শাওয়ালের ছয় রোজার গুরুত্ব | শাওয়াল মাসের রোজা রাখার নিয়ম
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! সবাইকে অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা ৷ পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা শেষে আমাদের মাঝে ঈদুল ফিতরের আনন্দ শেষ হয়ে শাওয়াল মাস চলছে ৷ শাওয়াল মাসের বিশেষ একটি আমল হচ্ছে ছয় রোজা পালন শাওয়ালের ছয় রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি ৷ হাদিস শরীফে এসেছে যে ব্যক্তি শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখবে সে পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে ৷ সুতরাং এমন একটি ইবাদত, এমন একটি আমল করার জন্য অনেকেই শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হয়েছেন ৷ শাওয়ালের রোজা রাখার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান ৷ আমরা শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ ৷
আরও পড়ুনঃ মৃত মা-বাবার জন্য করণীয় আমল
শাওয়ালের ছয় রোজার গুরুত্ব | শাওয়াল মাসের রোজা রাখার নিয়ম
রমজানের দীর্ঘ এক মাস রোজা পালন করে ঈদের আনন্দ উদযাপনের পর পর শাওয়াল মাসে ৬টি রোজা রাখলেই রোজাদার পেয়ে যাবেন পূর্ণ এক বছর রোজা রাখার সওয়াব। হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনায় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কত চমৎকার ঘোষণাই না দিলেন, সুবহানাল্লাহ!
শাওয়ালের ৬ রোজায় তারাই সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে যারা রমজানের রোজা রেখেছেন। কেননা আল্লাহ তাআলা রমজানের রোজার প্রতিদানে দেবেন ১০মাস রোজা রাখার সওয়াব আর রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ৬ রোজা রাখায় দেবেন ২ মাস রোজা পালনের সওয়াব। তাই যারা রমজানের রোজা রাখার পর পর শাওয়ালের ৬ রোজা রাখবেন, তাদের জন্য রয়েছে পুরো বছরজুড়ে সওয়াব পাওয়ার হাতছানি।
শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে হাদিস
আরবি হাদিস
عَن أَبي أَيُّوبَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتّاً مِنْ شَوَّالٍ، كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ». رواه مسلم
বাংলা অনুবাদঃ আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমযানের রোজা পালনের পর শওয়াল মাসের ছয়দিন রোজা রাখল, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল।” [মুসলিম ১১৬৪, তিরমিযি ৭৫৯, আবু দাউদ ২৪৩৩, ইবন মাজাহ ১৭১৬, আহমদ ২৩০২২, ২৩০৪৪, দারেমি ১৭৫৪]
শাওয়াল মাসের রোজার ফজিলত
রমজানের সিয়াম পালনের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নত-মুস্তাহাব; ফরজ নয়। শাওয়াল মাসে ছয়দিন রোজা রাখার বিধান রয়েছে। এ রোজা পালনের মর্যাদা অনেক বড়, এতে প্রভূত সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি এ রোজাগুলো পালন করবে সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল। এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আবু আইয়ুব (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।”[সহিহ মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, জামে তিরমিজি, সুনানে নাসায়ী ও সুনানে ইবনে মাজাহ]
এ হাদিসকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য বাণী দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের পরে ছয়দিন রোজা রাখবে সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল:যে ব্যক্তি একটি নেকি করবে সে দশগুণ সওয়াব পাবে।”অন্য বর্ণনাতে আছে- “আল্লাহ এক নেকিকে দশগুণ করেন। সুতরাং এক মাসের রোজা দশ মাসের রোজার সমান। বাকী ছয়দিন রোজা রাখলে এক বছর হয়ে গেল।”[সুনানে নাসায়ী, সুনানে ইবনে মাজাহ]
হাদিসটি সহিহ আত-তারগীব ও তারহীব (১/৪২১) গ্রন্থেও রয়েছে। সহিহ ইবনে খুজাইমাতে হাদিসটিএসেছে এ ভাষায়- “রমজান মাসের রোজা হচ্ছে দশ মাসের সমান। আর ছয়দিনের রোজা হচ্ছে- দুই মাসের সমান। এভাবে এক বছরের রোজা হয়ে গেল।”
আরও পড়ুনঃ দাড়ি রাখা কি সুন্নত নাকি ওয়াজিব?
শাওয়ালের ছয় রোজা
হাম্বলি মাযহাব ও শাফেয়ি মাযহাবের ফিকাহবিদগণ স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন যে, রমজান মাসের পর শাওয়াল মাসে ছয়দিন রোজা রাখা একবছর ফরজ রোজা পালনের সমান। অন্যথায় সাধারণ নফল রোজার ক্ষেত্রেও সওয়াব বহুগুণ হওয়া সাব্যস্ত। কেননা এক নেকিতে দশ নেকি দেয়া হয়।
এ ছাড়া শাওয়ালের ছয় রোজারাখার আরও ফায়দা হচ্ছে- অবহেলার কারণে অথবা গুনাহর কারণেরমজানের রোজার উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে সেটা পুষিয়ে নেয়া।কেয়ামতের দিন ফরজ আমলের কমতি নফল আমল দিয়ে পূরণ করা হবে।
যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন মানুষের আমলের মধ্যে সর্বপ্রথমনামাযের হিসাব নেয়া হবে।তিনি আরো বলেন: আমাদের রব ফেরেশতাদেরকে বলেন –
অথচ তিনি সবকিছু জানেন- তোমরা আমার বান্দার নামাযদেখ; সেকি নামায পূর্ণভাবে আদায় করেছে নাকি নামাযে ঘাটতি করেছে। যদি পূর্ণভাবে আদায় করে থাকে তাহলে পূর্ণ নামায লেখা হয়। আর যদি কিছু ঘাটতি থাকে তখন বলেন: দেখ আমার বান্দার কোন নফল নামায আছে কিনা? যদি নফল নামায থাকে তখন বলেন: নফল নামায দিয়ে বান্দার ফরজের ঘাটতি পূর্ণ কর। এরপর অন্য আমলের হিসাব নেয়া হবে।[সুনানে আবু দাউদ]
শাওয়ালের ৬ রোজা রাখার নিয়ম
এই ছয়টি রোজা শাওয়াল মাসের যেকোনো দিন থেকে শুরু করা যায়। এর কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নেই, বরং শাওয়ালের প্রথম দিন ঈদুল ফিতরের দিনটি বাদ দিয়ে শাওয়ালের যেসব দিনে খুশি, সেসব দিনে ছয়টি রোজা রাখলেই হাদিসে বর্ণিত ফজিলত পাওয়া যাবে।
হাদিসে প্রিয়নবী (স.) শাওয়াল মাসের প্রথম দিকে, মধ্যভাগে বা শেষাংশে নির্দিষ্ট করে রোজা রাখার কথা বলেননি। আবার রোজা ছয়টি লাগাতার রাখার নির্দেশনাও দেননি। তাই বিজ্ঞ ফিকহবিদ ও আলেমদের অভিমত হলো—
ঈদের দিনটি বাদ দিয়ে শাওয়াল মাসের যেকোনো ছয়দিনে রোজা রাখলেই উল্লিখিত সওয়াব লাভ করা যাবে। সুতরাং ধারাবাহিকভাবে রাখার ক্ষেত্রে যখন থেকে খুশি শুরু করা যাবে, আবার বিরতি দিয়ে দিয়ে ছয়টি রোজা পূরণ করতে পারলেও হাদিসে বর্ণিত সওয়াব পাওয়া যাবে।
মনে রাখতে হবে, শাওয়ালের ৬ রোজায় বছরজুড়ে রোজা রাখার ফজিলত ওই ব্যক্তির জন্যই কার্যকর হবে, যে ব্যক্তি রমজান মাসজুড়ে ফরজ রোজা আদায় করেছেন, একইসঙ্গে শাওয়ালের রোজাও পালন করেন।
শাওয়াল মাসে বিয়ে করা কি সুন্নত
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ কোনও মাস বা দিনে বিয়ে করতে উৎসাহিত করেন নি বা এজন্য নির্দিষ্ট কোনও সময়-ক্ষণকে উত্তম বলেন নি। তবে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি আয়েশা রা. কে শাওয়াল মাসে বিয়ে করেছেন। যেমন: উরওয়া রা. হতে বর্ণিত, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন,
تَزَوّجَنِي رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي شَوّالٍ، وَبَنَى بِي فِي شَوّالٍ، فَأَيّ نِسَاءِ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ أَحْظَى عِنْدَهُ مِنِّي؟
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শাওয়াল মাসেই বিয়ে করেছেন এবং শাওয়াল মাসেই আমার বাসার করেছেন। সুতরাং তার নিকটে আমার চেয়ে অধিক সৌভাগ্যবতী স্ত্রী আর কে আছে?” [সহীহ মুসলিম, হাদিস ১৪২৩]
মা আয়েশা. এর এ কথার উদ্দেশ্য কি?
এ কথার উদ্দেশ্য হল, জাহেলি যুগের মানুষের এই ধারণা ছিল যে, শাওয়াল মাসে বিবাহ-শাদির অনুষ্ঠান অশুভ ও অকল্যাণকর। তিনি কথার মাধ্যমে এ ভিত্তিহীন ধারণাকে খণ্ডন করেছেন। (শারহে মুসলিম ৯/২০৯)
বাস্তবতা হল, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মা আয়েশা রা. কে যেমন শাওয়াল মাসে বিয়ে করেছেন তেমনি অন্যান্য মাসে অন্যান্য স্ত্রীদেরকে বিয়ে করেছেন। যদি শাওয়ামাধ্যমে বিয়ে করা সুন্নত হত তাহলে সবগুলো বিয়ে তিনি এ মাসে করার চেষ্টা করতেন বা উম্মতকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। আর সাহাবিগণও এ মাসেই বিয়ে করার চেষ্টা করতেন-যেহেতু তারা ছিলেন সুন্নাহ পালনে সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু হাদিসে এমন কিছু সাব্যস্ত হয় নি।
শেষ কথা
সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷