কোরবানির গোশত বণ্টনের সঠিক নিয়ম | মাওলানা দীদার মাহদী

কোরবানির গোশত বণ্টনের সঠিক নিয়ম

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক আপনাদের ঈদ উল আযহার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ৷ আশা করছি অত্যন্ত আনন্দের সাথে ঈদ উদযাপন করছেন ৷ অথবা অপেক্ষায় আছেন ঈদুল আযহা উদযাপন এর জন্য ৷ আজ আমরা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আলোকপাত করার প্রয়াস চালাবো ইনশাআল্লাহ ৷ আর সেটি হচ্ছে কোরবানির গোশত বণ্টনের সঠিক নিয়ম ৷

আরও পড়ুনঃ কোরবানীর ঈদের নামাজের নিয়ম

কোরবানির গোশত বণ্টনের সঠিক নিয়ম

আমরা যারা কুরবানী করার নিয়তে পশু ক্রয় করেছি ৷ তারা অবশ্যই এই বিষয়ে খুব মনোযোগের সাথে খেয়াল রাখব ৷ ইসলামী শরিয়া যেভাবে কুরবানীর গোশত বন্টন করার পদ্ধতি চালু করেছে ৷ আমরা সেই নিয়ম কে ফলো করে কোরবানির পশুর গোশত বন্টন করব ইনশাআল্লাহ ৷ ধৈর্য সহকারে শেষপর্যন্ত পড়ুন ৷ আশা করছি কোরবানির গোশত সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন আপনাদের বাকি থাকবে না ইনশাল্লাহ ৷

কুরবানি দেয়ার পর গরুর মাংস বন্টন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কুরবানির মাংস যদি সঠিকভাবে বন্টন করা না যায় তবে কুরবানি কবুলের শর্ত পূরণ হবে না। তাই মাংস বন্টনের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে।

আরও পড়ুনঃ কুরবানীর গুরুত্ব ও ফজিলত

কোরবানির শরিকের নিয়ম

কুরবানীর পশুতে শরীকের নিয়ম
কুরবানীর পশুতে শরীকের নিয়ম

কুরবানির ক্ষেত্রে একটি প্রসিদ্ধ মাসআলা হলো এক পশুতে কয়েকজন শরীক থাকার সুযোগ আছে ৷ এক্ষেত্রে গরু মহিষ ও উটে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারবে ৷ তবে সাতজন হওয়াটা জরুরী নয় ৷ একের অধিক সাত পর্যন্ত শরিক হতে পারবে ৷ দুইজন, তিনজন, চারজন, পাঁচজন বা ছয় জন কুরবানী দিতে পারবে ৷ তবে কারো অংশ একের নিচে থাকতে পারবে না ৷ অর্থাৎ দুইজন মিলে এক ভাগ রাখার কোন সুযোগ নাই ৷

শরিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষণীয় ৷ যে ব্যক্তির অন্তরে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভিন্ন অন্য উদ্দেশ্যে কুরবানী করে ৷ যেমন গোশত খাওয়া বা লোকদেখানো ইত্যাদি নিয়তে কোরবানি করে ৷ তাকে অংশীদার বানিয়ে কোন পশু কুরবানী করলে সকল অংশীদারের কোরবানি নষ্ট হয়ে যাবে ৷ তাই শরিক নির্বাচনের সময় খুবই সতর্ক থাকতে হবে ৷ শরিকদের মধ্যে যদি কারো সমস্ত বা অধিকাংশ ইনকাম হারাম হয় তবুও বাকিদের কুরবানী শুদ্ধ হবে না ৷

কুরবানির পশু ক্রয় করার সময় ক্রেতার ইচ্ছে ছিল না শরিক রাখার ৷ পরে যদি সে অন্য শরিক গ্রহণ করতে চায় ৷ এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো ক্রেতা গরীব হলে পারবে না ৷ অন্যথায় পারবে ৷ এর কারণ হলো গরিব ব্যক্তির উপর কোরবানি ওয়াজিব নয় ৷ সে কুরবানির নিয়ত করে পশু ক্রয় করার কারণে তার পশুটা কুরবানী করাই ওয়াজিব হয়ে গিয়েছে ৷

কোরবানির গোশত ভাগ করার নিয়ম

কোরবানির গোশত বণ্টনের সঠিক নিয়ম
কোরবানির গোশত বণ্টনের সঠিক নিয়ম

একটি পশুতে একাধিক শরিক থাকলে গোস্ত বন্টনের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে ৷

  • অংশীদারগণ গোশত অনুমান করে বন্টন করবে না ৷ বরং বাটখারা দিয়ে ওজন করে বন্টন করতে হবে ৷ অন্যথায় ভাগের মধ্যে কম বেশি হয়ে গেলে গুনাগার হতে হবে ৷
  • অবশ্য কোন অংশীদার মাথা পা ইত্যাদি বিশেষ কোনো অংশ গ্রহণ করলে তার ভাগে গোশত কিছু কম হলেও তা দুরস্ত আছে ৷ কিন্তু যে ভাগে গোশত বেশি সে ভাগে মাথা পা ইত্যাদি বিশেষ অংশ দেয়া যাবে না  ৷
  • অংশীদারগণ সকলে যদি সম্পূর্ণ গোশত দান করে দিতে চায় বা সম্পূর্ণটা রান্না করে খাওয়াতে চায় ৷ তাহলে বন্টনের প্রয়োজন নাই ৷ তবে জোরপূর্বক তাদের থেকে কোন অংশ নেয়া দুরস্ত হবে না ৷
  • কুরবানির গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই ৷
  • কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয।

কোরবানির গোশত বণ্টন হাদীস

কোরবানির গোশত বণ্টনের হাদীস
কোরবানির গোশত বণ্টনের হাদীস

সালামাহ ইবনু আকওয়া’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত :

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের যে লোক কোরবানি করেছে, সে যেন তৃতীয় দিনে এমন অবস্থায় সকাল অতিবাহিত না করে যে, তার ঘরে কোরবানির গোশত কিছু থেকে যায়।

পরবর্তী বছর আসলে, সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা কি তেমন করব, যেমন গত বছর করেছিলাম? তখন তিনি বললেনঃ তোমরা নিজেরা খাও, অন্যকে খাওয়াও এবং সঞ্চয় করে রাখ, কারণ গত বছর মানুষের মধ্যে ছিল অনটন। তাই আমি চেয়েছিলাম, তোমরা তাতে সহযোগিতা কর।

[মুসলিম ৩৫/৫, হাঃ ১৯৭৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৫৮)

কোরবানির গোশত তিন ভাগ করা যায়। একভাগ নিজেদের ও একভাগ প্রতিবেশীদের যারা কুরবানী করেনি এবং এক ভাগ ফকীর-মিসকীনদের। প্রয়োজনে বণ্টনে কমবেশী করাতে কোন দোষ নেই ৷

(সুবুলুস সালাম শরহ বুলূগুল মারাম ৪/১৮৮; আল-মুগনী ১১/১০৮; মির‘আত ২/৩৬৯; ঐ, ৫/১২০ পৃঃ)।

কোরবানির গোশত কতদিন রাখা যায়

কোরবানির গোশত কতদিন রাখা যায়
কোরবানির গোশত কতদিন রাখা যায়

মহান আল্লাহর বাণী:

“অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুঃস্থ অভাবীকে আহার করাও”। [সূরা হাজ্জ, আয়াত: ২৮]

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন:

“তখন তোমরা তা থেকে খাও এবং আহার করাও এমন দরিদ্রকে যে ভিক্ষা করে এবং এমন দরিদ্রকে যে ভিক্ষা করে না। এভাবে আমরা সেগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর”। [সূরা হাজ্জ, আয়াত: ৩৬]

সালামা বিন আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা খাও, খাওয়াও এবং সংরক্ষণ করে রাখ”। [সহিহ বুখারী]

হাদিসে ‘খাওয়াও’ কথাটি ধনীদেরকে কোরবানির গোশত হাদিয়া দেয়া এবং দরিদ্রদেরকে দান করাকে অন্তর্ভুক্ত করবে।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা খাও, সংরক্ষণ করে রাখ এবং দান কর”। [সহিহ মুসলিম]

  • কোরবানির গোশত নিজে খাওয়া ৷ পরিবারবর্গ কে খাওয়ানো ৷ আত্মীয়স্বজনকে দেয়া এবং গরিব মিসকিন কে দেয়া যায় ৷
  • মুস্তাহাব ও উত্তম হল কুরবানীর গোশত ৩ ভাগ করে একভাগ নিজেদের জন্য রাখা ৷ এক ভাগ আত্মীয়স্বজনকে দেয়া ৷ এবং এক ভাগ গরিব মিসকিন কে দান করা ৷
  • মানতের কুরবানীর গোশত হলে নিজে খেতে পারবে না এবং ধনীকেও দিতে পারবে না ৷ বরং পুরোটাই গরীব মিসকিনদের কে দান করে দেয়া ওয়াজিব ৷
  • যদি কোন মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর পূর্বে কোরবানির জন্য ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে সেই কোরবানির গোশত মানতের কোরবানির গোশতের মতোই পুরোটাই দান করা ওয়াজিব ৷
  • কুরবানী গোশত বা বিশেষ কোনো অংশ যেমন মাথা পারিশ্রমিক দেয়া জায়েয নয় ৷
  • কুরবানী গোশত শুকিয়ে ফ্রিজে রেখে দীর্ঘ দিন খাওয়াতে কোন অসুবিধা নাই ৷

শেষ কথাঃ

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

ফেসবুকে আমরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *