১১ মে ঐতিহাসিক কোরআন দিবস | কুরআন নিয়ে কবিতা

১১ মে ঐতিহাসিক কোরআন দিবস | কুরআন নিয়ে কবিতা

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ৷ সুপ্রিয় পাঠক! সবাই কেমন আছেন? আজ আমরা কথা বলব কোরআন দিবস নিয়ে ৷ কোরআন দিবস নিয়ে দুটি কবিতা আপনাদের সাথে শেয়ার করব ৷ কোরআন দিবস কি? কোরআন দিবস কেন? এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করব ৷ ইনশাআল্লাহ ৷ কোরআন দিবস ৷ কুরআন দিবস কত তারিখ? কুরআন দিবস কি? কোরআন দিবস কত তারিখ? ১১ মে ঐতিহাসিক কোরআন দিবস ৷
কুরআন নিয়ে কবিতা ৷ আল কুরআন নিয়ে কবিতা ৷
পবিত্র কুরআন নিয়ে কবিতা ৷

আরও পড়ুনঃ মাকে নিয়ে ছড়া-কবিতা

১১ মে ঐতিহাসিক কোরআন দিবস | কুরআন নিয়ে কবিতা

১৯৮৫ সালের সেই শহীদেরা বারবারই প্রতিভাত হন আমাদের সামনে আর আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে যান আমাদের দায়িত্বের কথা। এদেশে কুরআনের রাজ প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্বের কথা। ভারতে যখন কুরআন বাজেয়াপ্ত করার ঘোষনা দেয়া হয় তখন ঈমানের বলে বলিয়ান হয়ে এদেশের মানুষের ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ফুঁসে উঠে পুরো মুসলিম বিশ্ব। বাংলাদেশের স্বৈরশাসক ও তার দোসররা এই বিক্ষোভ ঠেকানোর জন্য উঠে পড়ে লাগে। মুসলিম নামধারী কিছু নরপশু বিক্ষোভ করতে দেবে না বলে চাপাইনবাবগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করে। কুরআন প্রেমিক মানুষ প্রশাসনের এমন অযৌক্তিক আচরণকে মেনে নিতে পারেনি। ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে তারা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে সমাবেশ স্থলের উদ্দেশ্যে। নরঘাতক, কুরআন বিদ্বেষী এবং ইসলাম বিদ্বেষী তৎকালীন মেজিষ্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লার নেতৃত্বে পুলিশ গুলি চালায় সাধারন মানুষের উপর। সেই থেকে ১১ মে কুরআন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে এদেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ।

কুরআন দিবস
—দীদার মাহদী

আল কুরআনের মান বাঁচাতে
জীবন দিলো “চাপাইর” যারা,
শহীদ হয়ে প্রভূর কাছে
সৌভাগ্যবান মানুষ তারা ৷

যেই বেয়াদব অসভ্যরা
চালায় গুলি তাদের বুকে,
আজকে না হয় পরকালে
মাথা চেপে কাঁদবে ধুঁকে!

ছাত্র যুবা রিকশাওয়ালা
কুরআন প্রেমিক জীবন দিয়ে,
করলো প্রমাণ চলবে না আর
ষড়যন্ত্র কুরআন নিয়ে!

প্রতি বছর এগারো মে
কুরআন দিবস পালন করে,
উদ্বুদ্ধ হই আল কুরআনের
আন্দোলনের প্রাচীর গড়ে!

কোরআন দিবস
দীদার মাহদী

যুবক তরুণ মুটে মজুর
কুরআন ভালোবেসে,
জীবনটাকে বিলিয়ে দিলো
মধুর হাসি হেসে ৷

আল কুরআনকে বাজেয়াপ্ত
ভারত চাইলো করতে,
চাপাইবাসী এই জুলুমের
চায় প্রতিরোধ গড়তে ৷

সমাবেশে পুলিশ করে
সাফ অযথা গুলি,
কুরআন প্রেমিক বীর জনতার
রক্তে মাখে ধূলি ৷

চাপাইবাসী করলো প্রমাণ
কুরআন আছে থাকবে,
বিশ্ব মুমিন আল কুরআনের
সম্মান বুকে রাখবে ৷

এগারো মে সেদিন থেকে
কুরআন দিবস আজো,
কুরআনী রাজ করতে কায়েম
জীহাদী সাজ সাজো ৷

কুরআন দিবস কি?

ঘটনার সূত্রপাত ভারতে ১৯৮৫ সালের ১০ই এপ্রিল। পৃথিবীর ইতিহাসে সেটি ছিল এক জঘন্যতম ঘটনা। ভারতীয় দু’জন উগ্রবাদী হিন্দু নাগরিক পদ্মমল চেপারা ও শীতল শিং আদালতে কোরআন বাজেয়াপ্ত করার মামলা দায়ের করে। তারা কোরআনের উল্লেখিত সূরা বাকারার ১৯১নং আয়াত ও সূরা তওবার ৩১ নং আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে মামলা দায়ের করেছিল। কোরআন যেহেতু কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করা, তাদের হত্যা করার কথা বলেছে সেহেতু কোরআন একটি সাম্প্রদায়িক উস্কানী দাতা গ্রন্থ।(নাউযুবিল্লাহ) তাই একে বাজেয়াপ্ত করার দাবি তুলে মামলা দায়ের করে। ভারতীয় সংবিধানের ২২৩ নং ধারা সি আর পিসি ১১৫(ক) ও ২৯৯ (ক) উদ্ধৃতি দিয়ে তারা আল কোরআনকে ভারতীয় সংবিধান বিরোধী বলে উল্লেখ করে।

বিচারপতি পদ্মা খাস্তগীর ভারতীয় সংবিধানে ঐশীগ্রন্থ সম্পর্কে যে বক্তব্য রযেছে তা হজম করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মামলা গ্রহণ করেন। তিনি ১২ই এপ্রিল এ বিষয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে এফিডেভিট প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় গোটা ভারতে মুসলমানদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম দেশ এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। যার উত্তাল তরঙ্গের জলরাশি আছড়ে পড়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায়। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে পুলিশ ইসলামপ্রিয় তৌহিদি জনতার মিছিলে অত্যাচার নিপীড়নও চালায়।

১০ মে ১৯৮৫ সালে এদেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে উক্ত ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ করে। সেই সতঃস্ফুর্ত সমাবেশে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে স্বৈরশাসক এরশাদের পুলিশ। কী ভয়াবহ দুঃসাহস! সরাসরি কুরআনের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান! তারই সূত্র ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জনাব হোসাইন আহমদ একটি সভার আহবান করেন।

কুরআন দিবস কত তারিখ?

১১ই মে ঐতিহাসিক কুরআন দিবস ৷ আহূত সেই সভা থেকে ১১ই মে ঈদগাহ ময়দানে বিকেল ৩টায় প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। সভার প্রস্তুতির জন্য পুরো জেলাতে লিফলেট ও মাইকিং করা হয়। এর পূর্বের দিন শুক্রবার মসজিদে জুমআর খুৎবায় এবং নামাজ শেষে ইমাম সাহেবেরা পরের দিন সামবেশে অংশ গ্রহণের জন্য আহবান জানান। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আবেগ ও উত্তেজনা বইতে থাকে। আবাল-বৃদ্ধ সবাই সেই সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। কিন্তু ১১ই মে হঠাৎ করে তৎকালীন পুলিশ সুপার আওলাদ হোসেন এবং মেজিষ্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লার নেতৃত্বে সভাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করে ব্যপক পুলিশ মোতায়েন করে। পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। ওয়াহিদুজ্জামান দম্ভ করে চেঁচিয়ে ওঠে বলে “এই মহূর্তে স্থান ত্যাগ করতে হবে নইলে গুলির আদেশ দিব, শালা মৌলবাদীদের সাফ করে দিবো”। কুরআন প্রেমিক জনতা চলে গেল না। তারা জানিয়ে দিলেন, গুলির ভয়ে এ স্থান ত্যাগ করা মানেই আল কোরআনের অপমান, আমরা এস্থান ত্যাগ করবো না।

১১ মে ঐতিহাসিক কোরআন দিবস | কুরআন নিয়ে কবিতা
১১ মে ঐতিহাসিক কোরআন দিবস | কুরআন নিয়ে কবিতা

জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিলের মাধ্যমে কুরআনপ্রেমী মানুষ ঈদগাহ ময়দানে জমায়েত হয়। এক পর্যায়ে মেজিষ্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান বিনা উস্কানিতে গুলির নির্দেশ দেয়। পুলিশ একনাগাড়ে প্রায় পনের মিনিট পর্যন্ত গুলি রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে থাকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢলে পড়লো পনের বছরের কিশোর স্কুলছাত্র আবদুল মতিন। পুলিশের গুলিতে একে একে শাহাদাৎ বরণ করলেন কৃষক আলতাফুর রহমান, রিক্সা চালক মোক্তার হোসেন, দশম শ্রেণীর ছাত্র রশিদুল হক, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র শীষ মোহাম্মদ ও সেলিম এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র শাহাবুদ্দৌলা। আহত হয় শামীম, গোলাম আযম বুলু, শরীফুল ইসলাম, আলাউদ্দিন, রায়হান, এনামুল হক, মাহবুব, রেজাউল, শাহজাহান, রাজুসহ নাম না জানা আরো অনেকেই। লাশ আর আহতদের স্তুপে ভরে গেল ঈদগাহ ময়দান। সেদিন টুপি, পাঞ্জাবি, দাঁড়ি দেখলেই নির্মমভাবে তাদের উপর আক্রমন চালায় নরপশু ওয়াহিদুজ্জামানের সাঙ্গপাঙ্গরা।

আহতদের রাজশাহীতে নিয়ে যাওয়া হলো দুটো মিনিবাসে করে। দেড়ঘন্টা পর যখন মিনিবাস থানা পার হচ্ছিল কুখ্যাত মেজিষ্ট্রেট আবারো গাড়ি থামিয়ে গুলির নির্দেশ দেয়। এতে আহত হয় গাড়ীর হেলপার, মারা যায় কাপড় ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম। আহতদের নামিয়ে দৈহিক নির্যাতন চালানো হয় এবং নিখোঁজ হয় কয়েকজন আহত ব্যক্তি। কেবল হত্যা ও জখম করেই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ হতাহতদের গুম করে ফেলেছিল সেই দিন। জানাজার মুহুর্তে লাশ কেড়ে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের আত্নীয়-স্বজনদের কাছ থেকে। এটি ছিল চাঁপাইবাসীদের জন্য এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার দিন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে সেদিন বর্বর পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন ২০ এর অধিক। নিখোঁজ সংখ্যা ৮ জন।

এতো রক্ত, এতো গুলি, এতো আহত এতো তান্ডব- তারপরও পরবর্তী দিনগলোতে সাহসের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছে চাঁপাই নবাবগঞ্জবাসী। পুলিশের গুলির মুখে নারায়ে তাকবীর ধ্বনি তুলে ছুটে আসেন তারা ঈদগাহ ময়দানে, কারফিউ উপেক্ষা মিছিল আর শ্লোগানে কাঁপিয়ে তোলে ছোট্ট শহর চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ১২ই মে পরদিন হরতাল আহবান করা হয়। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বাজারে ও মসজিদে লিফলেট দেয়া হয়। গভীর রাতে কারফিউ ভঙ্গ করে সাইকলে চড়ে মোল্লার ফাঁসির দাবিতে পোস্টারিং করা হয়। পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী যে অভূতপূর্ব হরতাল পালন করেছে তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। সেদিন কেবল গাড়ি-ঘোড়া বা রিক্সাই নয়, মহানন্দার বুকে কোন নৌকাও চলেনি। এভাবেই মানুষ প্রকাশ করেছে কুরআনের প্রতি ভালোবাসা এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।

বাংলাদেশের এ ঘটনার ফলে সারা বিশ্বে একটি জনমত সৃষ্টি হয় এবং এর ফলশ্রুতিতে ১৩ ই মে মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বি. সি বাসক বামনের আদালতে স্থানান্তরিত হয় এবং তিনি উক্ত মামলাটি খারিজ করে দেয়। সেই থেকেই বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ ১১ মে’র সেই দিনকে স্মরণ করে “কোরআন দিবস” হিসেবে পালন করে আসছে।

যে ২৬ আয়াত নিষিদ্ধের দাবি তোলা হয়

সূরা নিসা, আয়াত ৫৬, ৮৯, ১০১। সূরা মায়িদাহ, আয়াত ১৪, ৩৩, ৫১, ৫৭। সূরা আনফাল, আয়াত ১২, ৬৫, ৬৯। সূরা তাওবাহ, আয়াত ৫, ১৪, ২৩, ২৮-২৯, ৩৭, ৫৮, ১১১, ১২৩। সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৯৮। সূরা সাজদাহ, আয়াত ২২। সূরা আহজাব, আয়াত ৬১। সূরা হামিম সাজদাহ, আয়াত ২৭-২৮। সূরা ফাতহ, আয়াত ২০। সূরা তহারিম, আয়াত ৯।

 

 

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

১১ মে ঐতিহাসিক কোরআন দিবস | কুরআন নিয়ে কবিতা
১১ মে ঐতিহাসিক কোরআন দিবস | কুরআন নিয়ে কবিতা

6 thoughts on “১১ মে ঐতিহাসিক কোরআন দিবস | কুরআন নিয়ে কবিতা

  1. I blog frequently and I seriously thank you for your content.
    Your article has really peaked my interest. I am going to book mark your website and keep checking for new details about once per week.
    I opted in for your Feed as well.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *