ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব, ফজিলত ও নিয়ম কানুন

ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব, ফজিলত ও নিয়ম কানুন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ৷ সুপ্রিয় পাঠক! সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ৷ আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোকপাত করবো ৷ সেটি হচ্ছে ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব, ফজিলত ও নিয়ম কানুন ৷ আমরা আরও কথা বলবো,  চরিত্র সংরক্ষণে বিয়ে ৷ ইসলামে বিয়ে করার উপকারিতা ৷ দেরিতে বিয়ের পরিণতি ৷ আমার বিয়ে কবে হবে ৷ তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার দোয়া ৷ what is হিল্লা বিয়ে? হিল্লা বিয়ের নিয়ম  ৷ ইসলামে বিয়ের বয়স কত ৷ বন্ধুর বিয়ে নিয়ে স্ট্যাটাস ৷ ইসলামে পালিয়ে বিয়ে ৷ ইসলামে বিয়ে কত প্রকার ৷

আরও দেখুনঃ নারীরা মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারবে? 

ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব, ফজিলত ও নিয়ম কানুন

মানব জীবনে পারিবারিক বন্ধন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বামী ও স্ত্রীর মাধ্যমে এই পরিবার গড়ে ওঠে। বিবাহের মাধ্যমেই এ সম্পর্কের সূত্রপাত ৷

নারী-পুরুষ সুন্দর ও পবিত্র জীবন যাপনের সর্বোত্তম মাধ্যম হল বিবাহ। এ দিকে ইঙ্গিত করে আমাদের মহান প্রভু বলেন,

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً
“আর তাঁর (আল্লাহর) নিদর্শন সমূহ থেকে একটি হল এই যে, তিনি তোমাদের থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা তাদের নিকট প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের (স্বামী-স্ত্রী) পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও অনুগ্রহ স্হাপন করে দিয়েছেন।”(সূরা-রূম, আয়াত:২১)

ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব, ফজিলত ও নিয়ম কানুন
ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব, ফজিলত ও নিয়ম কানুন

বল্গাহীন, স্বেচ্ছাচারী জীবনের উচ্ছৃঙ্খলতা ও নোংরামির অভিশাপ থেকে সুরক্ষা করতেই ইসলাম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জোর তাগিদ প্রদান করে। প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেছেন,

يا مَعْشَرَ الشَّبابِ، مَنِ اسْتَطاعَ الباءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فإنَّه أغَضُّ لِلْبَصَرِ وأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، ومَن لَمْ يَسْتَطِعْ فَعليه بالصَّوْمِ فإنَّه له وِجاءٌ.
“হে যুব সমাজ! তোমাদের যার বিয়ে করার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা তা চক্ষুকে অবনমিত রাখে এবং লজ্জাস্হানকে হেফাজত করে। আর যে ব্যক্তি এতে সক্ষম নয়, সে যেন রোজা রাখে। কেননা তা (রোজা) যৌন তাড়নাকে প্রশমিত করে।”(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং: ৫০৬৬)

পবিত্র কুরআন ও হাদীছ শরীফ থেকে বুঝা যায় যে, এই হাদীছে বিয়ে করতে অক্ষম ব্যক্তি বলতে ঐ সকল লোক উদ্দেশ্য, যাদের প্রবল যৌন তাড়না আছে, কিন্তু শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ হওয়ার কারণে আজীবন অন্যের উপর নির্ভর করতে হবে, যাদের বিয়ের নূন্যতম সামর্থ্য নেই এবং বিয়ের পর স্ত্রীকে রাখার জন্য কোনো ঘরও নেই।

চরিত্র সংরক্ষণে বিয়ে

✓ বিয়ের প্রতি উৎসাহিত করে প্রিয় নবীজি (ﷺ) আরো বলেছেন,
الدُّنْيَا كُلُّهَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ
“এই পৃথিবীর (বৈধ) সবকিছুই উপভোগের। আর এর মধ্যে সর্বোত্তম সম্পদ হল সতীসাধ্বী রমণী।”(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং:১৪৬৭)

✓ নবীজি (ﷺ) আরো বলেন,
لَمْ تَرَ لِلْمُتَحَابِّينَ مِثْلَ النِّكَاحِ
“বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ দম্পতির পরস্পরের প্রতি যে আন্তরিক প্রেম-ভালোবাসা, তা অন্য (কোথাও) দু’জনের মাঝে তুমি দেখতে পাবে না।”(সুনানু ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং:১৮৪৭)

✓ নবীজি (ﷺ) ছেলে-মেয়ের অভিভাবকের উদ্দেশ্যে বলেছেন,
إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَه وَخُلُقَه فَزَوِّجُوهُ إِنْ لَا تَفْعَلُوهُ تَكُنْ فِتَنَةٌ فِى الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ
“যখন তোমাদের নিকট এমন কেউ বিবাহের প্রস্তাব পাঠাবে যার দীনদারী ও সচ্চরিত্রে তোমরা সন্তষ্ট, তখন তার সাথে তোমাদের ছেলে-মেয়েকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দাও। যদি তোমরা তা না কর, তাহলে পৃথিবীতে বড় ধরণের ফিতনা-বিশৃঙ্খলা জন্ম দেবে।”(সুনানুত্ তিরমীযি, হাদীছ নং: ১০৮৪)

বিয়ের ফজিলত

কিন্তু বর্তমান সমাজে এ ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হল অভাব অনটন ও ক্যারিয়ার গঠন বাঁধাগ্রস্থ হওয়ার কিছু অবান্তর যুক্তি। বিশেষত মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত যুবকদের এ কথাটি শুনতেই হয় যে, ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত না হয়ে বিয়ে করলে বউকে খাওয়াবে কী?! এ কথাটি এমনভাবে বলা হয় যেন বউই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খাদকপ্রাণী। অথচ মহান আল্লাহ এ বিষয়ে সচ্চলতার নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছেন,

وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَىٰ مِنْكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ ۚ إِنْ يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
“তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস- দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও (বিয়ে করিয়ে দাও)। তারা যদি নিঃস্ব  হয়, তাহলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” (সূরাঃ আন-নূর, আয়াতঃ ৩২)

ইসলামে বিয়ে করার উপকারিতা

১. এই আয়াতে তাফসীরে ইসলামের প্রথম খলিফা সাইয়্যেদুনা আবু বকর সিদ্দীক (রা:) বলেন,
أَطِيعُوا اللَّهَ فِيمَا أَمَرَكُمْ بِهِ مِنَ النِّكَاحِ، يُنْجِزْ [لَكُمْ] مَا وَعَدَكُمْ مِنَ الْغِنَى.
“মহান আল্লাহ তোমাদেরকে বিবাহ বিষয়ে যে আদেশ দিয়েছেন তা মান্য করো, তিনি তোমাদেরকে সচ্চলতা দানের বিষয়ে যে অঙ্গীকার দিয়েছেন তা পূর্ণ করবেন। যেমন,
إِنْ يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِ
“তারা যদি নিঃস্ব  হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন।” (ইবনে কাছীর রাহ:, তাফসীরুল কুর’আনিল আজীম, সূরা-নুর, আয়াত:৩২)

২. ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা সাইয়্যেদুনা ওমর ফারুক (রাদিআল্লাহু আনহু:) বলেছেন,

عَجَبِي مِمَّنْ لَا يَطْلُبُ الْغِنَى فِي النِّكَاحِ، وَقَدْ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: “إِنْ يَكُونُوا فُقَراءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ
আমার আশ্চর্য লাগে তাকে নিয়ে, যে বিবাহের মধ্যে জীবিকা তালাশ করে না, অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
إِنْ يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِ
“তারা যদি নিঃস্ব  হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন।”(কুরতুবী, আল-জা’মে লিআহকামিল কুরআন, সূরা-নুর, আয়াত:৩২)

৩. বিশিষ্ট ফকীহ সাহাবী সাইয়্যেদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেছেন,
الْتَمِسُوا الْغِنَى فِي النِّكَاحِ
“তোমরা বিবাহের মধ্যে জীবিকা তালাশ করো। মহান আল্লাহ বলেছেন,
إِنْ يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِ
“তারা যদি নিঃস্ব  হয়, তাহলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন।”(ইবনে কাছীর রাহ:, তাফসীরুল কুর’আনিল আজীম, সূরা-নুর, আয়াত:৩২)

ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব, ফজিলত ও নিয়ম কানুন
ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব, ফজিলত ও নিয়ম কানুন

✓রাসূল কারীম (ﷺ) বলেছেন,

ثَلاَثَةٌ حَقٌّ عَلَى اللَّهِ عَوْنُهُمُ الْمُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُكَاتَبُ الَّذِي يُرِيدُ الأَدَاءَ وَالنَّاكِحُ الَّذِي يُرِيدُ الْعَفَافَ ‏
“তিন প্রকার লোককে সাহায্য করা মহান আল্লাহ নিজ দায়িত্বে নিয়েছেন:
১)- আল্লাহ্ তা’আলার পথে জিহাদকারী (যে ব্যক্তি দ্বীনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে),
২)- মুকাতাব গোলাম- যে চুক্তির অর্থ পরিশোধের ইচ্ছা করে, এবং
৩)- বিবাহে আগ্রহী লোক- যে বিয়ের মাধ্যমে পবিত্র জীবন যাপন করতে চায়। (তিরমীযি রাহ:, আস্ সুনান, হাদীছ নং:১৬৫৫)

~~ যদি খাওয়া-দাওয়া ফ্যাক্ট না হয়, ভাবা হয় যে ছেলের ক্যারিয়ারে এটা প্রতিবন্ধক। জেনে রাখা উচিত যে বিয়ে ক্যারিয়ার গঠনে কোনো প্রতিবন্ধক না, বরং সাপোর্টিভ। পৃথিবীর বড় বড় জ্ঞানীগুণীদের অধিকাংশই বিয়ে করেছেন ১৮-২০-২৫ বছর বয়সে। বর্তমান সময়ে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাঙ্গনের উন্মুক্ত পরিবেশ, অবৈধ রিলেশনশিপের ব্যাপকতা, অশ্লীলতা-বেহায়াপনাই ক্যারিয়ার গঠনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিপজ্জনকও বটে। অভিভাবকরা কি জানেন যে তার ছেলে-মেয়ে কখন কোথায় যায়? কী করে? কখন কার সাথে পার্কে ঘুরতে যায়?! কখন কার সাথে আবাসিক হোটেলে রাত কাটায়?

দেরিতে বিয়ের পরিণতি

স্বাভাবিকভাবে একটা ছেলে/মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির গন্ডি পেরোতেই তার মাঝে ভালোলাগা, ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়। বর্তমানে ভার্চুয়াল সংস্কৃতি এটাকে আরো সহজ করে দিয়েছে। ফেসবুক ইন্টারনেট সব কিছুই আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। যার ফলে ছেলে-মেয়ে রিলেশনশিপ তৈরি করা খুব সহজ হয়ে পড়েছে। আগে যখন ইন্টারনেট বা মোবইল ফোন হাতের নাগালে ছিল না, তখন হয়তো শুধুমাত্র চিঠি-পত্রের মাধ্যমে একটা রিলেশনে জড়ানো এতটা সহজ ছিল না। কিন্তু এখন সবকিছুই আমাদের হাতের মুঠোয়। তাইতো ক্লাস সিক্স সেভেনে পড়া ছেলে-মেয়েদেরও উধাও হওয়ার খবর আসে পত্র-পত্রিকায়।

তাছাড়া ছাত্রাবস্থায় বিয়ে করার মধ্যে রয়েছে অনেক উপকারিতাও। ছাত্রবস্থায় বিয়ে করে ভালোবাসার প্রিয় মানুষটিকে যখন জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া যাবে, যখন একে অপরের কাছ থেকে পবিত্র ভালোবাসার হৃদয়স্পর্শী উৎসাহ পাবে, আর দায়িত্ব যখন ঘাড়ে চলে আসবে সে নিজে নিজেই ক্যারিয়ার গঠনে আরো উঠে পড়ে চেষ্টা করবে। বিয়ে করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা কোনো প্রতিবন্ধকতাই নয়; বরং উন্নত ক্যারিয়ার গঠনে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের বিশ্বস্ত সহযোগী।

অভিভাবকরা যদি ছেলেদের ভার্সিটি লাইফ শেষে ২-৩ বছর সাহায্য করে, তাহলে এই নশ্বর জীবন থেকে তাদের মহামুল্যবান ২-৩ টা বছর নষ্ট হবে না। ফলে তারা উন্নত ক্যারিয়ার গঠনের পাশাপাশি উন্নত দ্বীনদারি অর্জন করতে সক্ষম হবে। রাসূল কারীম (ﷺ) বলেছেন,
إذا تَزَوَّجَ العبدُ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ نِصْفَ الدِّينِ، فَلْيَتَّقِ اللهَ فيما بَقِيَ

“বান্দা যখন বিয়ে করে, তখন সে যেন তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করে। বাকি অর্ধেকের জন্য তার আল্লাহকে ভয় করা উচিত।”(বায়হাকি, শুয়াবুল ইমান, হাদীছ নং: ৫৪৮৬)

আমরা এই সহজ বিষয়টাকে জটিল করে তুলছি আমাদের মধ্যে মহান আল্লাহর উপর ভরসাহীনতার কারণে। আরে ভাই, অনার্স পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী প্রেম তো করছেই। সেটা বৈধভাবেভাবে করলে সমস্যা কোথায়? একটা রিলেশনে এমনিতেই যত ব্রেকাপ/ভাঙন, হাবিজাবি দেখা যাচ্ছে, রেজিঃ/কাবিন করে রাখলে সেই ব্রেকাপ ভাঙন, হাবিজাবি থেকে হলেও তো অন্ততপক্ষে রক্ষা পাওয়া যাবে!!!

তখন আর পার্কে লুকিয়ে লুকিয়ে ডেটিং করতে হবে না। ফলে ছেলে-মেয়েদের নৈতিক চরিত্র ও রক্ষা পাবে। অন্তত ডাস্টবিন কিংবা ভার্সিটির হলের ট্রাঙ্ক থেকে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ শুনতে হবে না। পেটে থাকা অবৈধ সন্তানের লজ্জা নিয়ে আর কোনো বোনকে দিতে হবে না গলায় দড়ি।

আমরা কেন এই সহজ বিষয়টাকে এত জটিল করে ফেলছি? আমরা কি পারি না বিয়ে নামক জটিল ধারনাটাকে সহজ করে দিতে? পারি না অশ্লীলতা ও চারিত্রিক অবক্ষয় থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে? এর জন্য প্রয়োজন শুধু একটু সহানুভূতি এবং সুন্দর মানসিকতা। অভিভাবকের একটু সহানুভূতি ও সুন্দর মানসিকতাই পারে একটা সুন্দর সমাজ উপহার দিতে।

আমার বিয়ে কবে হবে

আমার বিয়ে কবে হবে ? গুগল আমার বিয়ে কবে হবে এই প্রশ্নের উত্তর গুগলের কাছে কি আদৌ রয়েছে? আপনি কি মনে করেন গুগোল আপনার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে? কখনোই না ৷ এমন প্রশ্নই গুগলের কাছে করাটা আমার কাছে বোকামি বলে মনে হল ৷ আর আপনি হয়তো সেই বোকামিটা নিশ্চিতভাবে করে যাচ্ছেন । এটা লিখে বহু পাগল সার্চ করছে ৷ ভবিষ্যতের ইলম একমাত্র আল্লাহর কাছেই আছে ৷ আপনি বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিন ৷ পারিবারিকভাবে চেষ্টা করুন ৷ মেয়ে দেখুন ৷ সময় হলে বিয়ে হবেই ৷

দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল

পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহর নবী মুসা (আ.)-এর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। সেখানে মুসা (আ.)-এর একটি দোয়াও এসেছে। যে দোয়া পড়ার পর আল্লাহ তাআলা তার বিয়ে ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। আশ্রয়ের পাশাপাশি উত্তম জীবনসঙ্গীনিরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সেই দোয়াটি হলো-

ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻟِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﺖَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﻓَﻘِﻴﺮٌ

উচ্চারণ : রাব্বি ইন্নি লিমা- আনজালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকির।

অর্থ : হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ পাঠাবে, আমি তার মুখাপেক্ষী। (সুরা আল-কাসাস, আয়াত : ২৪)

আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের পরিচয়ে অনেক গুণাগুণের কথা কোরআনে বলা হয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো- তারা পুণ্যবান স্ত্রী ও সন্তানের জন্য দোয়া করেন। কোরআনে বর্ণিত দোয়াটি আপনিও করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ আপনি প্রশান্তিদায়ক স্ত্রী লাভে ধন্য হবেন। দোয়া শিখিয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻫَﺐْ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻨَﺎ ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺎﺗِﻦَﺍ ﻗُﺮَّﺓَ ﺃَﻋْﻴُﻦٍ ﻭَﺍﺟْﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟِﻠْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ﺇِﻣَﺎﻣًﺎ

উচ্চারণ : রাব্বানা-হাবলানা-মিন আজওয়া-জিনা- ওয়া যুররিইয়া-তিনা, কুররাতা আ‘ইউনিওঁ, ওয়াজ‘আলনা-লিলমুত্তাকিনা ইমা-মা-।

অর্থ : হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শস্বরূপ করো। (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৭৪)

তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার দোয়া

আপনি যদি প্রতিদিন তওবা পাঠ করেন এবং তওবার দেখানো নিচের আয়াতটি পাঠ করেন তাহলে দেখা যাবে যে আপনার জীবনের ভুল ভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে এবং আপনি খুব সহজেই যে আমল করবেন সেটা কাজে দিবে। সাত দিনে ভেতরে বিয়ে হওয়ার জন্য আপনি নিচের দেওয়া আয়াতটি পাঠ করুন।

সুরা তাওবার এ আয়াতটি তেলাওয়াত করা:

فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُلْ حَسْبِيَ اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

উচ্চারণ : ফাইং তাওয়াল্লাও ফাকুল হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম। ’

বন্ধুর বিয়ে নিয়ে স্ট্যাটাস

প্রাপ্ত-বয়স্ক নারী-পুরুষ বিয়ে করার পর নব দম্পতিকে শুভেচ্ছা জানানোর প্রচলন রয়েছে সমাজে। বর্তমানে কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিয়ের খবর জানাতেই শুভেচ্ছা জানানোর হিড়িক পরে যায়। সবাই নতুন দম্পতির সুন্দর জীবন কামনা করে দোয়া করেন। ইসলামের প্রথম যুগে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি নিজেও নব দম্পতির জন্য দোয়া করতেন।

নব দম্প্যতির জন্য দোয়া

এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিবাহিত ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলতেন-

بَارَكَ اللهُ لَكَ وَ بَارَكَ عَلَيْكَ وَ جَمَعَ بَيْنَكُمَا فِيْ خَيْرٍ

উচ্চারণ- ‘বারাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বারাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বাইনাকুমা ফি খাইরিন’

অর্থ : ‘আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন, তোমাদের উভয়ের প্রতি বরকত নাজিল করুন এবং তোমাদের কল্যাণের সঙ্গে একত্রে রাখুন।’  (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৩০, তিরমিজি, মিশকাত)

what is হিল্লা বিয়ে? হিল্লা বিয়ের নিয়ম

তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছেদের পর স্বামী-স্ত্রী আবারো এক সাথে সংসার করতে চাইলে স্ত্রীকে অন্য আরেকজনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে এবং তার সাথে সংসার করতে হবে, এমনকি বুখারী শরীফের হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সেই নারীর সম্ভোগের কথা স্পষ্ট করে বলেছেন। এরপর দ্বিতীয় স্বামী সেই মহিলাকে তালাক দিলে অথবা সে মারা গেলে এই মহিলা তার প্রথম স্বামীর সাথে আবারো শরয়ী নিয়ম মেনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।

এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় হল, দ্বিতীয় স্বামীর সাথে বিয়ের ক্ষেত্রে কোন ধরনের চুক্তি হতে পারবে না যে, দ্বিতীয় স্বামী তাকে কিছু সময় রেখে তালাক দিয়ে দেবেন। এটা হল হিল্লায় শরয়ী।

এর বাইরে আমাদের সমাজে বর্তমানে যে প্রচলিত হিল্লা বিয়ে হয়ে থাকে, সেখানে চুক্তির মাধ্যমে কিছুক্ষণ নারীকে রেখে তালাক দিয়ে দেওয়া হয়।

প্রচলিত এই হিল্লা বিয়ের বিরোধিতা করে থাকেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামগণ। এটাকে কুসংস্কার বলেন ৷

ইসলামে বিয়ের বয়স কত

বিবাহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন বয়সের কথা ইসলাম বলে নি। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

ﻳَﺎﻣَﻌْﺸَﺮَ ﺍﻟﺸَّﺒَﺎﺏِ ﻣَﻦِ ﺍﺳْﺘَﻄَﺎﻉَ ﻣِﻨْﻜُﻢُ ﺍﻟْﺒَﺎﺀَﺓَ ﻓَﻠْﻴَﺘَﺰَﻭَّﺝْ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُﺃَﻏَﺾُّ ﻟِﻠْﺒَﺼَﺮِ ﻭَﺃَﺣْﺼَﻦُ ﻟِﻠْﻔَﺮْﺝِ ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻊْ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻪِﺑِﺎﻟﺼَّﻮْﻡِ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﻪُ ﻭِﺟَﺎﺀٌ

হে যুবসমাজ! তোমাদেরমধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিবাহ করা কর্তব্য। কেননা বিবাহ হয় দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন রোজা পালন করে। কেননা রোজা হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম। (বুখারী ৫০৬৫; মুসলিম ১৪০০)

উক্ত হাদিস থেকে বুঝা যায়, কোন ব্যক্তি সামর্থ্যবান হলেই বিয়ে করে নেয়া উচিত। আর যেহেতু ব্যক্তি হিসেবে শক্তি সামর্থ্য ভিন্ন হয়ে থাকে; অনেকে অল্প বয়সেই সামর্থ্যবান হয়ে যায়, অনেকের একটু সময় লাগে, তাই যৌক্তিকতার দাবী হল, এর জন্য বয়স ঠিক না করা। এজন্য ইসলামে বিয়ের বয়স নির্ধারণ করা হয় নি।

তবে হ্যাঁ, ছেলে মেয়ে বিয়ের ক্ষেত্রে দেরি করা ঠিক নয়। কেননা, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

من وُلِدَ لَهُ وَلَدٌ فَلْيُحْسِنِ اسْمَهُ وَأَدَبَهُ فَإِذَا بَلَغَ فَلْيُزَوِّجْهُ فَإِنْ بَلَغَ وَلَمْ يُزَوِّجْهُ فَأَصَابَ إِثْمًا فَإِنَّمَا إثمه على أَبِيه

তোমাদের মাঝে যার কোন (পুত্র বা কন্যা) সন্তান জন্ম হয় সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে উত্তম আদব কায়দা শিক্ষা দেয়; যখন সে বালেগ অর্থাৎ সাবালক/সাবালিকা হয়, তখন যেন তার বিয়ে দেয়; যদি সে বালেগ হয় এবং তার বিয়ে না দেয় তাহলে, সে কোন পাপ করলে উক্ত পাপের দায়ভার তার পিতার উপর বর্তাবে। (বাইহাকি ৮১৪৫)

আর ছেলে মেয়ের বয়সের মাঝে বেশি পার্থক্য থাকা উচিত নয়; বরং বয়সের পার্থক্য কম থাকা উত্তম। এটা বুঝা যায় হযরত ফাতিমা রাযি. এর বিয়ের দিকে তাকালে। তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব হযরত আবু বকর রাযি. এবং হযরত উমর রাযি.-ও দিয়েছিলেন। যাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁরা ছিলেন উম্মতের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি। কিন্তু রাসূল ﷺ তাঁদের কাছে কম বয়সী ফাতিমা রাযি.-কে বিবাহ দেন নি। দিয়েছেন কাছাকাছি বয়স্ক হযরত আলী রাযি.-এর সাথে। (মওসূআতু হায়াতুস সাহাবিয়্যাত ৬২১)

ইসলামে বিয়ের যোগ্যতা

ইসলাম বাল্যবিয়েকে নিরুৎসাহ করলেও বিয়ের বয়সের ক্ষেত্রে কোনো সীমারেখা নির্ধারণ করেনি; বরং শারীরিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে সক্ষমতা অর্জনকেই বিয়ের যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করেছে। অঞ্চলভেদে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী বিয়ের সমীচীন বয়সসীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে। তবে বিশেষ অবস্থায় এ বয়সসীমা শিথিলও হতে পারে। যেমন—কোনো ব্যক্তির যৌনসংক্রান্ত অনাচারে লিপ্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকলে এবং অন্য সামর্থ্য অর্জিত হলে তার বিয়েতে বাধা দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে কোনোভাবে সমীচীন নয়।

এভাবে কোনো নারী শারীরিক, মানসিকভাবে পূর্ণতা লাভ করার পর সুযোগ্য পাত্র পাওয়া গেলে তার অভিভাবকদের দ্রুত বিয়ের আয়োজন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যখন এমন কোনো ব্যক্তি তোমাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পেশ করে, যার দ্বীনদারি ও চারিত্রিক দিক তোমাদের মুগ্ধ করে, তখন তোমরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দাও। যদি তোমরা তা না করো তাহলে সমাজে বিরাট ফিতনা-ফাসাদ ও বিপর্যয় দেখা দেবে।’ (তিরমিজি: ১০৮৪)

ইসলামে বিয়ে করার নিয়ম

বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী বা বর-কনেই মুখ্য, যারা সারা জীবন একসঙ্গে ঘর-সংসার করবে। তাই বিবাহের আগে তাদের সম্মতি থাকতে হবে। কোনো অবস্থায়ই কোনো ছেলে-মেয়ের অসম্মতিতে তাদের বিবাহ করতে বাধ্য করা উচিত নয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে তোমরা বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৯)

ইসলামে বিয়ে পড়ানোর নিয়ম

অভিভাবক (যদি বিবাহ পড়াতে সক্ষম হন) বা যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি বিবাহের খুতবা পাঠ করবেন। এরপর মেয়ের অভিভাবক বরের সামনে মেয়ের পরিচয় ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করবেন। তারপর তিনি বিবাহের প্রস্তাব পেশ করবেন। অথবা অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি হবু বরের কাছে বিবাহের প্রস্তাব তুলে ধরবেন। এটাকে ইসলামের ভাষায় ‘ইজাব’ বলা হয়।

বিবাহের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে। বিশেষ করে মেয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি একান্তভাবে আবশ্যক। কারণ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ হয় না। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘অভিভাবক ছাড়া কোনো বিবাহ নেই।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১০১)

যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি উপস্থিত মজলিসে হবু বরের উদ্দেশে বলবেন যে অমুকের মেয়ে অমুককে এত টাকা মোহরানায় আপনার কাছে বিবাহ দিলাম, আপনি বলুন ‘কবুল’ বা ‘আমি গ্রহণ করলাম’।

বিবাহ পড়ানোর সময় কমপক্ষে দুজন সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে। তখন বর উচ্চ স্বরে  ‘কবুল’ অথবা ‘আমি গ্রহণ করলাম’ বা সম্মতিসূচক ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলবে। এরূপ তিনবার বলা উত্তম। (বুখারি, হাদিস : ৯৫)

স্মরণ রাখতে হবে যে আগে খুতবা পাঠ করতে হবে তারপর ইজাব-কবুল (প্রস্তাব দেওয়া-নেওয়া)।

শুধু বরকেই কবুল বলাতে হবে। কনের কাছ থেকে কনের অভিভাবক শুধু অনুমতি নেবেন। বর বোবা হলে সাক্ষীদ্বয়ের উপস্থিতিতে ইশারা বা লেখার মাধ্যমেও বিবাহ সম্পন্ন হতে পারে।

ইসলামে বিয়ে কত প্রকার

ইসলামে বিয়ে চার প্রকার ৷ যথা- ১ ৷ ওয়াজিব বিয়ে ২ ৷ ফরজ বিয়ে ৩ ৷ সুন্নাহ বিয়ে ৪ ৷ নিষিদ্ধ বা হারাম বিয়ে

ওয়াজিব বিয়ে : যখন শারীরিক চাহিদা থাকে। তার এই পরিমাণ সামর্থ থাকে যে প্রতিদিনের খরচ প্রতিদিন উপার্জন করে খেতে পারে। তখন বিয়ে করা ওয়াজিব। এ অবস্থায় বিয়ে থেকে বিরত থাকলে গুণাহগার হতে হবে।

ফরজ বিয়ে : যদি সামর্থ থাকার সাথে সাথে চাহিদা এতো বেশি থাকে যে, বিয়ে না করলে গুনাহের বা হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তখন বিয়ে করা ফরজ। এছাড়াও কুদৃষ্টি ও পুরুষের কিছু বদভ্যাস হারাম কাজের অন্তর্ভূক্ত।

সুন্নত বিয়ে : যদি বিয়ের চাহিদা না থাকে কিন্তু স্ত্রীর অধিকার আদায়ের সামর্থ রাখে তবে বিয়ে করা সুন্নত। এ অবস্থায় খারাপ কাজের প্রতি ঝোঁকার আশঙ্কা না থাকলে বিয়ে না করাই উত্তম।

নিষিদ্ধ বিয়ে : যদি কারো আশঙ্কা হয় সে স্ত্রীর অধিকার আদায় করতে পারবে না। চাই তা দৈহিক হোক বা আর্থিক হোক। তার জন্য বিয়ে করা নিষিদ্ধ।

ইসলামে পালিয়ে বিয়ে

ইসলামে পারিবারিক বন্ধন গুরুত্বপূর্ণ। ফলে পারিবারিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে বিয়ের ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের অভিমত ও বংশীয় মর্যাদাও অত্যন্ত জরুরি। তাই এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের কিছু অধিকার দেওয়া হয়েছে। কারণ, অভিভাবকহীন বিয়েতে কখনো কখনো দেখা যায়— ‘কুফু’ বা সমতা রক্ষা হয় না। আর সে ক্ষেত্রে বংশের অপমান হয়।

বিয়ের ক্ষেত্রে শরিয়ত অনুযায়ী অভিভাবকের অভিমত গুরুত্বপূর্ণ। এক হাদিসে এ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘অভিভাবক ছাড়া বিয়ে সংঘটিত হয় না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১০১; আবু দাউদ, হাদিস : ২০৮৩)

তবে এ ধরনের বিয়ে নিন্দনীয় হলেও গোপনে বিয়ে করে ফেললে— বিয়ে হয়ে যাবে, তখন এই বন্ধন অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। কেননা বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়, বরং এটি নারী-পুরুষের সারা জীবনের পবিত্র বন্ধন। তাই গোপনে বিয়ে করে ফেললেও তালাকের পথে পা বাড়াবে না।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব, ফজিলত ও নিয়ম কানুন
ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব, ফজিলত ও নিয়ম কানুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *