ইমোশনাল গল্প | অনুপ্রেরণার গল্প | দীদার মাহদী

ইমোশনাল গল্প

 

সুপ্রিয় পাঠক! আজ চমৎকার একটি গল্প শেয়ার করতে চলেছি আপনার সাথে ৷ যারা গল্প পড়তে ভালোবাসেন ৷ আজ একটি কিশোর গল্প আপনাদের সামনে পেশ করতে চলেছি ৷ আশা করছি গল্পটি আপনাদের অত্যন্ত ভালো লাগবে এবং চিন্তাধারা মুক্ত করতে প্রয়াস চালাবে ৷

ইমোশনাল গল্প

 

ইমোশনাল গল্প
ইমোশনাল গল্প

জামিলা হাসছে আর হাসছে ৷ হাসতে হাসতে ওর পানির পিপাসা লেগে গেছে ৷ পেট ধরে রাখছে ৷ বোধহয় পেটে ব্যাথা করছে ৷ হাসির কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ৷ বলছেও না ৷ জুঁই যতই জিজ্ঞাসা করে কারণ কী ততই ও হাসে ৷ তাই কারণ জিজ্ঞাসা করা বাদ দিয়ে ওর হাসি দেখছে জুঁই ৷ কত হাসতে পারে তা দেখে ছাড়বে ও ৷

—‘তোর হাসি কি থামাবি?’ জুঁইর তীব্র শ্লেষমাখা কণ্ঠ ৷ রাগ ঝরে পড়ছে শব্দে ৷
—‘আচ্ছা থামলাম ৷’ পেট ধরে ক্ষীণস্বরে বলছে জামিলা ৷
—‘এবার তো বল কাহিনী কী ৷’ জুঁইর স্বাভাবিক আবেদন ৷
—‘স্যারকে বোকা বানিয়েছি আজ ৷’ জামিলার কণ্ঠে বিদ্রুপের হাসি ৷
—‘বলিস কি! সর্বনাশ! ’ বিস্ময় চুঁইয়ে পড়ছে জুঁইর ঠোঁটেমুখে ৷

 

স্কুল ছুটির পর ফিরছিলো জামিলা ও জুঁই ৷ আপন চাচাতো বোন ওরা ৷ বয়সে একদিনের ছোটোবড় ৷ তুই করেই কথা বলে ওরা ৷ পড়াশোনায় কেউ কারো থেকে কম নয় ৷ একই ক্লাশে পড়ে ৷ চতুর্থ শ্রেণিতে ৷ জামিলার রোল চার ৷ পাঁচ জুঁইর ৷ বার্ষিক পরীক্ষায় মোট নাম্বারে সামান্য ব্যবধান ৷ পাল্লা দিয়ে পড়ে ওরা ৷ রাতে উঁকি মেরে দেখে কে আগে ঘুমায় ৷ জুঁই ঘুমালে জামিলা আরেকটু সময় বেশি পড়ে ওর আগে যেতে চায় ৷ কিন্তু জুঁইও পিছিয়ে নাই ৷ পরে কাযা কাফফারা উঠিয়ে নেয় ৷ খেলাধূলা সব একসাথেই ৷ দুজনের ভবিষ্যত প্লান একই ৷ ডাক্তার হবে ৷ তবে এই স্বপ্নটা বেশি দিনের না ৷

 

এই তো সেদিন আম্মুর সাথে ছোটোবোন তামিমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলো জুঁই ৷ গাইনি ডাক্তার ৷ মহিলা ৷ মধ্যবয়সী ৷ চোখে বড় চশমা ৷ চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ ৷ দেখলে ভদ্রঘরের কেউই মনে হবে ৷ আচরণ এতটা কুৎসিত তা অবয়ব দেখলে বোঝা মুশকিল ৷ একজন অসহায় রোগী এসেছে তার কাছে ৷ ভিজিট সাতশ টাকা দিতে কষ্ট হবে ৷ পাঁচশ টাকা দিয়ে কত অনুনয় ৷ অনুরোধ ৷ মিনতি ৷ বিনয় ৷ এবং অসহায়ের কথা বললো ৷ শুধু পায়ে ধরা বাকি ৷ প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা ৷ কিন্তু ডাক্তার মহিলার সাফ কথা ৷ ফুল টাকাই দিতে হবে ৷ ভিজিট কম হবে না ৷ পড়াশোনা করতে বহু টাকা লেগেছে ৷

 

জুঁইর কচিমনে আঘাত লেগেছে ৷  ও ডাক্তারের চেম্বারে বসেই ভাবছে ৷ ‘এও কী সম্ভব! কী করে পারে এরা! আমিও ডাক্তার হবো ৷ অসহায় ৷ দরিদ্র ৷ হতভাগ্য কেউ আসলে বিনা ভিজিটে দেখবো ৷’ তার ভবিষ্যত চেম্বারের একটা চিত্র মনে আঁকলো ৷ ঠিক এভাবে ৷ জুঁই একদম ছিপছাপ গড়নের ৷ তার পরনে সালওয়ার কামিজ ৷ মাথায় চমৎকার হিজাব শোভা পাচ্ছে ৷ দেয়ালে রোগীর সেবাদানে বিশ্বনবী ঘোষিত সুসংবাদগুলো দেখা যাচ্ছে ৷ যে রোগীই আসে তারা দেয়ালে না তাকিয়ে পারে না ৷ সুন্দর কারুকাজ ৷ রোগীদের ভরসামূলক কিছু কুরআন-হাদীসের উদ্ধৃতিও আছে ৷ রেফারেন্সসহ ৷ এক দেয়ালে লেখা—ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বলেন, ‘যখন তুমি কোনো রোগীর কাছে যাবে, তাকে বলবে তোমার জন্য দোয়া করতে। কেননা, তার দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার মতো।’ [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৪১]

 

রোগীরা এ হাদীস পড়ে সৌভাগ্যবান ভাবছে নিজেদের ৷ তাদের দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার মতোই মর্যাদাবান ৷ সুবহানাল্লাহ ৷

রোগীরা আগে বিষণ্ন মনে থাকলেও চেম্বারে ঢুকে তা বেমালুম ভুলে যাচ্ছে ৷ জুঁইর হাসিমুখের কথা শুনে রোগীরা অর্ধেক সুস্থ হয়ে যাচ্ছে ৷ এমন সময় একজন রোগী দৌঁড়ে এলো চেম্বারে ৷ অস্থীর ৷ হাঁপিয়ে উঠেছে ৷ জুঁই তাকে মুচকি হেসে সালাম দিয়ে বসতে বলেছে ৷ তার পোশাক পরিচ্ছেদ দেখেই বুঝেছে সে দরিদ্র ৷ সামনের রোগীকে বিদায় দিয়ে ডাকলো তাকে ৷ মনযোগ দিয়ে শুনলো তার অবস্থা ৷ অভয় দিলো ৷ বললো আপনি ঘাবড়াবেন না ৷ পবিত্র কুরআনের একটি বানীও সে উদ্ধৃতি করলো ৷ আল্লাহ হলেন এমন রব ৷ তিনি আমাদের শিখিয়েছেন ৷ আমরা যেনো বলি—
‘আর যখন আমি অসুস্থ হই, তখন তিনি আমাকে আরোগ্য করেন’।
[সূরা আশ শুআরা-৮০]

 

রোগীটি কষ্টের ভেতর হেসে উঠলো ৷ প্রেসক্রিপশন দিলো জুঁই ৷ রোগীটি ভিজিট হাঁকলো তাকে ৷ পাঁচ আর দশ টাকার নোট দিয়ে ঠাসা একটি বান্ডিল ৷ বহু কষ্টে জমানো টাকা নিঃসন্দেহে ৷ জুঁই শুধু তার টাকাই ফেরত দিলো না বরং তার ড্রয়ার টেনে চকচকে পাঁচশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিলো রোগীটিকে ৷ বললো, এ দিয়ে ওষুধ কিনে খাবেন ৷ এভাবেই ভাবছিলো সে ৷ হঠাৎ আম্মুর ডাকে ভাবান্তর হলো তার ৷

বাড়ি এসে আব্বুকে জানিয়েছে ৷ আব্বু খুব খুশি জুঁইর স্বপ্নের কথা শুনে ৷ আব্বু বলেছেন অবশ্যই তোমাকে ডাক্তার বানাবো ৷ ইনশাআল্লাহ ৷ এখন থেকেই ভালো করে পড়াশোনা করো ৷ জামিলা শুনতে পেয়ে তারও ডাক্তার হবার স্বপ্ন জেগেছে ৷ দুবোন একই স্বপ্নের সারথি ৷ এগিয়ে চলছে ওদের স্বপ্নভেলা ৷

 

—‘এটা তুই ঠিক করেছিস?’ নীতিবাক্য বলছে জুঁই ৷ ‘স্যার আমাদের এত ভালো জানেন ৷ আমরা কি স্যারের সাথে এমন আচরণ করতে পারি?’
—‘তা ঠিক ৷’ জুঁইর কথায় সহমত পোষণ করলো জামিলা ৷ ‘কিন্তু দেখ ৷ আমরা প্রতিদিন পড়া দিই ৷ লেখা দিই ৷ দু একদিন মিস তো হতে পারে নাকি? কিন্তু স্যার তা মানবেন না ৷ আমাকে জেরা করতেই থাকবেন ৷ সদুত্তর না দিতে পারলে পিটুনি ৷ আর ফরহাদ ৷ সে কোনোদিন ঠিকঠাক পড়া দিয়েছে বলে রেকর্ড নাই ৷ লেখার কথা নাই বা বললাম ৷ সেদিকে স্যারের নজর নাই ৷ আইমিন স্যার তাকে পিটুনি তো দূরে থাক বকাও দেয় না ৷ এটা কী মানা যায়?’

 

—‘দূর বোকা ৷ তুই বিষয়টি জলিট করছিস ৷’ বললো জুঁই ৷ ‘এভাবে ভাবছিস কেনো? তোর ভাবনাটা সঠিক নয় ৷ স্যার জানে ফরহাদকে পিটিয়ে লাভ নাই ৷ ওর ভেতর চালান নাই ৷ খামোখা ছেলেটাকে মেরে লাভ কি? ওকে প্রথম প্রথম রাগচাপ দিয়ে দেখেছেন ৷ কাজের কাজ কিছুই না ৷ ফলাফল শূন্য ৷ তাছাড়া স্যার তো সবার পড়া আদায়ের চেষ্টা করেন ৷ তবে যারা নিয়মিত পড়া পারে তাদের দিকে নজর বেশি দেন ৷ তারা যেনো নষ্ট হয়ে না যায় ৷ তুই চেষ্টা করলেই কিন্তু পড়া পারিস ৷ লেখাও ৷ তোর পড়া মিস হওয়া চলবে না ৷ এভাবে তুই পড়া মিস করলে পিছিয়ে যাবি ৷ স্যার এই নীতিতেই পড়ান ৷’

আরো পড়ুনঃ সফলতার গোপন রহস্য

 

—‘আচ্ছা ৷ বুঝলাম ৷’ জামিলা জুঁইর যুক্তির কাছে নতি স্বীকার করলো ৷ ‘স্যারের সাথে মিথ্যা বলা আমার উচিত হয়নি ৷ কাল স্কুলে গিয়ে মাফ চেয়ে নিবো ৷’
—‘লক্ষ্য ভুলে গেছিস নাকি?’ হেসে বললো জুঁই ৷ ‘ডাক্তার হতে হলে তো প্রচুর পড়তে হবে আব্বা বলেছেন ৷ সাইন্স নিয়ে পড়তে হবে ৷ পড়া ফাঁকি দিলে তা পারবি কীভাবে?’
—‘না, ভুলিনি তো ৷’ বললো জামিলা ৷ ‘শয়তান আক্রান্ত করে মাঝেমধ্যে ৷ তুই আছিস না ৷ আমার কোনো টেনশনই নাই ৷’

 

কচিমনের এলোমেলো কথোপকথন করতে করতে বাড়ি পৌঁছে গেলো তারা ৷

প্রিয় পাঠক! গল্পটি কেমন লাগলো? মন্তব্য করুন ৷

ইমোশনাল গল্প | অনুপ্রেরণার গল্প

ইমোশনাল গল্প | অনুপ্রেরণার গল্প

ইমোশনাল গল্প | অনুপ্রেরণার গল্প

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *