[box type=”shadow” align=”” class=”” width=”“]ইসলামে সন্ন্যাসী ও সংসার বৈরাগীর বিধান[/box]
আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ প্রিয় পাঠক আপনাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি ৷ আমাদের সাইটে আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি ৷ আজ আমরা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আলোকপাত করতে শুরু করেছি ৷ অনেকেই আছে পীর মুরিদির সিলসিলা, ধ্যানমগ্ন এবং সংসার ত্যাগ বৈরাগ্যবাদ সম্পর্কে জানতে চান ৷ আমরা বর্তমানে ইসলামে সন্ন্যাসী ও সংসার বৈরাগীর বিধান সম্পর্কে জানবো ৷ ইনশাআল্লাহ ৷
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোন ধরনের ইবাদতে সন্তুষ্ট আর কোন ধরনের আরাধনায় অসন্তুষ্ট সে কথা মানবজাতিকে শিক্ষাদান করার জন্যই তিনি নবী ও রাসূল পাঠাবার ব্যবস্থা করেছেন ৷ নিজের খুশি মত আল্লাহকে ডাকার নাম ইবাদত নয় ৷ আল্লাহপাক যে কাজ, যে সময়ে, যেভাবে এবং যে পরিমাণে সমাধা করার বিধান দিয়েছেন ৷
সেই কাজ শেষ সময় কিভাবে ও কি পরিমানে করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সন্তুষ্ট হন ৷ সেই বিষয়ে মানবজাতিকে বাস্তব শিক্ষা দান করার প্রয়োজনে ৷ মানুষের মধ্য থেকেই তিনি কত পবিত্র আত্মা ব্যক্তিকে রাসুল হিসেবে মনোনীত করেছেন ৷ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই রাসূলগণেরই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। তাঁকে মানব জাতির আদর্শ বলে কুরআন পাকে ঘোষণা করেছে।
মানুষের জন্য আল্লাহর নিজস্ব মনােনীত আদর্শ ব্যক্তি রাসূলে করীম (সাঃ) ওহী লাভ করার পূর্বে সাময়িকভাবে হেরা গুহায় আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থেকে ছিলেন ৷ কিন্ত ওহীর মারফত দ্বীন ইসলামকে দুনিয়ার বুকে কায়েম করার দায়িত্ব তার ওপর অর্পণ করার পর তিনি জঙ্গলে বসে আল্লাহর ধ্যান করেননি। তিনি সাহাবায়ে কিরামকেও ধ্যান করার জন্য বনে-জঙ্গলে পাঠাননি।
তিনি মানব জীবনের যাবতীয় দায়িত্ব ও কর্ম আল্লাহর মর্জিমতাে করার শিক্ষা দিয়ে গেছেন এবং তিনি স্পষ্টরূপে ঘােষণা করেছেন,
ইসলামে বৈরাগ্যবাদের কোনাে স্থান নেই।
নামায-রােযা, যিকর ও তেলাওয়াত, তাহাজ্জুদ ও তওবা ইত্যাদি মানব জীবনের কর্মচাঞ্চল্য থেকে পৃথক পৃথক অনুষ্ঠান নয়। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সমগ্র জীবনকে পরিচালিত করার উদ্দেশ্যেই ইসলামে এসব ইবাদতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব ইবাদত বাড়ীতে এবং মসজিদেই করার নির্দেশ । এর জন্য বনে-জঙ্গলে যাওয়ার কোনাে বিধান নেই।
আল্লাহর জমীনে আল্লাহর বিধান জারি করে আল্লাহর খলীফা হওয়ার দায়িত্ব পালন করাই মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য। ধ্যান ও আরাধনা এ খেলাফতের যােগ্যতা অর্জনের উদ্দেশ্যেই। যারা আসল উদ্দেশ্য ভুলে আল্লাহ ধ্যানকেই চরম লক্ষ্য করে নেয় তারা আর যাই করুক, রাসূল (সাঃ)-এর অনুসরণ করে না।
ইসলামে সন্ন্যাসী ও সংসার বৈরাগীর বিধান
একথা নীতিগতভাবে স্বীকার করে নেয়ার পর প্রশ্ন জাগে-বহু বিখ্যাত বুজর্গ ও সাধকের জীবনীতে বৈরাগ্যের নজীর পাওয়া যায় কেন ? যদি ইসলাম বৈরাগ্য সমর্থন না করে তাহলে তাদেরকে বুজর্গ মনে করা ঠিক নয়। আর যদি তারা বুজর্গ বলেই স্বীকৃত হন, তাহলে ইসলামে বৈরাগ্য আছে বলে মেনে নিতে হয়।
এ প্রশ্নের সহজ জবাব এই যে, কোনাে বুজর্গ আমাদের জন্য আদর্শ নন, একজন সম্মানিত ব্যক্তি মাত্র। আল্লাহ পাক একমাত্র রাসূলকেই আমাদের আদর্শ হিসেবে মনােনীত করেছেন।
একথাও মনে রাখা দরকার যে, সাহাবায়ে কেরাম, ইমামগণ ও অন্যান্য বুজর্গদের নিকট থেকে একমাত্র রাসূলের আদর্শই শিখতে হবে। রাসূল ছাড়া আর কোনাে লােককে একচ্ছত্র আদর্শ মানা যেতে পারে না। রাসূলকে কিভাবে অনুসরণ করা উচিত সে বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম নিশ্চয়ই আমাদের আদর্শ।
কিন্তু সে আদর্শ রাসূলের অনুসরণের জন্যই। রাসূল ব্যতীত আর কোনাে মানুষকে একচ্ছত্র আদর্শ মানা চলে না ৷ রাসুল ছাড়া আর কেউ নির্ভুল ওহী দ্বারা পরিচালিত নয় এবং অন্য কোনাে মানুষ সর্বদিক দিয়ে পূর্ণ হতে পারে না। বুজৰ্গেদের মধ্যেও বিভিন্ন দিক দিয়ে বিভিন্ন জন উন্নতগুণের অধিকারী হন। কিন্তু একজন লােকের সব গুণের অধিকারী হওয়া সম্ভব নয়। একমাত্র রাসূলের মধ্যেই সকল গুণের সমাবেশ ও পূর্ণতা সম্ভব। তাই কোনাে অপূর্ণ ব্যাক্তি আদর্শ হওয়ার যােগ্য নয়।
সংসারত্যাগী শেখ ফরিদ ও নিজামুদ্দীন আউলিয়া
শেখ ফরীদ ও নিজামুদ্দীন আউলিয়া (রাহঃ) এবং অন্যান্য মুসলিম সাধকদের সত্যিকার জীবনী খুঁজ করে পাওয়া মুশকিল। কুরআন, হাদীস ও ফিকহ ইত্যাদি বিভিন্ন জ্ঞানের শাখা-প্রশাখার যারা সাধনা করেছেন ৷ তাদের অসংখ্য ছাত্রদের মারফত তাদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অনেকখানি জানা সম্ভব। যেমন ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ)।
আরও পড়ুনঃ পীর ধরা কি ফরজ?
কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জীবনের প্রতিটি বিষয় ও অবস্থায় সত্যতা যাচাই করার জন্য মুহাদ্দিসগণ যে কঠোর সাধনা করেছেন তেমনিভাবে কোনাে ইমামের জীবনকে নিয়ে গবেষণা হয়নি। আর যারা ইসলামের আদর্শকে কায়েম করার জন্য কোনাে আন্দোলন পরিচালনা করেছেন, তাদের জীবন সম্পর্কেও যথেষ্ট নির্ভরযােগ্য খবর পাওয়া সম্ভব। কারণ তাদের সংগ্রামী সহকর্মী ও সাগরেদগণ ইলমের চর্চা করার ফলে তাদের নেতাদের মর্তবা বা মর্যাদা সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করেন না।
কিন্তু যে সাধকগণ। দ্বীনি ইলমের চর্চা বা দ্বীনকে কায়েমের সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেননি, তাদের ভক্তদের মধ্যে সর্বসাধারণের সংখ্যা অনেক বেশী থাকে। ফলে তাদের শিষ্য-সাগরেদগণ নানা প্রকার অলীক কাহিনী সৃষ্টি করে ঐসব সাধকদের প্রকৃত অবস্থাকে এতটা বিকৃত করে তােলে যে, পরবর্তীকালে তাদের অলৌকিকত্ব ও কেরামতির গল্পগুলােই তাদের প্রকৃত জীবন বলে পরিচিত হয়।
শেখ ফরীদ বা নিজামুদ্দীন আউলিয়া যে সংসার ত্যাগী হয়ে বনে-জঙ্গলে খােদার ধ্যান করে ফিরেছেন একথা সত্য বলে প্রমাণ করা যেমন কঠিন, তেমনি মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করাও সহজ নয়। সুতরাং প্রত্যেক বুজর্গ ও সাধকের জীবনে যেটুকু রাসূলের আদর্শের সাথে মিলে সেটুকুই সত্য বলে গ্রহণ করা উচিত এবং কোনাে ব্যক্তির মধ্যে রাসূলের আদর্শের বিপরীত জীবনধারা দেখা গেলে তাকে সেক্ষেত্রে অনুসরণ না করাই উচিত।
শেষ কথা
সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷