স্বামীকে ভাই ও স্ত্রীকে বোন ডাকা যাবে কি? মাওলানা দীদার মাহদী

[box type=”shadow” align=”aligncenter” class=”” width=””]স্বামীকে ভাই ও স্ত্রীকে বোন ডাকা যাবে কি? [/box]

 

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ! মুহতারাম, আমাদের সমাজে অনেক স্ত্রী তার স্বামীকে ভাই ডাকতে শোনা যায় ৷ আবার অনেক স্বামী তার স্ত্রীকে বোন ডাকে ৷ ইসলামী শরীয়া মোতাবেক স্বামীকে ভাই ডাকা এবং স্ত্রীকে বোন ডাকা জায়েজ কিনা? স্বামীর নাম ধরে ডাকা যাবে কিনা?

গোলাম মোস্তফা টুটুল
সিরাজগঞ্জ

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]স্বামীকে ভাই ও স্ত্রীকে বোন ডাকা যাবে কি? [/box]

ফতোয়া জানতে চাই
ফতোয়া জানতে চাই

ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ আপনি চমৎকার একটি বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন ৷ সমাজে প্রচলিত একটি বিষয় ৷ যার সমাধান সকলেরই জানা থাকা উচিত ৷ যারা স্বামীকে ভাই বলে ডাকেন অথবা স্ত্রীকে বোন বলে ডাকেন ৷ এরা মূলত হাস্যরসের জন্যই অথবা মজা করেই ডাকেন ৷ প্রকৃত অর্থে ভাই হিসেবে হয়তো বলেন না ৷ এমনিতেই মজার ছলে ভাই ডেকে থাকবেন ৷

তবে এভাবে স্বামীকে ভাই বলে ডাকা অথবা স্ত্রীকে বোন বলে ডাকা উচিত নয় ৷ তথা মাকরুহ ৷ হাদিসে এসেছে, ‌‘এক ব্যক্তি নিজ স্ত্রীকে বলল, হে আমার বোন। রাসূল সা: তা শুনে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সে কি তোমার বোন?’ তিনি তা অপছন্দ করেন এবং তাকে এভাবে ডাকতে নিষেধ করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২২০৪)

এটাতো গেল স্ত্রীকে বোন ডাকার বিষয়টি ৷ এর সাথে স্বামীকে ভাই ডাকার বিষয়টিও সম্পর্কযুক্ত ৷ একই কথা ৷ এটা যদি এমনিতেই বলে থাকে হাস্যরসের জন্য ৷ তবে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হবে না ৷ বৈবাহিক অবস্থা আপন জায়গায় বলবৎ থাকবে ৷ কিন্তু এটা ঠিক নয় ৷

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]যিহারের বিধান[/box]

স্বামীকে ভাই ও স্ত্রীকে বোন ডাকা যাবে কি?
স্বামীকে ভাই ও স্ত্রীকে বোন ডাকা যাবে কি?

আর যদি স্ত্রীকে বোন ডাকার দ্বারা স্বামীর মনে এই বিশ্বাস থাকে যে আমার আপন বোন যেমন আমার জন্য হারাম ৷ ঠিক তেমনি আমার স্ত্রী আমার জন্য হারাম ৷ এবং স্ত্রী যদি স্বামীকে ভাই ডাকার দ্বারা তার মনে এরকম চিন্তা লালন করে যে আমার ভাই যেমন আমার জন্য হারাম ৷ ঠিক তেমনি আমার স্বামী আমার জন্য হারাম ৷ আর স্ত্রীকে যদি তালাক দেয়ার অধিকার দেয়া হয় ৷ তখন এটা যিহারে পরিণত হবে ৷

এমতাবস্থায় স্ত্রী-স্বামীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক বহাল থাকবে না যতক্ষণ না স্বামী ‘কাফ্ফারা’ আদায় করে।

আর জিহারের কাফ্ফারা হলো- ধারাবাহিকভাবে দুই মাস রোজা রাখা বা ৬০ জন অসহায় ব্যক্তিকে খাওয়ানো। (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত : ৩)

পবিত্র কুরআনে এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

اَلَّذِیۡنَ یُظٰہِرُوۡنَ مِنۡکُمۡ مِّنۡ نِّسَآئِہِمۡ مَّا ہُنَّ اُمَّہٰتِہِمۡ ؕ اِنۡ اُمَّہٰتُہُمۡ اِلَّا الّٰٓیِٴۡ وَلَدۡنَہُمۡ ؕ وَ اِنَّہُمۡ لَیَقُوۡلُوۡنَ مُنۡکَرًا مِّنَ الۡقَوۡلِ وَ زُوۡرًا ؕ وَ اِنَّ اللّٰہَ لَعَفُوٌّ غَفُوۡرٌ ﴿۲﴾

তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা তো কেবল তারাই যারা তাদেরকে জন্ম দিয়েছে। আর তারা অবশ্যই অসঙ্গত ও অসত্য কথা বলে। আর নিশ্চয় আল্লাহ অধিক পাপ মোচনকারী, বড়ই ক্ষমাশীল। সূরা মুজাদালাহ: ০২

স্ত্রীকে মায়ের সাথে অথবা মায়ের কোন অংগের সাথে তুলনা করাকে ‘যিহার’ বলে। প্রাচীন আরব সমাজে স্ত্রীকে মায়ের সাথে তুলনা করার মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হত। ইসলামে এর মাধ্যমে সরাসরি বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয় না। তবে অসঙ্গত কথা বলার কারণে কাফ্ফারা দিতে হয়। হাদীসে এসেছে-

عَنْ عِكْرِمَةَ، أَنَّ رَجُلاً، ظَاهَرَ مِنَ امْرَأَتِهِ فَرَأَى بَرِيقَ سَاقِهَا فِي الْقَمَرِ فَوَقَعَ عَلَيْهَا فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَمَرَهُ أَنْ يُكَفِّرَ ‏.‏

‘ইকরিমা (রহঃ) থেকে বর্ণিত :

এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে যিহার করলো। সে চাঁদের আলোয় স্ত্রীর উরুর উজ্জ্বলতা দেখতে পেয়ে তার সাথে সঙ্গম করে। অতঃপর সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এলে তিনি তাকে কাফ্‌ফারাহ দেয়ার নির্দেশ দেন।

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]স্বামীর নাম ধরে ডাকা যাবে কিনা[/box]

স্বামীর নাম ধরে ডাকা

স্বামী-স্ত্রী উভয়ে যদি সমবয়সী হয় ৷ তাদের সাথে এতটা মিল মোহাব্বত এবং বন্ধুত্বসুলভ মোয়ামেলাত হয় যে পরস্পর নাম ধরে ডাকা তে যদি কষ্ট না পায় ৷ বরং একে অপরকে নাম ধরে ডাকার মধ্যে যদি আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ খুঁজে পায় ৷ তবে স্বামী তার স্ত্রীর নাম ধরে স্ত্রী তার স্বামীর নাম ধরে ডাকা জায়েজ আছে ৷

স্বামীকে তুমি বলে ডাকা অথবা স্ত্রীকে তুমি বলে ডাকা ৷ এর মধ্যে যদি একে অপরকে ডাকার ক্ষেত্রে কেউ কষ্ট না পায় বরং এটাতেই রোমান্টিকতা খুঁজে পায় ৷ তবে তা জায়েয আছে ৷

কেননা ইসলামে এর নজির আছে। যখন আল্লাহর রাসূল ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তার স্ত্রী হাজেরা এবং শিশু পুত্র ইসমাইলকে মক্কার জনমানবহীন প্রান্তরে রেখে চলে যাচ্ছিলেন তখন পেছন থেকে তার স্ত্রী তাকে ডাক দিয়েছিলেন এভাবে;

يَا إِبْرَاهِيمُ أَيْنَ تَذْهَبُ وَتَتْرُكُنَا بِهَذَا الْوَادِي الَّذِي لَيْسَ فِيهِ إِنْسٌ وَلَا شَيْءٌ ؟

হে ইবরাহীম, তুমি আমাদেরকে এমন জনমানবহীন উপত্যকায় রেখে কোথায় যাচ্ছ? (সহীহ বুখারী ৩১১৩)

পক্ষান্তরে স্বামীর নাম ধরে ডাকাতে সে যদি মনে কষ্ট পায় ৷ দুঃখ পায় ৷ ব্যথা পায় এবং রাগ করে ৷ গোস্বা করে ৷ তখন তার নাম ধরে না ডাকাই উচিত ৷ বরং সে যেভাবে ডাকলে খুশি হয় তাকে সেভাবেই সম্বোধন করা উচিত ৷ সবসময় খেয়াল রাখা উচিত স্বামী স্ত্রী একে অপরের দিকে ৷ কীসে সে খুশি ৷ সেটা একে অপরকে সম্বোধন হোক অন্য কোন ব্যবহার হোক ৷ স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ে এমন আচার আচরণ করতে হবে যাতে একে অপরের প্রতি খুশি হয়ে যায় ৷

কেননা হাদিস শরিফে এসেছে, একবার এক নারী সাহাবী রাসূলের কাছে এলেন নিজের কোনো প্রয়োজনে। যাওয়ার সময় রাসূল ﷺ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি স্বামী আছে? তিনি বললেন, জী, আছে। নবীজী বললেন, তার সাথে তোমার আচরণ কেমন?

সে বলল, আমি যথাসাধ্য তার সাথে ভালো আচরণ করার চেষ্টা করি। তখন নবীজী বললেন, فانظري أين أنت منه، فإنما هو جنتك ونارك হাঁ, তার সাথে তোমার আচরণের বিষয়ে সজাগ থাকো, কারণ সে তোমার জান্নাত বা তোমার জাহান্নাম।

(মুআত্তা মালেক, হাদীস ৯৫২)

আরও পড়ুনঃ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

শেষ কথাঃ

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *