নারীরা মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারবে? মাহরাম ছাড়া নারীদের ভ্রমণের বিধান

নারীরা মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারবে?

আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ৷ আজ আমরা গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিকে আলোচনা করব ৷ নারীরা মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারবে কিনা? এই নিয়ে অনেকের মাঝে দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করে ৷ এই মাসআলাটা কোরআন এবং সুন্নাহমত জানা উচিত ৷ অনেককেই মাহারম ছাড়া ভ্রমণ করতে দেখা যায় ৷ এটা কতটুকু কোরআন সুন্নাহ সম্মত তা আপনাদের জানানোর জন্যই আজকের এই আর্টিকেল ৷ মাহরাম ছাড়া হজ করা যাবে কিনা? এ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা থাকছে আমাদের বক্ষমান নিবন্ধে ৷ শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই থাকুন ৷

আরও পড়ুনঃ দাড়ি রাখার বিধান

নারীরা মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারবে?

শরীয়তের বিধান হলো মহিলাদের জন্য তার মাহরাম পুরুষ ব্যতীত ৪৮ মাইল বা তদাপেক্ষা বেশী দুরুত্বের সফর করা জায়েয নয়। এর কম হলে জায়েয আছে । তবে সর্বাবস্থায় মাহরাম পুরুষের সাথে সফর করাই উত্তম। আর গাইরে মাহরামদের সাথে সফর করা মারাত্তক গোনাহ।হাদীসে মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের সফরের ব্যপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। -বুখারী শরীফ হা: নং১০৮৬,ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২।

মৃত মা-বাবার জন্য করণীয় কী?

সফর কমপক্ষে ৭৮ কিলোমিটারের চেয়ে কম হলে মহিলাগণ পর্দার সাথে একা একা সফর করতে পারবে। ৭৮ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি হলে স্বামী বা মাহরাম ছাড়া কারো সাথে বা একা সফর করা জায়েজ নয়। {আহসানুল ফাতওয়া-৪/৯৫}

নারীরা মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারবে? মাহরাম ছাড়া নারীদের ভ্রমণের বিধান
নারীরা মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারবে? মাহরাম ছাড়া নারীদের ভ্রমণের বিধান

عن أبي سعيد الخدري قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا يحل لإمرأة تؤمن بالله واليوم الآخر أن تسافر سفرا يكون ثلاثة أيام فصاعدا إلا ومعها أبوها أو ابنها أو زوجها أو أخوها أو ذو محرم منها

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তাআলা এবং কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান রাখে এমন কোন মহিলার জন্য জায়েজ নয়, তিন দিন বা এর চেয়ে অধিক দিনের সফর করে অথচ তার সাথে তার পিতা, তার ছেলে, বা তার স্বামী বা তার ভাই কিংবা কোন মাহরাম না থাকে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪২৩}

 

فى الدر المختار- ومع زوج او محرم ولو عبدا (الى قوله) لامرأة حرة ولو عجوزا في سفر

وفى رد الرد المحتار-هو ثلاثة أيام ولياليها فيباح لها الخروج إلى ما دونه لحاجة بغير محرم بحر (رد المحتار-كتاب الحج-2/157)

وكذا فى النهر الفائق-2/58-59)

যার সারকথা হলো, শরীয়তের বিধান হলো মহিলাদের সাথে তার স্বামী বা মাহরাম ব্যক্তি থাকতে হবে। কোন নারী থাকলে বা গায়রে মাহরাম কেউ থাকলে হবে না। মহিলাদের মাহরাম ঐ সকল ব্যক্তিদের বলা হয়, যাদের সাথে আজীবন বিবাহ নিষিদ্ধ। যেমন- পিতা, দাদা, ছেলে, নাতি, ভাগিনা, মামা, ভাই, ভাতিজা, শ্বশুর, চাচা, মেয়ের জামাই প্রমূখ।

মাহরাম ছাড়া নারীদের সফর করা যাবে?

ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামি শরিয়তের সাধারণ বিধান হচ্ছে— স্বামী বা মাহরাম ছাড়া একাকী সফর করা নারীদের জন্য বৈধ নয়। যদি ৪৮ মাইল (৭৭ কিলোমিটার) বা তার বেশি দূরত্বে সফর হয়, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত পুরুষদের থেকে নিজের কোনো মাহরাম আত্মীয় বা স্বামী সঙ্গে না থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো নারীর জন্য সফর করা জায়েজ নেই।

নারীর মাহরাম ছাড়া ভ্রমণ কি বৈধ

ইসলাম নারীকে মাহরাম ছাড়া দূরের কোনো সফরে বা ভ্রমণে যাওয়ার অনুমতি দেয় না। তা হোক দেশে কিংবা দেশের বাইরে। বরং নারীদের জন্য একাকী দূরের সফর বা ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ। এ জন্যই নারীদের ফরজ হজ আদায়ের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় একটি শর্ত বেশি দেওয়া হয়েছে।

নারীরা মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারবে?

মাহরাম ছাড়া নারীর হজের বিধান
মাহরাম ছাড়া নারীর হজের বিধান

সফরে তাকে অবশ্যই মাহরাম নিয়ে সফর করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সফরের দূরত্বে কোনো নারীর জন্য জায়েজ নেই তিনি একাকী সফর করতে পারবেন, তার বয়স ত্রিশ বা চল্লিশ হোক। কারণ এখানে তার জীবনের সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয় জড়িত।

মুসলিম নারীর একাকী সফরের বিধান

ইসলাম নারীর মর্যাদা ও সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। তাই যেখানে তাদের সম্মান বা সুরক্ষা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেখানে বিশেষ বিধান দিয়ে সম্মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই বিবেচনায় ইসলামের বিধান হলো, মাহরাম ছাড়া একাকী সফর করা নারীদের জন্য বৈধ নয়। যাদের সঙ্গে চিরতরের জন্য বিবাহ অবৈধ, তাদের মাহরাম বা এগানা বলা হয়। এ ছাড়া অন্যদের গায়র মাহরাম বা বেগানা বলা হয়।

শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে নারীরা মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারবে কি?

অনেক মেয়ে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেন ৷ এক জেলা থেকে তাদের অন্য জেলায় যেতে হয় ৷ গ্রাম থেকে ঢাকা আসতে হয় ৷ এক্ষেত্রে নারীকে মাহরাম ব্যতীত সফর করতে না দেওয়া ইসলামের ব্যাপক এক কুশলী বিধান। মাহরাম পুরুষ এজেন্যেই সঙ্গে থাকবে হবে, যেন সে তাকে লোলুপ ও পাপাচারীদের থেকে সংরক্ষণ করতে ও নিরাপত্তা দিতে পারে । মাহরাম কোন পুরুষ তাদের সাথে না থাকলে দুশ্চরিত্রের লোকদের মনে তাদের প্রতি কুচিন্তা জাগ্রত হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এভাবে তারা তাদের পিছু নিতে পারে। আর নারীরা তো প্রকৃতিগতভাবেই দুর্বল। তারা তাদের মান, ইযযত, আব্রু নিয়ে সামান্যতেই বিব্রত বোধ করে। এমতাবস্থায় দুষ্টলোকেরা তাদের পিছু নিলে বাধা দেওয়া বা আত্মরক্ষামূলক কিছু করা তাদের জন্য কষ্টকর তো বটেই।

হাদীস শরীফে এসেছে, ইবনে আববাস রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী করীম ﷺ বলেছেন,

لاَ تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ إِلاَّ مَعَ ذِي مَحْرَمٍ، وَلاَ يَدْخُلُ عَلَيْهَا رَجُلٌ إِلاَّ وَمَعَهَا مَحْرَمٌ ‏”‏‏.‏ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَخْرُجَ فِي جَيْشِ كَذَا وَكَذَا، وَامْرَأَتِي تُرِيدُ الْحَجَّ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ اخْرُجْ مَعَهَا

কোনো মহিলা তার মাহরাম ব্যতিরেকে সফর করবে না এবং কোনো পুরুষ মাহরাম ছাড়া কোনো মহিলার নিকট যাবে না। অতপর এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক সৈন্যদলের সাথে জিহাদে যেতে চাই আর আমার স্ত্রী হজ্বে যেতে চায়। নবী করীম ﷺ বললেন, তুমিও তার সাথে হজ্বে যাও। (সহীহ বুখারী ১৭৪০)

উক্ত হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, মাহরাম ব্যতীত সফর করতে না পারার এই হুকুম সকল প্রকার সফরের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য; এমনকি হজ্জের সফরের ক্ষেত্রেও।

সুতরাং যে সব মেয়ে হোস্টেল থাকে তাদের ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হল, তার মাহরাম তাকে হোস্টেল পৌঁছে দেবেন। আবার যখন ফেরার প্রয়োজন পড়বে, তখন মাহরামের সঙ্গে তিনি সফর করবেন। কিন্তু মাহরাম ছাড়া সফর করার অনুমতি শরিয়তে কোনভাবেই দেয় না। আর শরিয়তের বিধান মানার মাঝেই রয়েছে কল্যাণ ও নিরাপত্তা।

মাহরাম ছাড়া নারীরা হজ করতে পারবে কি?

নারীদের হজ পালনে ইমামদের বক্তব্য- ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, নারীর হজ ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত হলো ‘মাহরাম’। মাহরাম না থাকলে সম্পদ যতই থাকুক না কেন, নারীর ওপর হজ ফরজ হবে না।’ (বাদায়িউস সানা)

মাহরাম ও গাইরে মাহরাম কারা?

মাহরাম শব্দটি আরবী হারাম শব্দ থেকে এসেছে। ইসলামী পরিভাষায় মাহরাম দ্বারা বুঝায়, যাদেরকে বিবাহ করা হারাম বা অবৈধ এবং দেখা করা বা দেখা দেওয়া জায়েয বা বৈধ। পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য মাহরাম হলেন ১৪ জন।

মোটকথা নারীদের মাহরাম ছাড়া একাকী ৪৮ মাইল দূরত্বের সফর করা জায়েজ নয়

পুরুষের জন্য মাহরাম

পুরুষরা যেসব নারীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন; তারা হলেন-

তারা হলেন- মায়ের সমপর্যায়ের ৫ জন

১. মা

২. ফুফু (বাবার বোন)

৩. খালা (মায়ের বোন)

৪. শাশুড়ি ( স্ত্রী এর মা )

৫. দুধ-মা (যে মা ছোট বেলায় দুধ খাইয়ে ছিলেন)

বোনের সমপর্যায়ের ৫ জন

৬. নিজের বোন

৭. নানি (মায়ের মা)

৮. দাদি (বাবার মা)

৯. নাতনি (আপন ছেলে ও মেয়ের কন্যা)

১০. দুধ-বোন

মেয়ের সমপর্যায়ের ৪ জন

১১. মেয়ে

১২. ভাতিজি (আপন ভাই-এর মেয়ে)

১৩. ভাগ্নি (আপন বোনের মেয়ে)

১৪. ছেলের বউ

এসব ব্যক্তি ছাড়া পুরুষরা বাকি সবার সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। তবে স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় স্ত্রীর আপন বোনকে বিয়ে করা যাবে না। আবার তার সঙ্গে দেখাও করা যাবে না।

পুরুষের জন্য গায়রে মাহরাম

পুরুষরা যেসব নারীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন না; তারা হলেন-

১. মায়ের খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুপাতো বোন

২. চাচাতো বোন

৩. ভাবি

৪. বাবার খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুপাতো বোন

৫. চাচি

৬. ফুপাতো বোন

৭. খালাতো বোন

৮. মামাতো বোন

৯. শ্যালক/শ্যালিকার মেয়ে (স্ত্রীর (ভাতিজি/ভাগ্নি) ভাই-বোনের মেয়ে)

১০. শ্বশুর/শাশুড়ির বোন (ফুফু শাশুড়ি/খালাশ শাশুড়ি)

১১. শ্যালিকা (স্ত্রীর বোন)

১২. মামি

১৩. স্ত্রীর খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুপাতো বোন

১৪. স্ত্রীর ভাবি

১৫. মেয়ের ননদ

১৬. ছেলে/মেয়ের শাশুড়ি

১৭ ৷ পরনারী

নারীর জন্য মাহরাম

তারা হলেন- বাবার সমপর্যায়ের ৪ জন

১. বাবা

২. চাচা

৩. মামা

৪. শ্বশুর

ভাইয়ের সমপর্যায়ের ৫ জন

৫. সহোদর ভাই

৬. নিজ দাদা

৭. নিজ নানা

৮. নিজ নাতি

৯. দুধ-ভাই

ছেলের সমপর্যায়ের ৫ জন

১০. ছেলে

১১. ভাইয়ের ছেলে

১২. বোনের ছেলে

১৩. মেয়ের জামাই

১৪. দুধ-ছেলে

নারীর জন্য গায়ের মাহরাম

নারীরা যেসব পুরুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন না; তারা হলেন-

১. মায়ের খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুপাতো ভাই

২. চাচাতো ভাই

৩. দুলাভাই (বোনের স্বামী)

৪. বাবার খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুপাতো ভাই

৫. ফুফুর স্বামী (ফুফা)

৬. ফুফাতো ভাই

৭. খালাতো ভাই

৮. মামাতো ভাই

৯. ননদের ছেলে

১০. শ্বশুর/শাশুড়ির ভাই (চাচা শ্বশুড়/মামা শ্বশুড়)

১১. দেবর/ভাসুর (স্বামীর ছোট ও বড় ভাই)

১২. ননদের স্বামী (স্বামীর ছোট বোনের স্বামী)

১৩. স্বামীর খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুফাতো ভাই

১৪. স্বামীর দুলাভাই (স্বামীর বড় বোনের স্বামী)

১৫. ছেলের শ্যালক (ছেলের স্ত্রীর ছোট ভাই)

১৬. ছেলে/মেয়ের শ্বশুর

১৭. খালার স্বামী (খালু)

১৮ ৷ পরপুরুষ

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

নারীরা মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারবে? মাহরাম ছাড়া নারীদের ভ্রমণের বিধান
নারীরা মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারবে? মাহরাম ছাড়া নারীদের ভ্রমণের বিধান

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *