যবান সময় যেন নষ্ট করা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যােগাযােগের পরিমাণ এতটুকু হওয়া দরকার, যেন শিক্ষক আপনাকে সময় দিতে আন্তরিক থাকেন। ছাত্রজীবন শেষ হলে চাকরির আবেদনপত্রে রেফারি হিসেবে শিক্ষকের নাম দেওয়া যায়। তবে কারাে নাম রেফারি হিসেবে ব্যবহার করার আগে তাঁর কাছ থেকে অনুমতি নেয়া প্রয়ােজন। কোনাে চাকরিতে রেফারেন্স দিলে এজন্য কৃতজ্ঞতা জানানাে উচিত এবং রেফারেন্সের ফলাফল অবহিত করা উত্তম।

প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের ভালাে কর্মসংস্থানের সংবাদ শুনলে শিক্ষকরা খুশি হন এবং অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য গর্বের সাথে বলেন।

আপনার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখা

 

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *