নামাজের নিয়ত করা কি ফরজ | মাওলানা দীদার মাহদী

নামাজের নিয়ত করা কি ফরজ

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ! সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ! আমাদের ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছা নিন ৷ আজ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টপিকে কথা বলতে চলেছি ৷ নামাজের নিয়ত করা কি ফরজ? আমরা নামাজের ভেতরে এবং বাহিরে সাত ফরজ ছোটবেলায় মুখস্থ করেছি ৷ নামাজের বাহিরে সাত ফরজ পড়তে গিয়ে আমরা শিখেছি নামাজের নিয়ত করা ৷ আবার বাক্যটি খেয়াল করুন নামাজের নিয়ত করা

পড়েছেন এটি? ঈদে মিলাদুন্নবি পালন করা কী? 

বাজারে প্রচলিত অনেক নামাজ শিক্ষা বইয়ে নামাজের নিয়ত আরবি বাংলায় উচ্চারণ এবং অর্থ দেয়া আছে ৷ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ অন্যান্য নামাজের নিয়ত করার ক্ষেত্রে এই আরবি নিয়তগুলো পড়া অনেকে জরুরি মনে করেন ৷ যদ্দরুন অনেকেই এতগুলো নিয়ত মুখস্থ করে ঠিকঠাক মতো পড়তে না পারার কারণে নামাজই পড়েন না ৷

আজ আমরা জানবো এভাবে আরবীতে নিয়ত করা জরুরি কিনা শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন ইনশাআল্লাহ ৷

নামাজের নিয়ত করা কি ফরজ

ইমানের পর ইসলামের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আমল হল সালাত বা নামাজ। নামাজ ইসলামের প্রাণ। মুমিন এবং কাফেরের মাঝে বড় পার্থক্য হল নামাজ। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ছাড়াও নফল নামাজ পড়ার বিধান ইসলামী শরিয়তে রয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত করার জন্য নিয়ত করা অবশ্যই ফরজ ৷ অবশ্যই নিয়ত করতে হবে ৷ শুধু নামাজ নয় সকল ইবাদতের ক্ষেত্রেই নিয়ত করা ফরজ ৷

নামাজের নিয়ত করা কি ফরজ
নামাজের নিয়ত করা কি ফরজ

নামাজের নিয়ত করা কি বেদাত?

নামাজের নিয়ত নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন। কেউ কেউ মনে করেন, নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে করতে হয়।

শুধু সালাত নয়, যেকোনো ইবাদতের নিয়ত করাই ফরজ। যদি নিয়ত না করে থাকেন, তাহলে ইবাদতই হবে না। প্রত্যেকটা ব্যক্তি সেই সওয়াব পাবে যেটার জন্য সে নিয়ত করেছে। নিয়ত না করলে আপনি কিছু পাবেন না। সুতরাং, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিয়ত ছাড়া ইবাদতই হবে না। কিন্তু নিয়ত বলতে আপনি যে ফরম্যাটের কথা বুঝিয়েছেন, সে ফরম্যাট বা কাঠামো রাসুল (সা.)-এর হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি। প্রায় সমস্ত ওলামায়ে কেরাম বলেছেন যে, এই ধরনের নিয়ত করা বেদাত। কারণ, সুন্নাহ দ্বারা এই ধরনের নিয়ত সাব্যস্ত হয়নি। অন্তরের ইচ্ছে প্রকাশ করাই হলো নিয়ত। এর জন্য ভাষার কোনো প্রয়োজন নেই।

নামাজের শুরুতে নিয়ত পাঠ করা সঠিক কি না?

‘আন নিয়্যাতু’ (النية) একটি আরবি শব্দ। তার বাংলা অর্থ – ইচ্ছা করা, সংকল্প করা, প্রতিজ্ঞা করা ইত্যাদি।

পরিভাষায় নিয়ত বলা হয় – যে কোনো ইবাদতের জন্য নিজের ইচ্ছা ও মনকে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির প্রতি ধাবিত করা।
ফুকাহায়ে কেরাম এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেন যে, নিয়তের স্থান হচ্ছে অন্তর। অর্থাৎ যে আমলটি করার জন্য বান্দা উদ্যত হবে সেই আমলটির চেতনা অন্তরে বিদ্যমান থাকার নামই হচ্ছে নিয়ত।

আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে নবী! (আপনি বলে দিন, তোমরা মনের কথা গোপন করে রাখ অথবা প্রকাশ করে দাও, আল্লাহ সে সবই জানতে পারেন। আর আসমান জমিনে যা কিছু আছে সে সবই তিনি জানেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।” (সূরা আল ইমরান- ২৯)

সুতরাং নিয়ত পাঠ করতে হবে না ৷ বরং নিয়ত হচ্ছে মনের ব্যাপার ৷ মনের সাথে সংশ্লিষ্ট ৷

নিয়ত কি নামাজের জন্য শর্ত

উমার বিন খাত্তাব রা. বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, হে লোক সকল! কাজ-কর্মের ফলাফল দৃঢ় সংকল্পের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিটি মানুষের ভাগ্যে তাই জুটবে যা সে নিয়ত বা সংকল্প করেছে। (সহীহ বুখারী, হা- ৬৪৭০)

এই হাদিসের আলোকে আমরা জানতে পারি যে যেকোনো নেক সৎকাজের ক্ষেত্রে নিয়ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল ৷ যে যেই উদ্দেশ্যে যেই নিয়তে কাজ করবে সে সেই নিয়তের সুফল পাবে ৷ যদি কোন কাজ ভালো নিয়তে করা হয় তার সুফল ও ভালো হবে ৷ আর যদি কোন কাজ খারাপ নিয়তে করা হয় ৷ হোক কাজটি ভালো তবুও তার ফলাফল শূন্য হবে ৷ নেকির কাজে নিয়ত তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৷ সুতরাং সালাতের ক্ষেত্রেও নিয়ত করতে হবে নিয়ত পড়তে হবে না ৷

নিয়ত না করে নামাজ পড়লে কি আদায় হবে?

নামাজের নিয়ত যেহেতু ফরজ সুতরাং মনে মনে নামাজের সংকল্প করতে হবে ৷ নিয়ত করতে হবে ৷ এটা ফরজ ৷ এই ফরজ যদি কেউ আদায় না করে তাহলে তার নামাজ হবে না ৷ তবে নিয়ত পড়তে গিয়ে আমরা যেন রাকাত হারিয়ে না ফেলি ৷

এমন দেখা যাচ্ছে যে, কিছু মানুষ নামাজের মাসাইল না জানার কারণে নামাজে এমন কিছু ভুল করছে যার দ্বারা তার নামাজ যাচ্ছে বিফলে।

যেমন- ইমাম সাহেব নামাজ আরম্ভ করে প্রথম রাকাতের ক্বেরাত শেষ করে রুকুতে যাওয়ার পথে ৷ এমন সময় একজন মুসাল্লী এসে কাতারে দাঁড়ালো ৷ এবং সে নামাজের নিয়ত আরবী হোক বা বাংলা হোক পড়ছে ৷ আর সেদিকে ইমাম সাহেব রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবীহ শান্তভাবে পড়ে দাঁড়িয়ে গেলেন।

ঐ হতবাগা মুসাল্লীর কপালে এই রাকাত আর পাওয়া হল না!

এখানে চাইলে মুসাল্লী ঐ রাকাত পেয়ে যেতেন ৷ যদি উনি বাংলা হোক বা আরবী হোক মুখে বলা নিয়ত কে প্রাধান্য না দিতেন।

কিন্তু উনি মনে করছেন নিয়ত যদি আমি মুখে বলে না করি তাহলে মনে হয় আমার নামাজ শুদ্ধ হবে না।

জানার অভাব, তাই আমরা এই বিষয়ে সতর্ক থাকতাম।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

নামাজের নিয়ত করা কি ফরজ
নামাজের নিয়ত করা কি ফরজ

One thought on “নামাজের নিয়ত করা কি ফরজ | মাওলানা দীদার মাহদী

  1. আপনাদের আর্টিকেল পড়ে আমি খুব উপকৃত হলাম। নামাজ সম্পর্কে অনেক খুটিনাটি বিষয় জানতে পারলাম যা আমি পূর্বে জানতাম না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *