পেনশনের টাকায় হজ করা কি জায়েজ?
সুপ্রিয় পাঠক! আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ আশা করছি ভাল এবং সুস্থ আছেন ৷ নিশ্চয়ই আপনি সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা অর্থাৎ পেনশনের টাকা হালাল নাকি হারাম সম্পর্কে জানার জন্য অনলাইনে খোঁজাখুঁজি করছেন ৷ পেনশনের টাকায় হজ করা কি জায়েজ?
এ সম্পর্কে অনলাইনে বিভিন্ন রকমের বক্তব্য অনেকে দিয়েছেন ৷ অনেকে বিভিন্ন সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য শেয়ার করেছেন ৷ আজ আমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত একটি আলোচনা উপস্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ ৷ আপনি পুরো আর্টিকেলটি পড়লে এ সম্পর্কে আর কোন প্রশ্ন থাকবেন আশা করি ৷
পেনশনের টাকায় হজ করা কি জায়েজ?
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ! উস্তাদ আমি সরকারি একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি হিসেবে চাকরি জীবন শেষ করেছি ৷ সরকার আমাকে প্রভিডেন্ট ফান্ডে বেশ কিছু টাকা দিয়েছে ৷ আমি এই টাকা দিয়ে বাইতুল্লাহর হজ করতে চাই ৷
অনেকেই আমাকে বলেছেন পেনশনের টাকা নাকি হালাল নয় এবং এই টাকা দিয়ে হজ করলে হজ কবুল হবে না ৷ আপনার কাছে বিনীত নিবেদন এ সম্পর্কে আমাকে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন ৷
-তোতা মিয়া সিকদার
খাসেরহাট, মাদারীপুর ৷
ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ আপনার প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর আমরা প্রদান করছি ৷
পেনশনের টাকায় হজ করা কি জায়েজ?
চাকুরী পরবর্তি বোনাস সাধারণত দু ধরণের হয়ে থাকে।
১ ৷ প্রভিডেন্ট ফান্ড
২ ৷ পেনশন ফান্ড
আবার সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডের দুটি পদ্ধতি রয়েছে ৷
প্রথমঃ কর্তৃপক্ষ বেতনের নির্দিষ্ট একটা অংশ চাকুরীজীবীর হাতে না দিয়েই বাধ্যতামূলকভাবে জমা রেখে দেয়। এটা দু ধরণের ৷
(ক) বাধ্যতামূলক ইনকাম ট্যাক্স
অর্থাৎ ইনকাম ট্যাক্স কেটে রাখা যদি বাধ্যতামূলক সরকারী নীতিমার আওতাধীন হয়, যা পরবর্তীতে প্রভিডেন্ট ফান্ড রূপে উক্ত চাকুরজীবিকে দেয়া হবে।তাহলে উক্ত প্রভিডেন্ট ফান্ড সুদের অন্তর্ভূক্ত হবে না ৷
কেননা বেতনের কর্তনকৃত ঐ অংশ ইচ্ছা করলেও উক্ত চাকুরজীবি এখন উসূল করতে পারবে। আর কবজা বা হস্তগ্রত করার পূর্বে কেউ কোনো বেতন ভাতার মালিক হতে পারে না। যখন সে উক্ত টাকার মালিকই হয়নি, তখন সে কিভাবে এ টাকাকে সুদে লাগাবে?
তাই কর্তনকৃত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকার প্রভিডেন্ট ফান্ডকে সুদ বলা যাবে না। বরং এক্ষেত্রে এটাই অনুমান করা হবে যে,বেতন-ভাতার অপরিশোধিত সেই টাকাগুলাই এখন তার হস্তগত হচ্ছে।
এখানে সবগুলাকেই তার বেতন রূপে গণ্য করা হবে।
দ্বিতীয়ঃ চাকুরীজীবির ইচ্ছাধীন ৷ ইচ্ছে করলে রাখতেও পারে, আবার উঠিয়েও ফেলতে পারে।
(খ) ইনকাম ট্যাক্স কেটে রাখা যদি যদি অপশনাল নীতিমালার আওতাধীন থাকে। যা ইচ্ছা করলে এড়িয়ে চলা যায়।তাহলে যতটুকু টাকা ইনকাম ট্যাক্স রূপে কেটে রাখা হয়েছে,পরবর্তীতে প্রভিডেন্ট ফান্ডের ততটুকু টাকাই তার জন্য গ্রহণ করা জায়েয হবে।
আপনি পড়ছেনঃ পেনশনের টাকায় হজ করা কি জায়েজ?
অতিরিক্ত টাকাকে এক্ষেত্রে সুদ হিসেবে গণ্য করা হবে। কেননা সে ইচ্ছা করলে কর্তনকৃত ঐ টাকাগুলোকে পূর্বেই নিজ হাতে নিয়ে আসতে পারত। যখন সে ইচ্ছা করে আনেনি। তাই বুঝা গেল যে,সে ইচ্ছা করে সুদে লাগিয়েছে।
প্রথম পদ্ধতিতে চাকুরীজীবী যখন অবসর নেয়, কর্তৃপক্ষ জমা টাকার সাথে যদি অতিরিক্ত টাকা প্রদান করে, তাহলে তা গ্রহণ করতে শরয়ী কোন বিধিনিষেধ নেই। এটা হালাল হবে ৷ সে এই টাকা তুলে হালাল যত ইচ্ছে আছে তা পূরণ করতে পারবে ৷ এক্ষেত্রে আপনি এই টাকা তুলে হজ করতে পারবেন ৷ ইনশাআল্লাহ ৷
কিন্তু দ্বিতীয় পদ্ধতিতে অর্থাৎ ব্যক্তি ইচ্ছে করে টাকা জমা রেখেছে, কিন্তু মুদারাবা বা মুশারাকা বা এ জাতীয় শরয়ী কোন চুক্তি করেনি, তাহলে অবসরের সময় জমাকৃত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করা জায়েজ হবে না। এটা তার জন্য সুদ হবে ৷ এবং এই সুদী টাকা সম্পূর্ণ হারাম ৷ এই টাকা দিয়ে যেকোনো হালাল কাজ করাও জায়েয হবে না ৷ সুতরাং এই টাকায় হজ করাও জায়েজ হবে না ৷
দেখুন- আপকি মাসায়েল আওর উনকা হল-৭/৩২৮-৩২৯, জাদীদ ফিক্বহী মাসায়েল-১/৪৩৮-৪৩৯, ফাতাওয়া উসমানী-৩/২৭৮।
আর হজ ফরজ হওয়ার জন্য কোন ব্যক্তি নিজ মালিকানাধীন হালাল সম্পদ দ্বারা নেসাবের মালিক হওয়াই যথেষ্ট। পেনশনের টাকা সংশ্লষ্টি ব্যক্তির মালকিানাধীন সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয় বিধায় অন্যান্য সম্পদের সাথে নেসাবের হিসাব করার ক্ষত্রে পেনশনের টাকারও হিসাব করা হয়।
সুতরাং আপনি প্রথম পদ্ধতিতে টাকা পেয়ে থাকলে পেনশনের টাকা দিয়ে হজ করা যাবে।
–ফাতাওয়ায়ে শামী ৩/৫২৭, বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/১৪৯
২ ৷ পেনশন ফান্ড
অব্যহতি পরবর্তি চাকুরীজীবিদের জন্য নির্ধারিত পেনশন-কে বেতন-ভাতা র অন্তর্ভুক্ত ধরা যাবে না।
বরং এটাকে সরকারের পক্ষ্য থেকে পৃথক পুরস্কার হিসেবেই গণ্য করা হবে।
আর পুরুস্কার গ্রহণ জায়েয বিধায় পেনশন গ্রহণও জায়েয।
আল্লাহু আ‘লাম
আরও পড়ুনঃ ইসলামে সন্ন্যাসী ও সংসার বৈরাগীর বিধান
শেষ কথা
সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷