ফিতরা কত টাকা ২০২৩ | ফিতরা আদায় করার পদ্ধতি
ফিতরা কাকে বলে?
‘সদকাতুল ফিতর’ ও ‘জাকাতুল ফিতর’-এর অর্থ হলো জাকাত বা ফিতরের সদকা। ফিতরা আদায় করা ইসলামি বিধান মতে ওয়াজিব। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো- এক সা’ জব বা এক সা’ খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপর এটা ওয়াজিব।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ১৫১২)
আরও পড়ুনঃ বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে যাকাত দেয়া যাবে কি?
ফিতরা কত টাকা ২০২৩ | ফিতরা আদায় করার পদ্ধতি
কার ওপর ফিতরা ওয়াজিব?
রমজান, রোজা ও ঈদের সঙ্গে সম্পর্কিত ওয়াজিব ইবাদত সদকাতুল ফিতর। ফিতরা ঈদের নামাজের আগে দিতে হয়। যিনি ঈদের দিন সকালবেলায় নিসাব পরিমাণ সম্পদের (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ ও ব্যবসাপণ্যের) মালিক থাকবেন, তাঁর নিজের ও পরিবারের ছোট–বড় সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা তাঁর প্রতি ওয়াজিব। একে অন্যের ফিতরা আদায় করতে পারেন।
সদাকাতুল ফিতর একটি আর্থিক ইবাদত। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য যেসব শর্ত আব্যশক সদাকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রেও অনুরূপ শর্ত প্রযোজ্য। ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সঙ্গে সঙ্গে সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়ে যায়। তাই কেউ যদি সেদিন সুবহে সাদিকের আগে জন্ম হয় বা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাহলে তার ওপর সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব।
যার ওপর ফিতরা ওয়াজিব নয়
যাঁরা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নন, তাঁদের জন্য ফিতরা আদায় করা সুন্নত ও নফল ইবাদত। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আমাদের মাঝে ছিলেন, তখন আমরা ছোট–বড়, মুক্ত ক্রীতদাস সকলের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্য, অর্থাৎ এক সা পনির বা এক সা যব বা এক সা খেজুর অথবা এক সা কিশমিশ।
ফিতরা কত টাকা ২০২৩
গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে জনপ্রতি ফিতরার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ যথাক্রমে ৭৫ ও ২৩১০ টাকা ছিল। নিসাব পরিমাণ ধন সম্পদের মালিক হলে মুসলমান নারী-পুরুষ উভয়ের সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব হয়। ঈদের নামাজের পূর্বেই ফিতরা আদায় করতে হবে। আমাদের এ লেখাটি পড়লে আরো আপনি জানতে পারবেন- ফিতরা কেন দিবেন / ফিতরা কি / সদকাতুল ফিতরা কি?
এবারও সর্বসম্মতিক্রমে ইসলামী শরীয়াহ মতে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক উন্নতমানের আটা, খেজুর, কিসমিস, পনির ও যব সহ যে কোন একটি দিয়ে ফিতরা দেয়া যাবে। সর্বনিম্ন ১১৫ এবং সর্বোচ্চ ২৬৪০ টাকা ৷
ফিতরা কত টাকা ২০২৩, Fitra koto taka, Fitra কত, ফিতরা দেওয়ার নিয়ম, ফিতরার রেট ২০২৩, ফিতরার পরিমাণ কত ২০২৩ ও ফিতরা দিতে হয় কিসের ভিত্তিতে।
ফিতরা কাকে দেয়া যাবে
ইসলামি শরিয়াহ মতে, সামর্থ্য অনুযায়ী আটা, খেজুর, গম, কিশমিশ, পনির ও যবের যে কোনো একটি পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা এর বাজারমূল্য ফিতরা হিসেবে গরিবদের মাঝে বিতরণ করা যায়।
সাহাবি ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা জব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটি ওয়াজিব।’ (বুখারি, হাদিস: ১৫১২)
কিন্তু যাকে তাকে ফিতরা দেওয়া যাবে না। কাকে ফিতরা দেওয়া যাবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। যারা যাকাত পাওয়ার অধিকার রাখে, তারাই ফিতরার হকদার। এক্ষেত্রে নিজ পরিবার-পরিজনের মধ্য গরিব-অসহায়রাই ফিতরার প্রথম হকদার। আর একজনকে ন্যূনতম পূর্ণ একটি ফিতরা দেওয়া উত্তম। প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে কয়েকজনের ফিতরাও একজনকে দেওয়া যেতে পারে।
সুরা তাওবার ৬০ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যাকাত হলো কেবল ফকির, মিসকিন, যাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য, এই হলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’
এ আয়াতে যাকাতের ৮টি খাতের বিবরণ তুলে ধরেছেন আল্লাহ তআলা। আর সেই লোকেরাই ফিতরা গ্রহণ করতে পারবেন।
ফিতরা দেবো কী দিয়ে?
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
ফিতরা নিয়ে বিভিন্ন কথা শুনছি। কেউ বলছেন টাকা দিয়ে দেওয়ার কথা। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ত টাকার পরিমাণও বলে দিয়েছে। কিন্তু আরেকদল লোক বলছেন, টাকা দিয়ে ফিতরা দিলে হবেনা, গম জব ইত্যাদি দিয়ে দিতে হবে, আর এটাই নাকি সহিহ কথা। এখন বলেন আমরা যাবো কোথায়?
জবাব: ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু। জী ভাই, আপনি যেমন যাওয়ার পথ দেখছেন না, আমরাও তো কথা বলার পথ দেখছি না। তবে হক কথা তো বলতেই হবে। আপনার প্রশ্নের জবাব হলো:
- ০১. প্রথম কথা, আমাদের প্রিয় রসুল সা আমাদেরকে ‘সহিহ ইসলাম’ নামক কোনো ইসলাম দিয়ে যাননি। তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন আল্লাহর কিতাব আল কুরআন এবং আল্লাহর রসুলের সুন্নাহ বা হাদিস। যেসব ক্ষেত্রে কুরআন এবং হাদিস থেকে আমরা কোনো সমাধান বের করতে পারবোনা, সেসব ক্ষেত্রে তিনি কুরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে ইজতেহাদ করতে বলেছেন।
- ০২. আমার প্রতিবেশী গরিব লোকগুলোর গম জব খেজুর এগুলোর প্রয়োজন নেই। তারা চায় তাদের বাচ্চাদের জন্যে নতুন জামা কাপড় কিনতে, স্ত্রীর জন্যে একটা শাড়ি কিনতে, কারও কারও ঘরে চাউল নেই, তারা চাউল কিনতে চায়, একটু তেল কিনতে চায়, নতুন টুপি কিনতে চায়, ইত্যাদি। আবার কেউ মেয়েকে দেখতে জামাইর বাড়ি যাবে, কেউ শশুর বাড়ি যাবে, অর্থাৎ সবাই চায় ইদ করার জন্যে তার প্রয়োজনের জিনিস কিনবে এবং জরুরি প্রয়োজনে খরচ করবে।
- ০৩. এমতাবস্থায় গম জব খেজুর নিয়ে সে করবেটা কী? এসব খুঁটি নাটি নফল বিষয়ে যদি রসুল সা এর যুগের ব্যবহার্য জিনিসপত্রকে স্ট্যান্ডার্ড বানাতে হয় তাহলে তো আমাদের ভাত খাওয়া বন্ধ করতে হবে, গরুর গোশত, হাঁসের গোশত, হাঁস মুরগির ডিম খাওয়া বন্ধ করতে হবে। জবের রুটি, ছাতু, দুম্বা উট ইত্যাদির গোশত খেয়ে থাকতে হবে।
- ০৪. আপনি টাকা দিয়ে, অর্থ দিয়ে সাদাকাতুল ফিতির বা ফিতরা দেবেন। এটাই ফিতরা প্রদানের যে উদ্দেশ্য সেটার অধিকতর নিকটবর্তী।
- ০৫. মাকাসিদে শরিয়া বা শরীয়তের উদ্দেশ্য না জানা থাকার কারণে লোকেরা ঐসব ফতোয়া দিয়ে থাকেন।
আল্লাহু আ’লম।
আশনা
সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷