১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস | মুসলিমদের এগিয়ে চলার প্রেরণা

১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস | মুসলিমদের এগিয়ে চলার প্রেরণা

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ৷ সুপ্রিয় পাঠক! আশা করছি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন ৷ আজ আমরা কথা বলব ঐতিহাসিক বদর দিবস নিয়ে ৷ বদর দিবস সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা থাকবে আমাদের বক্ষমাণ আর্টিকেলে ৷ বদর যুদ্ধের কারণ, ফলাফল, আমাদের শিক্ষা এসব নিয়ে থাকছে ৷ আমাদের সঙ্গেই থাকুন ৷

রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে রমজানের আগমন। রমজান অন্যান্য মাস অপেক্ষা অধিক মর্যাদাপূর্ণ। এ মাসের অর্জিত জ্ঞান অন্য সব মাসে প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের জীবন সুন্দর ও আলোকিত হয়ে ওঠে। আল্লাহর কাছে রমজানের রোজার গুরুত্বও বেশি।

আরও পড়ুনঃ ১৫ রমজান শুক্রবারে কী ঘটবে? 

১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস | মুসলিমদের এগিয়ে চলার প্রেরণা
১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস | মুসলিমদের এগিয়ে চলার প্রেরণা

১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস | মুসলিমদের এগিয়ে চলার প্রেরণা

আজ ১৭ রমজান। ঐতিহাসিক বদর দিবস। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ। হিজরি দ্বিতীয় বর্ষের ১৭ রমজান। ওই দিন মাত্র ৩১৩ জন সাহাবিকে নিয়ে বিশ্বনবী (সা.) মদিনা শরিফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বদর নামক স্থানে কাফিরদের প্রতিরোধ করেন। রক্ষক্ষয়ী এ যুদ্ধকে ইসলামের ইতিহাসে ‘বদর যুদ্ধ’ নামে অভিহিত করা হয়।

বদর কিসের নাম?

বদর (পূর্ণ নাম বদর হুনায়ন) হল সৌদি আরবের আল মদিনা প্রদেশের একটি শহর। এটি মদিনা থেকে ৮০ মাইল (১৩০ কিমি) দূরে ২৩°৪৬′৪৮″ উত্তর ৩৮°৪৭′২৬″ পূর্ব অবস্থিত। ৬২৪ সালে মদিনার মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে বদরের যুদ্ধ এখানে সংঘটিত হয়।

মদীনা থেকে বদরের দূরত্ব

বদর মদিনা থেকে ৮০ মাইল (১৩০ কিমি) দূরে ২৩°৪৬′৪৮″ উত্তর ৩৮°৪৭′২৬″ পূর্ব অবস্থিত।

বদর যুদ্ধ কত হিজরীতে সংঘঠিত হয়?

বদরের যুদ্ধ (আরবি: غزوة بدر‎‎) ২ হিজরির ১৭ রমজান (১৭ মার্চ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ) মদিনার মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে সংঘটিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে এটি প্রথম প্রধান যুদ্ধ। এতে জয়ের ফলে মুসলিমদের ক্ষমতা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পায়।

বদর যুদ্ধে শহীদ সাহাবীদের নাম

১) উমায়ের ইবনে আবি ওক্কাস (রাঃ) عمير أبن أبي وقاص

২) যুশ শিমালাইন বিন আব্দে আমর (রাঃ)ذو الشمالين بن عبد عمرو

৩) সাফওয়ান বিন ওয়াহব (রাঃ) صفوان بن وهب

৪) মাহজা ইবনে সালেহ (রাঃ) مهجع بن صالح

৫) আকীল ইবনু বুকাইর (রাঃ) عاقل بن البكير

৬) উবাইদা ইবনুল হারিছ (রাঃ) عبيدة بن الحارث

৭) সা‘দ ইবনে খাইছামা (রাঃ) سعد بن خيثمة

৮) মুবাশশির ইবনুল মুনযির (রাঃ) مبشر ابن المنذر.

৯) হারেছা বিন সুরাকা (রাঃ) حارثة بن سراقة

১০) রাফে ইবনে মুআল্লা (রাঃ) رافع بن المعلاء

১১) উমাইর ইবনুল হুমাম(রাঃ) عمير ابن الحمام.

১২) ইয়াজীদ ইবনুল হারিছ (রাঃ) يزيد بن الحارث

১৩) মুআওয়িয ইবনুল হারিছ (রাঃ) معوذ بن الحارث

১৪) আওফ ইবনুল হারিছ (রাঃ)عوف بن الحارث

বদরের ঐতিহাসিক যুদ্ধে সাহস, ত্যাগ আর ঈমানী শক্তির বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সাহাবীগণকে আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান করুন।
তাদের আত্মত্যাগ ইসলাম প্রতিষ্ঠায় নিবেদিতপ্রাণ মর্দে মুজাহিদগণের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে চিরকাল।

এতে মুসলমানদের সেনা সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩। এই যুদ্ধে মুসলমানরা সংখ্যায় কম হয়েও কাফিরদের বিশাল বাহিনীর ওপর বিজয় লাভ করেছে। কোরআন কারিমে এই যুদ্ধকে সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী যুদ্ধ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস | মুসলিমদের এগিয়ে চলার প্রেরণা

আজকের দিনটি অসাধারণ তাৎপর্যের অধিকারী। শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয়, বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে এ দিনটি অনন্য অবস্থান দখল করে রেখেছে। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ইসলাম এবং মুসলমানদের জন্য এটি ছিল প্রথম যুদ্ধ। ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও মদিনা রাষ্ট্রে ভিত্তি তৈরিতে এ যুদ্ধে বিজয় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। ইসলামের বিরুদ্ধে বিশাল সৈন্য বাহিনীর মোকাবেলায় ইমানদার বান্দাদের ছোট একটি দলের সম্মুখ সংগ্রাম ছিল এটি।

হিজরি দ্বিতীয় বর্ষের ১৭ রমজান ৩১৩ জন সাহাবি নিয়ে সে সময়ের আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত মক্কার কাফেরদের সঙ্গে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা এ যুদ্ধে মুসলমানদের ফেরেশতা বাহিনী দ্বারা বিশেষ সাহায্য করে বিজয় দান করেছিলেন।

বস্তুত মহানবি (সা.) যুদ্ধপ্রবণ মানুষ ছিলেন না। কিন্তু তৎকালীন অমুসলিম শক্তির নানামুখী ষড়যন্ত্র, নির্যাতন আর ইসলামকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়ার অপপ্রয়াসের মোকাবিলায় রাসুলে পাক (সা.)-এর হাতে যুদ্ধ ব্যতীত আর কোনো বিকল্প ছিল না। তাওহিদ ও রেসালতের প্রতি আনুগত্যকারী মোহাজের ও আনসারগণের সমন্বয়ে অসম সাহসী সাহাবায়ে কেরামের এক প্রত্যয়-দীপ্ত বাহিনী বিশ্বনবির (সা.) নেতৃত্বে নজিরবিহীন বীরত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন বদরের প্রান্তরে।

অপরপক্ষে অবিশ্বাসীদের নেতা আবু জেহেলের নেতৃত্বে ছিল এক হাজার প্রশিক্ষিত সৈন্যের সুসজ্জিত বাহিনী। এ যুদ্ধে মানুষের ধারণাপ্রসূত সব রকমের চিন্তা ও উপলব্ধির বাইরে গিয়ে আল্লাহতায়ালা অস্ত্র-শস্ত্রহীন ইমানদারদের অতিক্ষুদ্র দলটিকে বিজয় দান করেন।

বদরের প্রান্তরে ইসলাম বিজয়ের সূচনা হয়েছিল। তাই প্রতি বছর সতেরোই রমজান এলেই বিশ্ব মুসলিম শ্রদ্ধা ও গৌরবের সঙ্গে বদরের বিজয়কে স্মরণ করেন। যা যুগ যুগ পর্যন্ত এক আল্লাহতে বিশ্বাসী মুসলমানদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

বদর বিজয়ের ফলে মুসলিম রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপিত হলো। এ যুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জন মুসলমান মক্কার প্রায় এক সহস্র বীর সেনাদেরকে পর্যুদস্ত করে ইসলামের জয়যাত্রার পথ পরিষ্কার করেছিল। জিহাদে অংশগ্রহণ যে ধর্মীয় কার্য তা মুসলমানেরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করল। তারা নিশ্চিত হলো যে, মোহাম্মদ সা:-এর বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্য। বিধর্মীদের আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে তারা উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে, আল্লাহ স্বয়ং তাদেরকে সহায়তা করেন।

এটি ছিল সত্য ও মিথ্যার মাঝে চরম অগ্নিপরীক্ষা। আল্লাহ পাকের আদেশেই নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ যুদ্ধে অগ্রসর হন।

বদর যুদ্ধের কাহিনী

আল কুরআনের নির্দেশ,“আল্লাহর পথে তাদের সাথে যুদ্ধ কর যারা তোমার সাথে যুদ্ধ করে। তবে সীমালংঘন করো না। কারণ আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” এ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর পক্ষে মদীনার আনসার ও মক্কার মুহাজিরদের ৩১৩জন বীর মুজাহিদ মক্কার ১০০০ কুরাইশ সৈন্যের বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করেন। কাফির বাহিনীর হাতে ১০০ অশ্বারোহী ও ৭০০ অষ্ট্রারোহী এবং পর্যাপ্ত রসদপত্র থাকলেও মুসলিম বাহিনীতে মাত্র ২ জন অশ্বারোহী আর বাহন পাওয়া গেল ৭০টি উট। কোন ধরনের উন্নত অস্ত্রশস্ত্র নেই বললেই চলে। কাফির ও মুসলিম বাহিনীতে এ অসম যুদ্ধে ইসলামের শত্রু কাফির সম্প্রদায়ের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। যুদ্ধে আবু জেহেল, উতবা, শায়বা, ওয়ালিদসহ বাঘা বাঘা কাফির নেতারা নিহত হয়। ৭০ জন কুরাইশ সৈন্য মারা যায় এবং তাদের আরো ৭০ জন বন্দি হয়।

আবু জেহেলের পতন হলে মহানবী (সা.) বলেন, “আবু জেহেল ছিল এ উম্মতের ফেরাউন”। বদর যুদ্ধে মুসলমানদের পক্ষে মুহাজিরদের ৬ জন এবং আনসারদের ৮জন সর্বমোট ১৪ জন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেন; কেউ বন্দী হননি। কাফিরদের মধ্যে যারা বন্দী হয়েছিল তাদের সাথে মহানবী (সা.) যে উদার ও আন্তরিক ব্যবহার করেন তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি চারহাজার দিরহাম মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেন আর যারা তা দিতে সক্ষম হয়নি তাদেরকে ভবিষ্যতে মুসলমানদের বিরোধিতা না করার প্রতিশ্রুতি ও মুসলিম বালক-বালিকাদের শিক্ষা দানের শর্তে মুক্তি দেন।

বদরের যুদ্ধ মুসলমানদের হৃদয়ে অচল-অটল আত্মবিশ্বাসের সৃষ্টি করলো। এই আত্মবিশ্বাসের ফলে মুসলমানগণ পরবর্তী অভিযানসমূহে জয়ী হয়েছিলেন। জিহাদে শহীদ হওয়ার প্রেরণা এবং পারোলৌকিক পুরস্কার লাভের বাসনা তাদের পরবর্তীসময়ে বিজয়গুলোকে ত্বরান্বিত করেছিল। বদর যুদ্ধের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম বিস্তারের পথ প্রসারিত হয়েছিল। এই সময় হতে ইসলামের অভাবিতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটে।

বদর যুদ্ধের শিক্ষা

বদর যুদ্ধ মুসলমানকে সর্বাবস্থায় আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে শেখায়। বদরের যুদ্ধ স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর ওপর দৃঢ় ঈমান ও নির্ভরতাই মুসলমানদের বিজয়ের মূল হাতিয়ার।

বদরের যুদ্ধ ইসলামকে সমুন্নত রাখার জন্য কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার নির্দেশ দেয়।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলিমরা ইসলামবিদ্বেষীদের কর্তৃক জুলুম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এবং ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর মুসলমানরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে নীরবে বসে আছে। তা মোটেও ইসলামের শিক্ষা নয়।

বরং আমাদের উচিত বদর যুদ্ধের ন্যায় জুলুমের মোকাবেলায় আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার পাশাপাশি ধৈর্য, হেকমত অবলম্বনসহ ইসলামের সৌন্দর্যকে গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা এবং দ্বীন প্রচারের নিমিত্তে সহাবস্থান করা। তাহলে ইসলাম বিদ্বেষীরা একসময় ইসলামের ছায়াতলে আসবে নতুবা পিছু হটতে বাধ্য হবে। সুতরাং বলা যায় যে, সব যুগে বদর যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নেয়ার প্রয়োজন থাকবে।

আল্লাহ মুসলিমদেরকে বদর যুদ্ধের শিক্ষা গ্রহণ করে বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস | মুসলিমদের এগিয়ে চলার প্রেরণা
১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস | মুসলিমদের এগিয়ে চলার প্রেরণা

One thought on “১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস | মুসলিমদের এগিয়ে চলার প্রেরণা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *