ইল্লাল্লাহ জিকির জায়েজ কিনা? কালেমা তাইয়্যেবার দাবি

ইল্লাল্লাহ জিকির জায়েজ কিনা? কালেমা তাইয়্যেবার দাবি

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! কেমন আছেন? আজ কথা বলবো বিতর্কিত একটা বিষয় নিয়ে ৷ ইল্লাল্লাহ জিকির জায়েজ কিনা? পুরো আর্টিকেল না পড়ে সিদ্ধান্ত নিবেন না ৷ মন্তব্যও করবেন না ৷ পুরোটা পড়ুন ৷ সংশয় কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ ৷

আল্লাহর জিকির করতে হবে নীরবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আপনি আপনার প্রভুকে সকাল-সন্ধ্যায় আপন মনে অত্যন্ত বিনীত ও ভীত সন্ত্রস্তভাবে স্মরণ করুন, উচ্চ শব্দে নয়’ (আ‘রাফ ২০৫)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমাদের প্রভুকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে এবং সংগোপনে ডাক’ (আ‘রাফ ৫৫)। একদা এক সফরে সাহাবীগণ আওয়াজ করে তাসবীহ পাঠ করলে রাসূল (ছাঃ) তাদের চুপে চুপে তাসবীহ পাঠ করতে বলে বলেন ‘তোমরা এমন সত্তাকে ডাকছ যিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩০৩)

আরও পড়ুনঃ পীর ধরা কি ফরজ? 

জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত

জিকির শব্দের অর্থ কোনো কিছু স্মরণ করা, বর্ণনা করা, মনে রাখা বা মনে করা ইত্যাদি। জিকরুল্লাহ বলতে আল্লাহকে স্মরণ করা, আল্লাহর কথা বর্ণনা করা, আল্লাহকে মনে রাখা বোঝায়। মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত আমাদের স্রষ্টাকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করা। অথচ আমরা খুব কমই স্রষ্টাকে স্মরণ করি এবং কৃতজ্ঞতা কমই প্রকাশ করি। স্রষ্টাকে স্মরণের অনেক রকম অবলম্বন রয়েছে। এসবের মধ্যে জিকির, হোক মনে মনে কিংবা মুখে মুখে, হচ্ছে একটি উপায়। যার মাধ্যমে আমরা স্রষ্টাকে দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে ফাঁকেই স্মরণ করতে পারি। প্রতিদিনের আমলের খুব বড় একটা অংশ হচ্ছে জিকির বা অনবরত পাঠ। জিকিরের অনেক বেশি ফজিলত রয়েছে।

দুনিয়ার বস্তুগত সামগ্রিক বিষয়ের মধ্যে জিকিরের গুরুত্ব অনেক বেশি। রাসূল সা: বলেন, ‘দুনিয়াটা অভিশপ্ত এবং এর মধ্যস্থিত সব কিছুই অভিশপ্ত। তবে আল্লাহর জিকির, জিকিরের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়, আলেম (জ্ঞানী) ও জ্ঞানার্জনকারী (অভিশপ্ত নয়)’ (সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব-৭৪)। আল্লাহর জিকির ছাড়া বাকি সব কিছুকেই অভিশপ্ত, সুবহান আল্লাহ। আল্লাহকে যদি কেউ মন দিয়ে ডাকে তবে সেই ডাকে নিশ্চয়ই কোনো গাফিলতি বা ভ্রষ্টতা থাকে না। আর এর জন্যই দুনিয়ার যাবতীয় সব বিষয় থেকে জিকির একটি শ্রেষ্ঠ কাজ।

আল্লাহ তাআলার স্মরণই হচ্ছে জিকির। তা হতে পারে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে, হতে পারে তাসবিহ-তাহলিলের মাধ্যমে, হতে পারে দান খয়রাতের মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলাকে যে যেভাবে স্মরণ করবে আল্লাহ তাআলাও তাঁর বান্দাকে সেভাবে স্মরণ করবে। কুরআন ও হাদিসে তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায়।

১. আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে, জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ (সুরা রাদ : আয়াত ২৮)

২. হজরতআবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন: বান্দা আমার ব্যাপারে যেমন ধারণা করবে তেমনি আমাকে পাবে। আমাকে যখন সে স্মরণ করে আমি তার সঙ্গে থাকি। সে যদি আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে তাহলে আমিও তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি। আর যদি সে আমাকে কোনো জনগোষ্ঠির নিকট স্মরণ করে তাহলে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম জনগোষ্ঠির নিকটে স্মরণ করি। সে যদি আমার দিকে অর্ধ হাত এগিয়ে আসে তাহলে আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে আসি। আর যদি সে এক হাত এগিয়ে আসে তাহলে আমি তার দিকে হস্তদ্বয় প্রসারিত পরিমাণ এগিয়ে আসি। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে তাহলে আমি তার দিকে দ্রুত হেঁটে আসি। (বুখারি ও মুসলিম)

৩. অন্য হাদিসে হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাঁর রবকে স্মরণ করে আর যে স্মরণ করে না, তাদের উদাহরণ হলো জীবিত ও মৃত ব্যক্তির ন্যায়। (বুখারি)

আরও পড়ুনঃ ইসলামে সংসার বৈরাগীর বিধান 

কালেমা তাইয়্যেবার মূল বক্তব্য

কালেমার অর্থ হল : “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। হযরত মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর রসূল।” এই কালেমার মূল কথা তাগুতকে অস্বীকার করা। লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ্। লা : নাই, ইলাহ : কোন ইলাহ, ইল্লা : ব্যতিত (ছাড়া) আল্লাহ : আল্লাহ।

তাহলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কথার মূল অর্থ কি হল ? মূল অর্থ কি এই হল যে, তুমি আল্লাহকে চিন না তাকে চিনে নাও ? অবশ্যই নয় । কারণ আল্লাহকে সকলেই জানে এবং আল্লাহ বলে মানে। এমন নাস্তিক খুবই কম, যে আল্লাহর অস্তিত্বই স্বীকার করে না। মক্কার কাফেরগণ আল্লাহকে স্বীকার করতো, আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করার জন্য মূর্তি পূজা করতো। এ কথা কুরআনে বহুবার বলা হয়েছে।

‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র মূল কথা হল ‘ইলাহ’। অর্থাৎ ইলাহ হিসাবে একমাত্র আল্লাহকেই মানতে হবে। অন্য কাউকে ইলাহ মানা যাবে না, এমনকি নবীকেও নয়। ইলাহ হিসাবে যে ব্যক্তি কেবল আল্লাহকেই বাস্তবে মানবে অন্য কাউকে নয়, সে-ই প্রকৃত মুসলিম । অপর দিকে যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্য কাউকে ইলাহ হিসাবে মানবে সে মুসলমান থাকবে না। ‘ইলাহ’ শব্দটি যেহেতু কালেমার মূল কথা সুতরাং যারা মুসলমান হতে বা থাকতে চায় তাদেরকে অবশ্যই “ইলাহ” শব্দের অর্থ ঠিক ঠিকভাবে বুঝতে এবং হৃদয়ঙ্গম করতে হবে, অন্যথায় কালেমা বুঝা যাবে না ।

ইল্লাল্লাহ জিকির জায়েজ কিনা? কালেমা তাইয়্যেবার দাবি
ইল্লাল্লাহ জিকির জায়েজ কিনা? কালেমা তাইয়্যেবার দাবি

কালেমা যদি বুঝাই না হয় তাহলে কালেমা মানার প্রশ্ন অবাস্তব। আমি কারো সাথে একটি চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করেছি, কিন্তু চুক্তিপত্রে কি লেখা আছে আমি পড়ি নাই, বুঝি নাই বা জানি না অথবা চুক্তি পত্রে লেখা আছে এক কথা, আমি ধারণা করেছি অন্য কথা। এ অবস্থায় আমার দ্বারা কি করে এ চুক্তি রক্ষা হতে পারে । অতএব ইলাহ শব্দের অর্থ পরিষ্কার না হলে, কালেমার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে আমি কি চুক্তি করেছি আমি বুঝবোও না মানতেও পারবো না।

সাধারণত লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর অর্থ করা হয় আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। ইলাহ যেমন আরবী মা’বুদও তেমনি আরবী শব্দ। কাজেই আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই বললে অর্থ ভুল হয় না কিন্তু কালেমা বুঝা হয় না। ফলে সমস্যা আপন স্থানেই রয়ে যায়। ইলাহ শব্দের অর্থ কি ? তাহলে ইলাহ শব্দের দু’টি প্রধান অর্থ :

  • (১) যার হুকুম মানা হয়, যার আইন মানা হয় সে-ই ইলাহ হয়।
  • (২) যার উপাসনা করা হয়, যাকে সিজদা করা হয়, যার নিকট প্রার্থনা করা হয় সে ইলাহ হয়।

এখানে দু’টি কথা একটি হল কমাণ্ড (হুকুম) অপরটি সারেণ্ডার বা সেলুট। অর্থাৎ কমাণ্ড যার মানতে হবে মাথাও তার কাছেই নত করতে হবে। অপর দিকে যার পদতলে মাথানত করা হবে, হুকুম ও আইন- বিধান একমাত্র তারই মানতে হবে। তাহলে-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্-এর পরিষ্কার অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহ ছাড়া কারো আদেশ-নিষেধ, আইন-বিধান কিছুই মানা যাবে না এবং আল্লাহ ছাড়া কারো নিকট মাথা নত করা যাবে না। কাউকেও সিজদা করা যাবে না, কারো নিকট প্রার্থনাও করা যাবে না। যদি এই দু’টি অধিকারের কোন একটি অন্য কাউকে দেয়া হয়, তবে তার কালেমা পড়ার কোন অর্থ থাকে না। যে এমনটি করে সে প্রকৃত মুসলমানও হয় না।

প্রশ্ন জাগে আল্লাহর হুকুম আইন বিধান কোথায় পাওয়া যাবে ? কোন্ নিয়মে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে হবে, কিভাবে তাঁর জিকির-আজকার করা যাবে ? এখানে এসে বলা হলো মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ। অর্থাৎ এই দু’টি কাজের নিয়ম একমাত্র আল্লাহর থেকেই নিতে হবে, কিন্তু যে কেউ এসে বলবে এটা আল্লাহর বিধান সুতরাং এটা অনুসরণ কর, তা মানা যাবে না, এ ক্ষেত্রে আল্লাহর নবী রসূলগণই হলেন তাঁর প্রেরিত প্রতিনিধি। তিনি যেটাকে আল্লাহর বিধান বলবেন সেটাই আল্লাহর বিধান। তিনি যেভাবে আল্লাহর বন্দেগী ও প্রার্থনা শিক্ষা দিবেন বা দিয়েছেন সেটাই আল্লাহর অনুমোদিত নিয়ম, বিধান বা শরীয়ত। এর বাইরে আল্লাহর অনুমোদিত কোন বিধান নেই । নবী রসূলগণই একমাত্র এই অধিকার প্রাপ্ত।

শেষ জামানায় হযরত মুহাম্মাদ (স) হলেন একমাত্র সেই অধিকারপ্রাপ্ত রসূল। কাজেই ‘মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’র অর্থ হল— তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বিধান দিয়েছেন সেটাই আল্লাহর বিধান। এই বিধানের ব্যাখ্যা তিনি যেটা দিয়েছেন সেটাই প্রকৃত ব্যাখ্যা । আল্লাহর বন্দেগী করার যে নিয়ম পদ্ধতি তিনি শিক্ষা দিয়েছেন সেটাই ইবাদাত বন্দেগীর বিধান। কিয়ামত পর্যন্ত তিনিই একমাত্র আল্লাহর মনোনীত রসুল। তিনি শেষ নবী, তারপর আর কোন নবী আসবে না।

অতএব “লা-ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ” এই কালেমার অর্থ হল : আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, হযরত মুহাম্মাদ (স) তাঁর নবী এবং রসূল। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কারো আইন, হুকুম, বিধান মানি না এবং মুহাম্মাদ (স) ছাড়া অপর কারো তরিকা মানি না। বিধান ও হেদায়াত সংক্রান্ত ব্যাপারে কুরআন ও মুহাম্মাদ (স) ছাড়া কিছু বা কাউকে মানি না। এটাই হল কালেমায়ে তাইয়্যেবার মূল কথা।

কাজেই ধর্মীয় হোক, সামাজিক হোক, অর্থনৈতিক হোক, রাজনৈতিক হোক, হোক বিচার, যুদ্ধ, ব্যবসা সহ মানব জীবনের যে কোন বিষয়, বিধান হবে একমাত্র আল্লাহর, আর মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (স) একমাত্র এই বিধান মত পথ প্রদর্শক। তাই আল্লাহ বলেন :

وَ مَا یَنۡطِقُ عَنِ الۡہَوٰی ؕ﴿۳﴾ اِنۡ ہُوَ اِلَّا وَحۡیٌ یُّوۡحٰی ۙ﴿۴﴾

 

“মুহাম্মাদ (স) মন মত কিছু বলেন না, যেটা তাঁর নিকট অহি করা হয় ওটাই তিনি বলেন।” (সূরা নাজম : ৩-৪)

অতএব স্বয়ং নবী যেখানে নিজের মনগড়া কথা বলতে পারেননি সেখানে অন্য কোন মানুষের কথায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রশ্নই উঠতে পারে না।

কালেমায়ে তাইয়্যেবার এই দাবী পূর্ণ না করলে মুসলমান হওয়া বা থাকা সম্ভব নয়। যুগে যুগে দেখা গেছে একদল লোক রাজা, বাদশা বা শাসক রূপে মানুষের উপর তাদের রচিত আইন বিধান প্রয়োগ করেছে। কেউ পুরোহিত, পাদ্রী, আলেম, পীর, অলি, দরবেশ রূপেও মানুষের উপর ধর্মীয় বিধান প্রয়োগ করেছে। কেউবা বাপ-দাদার প্রথা, সমাজের প্রথা, দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতির নামে মানুষের উপর বিধান প্রয়োগ করেছে। এরই যেকোন রকম বিধান মানুষের উপর চালু করে যারাই শাসন করেছে, হুকুম চালিয়েছে, কর্তৃত্ব করেছে বা করবে তাদেরকেই বলা হয় তাগুত; আর মুসলিম বা মু’মিন হওয়ার জন্য প্রথম নম্বর শর্ত হল এই তাগুতকে অস্বীকার করা। সেই তাগুত নফস, মাতা- পিতা, রাজা-বাদশা, পীর সাহেব, মৌলভী সাহেব, নেতা সাহেব যেই হউক তাকে অস্বীকার করতে হবে। অন্যথায় ঈমান হবে না। মুখে যত লক্ষ বারই কালেমা পড়া হোক তাতে যায় আসে না।

সকল নবী ও রসূলগণ সর্বপ্রথম তাগুতকে অস্বীকার (কালেমার মাধ্যমে) করেছেন বলেই সকল যুগের তাগুতী শক্তি নবীদের বিরোধিতায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে এবং সর্বরকম তাগুতী শক্তি এই বিরোধিতার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সর্বযুগের তিনটি বড় বড় কায়েমী স্বার্থ (তাগুত) একযোগে নবীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে।

  • (১) রাজনৈতিক কায়েমী স্বার্থ-শক্তির জোরে যারা মানুষের উপর শাসন ও শোষণ চালায়,
  • (২) ধর্মীয় কায়েমী স্বার্থ-ধর্মের নামে মানুষকে মানসিক গোলাম বানিয়ে যারা জনগণের অর্থ শোষণ করে ও সেবা আদায় করে,
  • (৩) অর্থনৈতিক কায়েমী স্বার্থ—সুদ, মদ, জুয়া, অশ্লীলতা সহ সর্বরকম হারাম ব্যবসা ও শোষণ চালিয়ে যারা মানুষের রক্ত শোষণ করে এবং সম্পদ কুক্ষিগত করে।

নবীগণের দাওয়াত এদের শোষণের বিরুদ্ধে যায় বলে তারা সর্ব যুগেই নবীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অত্যাচারে শামিল হয়েছে। আজও এই তিনটি তাগুতী শক্তি ইসলামের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জুলুম নির্যাতন চালায়। পূর্বেও এরা ধর্মের নামে নবীদের বিরোধিতা করেছে, বর্তমানেও তাই করে । ভবিষ্যতেও এদের ভূমিকা ব্যতিক্রম হবার নয়। এ জন্য আল্লাহ সকল তাগুতী শক্তিকে অস্বীকার করা মু’মিন হওয়ার শর্ত করে দিয়েছেন ।

ইল্লাল্লাহ শব্দের অর্থ কি

এটি কালেমায়ে তাইয়েবার দ্বিতীয় অংশ, যার অর্থ ‘আল্লাহ ব্যতীত’। এটি অসম্পূর্ণ ও অর্থহীন একটি বাক্যাংশ। মূলতঃ ‘আল্লাহু’ ‘আল্লাহু’ বা ‘ইল্লাল্লাহ’ শব্দে কোন যিকির নেই। উক্ত মর্মে যে হাদীছটি রয়েছে তার অর্থ হল ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (আহমাদ হা/১৩৮৬০; হাকেম হা/৮৫১২; মিশকাত হা/৫৫১৬; ছহীহাহ হা/৩০১৬)।

ইল্লাল্লাহ জিকির করা কি জায়েজ?

না, ইল্লাল্লাহ এ জিকির হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয় নি। রাসূল (সা.) অথবা সাহাবা একরাম এটি করেছেন, এই মর্মে কোনো প্রমান পাওয়া যায় নি। এটা একেবারেই নতুন আবিষ্কৃত বিষয়, বেদাত। ইল্লাল্লাহ অর্থ হলো গাইরুল্লাহ। এর মানে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু। কেন আপনি আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুকে আহ্বান করবেন। এটা রাসূল (সা.) এর জিকিরের তরিকার মধ্যে নেই।

সুতরাং, ইল্লাল্লাহ জিকির জায়েজ নেই। যেমন, লা ইলাহা মানে কোনো ইলাহা নেই। এটাও করা যাবে না। ভগ্নাংশ করে যে জিকির করা হয়, সেই জিকির জায়েজ নেই।

ইল্লাল্লাহ জিকিরের দলিল

ইল্লাল্লাহ জিকির জায়েজ করার জন্য অনেকে অনেক দলিল হাজির করেন ৷ সবগুলোই ব্যাকরণগত ৷ কেউই সরাসরি কুরআন ও হাদীস থেকে ইল্লাল্লাহ জিকিরের স্বপক্ষে কোনো দলীল হাজির করতে পারেন না ৷ কুরআন সুন্নাহর কোথাও ইল্লাল্লাহ জিকির করতে বলা হয়নি ৷ নবীজি সা. ইল্লাল্লাহ জিকির করেননি ৷ সাহাবারা রা. করেননি ৷ আপনার সেটা করতেই হবে? সর্বোচ্চ এটাকে ব্যাকরণের মারপ্যাঁচে ফেলে জায়েজ করা যায় ৷ কিন্তু জায়েজ কাজে তো সাওয়াব পাওয়া যাবে না ৷

আমরা রাসুল সা. থেকে নির্দেশিত নয় কিন্তু কুরআন সুন্নাহর বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ ও যুগের চাহিদার আলোকে অনেক কিছুই ব্যবহার করি ৷ সেগুলো সওয়াবের নিয়তে না ৷ প্রয়োজনে ৷ সওয়াবের নিয়তে ইবাদত হিসেবে ইসলামে নতুন কোনো আবিষ্কারই বিদআদ ৷ এ ব্যাপারে সাবধানতা জরুরি ৷

কেউ দলীল দাঁড় করান কুরআনের এ আয়াতটি—

اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّا اللّٰہَ ؕ اِنَّنِیۡ لَکُمۡ مِّنۡہُ نَذِیۡرٌ وَّ بَشِیۡرٌ ۙ﴿۲﴾
(এ মর্মে) যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করো না। নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য তাঁর পক্ষ থেকে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা। [সূরা হুদ: ২]

উক্ত আয়াতে ‘ইল্লাল্লাহ’ বলে যিকির করতে বলা হয়নি। বরং আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করতে নিষেধ করা হয়েছে।

এটা দিয়ে ইল্লাল্লাহ জিকিরের দলীল দেয়া পাগলামি ছাড়া কিছু? কমনসেন্স কাজে লাগান ৷ এতটা অন্ধভক্ত হবেন না ৷ এটি তাওহীদের কালেমা। এখানে হেরফের করতে পারলেই শয়তানের ব্যবসা সফল। আর পুরা বাক্য বলতে এতো অসুবিধা লাগে কেনো? রাসুল সা. এর নিয়মিত তাসবীহ ও জিকিরের শব্দ ও বাক্য কি আমাদের কাছে পৌছে নাই? এসব আলীমুল্লিসান থেকে উম্মতের সাবধানতা কামনা করি। তা না হলে আল্লাহর সাথে যে ব্যবসা তাতে পুরাই ভরাডুবি হবে। এমন জিকির মোটেও জায়েজ হবেনা- আল্লাহু আ’লাম।

عن عمران بن حصين، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أخوف ما أخاف عليكم جدال المنافق عليم اللسان».[صحيح] – [رواه ابن حبان]

‏حَدَّثَنَا ‏ ‏أَبُو سَعِيدٍ ‏ ‏حَدَّثَنَا ‏ ‏دَيْلَمُ بْنُ غَزْوَانَ عَبْدِيٌّ ‏ ‏حَدَّثَنَا ‏ ‏مَيْمُونٌ الْكُرْدِيُّ ‏ ‏حَدَّثَنِي ‏ ‏أَبُو عُثْمَانَ النَّهْدِيُّ ‏ ‏عَنْ ‏ ‏عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ‏ ‏رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ‏ ‏أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏قَالَ ‏ ‏إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي كُلُّ مُنَافِقٍ عَلِيمِ اللِّسَانِ ‏
[মুসনাদে আহমাদ: ১৪৩]

আমার উম্মতের জন্যে আলীমুল্লিসানই সব চেয়ে বেশী ভয়ানক। অর্থাৎ শেষ জামানায় বিশেষ বিশেষ পদবী ও নামধারী এমন সব আলীমুল্লিসান আসবে যারা আসলে মুনাফিক কিন্তু জবানে এমন এমন কথা বলবে মনে হবে যেন খুব জানে। অথচ তারা মুনাফেক। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন ৷

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

আজ কথা বলেছি ইল্লাল্লাহ জিকির জায়েজ কিনা? এটা নিয়ে ৷ বলেছি ইল্লাল্লাহ জিকিরের দলিল ৷ আরও বলেছি
ইল্লাল্লাহ জিকির কি জায়েজ? ইল্লাল্লাহ জিকির চরমোনাই ৷
ইল্লাল্লাহ জিকির করা কি জায়েজ ৷ ইল্লাল্লাহ জিকির করা যাবে কিনা ৷

ইল্লাল্লাহ জিকির জায়েজ কিনা? কালেমা তাইয়্যেবার দাবি
ইল্লাল্লাহ জিকির জায়েজ কিনা? কালেমা তাইয়্যেবার দাবি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *