ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট কী? নির্বাচন ও ভোটের শরঈ বিধান

ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট কী? নির্বাচন ও ভোটের শরঈ বিধান

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ৷ সুপ্রিয় পাঠক! কেমন আছেন? দেশে জাতীয় স্থানীয় অনেক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৷ নির্বাচন সামনে আসলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় কোন প্রার্থী কাকে ভোট দেয়া যায়? এ নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনার জন্ম নেয় ৷ অনেকে এটাকে দুনিয়াবি কার্যকলাপ হিসেবে দেখে ৷ আবার অনেকে নির্বাচন ও ভোটকে ইসলামের বাটখারায় মাপতে চায় ৷  এটাকে বাছ বিচার করতে চায় শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে ৷ তাই আজকে আমরা আলোচনা করতে চাই ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট কী? নির্বাচন ও ভোটের শরঈ বিধান কী? বিস্তারিত থাকবে বক্ষমাণ নিবন্ধে ৷ শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকুন

ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট কী? নির্বাচন ও ভোটের শরঈ বিধান

◆ ভোট কী?

প্রথমে আলোচনা করতে চাই ভোট কি? ভোট কাকে বলে? হযরত মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. বলেছেন, “ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে তিনটি বিষয়ের সমষ্টি।

  • ১. সাক্ষ্য প্রদান
  • ২. সুপারিশ ও
  • ৩. প্রতিনিধিত্বের অথরিটি প্রদান।

 

কুরআন-সুন্নাহ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল সকলেরই জানা রয়েছে যে, শরীয়তে উপরোক্ত তিনটি বিষয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা তৈরির এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রতিনিধিত্বের সনদ দেওয়ার মানে হচ্ছে প্রতিনিধিত্ব দানকারী (ভোটার) তার ভবিষ্যত সকল কার্যকলাপের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিচ্ছে। এমনিভাবে সুপারিশের বিষয়টিও প্রনিধানযোগ্য।

কুরআনুল কারীমের ভাষায়

‘যে ভালো সুপারিশ করবে সে তার নেকীর ভাগী হবে। আর যে মন্দ সুপারিশ করবে সেও মন্দের হিস্যা পাবে।’ [সূরা নিসা, আয়াত ৮৫]

 

ভোট ও সাক্ষ্য: ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট একটি আমানত

ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট কী? নির্বাচন ও ভোটের শরঈ বিধান
ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট কী? নির্বাচন ও ভোটের শরঈ বিধান

সহিহ বুখারির একটি বর্ণনায় হযরত আবু বকর (রা.) বলেন যে, রাসুলুল্লাহ একদা এক জায়গায় হেলান দিয়ে বসা অবস্থায় তিনবার সাহাবীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে বড় কবীরা গুনাহের কথা বলব”?

সাহাবীরা হ্যাঁ সূচক উত্তর দেওয়ার পর তিনি বললেন, “আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা (এ দুটি কথা বলার পর তিনি সোজা হয়ে বসলেন) এবং বললেন, শুনে নাও! মিথ্যা সাক্ষ্য অনেক বড় কবীরা গুনাহ”।

ভোটের মধ্যে যে তিনটি (সাক্ষ্য প্রদান, সুপারিশ, প্রতিনিধিত্বের সনদপ্রদান) বিষয় রয়েছে এর মধ্যে ‘শাহাদত’ বা সাক্ষ্যের বিষয়টি মৌলিক। অর্থাৎ কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ হল, তার ব্যাপারে এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, লোকটি ভালো এবং যোগ্য। এখন যদি যথাযথ জায়গায় সীল দিয়ে এ সাক্ষ্য প্রদান করা হয় তবে সে হবে সত্য সাক্ষী অন্যথায় হবে মিথ্যা সাক্ষী। আর মিথ্যা সাক্ষ্য যে কত বড় কবীরা গুনাহ ও হারাম কাজ তা কি কারো অজানা রয়েছে? অবশ্য বর্তমান বে-দ্বীনি ও বস্ত্তবাদিতার যুগে অনেকের কাছেই মিথ্যা কোনো বিষয়ই নয়। কথায়, লিখায়, ক্ষমতায়, আদালতে, বই-মিডিয়ায়, বক্তৃতা-ভাষণে সব জায়গাতেই মিথ্যার সয়লাব। অথচ মানবতার মুক্তির দূত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠিন ভাষায় মিথ্যা ও মিথ্যা সাক্ষ্যের নিন্দা করেছেন।

সুনানে তিরমিযীর একটি হাদীসে মিথ্যা সাক্ষ্যকে শিরকের সমান অপরাধ বলা হয়েছে।  সু-বিখ্যাত হাদীস বিশারদ শামসুদ্দীন যাহাবী রাহ. মিথ্যা সাক্ষ্যকে চারটি বড় গুনাহের সমষ্টি বলে আখ্যা দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে :

  • ১) নিজে মিথ্যা ও অপবাদ আরোপ করছে
  • ২) যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিচ্ছে তার উপর যুলুম করছে
  • ৩) যার পক্ষে মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছে তার উপরও প্রকৃতপক্ষে যুলুম করছে কারণ, সে যা কিছু পাওয়ার যোগ্য ছিল না এ ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষীর মাধ্যমে তাকে এর অধিকারী করে তুলছে এবং এভাবে তাকে করছে জাহান্নামী
  • ৪) মিথ্যা সাক্ষ্যদাতার একটি হালাল কাজকে হারাম বানিয়ে নেওয়া।

মিথ্যা ও অবাস্তব সাক্ষ্যের ক্ষতি ও খেসারত বলে শেষ করার মতো নয়। হকদার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া, অযোগ্য ও অপদার্থের উত্থান, দুর্নীতিবাজ ও শোষকশ্রেণীর লোকদের ক্ষমতায়ন- এসবই মিথ্যা সাক্ষ্যের ক্ষতি। এর কারণে ইনসাফপছন্দ এবং যোগ্য ও সৎ-আমানতদার ব্যক্তিগণ নিরবতা পালন করে রাষ্ট্র ও জনগণের খেদমত থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে বাধ্য হন।

 

নির্বাচন ও ভোটের শরঈ বিধান

 

সে আলোচনার আগে প্রচলিত গণতান্ত্রিক সমাজের নির্বাচন পরিস্থিতির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক। বর্তমানে প্রায় সকল দেশেই ভোট হচ্ছে আধিপত্যকামী, পুঁজিপতি, বংশগত রাজনীতিক, গডফাদার ও ক্ষমতালোভীদের  একটি খেলা। এটি এমন একটি খেলা, যেখানে প্রতারণা ও মিথ্যা  হচ্ছে বড় উপাদান। যেমন :

পারিবারিক রাজনীতি, অন্যকে গালমন্দ করা, গীবত-শেকায়েত করা, নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়া, নেতা-নেত্রীর অন্ধ আনুগত্য, একে-অন্যের কোনো ভালই স্বীকার করতে না চাওয়া, নিজের অবাস্তব ও মিথ্যা অবদানের প্রচারণা, মিথ্যা অপবাদ-মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে আদর্শিক কোনো মিল না থাকা সত্ত্বেও জোটবদ্ধ হওয়া ও আদর্শিক শত্রুকেও জোটে নেওয়া, মনোনয়ন না পেলে রাতারাতি এত দিনের শত্রুকে বন্ধু বানিয়ে দলবদল করা, মনোনয়ন বাণিজ্য, অর্থ, পদবী ও রাষ্ট্রীয় সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে ভোট কেনা-বেচা এবং ভোটের পর হর্সট্রেডিং ইত্যাদি বিষয় যে প্রচলিত গণতন্ত্রের সমার্থক তা সম্ভবত ব্যাখ্যা করে বুঝানোর প্রয়োজন নেই। অবশ্য  এত কিছুর পরে ভোট পেলেও আমাদের মতো দেশে ক্ষমতায় যাওয়া বা ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণই নির্ভর করে বিদেশী প্রভূদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর। বেশি ভোট পাওয়া দল যদি তাদের অপছন্দের হয় তবে যে কোনো সামান্য অজুহাতেই সে দলকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা বা নামিয়ে দেওয়া অনেকটা সুনিশ্চিত।

প্রিয় পাঠক! এটাই গণতন্ত্রের একটি সামান্য খোলামেলা পরিচয়। এই গণতন্ত্রই হয়ে গেছে এত গুরুত্বপূর্ণ যে, তা যেন ঈমান-আকীদার মতো অপরিহার্য এবং এর যেন কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্র নিয়ে অনেক কিছুই বলার মতো আছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে গণতন্ত্রের বিশ্লেষণ এবং ইসলামের খেলাফত ও শুরাপদ্ধতির বৈশিষ্ট্য এবং এ দু’টির তুলনামূলক উপস্থাপনের বিষয়টি অন্যদিনের জন্য থাক। আজ সংক্ষেপে শুধু এতটুকু বলা জরুরি মনে হচ্ছে যে, প্রচলিত গণতন্ত্র ও ইসলামের খেলাফত পদ্ধতি মৌলিক নীতিমালা ও আদর্শ-উদ্দেশ্যের দিক থেকে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দু’টি ব্যবস্থা। ইসলামী শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা কখনও মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, আর ক্ষমতাশীলদের যাচ্ছেতাই করার কোনোই সুযোগ নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে মনগড়া যে কোনো আইন তৈরি করা, বিরোধীদের দমন-পীড়ন, জনগণকে নিজেদের গোলামের মতো ভেবে যে কোনো আইন অথবা করের বোঝা তাদের ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ ইসলামে নেই।

আরও পড়ুনঃ গায়েবানা জানাযার বিধান

 

ভোট দেওয়া নিয়ে ইসলাম কী বলে?

অন্যদিকে বর্তমান পদ্ধতির মতো চিহ্নিত সন্ত্রাসী, গডফাদার, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনকারী, মিথ্যাবাদী, ধর্মের প্রতি উদাসীন, খোদাদ্রোহী ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়া বা ক্ষমতায় বসার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। যদিও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভালো লোকদের প্রার্থী হওয়া বা নির্বাচিত হওয়ার আইনগত বাধা নেই, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন। হাতে গোনা সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বর্তমানে নির্বাচন হচ্ছে টাকার বিনিময়ে আধিপত্য ও প্রভাব-প্রতিপত্তির খেলা। সুতরাং এ ব্যবস্থায় যে শান্তি বা কল্যাণের আশা করা যায় না এবং এ পদ্ধতিতে সৎ, যোগ্য, নিষ্ঠাবান লোকজনের সরকার গঠিত হওয়া যে অনেকটা অসম্ভব তা বুঝিয়ে বলার দরকার আছে বলে মনে হয় না। তবুও পশ্চিমা গণতন্ত্র ও নির্বাচনই বর্তমানে আমাদের কাছে তিক্ত বাস্তবতা। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আমরা এখন সে পদ্ধতির অনুসারী। আমাদের গুনাহ-অপকর্ম, দ্বীন-শরীয়তের প্রতি উদাসীনতা, সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞানের অনুপস্থিতি এবং তাদের কাছে দ্বীন পৌঁছে দেওয়া ও সহীহ মানসিকতা তৈরি করার ব্যাপারে আমাদের আলেমসমাজ ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের ব্যর্থতা আমাদেরকে এ অধঃপতনে নামিয়েছে। যে পর্যন্ত সাধারণ লোকজনের একটি বিশাল অংশকে দ্বীনি শিক্ষা ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে তাদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতার সৃষ্টি না করা যাবে এবং চিন্তা ও বুদ্ধি বিকাশের মাধ্যমে গণজারণ ও বিপ্লবের সূচনা না করা যাবে সে পর্যন্ত আমাদেরকে গণতন্ত্রের এই তেতো শরবত পান করেই যেতে হবে। সুতরাং আসন্ন নির্বাচনের দিন ভোট দেওয়ার আগে ইসলামের দৃষ্টিতে এর গুরুত্ব ও হাকীকত জেনে নেওয়া দরকার।

ভোট কি অবশ্যই দিতে হবে

উপরোক্ত আলোচনা পড়ে প্রশ্ন আসতে পারে যে, তা হলে তো বর্তমান সমাজে অধিকাংশ আসনের লোকদের ভোট দেওয়াই সম্ভব হবে না। কারণ, এমন লোক তো পাওয়া যাবে না, যার সপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করা যায় এবং এ কারণে অনেকে ভোট দেওয়া থেকে বিরতও থাকেন, এমনকি বহু লোক ভোটার হতেও আগ্রহী হন না। সাধারণ বিবেচনায় এ চিন্তা যুক্তিযুক্ত মনে হলেও এক্ষেত্রে কিন্তু মুদ্রার ভিন্ন পিঠও রয়েছে। তা হচ্ছে, মন্দের ভালো বা তুলনামূলক কম ক্ষতিকে বেছে নেওয়া এবং অধিক ক্ষতি থেকে বাঁচার চেষ্টা করা। বর্তমানে ভোটকে এ দৃষ্টিকোণ থেকেই বিবেচনায় আনতে হবে এবং ভোটের মাধ্যমে অধিক ক্ষতি থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে। কোনো আসনে একজন লোককেও যদি সাক্ষ্য ও ভোট দেওয়ার উপযুক্ত মনে না হয় তবে তাদের মধ্যে যে জন নীতি-নৈতিকতা, চিন্তা-চেতনা ও কাজে-কর্মে অন্য প্রার্থীর তুলনায় কম খারাপ তাকেই ভোট দিতে হবে। কারো ব্যাপারে যদি খোদাদ্রোহিতা, ইসলাম-দুশমনী, রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থ-বিরোধী হওয়ার সুস্পষ্ট আলামত থাকে তবে ঐ অসৎ ব্যক্তির বিজয় ঠেকানোর চেষ্টা করতে হবে ভোটারাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে।

 

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা (২৩/৪০৬, ৪০৭)-তে এসেছে,

إلا إذا كان من رشح نفسه من المسلمين ومن ينتخبون يرجون بالدخول في ذلك أن يصلوا بذلك إلى تحويل الحكم إلى العمل بشريعة الإسلام ، واتخذوا ذلك وسيلة إلى التغلب على نظام الحكم ، على ألا يعمل من رشح نفسه بعد تمام الدخول إلا في مناصب لا تتنافى مع الشريعة الإسلامية

‘তবে কোন মুসলমান যদি এ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয় কিংবা অন্যকে নির্বাচিত করে যে, এর মাধ্যমে এ শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করবে, নির্বাচনে অংশগ্রহণকে তারা বর্তমান শাসনব্যবস্থার উপর আধিপত্য বিস্তার করার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে সেটা জায়েয। তবে, সে ক্ষেত্রেও যে ব্যক্তি প্রার্থী হবেন তিনি এমন কোন পদ গ্রহণ করতে পারবেন না যা ইসলামী শরিয়ার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।’

 

দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত ‘মাসিক দারুল উলুম’-এ মুফতি মুহাম্মাদ নিমাবি কাসেমী বলেন,

 

اگر ہندوستان کی صورتِ حال کا جائزہ لیا جائے ؛تو معلوم ہوگا کہ یہاں حکومت کی بنیادالیکشن پرہے اور الیکشن… انجام کار کبھی ایسی نا پسندیدہ پارٹی یا افراد مسندِ اقتدار پر فائز ہوجاتے ہیں؛ جو مسلمانوں کے لیے سم ِقاتل کے مانند ہوتے ہیں۔ …لہٰذ اجمہوری ممالک میں الیکشن میں ووٹ ڈالنے کے عمل کومحض مباح نہیں؛ بلکہ واجب سے کم درجہ نہیں قرار دیا جاسکتاہے۔

‘যদি ভারতের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, এখানে সরকার গঠনের মূল ভিত্তি হল, নির্বাচন। ফলে অনেক সময় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত দল বা ব্যক্তি ক্ষমতায় চলে আসে যে মুসলমানদের জন্য প্রাণ-বিনাশী বিষের মত হয়। সুতরাং (এরকম পরিস্থিতিতে) গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে ভোট দেয়া কেবল বৈধ নয়; বরং ওয়াজিব থেকে কম বলা যাবে না।’ (বিস্তারিত দেখুন-মাসিক দারুল উলুম, জুমাদাল উলা ১৪৩৪ হি./মার্চ ২০১৩ ইং)

 

শাইখ মুহাম্মদ বিন উছাইমীনকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাবে বলেন,

 

أنا أرى أن الانتخابات واجبة ، يجب أن نعين من نرى أن فيه خيراً ، لأنه إذا تقاعس أهل الخير ، مَنْ يحل محلهم ؟ سيحل محلهم أهل الشر ، أو الناس السلبيون الذين ما عندهم خير ولا شر ، أتباع كل ناعق ، فلابد أن نختار من نراه صالحاً

 

‘আমি মনে করি এ নির্বাচনগুলোতে অংশ নেয়া আবশ্যক। আমরা যাকে ভাল মনে করি তাকে সহযোগিতা করা আবশ্যক। কারণ ভাল লোকেরা যদি ঢিলেমি করে তাহলে এ স্থানগুলো কে দখল করবে? খারাপ লোকেরাই দখল করবে কিংবা এমন লোকেরা দখল করবে যাদের কাছে না আছে ভাল; না আছে খারাপ; যারা সুবিধাবাদী। তাই আমাদের উচিত যাকে যোগ্য মনে করি তাকে নির্বাচিত করা।’

 

মোটকথা, গণতন্ত্র ও বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতির যতই ত্রুটি থাকুক এর কারণে ভোট দানে বিরত থাকা সমীচীন হবে না; বরং বুদ্ধি-বিবেচনা খরচ করে, ভেবে-চিন্তে ভোটারাধিকার প্রয়োগ করতে হবে ভাল-মন্দের ভালো অথবা অন্তত কম মন্দের পক্ষে। এ ক্ষেত্রে শরীয়তের দৃষ্টিতে কাউকে ভোটদানের অর্থ হবে, এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, লোকটি তার প্রতিদ্বন্দ্বিদের তুলনায় কিছুটা হলেও ভালো।

 

যদি ভোট না দিই, তবে কি গুনাহগার হব?

ভোট দেওয়া কি সওয়াবের কাজ? না। এটি সওয়াব বা গুনাহের কাজ কোনোটিই না। এটা ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু এটি যে দায়িত্বের বিষয়, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আর ভোট না দিলে তিনি গুনাহগার হবেন, ব্যাপারটি এমন নয়। কারণ এটি শরিয়তের বিধানের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। শরিয়তের ফরজ, ওয়াজিব, নফলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।

তবে নাগরিক হিসেবে একজন ব্যক্তিকে কিছু অধিকার দেওয়া হয়েছে। যেমন- দুটি মন্দ লোক মহল্লায় নির্বাচনে দাঁড়াল। এখন যদি ভালো লোকগুলো সব নীরবে ঘরে বসে থাকে, ভালো লোককে ভোট না দেয়, আর মন্দ লোক তাঁর অর্থের জোরে, মাস্তানির জোরে কিছু ভোট আদায় করে। মন্দ লোকের শাসন তো আমাদের কাম্য নয়। সেখানে দায়িত্বের জায়গাটি চলেই আসে।

মোট কথা, যেহেতু শরিয়তের বিধান না, সেহেতু কেউ যদি না চায় সে ভোট নাও দিতে পারে। আর সামাজিক দায়-দায়িত্বের দিক থেকে সেটা তার নিজস্ব বিবেচনার বিষয়। তবে কোনো সন্দেহ নেই একটি সমাজে বসবাস করলে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা, অন্যায়ের প্রতিরোধ করতে হবে। মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব, মানুষের যেহেতু সামাজিক অবস্থান রয়েছে, সে জন্য সেখানে তাঁর দায়িত্ব যেগুলো রয়েছে, সেগুলোকে আনজাম দেওয়া কোনো কোনো সময় তাঁর করণীয়র মধ্যে পড়ে, ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট কী? নির্বাচন ও ভোটের শরঈ বিধান
ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট কী? নির্বাচন ও ভোটের শরঈ বিধান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *