সুরা আসরের তাফসির | সুরা আছরের গুরুত্ব ও ফজিলত

সুরা আসরের তাফসির

 

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! কেমন আছেন? আজ আমরা কথা বলবো পবিত্র কুরআনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা সূরাতুল আসর সম্পর্কে ৷ সুরা আসরের তাফসির ৷ আমরা এর খুঁটিনাটি বিষয় এবং তাফসীর জানার চেষ্টা করব ৷ পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন ৷ সূরা আসর সম্পর্কে সম্যক ধারনা পাবেন ইনশাআল্লাহ ৷

আসুন প্রথমে সুরা আসরের অর্থ জেনে নিই ৷

 

وَ الۡعَصۡرِ ۙ﴿۱﴾
সময়ের কসম,

اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَفِیۡ خُسۡرٍ ۙ﴿۲﴾

নিশ্চয় সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত।

اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ تَوَاصَوۡا بِالۡحَقِّ ۬ۙ وَ تَوَاصَوۡا بِالصَّبۡرِ ٪﴿۳﴾

তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।

ইসলামী সাহিত্য কাকে বলে? সাহিত্য চর্চা কীভাবে করে? 

নামকরণ ও গুরুত্ব:

 

العصر শব্দের অর্থ সময়, কাল, যুগ ইত্যাদি। সূূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত العصر শব্দ থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।

আব্দুল্লাহ বিন হাফস (রাঃ) বলেন : দুজন সাহাবীর অভ্যাস ছিল যে, যখন তারা পরস্পর সাক্ষাৎ করত তখন একজন এ সূরাটি পড়তেন এবং অপরজন শুনতেন। তারপর সালাম বিনিময় করে বিদায় নিতেন। (বায়হাকী হা. ৯০৫৮, সনদ সহীহ)

 

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এ সূরার গুরুত্ব বুঝাতে বলেছেন :

لو ما انزل الله علي الخلق إلا هذه السورة لكقته

সৃষ্টি জীবের জন্য আল্লাহ তা‘আলা এ সূরা ছাড়া অন্য কিছু অবতীর্ণ না করলেও তা যথেষ্ট হত। (ইবনু কাসীর)

 

ঐতিহাসিকগণ বলেছেন :

আমর ইবনুল আস (রাঃ) মুসলিম হওয়ার পূর্বে একবার ভণ্ডনাবী মুসায়লামা কাযযাবের কাছে গিয়েছিলেন। তখন মুসায়লামা তাকে বলেন : তোমাদের নাবীর ওপর সম্প্রতি কী নাযিল হয়েছে? তিনি বললেন : তাঁর ওপরে অতি সংক্ষিপ্ত ও সারগর্ভ একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে। মুসায়লামা কাযযাব বলল : সেটা কি? তখন আমর ইবনুল আস (রাঃ) তাকে সূরা আছর শুনিয়ে দিলেন।

 

অতঃপর ভণ্ডনাবী মুসায়লামা কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলল : আমার কাছেও এরূপ সূরা নাযিল হয়েছে। আমর ইবনুল আ‘স (রাঃ) বললেন : সেটা কী? তখন মুসায়লামা বলল : হে ওয়াবর (বিড়াল জাতীয় ছোট প্রাণী)! তোমার কাছে কেবল দু’টি বড় কান ও সীনা। আর তোমার বাকী সবই ফালতু। অতঃপর মুসায়লামা জিজ্ঞাসা করল : কেমন লাগল? জবাবে আমর ইবনুল আস (রাঃ) বললেন : আল্লাহ তা‘আলার শপথ! তুমি ভালভাবেই জানো যে, আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছ। (ইবনু কাসীর)

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য:

 

এ সূরাটি ব্যাপক অর্থবোধক সংক্ষিপ্ত বাক্য সমন্বিত বাণীর একটি অতুলনীয় নমুনা। কয়েকটা মাপাজোকা শব্দের মধ্যে গভীর অর্থের এমন এক ভাণ্ডার রেখে দেয়া হয়েছে যা বর্ণনা করার জন্য একটি বিরাট গ্রন্থও যথেষ্ট নয়। এর মধ্যে সম্পূর্ণ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মানুষের সাফল্য ও কল্যাণের এবং তার ধ্বংস ও সর্বনাশের পথ বর্ণনা করা হয়েছে।

 

ইমাম শাফেঈ যথার্থই বলেছেন, লোকেরা যদি এই সূরাটি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে এই একটি সূরাই তাদের হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট। সাহাবায়ে কেরামের দৃষ্টিতে এটি ছিল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূরা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হিসন দারেমী আবু মাদ্বীনার বর্ণনা অনুযায়ী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণের মধ্য থেকে দুই ব্যক্তি যখন পরস্পর মিলিত হতেন তখন তারা একজন অপরজনকে সূরা আসর না শুনানো পর্যন্ত পরস্পর থেকে বিদায় নিতেন না। (তাবারানী)

তাফসীর:

الْعَصْرِ আছর দ্বারা উদ্দেশ্য কী এ নিয়ে মুফাসসিরদের মাঝে কয়েকটি মত পাওয়া যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো :

  • ১. ইমাম বুখারী (রহঃ) বর্ণনা করেন, ইয়াহইয়া বলেন : আছর হলো যুগ আল্লাহ তা‘আলা যুগের শপথ করেছেন। (সহীহ বুখারী)
  • ২. হাসান বাসরী ও কাতাদাহ (রহঃ) বলেন : আসর দ্বারা উদ্দেশ্য : সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়া ও অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী সময় (অর্থাৎ আসরের সময়)।
  • ৩. প্রসিদ্ধ তাবেয়ী মুকাতিল (রহঃ) বলেন : আসর দ্বারা উদ্দেশ্য আছরের সালাত। কেননা এটা এমন একটি সালাত যা সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

এ আসরের শপথ করে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন : সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। অর্থাৎ যতক্ষণ মানুষ জীবিত থাকে ততক্ষণ দুনিয়ার পেছনে পড়ে দীন ও আখিরাত সম্পর্কে গাফেল হয়ে নিজেকে জাহান্নামের দিকে ঢেলে দেয়। এ ক্ষতিগ্রস্তের বিভিন্ন স্তর রয়েছে : কেউ সর্বস্ব ক্ষতিগ্রস্ত। যেমন যার ইহকাল ও আখিরাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার কেউ কোন দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত, তাই আল্লাহ তা‘আলা সব মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত বলে সম্বোধন করেছেন, তবে যারা চারটি বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ তারা ব্যতীত।

  • (১) যারা প্রকৃত ঈমানদার,
  • (২) যারা সৎ আমলকারী,
  • (৩) যারা মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করে,
  • (৪) দীনের পথে যাবতীয় দুঃখ কষ্ট ও মসিবতে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেয়।

সুতরাং যারা এ চারটি বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ তারা দুনিয়া ও আখিরাতের সকল ক্ষতিগ্রস্ততা থেকে মুক্ত। আমাদের উচিত এ চারটি বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হয়ে সকল প্রকার ক্ষতি থেকে মুক্ত হয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা অর্জন করা।

সূরা হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

সুরা আসরের তাফসির

  • ১. সূরাটির গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হলাম।
  • ২. চারটি বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মু’মিন ছাড়া প্রত্যেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।
  • ৩. মানুষ আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কোন বস্তুর নামে শপথ করতে পারবে না।
  • ৪. নিজে সৎ আমল করতে হবে, সেই সাথে অন্যদেরও সৎ আমলের দিকে আহ্বান করতে হবে। শুধু নিজে সৎ আমল করব, অন্যকে আহবান করব না তা যেমন অনুচিত তেমনি অন্যকে সৎ আমলের দিকে আহ্বান করব, কিন্তু নিজে করব না তা-ও অনুচিত।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

3 thoughts on “সুরা আসরের তাফসির | সুরা আছরের গুরুত্ব ও ফজিলত

  1. আস সালামু আলাইকুম কেমন আছেন

    1. ওয়ালাইকুমুসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ৷ আলহামদুলিল্লাহ ৷ আপনি কেমন আছেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *