অনুমতি ছাড়া স্বামীর টাকা খরচ করা যাবে কি? স্বামীর পকেট থেকে না বলে টাকা নেওয়া কি চুরি?

অনুমতি ছাড়া স্বামীর টাকা খরচ করা যাবে কি? স্বামীর পকেট থেকে না বলে টাকা নেওয়া কি চুরি?

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ৷ সুপ্রিয় পাঠক! কেমন আছেন? আশা করছি অনেক অনেক ভাল এবং সুস্থ আছেন ৷ আজ আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিকে আলোকপাত করবো ৷ অনেকেরই প্রশ্ন থাকে স্বামীর টাকা ব্যয় করার ক্ষেত্রে স্ত্রীর কতটুকু ও কি ধরণের অধিকার আছে? কোনো মেয়ে যদি স্বামীকে না জানিয়ে তার সম্পদ থেকে নিয়ে তার অসহায় মা-বোনকে কিছু আর্থিক সাহায্য করে, তাহলে তা জি জায়েয হবে? কারণ স্বামী জানলে হয়ত এর অনুমতি দিবে না। তবে নিয়ত আছে আল্লাহ রহমতে অবস্থা ভালো হলে স্বামীকে বিষয়টি জানাবে ইনশাআল্লাহ। এটা কি হারাম হবে?

অনুমতি ছাড়া স্বামীর টাকা খরচ করা যাবে কি? স্বামীর পকেট থেকে না বলে টাকা নেওয়া কি চুরি?

সাধারণভাবে স্বামীর অর্থ-সম্পদ হেফাযত করা একজন দ্বীনদার নারীর দায়িত্ব। স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী খেয়াল-খুশিমত খরচ করা শুরু করলে পরষ্পরের মনমালিন্য সৃষ্টি হবে যা তাদের দাম্পত্য জীবনকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।

 

অবশ্য স্বামী যদি তার স্ত্রীর ভোরণ-পোষণ না দেয় তাহলে স্ত্রীর অধিকার আছে, তার স্বামীর সম্পদ থেকে তার অনুমতি ছাড়াই নিজের ভোরণ-পোষণের প্রয়োজন পূরণ করার। এটি তার হক।

আরও পড়ুনঃ গায়েবানা জানাযার বিধান

হাদিস শরিফে এসেছে, আবু উমামা আল-বাহিলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজের বছর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর ভাষণে বলতে শুনেছি যে,স্বামীর ঘর হতে তার পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো স্ত্রীলোক যেন কিছু খরচ না করে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! খাবারও কি নয়? তিনি বললেন, খাবার তো আমাদের উত্তম সম্পদ। (তিরমিজি, ২১২০)

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, কোনো মহিলার জন্য তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাউকে উপহার দেওয়া বৈধ নয় (নাসাঈ. কিতাবুজ জাকাত ৫/৬৬)।

অনুমতি ছাড়া স্বামীর টাকা খরচ করা যাবে কি? স্বামীর পকেট থেকে না বলে টাকা নেওয়া কি চুরি?
অনুমতি ছাড়া স্বামীর টাকা খরচ করা যাবে কি? স্বামীর পকেট থেকে না বলে টাকা নেওয়া কি চুরি?

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি কোনো স্ত্রী ক্ষতি না করে বাড়ির খাবার থেকে দান করে, তাহলে সে তার দানের সওয়াব পাবে এবং তার স্বামী এ খাবার উপাজর্নের কারণে সওয়াব পাবে। আর সঞ্চয়কারীও সওয়াব পাবে। এদের কেউ অন্যের সওয়াবে কমতি করবে না। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ১৭০৬)

 

তবে বিষয়টি যে একবারে নিষিদ্ধ এমন নয়, স্বামীর সঙ্গে যদি স্ত্রীর সমঝোতা থাকে এবং স্বামীর মৌন সমর্থন থাকলে অনুমতি ছাড়া খরচ করতে পারবে। কিন্তু স্বামী যদি রাগ করেন বা নিষেধ করেন, তাহলে কম হোক বা বেশি হোক—তার সম্পদ খরচ বা দান-সদকা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

 

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক খুবই মজবুত। দুজনেই একে অপরের দুঃখ-কষ্টের অংশীদার, এই অর্থে একে অপরের সবচেয়ে বেশি কাছের। তবে এই মধুর সম্পর্কের মাঝেও প্রায় সময় খুনসুটি লেগে থাকে। অনেক সময় স্ত্রী স্বামীর মানিব্যাগ বা পকেট থেকে অনুমতি ছাড়া টাকা নেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াও হয়ে যায়। তাই অনুমতি ছাড়া স্বামীর টাকা স্ত্রীর জন্য খরচ করা শরীয়াহ দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ কিনা- এ প্রশ্ন থেকেই যায়।

 

অনুমতি ছাড়া স্বামীর টাকা খরচ করা জায়েজ?

 

অনুমতি ছাড়া স্বামীর টাকা খরচ করা স্ত্রীর জন্য জায়েজ নেই। তবে স্ত্রী যদি জানেন, নিজের মা-বাবা অথবা ভাইয়ের জন্য অল্প-স্বল্প খরচ করলে কিংবা মাঝে মধ্যে তাদের হাদিয়া দিলে স্বামী মন খারাপ করবেন না; তাহলে এমন কিছু ক্ষেত্রে স্বামীর স্পষ্ট অনুমতি ছাড়া স্ত্রী খরচ করতে পারবেন।

যেহেতু স্বামী এতে সায় দেবেন এবং আপত্তি করবেন না বলে—স্ত্রীর প্রবল ধারণা রয়েছে। আর এতে তারা দুইজনই সওয়াব পাবেন।

পড়ুনঃ জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে? 

যেহেতু স্বামী এতে সায় দেবেন এবং আপত্তি করবেন না বলে—স্ত্রীর প্রবল ধারণা রয়েছে। আর এতে তারা দুইজনই সওয়াব পাবেন।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো স্ত্রী ক্ষতি না করে বাড়ির খাবার থেকে দান করে, তাহলে সে তার দানের সওয়াব পাবে এবং তার স্বামী এ খাবার উপাজর্নের কারণে সওয়াব পাবে। আর সঞ্চয়কারীও সওয়াব পাবে।

এদের কেউ অন্যের সওয়াবে কমতি করবে না। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ১৭০৬)

কিন্তু স্বামী যদি রাগ করেন বা নিষেধ করেন, তাহলে কম হোক বা বেশি হোক—তার সম্পদ খরচ বা দান-সদকা করা থেকে বিরত থাকা অত্যাবশ্যক।

 

স্বামীর পকেট থেকে না বলে টাকা নেওয়া কি চুরি?

 

অবশ্যই সেটা চুরি হবে। না জানিয়ে টাকা নেওয়া সর্বাবস্থায় চুরি। এটা জায়েজ নেই। এটা হারাম। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে যদি সমঝোতা থাকে যে, কিছু খুচরা খরচের জন্য আমি পকেট থেকে টাকা নিই এবং সে ক্ষেত্রে স্বামী তাঁকে অনুমতি দিয়ে থাকেন, তাহলে নিতে পারেন। কিন্তু তিনি এ কাজটি কেন করবেন। জানিয়ে নিতে পারেন।

সুতরাং, চুরি করার এ পদ্ধতি ইসলামের শরিয়তের মধ্যে কোনোভাবেই জায়েজ নেই। ইসলাম এটাকে অনুমোদন দেয় না।

শুধু একটি প্রেক্ষাপট সামনে রেখে ইসলামের শরিয়তের মধ্যে এর বৈধতার বিষয়টি সামনে এসেছে। সেটি হলো, প্রয়োজনীয় বিষয় যদি স্বামী তাঁর স্ত্রীকে না দিয়ে থাকেন, সেটি হকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই হকটুকু স্বামীর অজান্তে তাঁর স্ত্রী যদি নেন, তাহলে এটা তাঁর জন্য জায়েজ রয়েছে।

 

স্বামী প্রয়োজনীয় খরচ না দিলে করণীয়

 

স্বামী যদি বিহিত কোনো কারণ ছাড়া স্ত্রী-সন্তানের তথা সাংসারিক জরুরি খরচ না দেয়, তাহলে স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ছাড়াও স্বামীর সম্পদ থেকে প্রয়োজনমতো অপচয় না করে খরচ করতে পারবে।

 

হাদিস শরিফে এসেছে, ‘সাহাবিয়া হিন্দ বিনতে উতবা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (আমার স্বামী) আবু সুফিয়ান সংসারের খরচে সংকীর্ণতাকারী, সে আমার ও আমার সন্তানের প্রয়োজনীয় পরিমাণে খরচ দেয় না, তবে আমি তার অগোচরে তার থেকে কিছু নিয়ে থাকি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হ্যাঁ, তুমি তোমার ও তোমার সন্তানের প্রয়োজন পরিমাণ তার অগোচরে তার থেকে নিতে পারবে।’ (বুখারি : হাদিস ৫২৬৪, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৭)

 

তবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মালিকানা ভিন্ন হওয়ায় অনুমতি ছাড়া একে অন্যের সম্পদ ব্যয় করা অবৈধ। স্বামী যদি নিয়মমাফিক ভরণপোষণ ও স্বাভাবিক হাতখরচের প্রয়োজন পূরণ করে থাকে, তাহলে তার কাছ থেকে তার অগোচরে টাকা-পয়সা নিয়ে নেওয়া এবং তাকে না জানিয়ে বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা বৈধ হবে না।

 

স্বামীর পকেট থেকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে??

 

স্বামী যদি স্ত্রী ও সন্তানদের আবশ্যকীয় ভরণপোষণের টাকা প্রদান না করে বা খরচ না করে কৃপণতা করে থাকে, তাহলে স্বামীকে না জানিয়ে তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় টাকা গ্রহণ করা জায়েজ হবে।

 

কিন্তু স্বামী যদি স্ত্রী ও সন্তানদের আবশ্যকীয় ভরণপোষণ করে থাকে, তাহলে স্বামীকে না জানিয়ে তার থেকে টাকা পয়সা বা অর্থ সম্পদ নেয়া কোনভাবেই জায়েজ নয়। বরং চুরি হিসেবে ধর্তব্য হবে।

 

এছাড়া স্ত্রী যদি জানেন যে, তার মা-ভাইয়ের জন্য বা অন্য কোন ( দান-সদকা) কাজে টুকিটাকি খরচ করলে কিংবা তাদেরকে অল্প-স্বল্প হাদিয়া দিলে তার স্বামীর মন খারাপ হবে না; যেসব ক্ষেত্রে স্বভাবত মানুষ সহজভাবে দেখে থাকে তাহলে এমন কিছু স্বামীর স্পষ্ট অনুমতি ছাড়া স্ত্রী তার মা-ভাইয়ের জন্য বা অন্য কোন কাজে খরচ করতে পারেন। যেহেতু স্ত্রীর প্রবল ধারণা হয় যে, স্বামী এতে সায় দিবে, আপত্তি করবে না। তাহলে অনুমতি ছাড়া টাকা খরচ করা স্ত্রীর জন্য জায়েয।

 

আর স্বামী যদি রাগ করে বা নিষেধ করে তাহলে কম হোক বা বেশি হোক তার সম্পদ খরচ বা দান-সদকা করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

অনুমতি ছাড়া স্বামীর টাকা খরচ করা যাবে কি? স্বামীর পকেট থেকে না বলে টাকা নেওয়া কি চুরি?
অনুমতি ছাড়া স্বামীর টাকা খরচ করা যাবে কি? স্বামীর পকেট থেকে না বলে টাকা নেওয়া কি চুরি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *