মৃত পিতা মাতার জন্য করণীয় আমল | মাওলানা দীদার মাহদী

মৃত পিতা মাতার জন্য করণীয় আমল

আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং দোয়া ৷ আজ আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে কথা বলব ৷ মৃত পিতা মাতার জন্য করণীয় আমল ৷ অনেকের মা অথবা বাবা ইন্তেকাল করেছেন ৷ এমন অনেকে আছেন যাদের মা-বাবা কেউ পৃথিবীর বুকে বেঁচে নেই ৷ তাদের জন্য করণীয় আমল সম্পর্কে জানতে চান ৷ এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা হবে ইনশাআল্লাহ ৷

আরও পড়ুনঃ ঈদে মীলাদুন্নবী সা. পালন করা কি? 

মৃত পিতা মাতার জন্য করণীয় আমল

মাতাপিতা জীবিত থাকা অবস্থায় সন্তান তাদের হক আদায় করবেই। অন্তর দিয়ে তাদের খেদমত করবে। এ খেদমতের মধ্যে কোনো ত্রুটি হলো কিনা, সে ব্যাপারে আত্মসমালোচনা করবে। কোনো ত্রুটি চোখে ধরা পড়লে তা দূর করার চেষ্টা করবে। আল্লাহর কাছে সন্তান দোয়া করবে, আল্লাহ এবং তার রাসূল যেভাবে মাতাপিতার হক আদায় করতে বলেছেন, সেভাবে সে যেন হক আদায় করতে পারে। পৃথিবী থেকে মাতাপিতা বিদায় নেয়ার পরও সন্তান মাতাপিতা সম্পর্কে উদাসীন থাকবে না।

হযরত আবু উসাউদ রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন- আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো- হে আল্লাহর রাসূল! মাতাপিতার মৃত্যুর পরও কি এমন কোনো পদ্ধতি সম্ভব যে, আমি তাদের সাথে সুন্দর আচরণ অব্যাহত রাখতে পারি? নবীজি বললেন, হ্যাঁ। তুমি মাতা-পিতার জন্য দোয়া এবং ইসতিগফার করবে, তাদের কৃত ওয়াদাসমূহ এবং বৈধ ওসিয়ত পূরণ করবে, পিতার বন্ধু-বান্ধব এবং মাতার বান্ধবীদের সম্মান-মর্যাদা দেবে, তাদের প্রতি যত্ন নেবে এবং তাঁদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় ও সুন্দর আচরণ করবে, যারা মাতা-পিতার দিক থেকে তোমাদের আত্মীয় হন।

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন- মৃত্যুর পর যখন মৃত ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় তখন সে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে- এটা কেমন করে হলো? তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বলা হয় যে, তোমার সন্তানরা তোমার জন্য দোয়া ও মাগফিরাত কামনা অব্যাহত রেখেছে এবং আল্লাহ তা কবুল করে নিয়েছেন । হযরত আবু হুরায়রা আল্লাহর রাসূল থেকে বর্ণনা করেছেন- যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায় তখন তার আমলের সুযোগ শেষ হয়ে যায়। শুধু তিনটি বস্তু এমন যা তার মৃত্যুর পরও উপকার করতে থাকে। প্রথম ছাদকায়ে জারিয়া । দ্বিতীয় তার বিস্তৃত সেই ইলম বা জ্ঞান যা থেকে মানুষ উপকৃত হয় এবং তৃতীয় সেই নেক সন্তান যারা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।

মৃত মা বাবাকে নিয়ে স্ট্যাটাস

হযরত ইবনে শিরীন (রাহ) একজন প্রসিদ্ধ বুজর্গ তাবেয়ী ছিলেন। তিনি একটি কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, একরাতে আমরা হযরত আবু হুরায়রার খিদমতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি দোয়ার জন্য হাত তুললেন এবং বিনয়ের সাথে বললেন, হে আল্লাহ! আবু হুরায়রাকে ক্ষমা করো, আমার মা’কে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! তাদের সবাইকে ক্ষমা করো, যারা আমার ও আমার আম্মার ক্ষমার জন্য দোয়া করে,। হযরত ইবনে শিরীন বলেন, আমরা আবু হুরায়রা এবং তাঁর মাতার পক্ষে ক্ষমার দোয়া করতে থাকি যাতে আমরা আবু হুরায়রার দোয়ায় সামিল থাকি

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতা ইন্তেকাল করেছেন এবং তিনি কোনো ওসিয়াত করে যাননি। আমি যদি তাঁর তরফ থেকে কিছু সাদকা করি তাহলে কি তাঁর কোনো উপকারে আসবে? আল্লাহর নবী বললেন, অবশ্যই উপকারে আসবে।

হযরত আবদুল্লাহ বর্ণনা করেছেন, হযরত আসয়াদ ইবনে উবাদাহ নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আবেদন করলেন- হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতা মানত করেছিলেন। কিন্তু এ মানত আদায়ের পূর্বেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে এ মানত পুরো করতে পারি? নবীজী বললেন, কেন নয়, তুমি তাঁর পক্ষ থেকে মানত পুরো করে দাও।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পিতার বন্ধুদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা সবচেয়ে সুন্দর আচরণ। হযরত আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং অসুস্থতা বৃদ্ধি পেতে থাকলো এমনকি জীবিত থাকারআর আশা রইলো না । সে সময় হযরত ইউসুফ ইবনে আবদুল্লাহ অনেক দূর থেকে তাঁর সেবার জন্য এসে উপস্থিত হলেন। হযরত আবু দারদা তাকে দেখে আশ্চর্য। হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এখানে কি করে এলে? ইউসুফ ইবনে আবদুল্লাহ বললেন, শুধু আপনার সেবার জন্যই আমি এখানে উপস্থিত হয়েছি। কেননা আমার শ্রদ্ধেয় পিতা এবং আপনার মধ্যে গভীর সম্পর্ক ছিল ।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু একবার সফরে ছিলেন। এ সময় মক্কার এক গ্রামবাসীর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হলো। গ্রামের লোকটি হযরত ইবনে ওমরকে খুব ভালোভাবে দেখলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন- আপনি কি হযরত ওমরের পুত্র? হযরত ইবনে ওমর জবাব দিলেন-জ্বী হ্যাঁ। আমি তাঁরই পুত্র। এ সময় তিনি নিজের মাথা থেকে পাগড়ী খুলে তাঁকে দিলেন এবং নিজের বাহনের উপর সম্মানের সাথে বসালেন। হযরত ইবনে দিনার বললেন, আমরা সবাই বিশ্বয়ের সাথে এসব দেখতে লাগলাম এবং পরে ইবনে উমরকে বললাম- সে তো একজন গ্রামবাসী। আপনি যদি দু’ দেরহাম নিয়ে নিতেন সেটাই তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য যথেষ্ট হতো। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর বললেন, ভাই তাঁর পিতা আমার পিতার বন্ধু ছিলেন এবং নবীজী বলেছেন, পিতার বন্ধুদেরকে সম্মান করো এবং এই সম্পর্ক নিঃশেষ হতে দিও না। যদি করো, তাহলে আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের আলো নির্বাপিত করে দেবেন।

হযরত আবু বুরদাহ রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেছেন, আমি যখন মদিনায় এলাম তখন আবদুল্লাহ ইবনে ওমর আমার কাছে উপস্থিত হয়ে বলতে লাগলেন, আবু বুরদাহ! তোমার কাছে কেনো এসেছি তা কি তুমি জানো? আবু বুরদাহ বললেন, আমি জানি না। তিনি বললেন, আমি আল্লাহর নবীকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কবরে অবস্থিত নিজের পিতার সাথে সুন্দর আচরণ করতে চায় তার উচিত পিতার মৃত্যুর পর তার বন্ধুদের সাথে সুন্দর আচরণ করা। এরপর তিনি বললেন, তাই! আমার পিতা হযরত ওমর এবং আপনার পিতার মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল । আমি সেই বন্ধুত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনপূর্বক তাঁর হক আদায় করতে চাই।

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি আজীবন মাতাপিতার নাফরমানী। করে এবং তার মাতা-পিতা অথবা তাদের উভয়ের কেউ ইন্তিকাল করেন তাহলে তার উচিত অব্যাহতভাবে মাতা-পিতার জন্য দোয়া ও ক্ষমা চাওয়া । ফলে আল্লাহনিজের রহমতে তাকে নেক লোকদের মধ্যে শামিল করেন। সুতরাং এসব হাদীসের আলোকে নিজের জীবিত বা মৃত পিতামাতার সাথে সন্তানদের আচরণ করতে হবে।

মৃত বাবা মায়ের জন্য দোয়া

মৃত মা বাবার জন্য দোয়া
মৃত মা বাবার জন্য দোয়া

বাবা-মা একজন সন্তানের সবচেয়ে কাছের মানুষ। উভয়ে সম্পূর্ণ আলাদা সত্তা হলেও দুইজন একই সূত্রে গাঁথা। প্রতিটি সন্তানের জীবনে বাবা-মায়ের ভূমিকা অসামান্য। কারও অবদান কারও চেয়ে কম নয়।

আমাদের আশপাশের অনেকের বাবা-মা নেই। তারা পার্থিব জীবন কাটিয়ে অনন্ত জীবনে পাড়ি দিয়েছেন। তাদের বিচ্ছেদ-বেদনায় সন্তনেরা অশ্রুর পানিতে চোখের পাতা ভেজান। কিন্তু শুধু কাঁদলেই কি কি মৃত বাবা-মায়ের আত্মা শান্তি পাবে? নাকি সু-সন্তান হিসেবে তাদের জন্য কোনো দায়িত্ব আছে? তাদের জন্য কি দোয়া করা যায় না?

এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যু বরণ করলে— তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়,তবে তিনটি আমল কখনো বন্ধ হয় না। সাদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান— যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং নেক সন্তান— যে তার মৃত বাবা মায়ের জন্য সবসময় দোয়া এবং আমল করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৩১০)

পবিত্র কোরআন শরিফে স্পষ্টতই বর্ণনা করা হয়েছে, আপনার মৃত বাবা-মায়ের জন্য আপনি কি দোয়া করবেন।

এক. শান্তির দোয়া

মা-বাবার জন্য শান্তির দোয়া করা সন্তানের কর্তব্য। মা-বাবার অবদান ও ভূমিকার বদলা সন্তান জীবনেও আদায় করতে পারবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-

رَبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [الاسراء: ٢٤]

উচ্চারণ : রাব্বির হামহুমা, কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।

অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো; যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৪)

পিতা মাতার জন্য দোয়া বাংলা উচ্চারণ

দুই. ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া

আল্লাহ তাআলা বাবা-মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার দোয়াও শিখিয়ে দিয়েছেন। তিনি পবিত্র কোরআনে বলেন-

رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡحِسَابُ ٤١﴾ [ابراهيم: ٤١]

উচ্চারণ : রাব্বানাগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া, ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্বুমুল হিসাব।

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪১)

পিতা মাতার জন্য দোয়া আরবিতে

তিন. মা-বাবাসহ অন্যদের জন্য দোয়া

উপরেল্লিখিত দোয়া দুইটি ছাড়াও আরও একটা বিশেষ দোয়া রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বান্দাদের শিখিয়েছেন, যেন মৃত বাবা-মায়ের জন্য বিশেষভাবে তারা এই দোয়া করে-

رَّبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيۡتِيَ مُؤۡمِنٗا وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۖ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارَۢا ٢٨ ﴾ [نوح: ٢٨

উচ্চারণ : রাব্বিগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া, ওয়া লিমান দাখালা বাইতিয়া মু’মিনা; ওয়ালিল মু’মিনিনা ওয়াল মু’মিনাত। ওয়ালা তাজিদিজ জা-লিমিনা ইল্লা তাবারা।

অর্থ : ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষদের ক্ষমা করুন এবং আপনি জালিমদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বাড়িয়ে বাড়িয়ে দেবেন না।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ২৮)

মৃত পিতা মাতার জন্য সন্তানের করণীয়

এক. মাতা-পিতার ঋণ ও অসিয়ত পুরো করা

ঋণ পরিশোধ না করা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী শহীদের সব পাপ ক্ষমা করা হলেও অপরিশোধিত ঋণ ক্ষমা করা হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় করতেন না। ঋণ আত্মার প্রশান্তি নষ্ট করে এবং পরকালীন জীবনকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দেয়। তাই সবার ঋণ এড়িয়ে চলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। তার পরও ঋণ হয়ে যেতে পারে। মাতা-পিতার ঋণ থেকে থাকলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাঁদের রেখে যাওয়া সার্বিক সম্পদ থেকে অবশ্যই তা পরিশোধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

এরপর তাঁদের কোনো বৈধ অসিয়ত থেকে থাকলে তাঁদের সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত সে অসিয়ত পুরো করতে হবে। তারপর অবশিষ্ট উত্তরাধিকার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হবে। আল্লাহ বলেন, ‘এসব সে যা অসিয়ত করে তা দেওয়ার এবং ঋণ পরিশোধের পর।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১)

দুই. তাঁদের মাগফিরাত কামনা করা

মাগফিরাত হলো, মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। মৃত ব্যক্তিরা স্বজনদের কাছ থেকে তাঁদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কামনা করে। ক্ষমা প্রার্থনা করার দ্বারা মৃত ব্যক্তিদের মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। এটিই তাঁদের জন্য সর্বোত্তম হাদিয়া। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কবরে একজন মৃত ব্যক্তি অন্ধকারে ডুবন্ত ব্যক্তির মতো। তারা মাতা-পিতা, ভাই ও বন্ধুদের দোয়ার জন্য প্রতীক্ষা করে। যখন তাদের কাছে সে দোয়া পৌঁছে, তখন তা দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে এর চেয়েও বেশি প্রিয় হয়ে যায়।

মহান আল্লাহ কবরবাসীর কাছে পৃথিবীবাসীর দোয়াকে পাহাড়সম বড় করে উপস্থাপন করেন। জীবিতদের পক্ষ থেকে মৃতদের জন্য সর্বোত্তম হাদিয়া হলো তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করা।’ (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৯২৯৫)

তিন. প্রতিনিয়ত দোয়া করা

মৃতদের সম্মান দেওয়ার স্থায়ী পদ্ধতি হলো, আজীবন দোয়ায় তাদের স্মরণ করা। এর জন্য কোনো দিন বা তারিখ নির্দিষ্ট নেই; বরং যখন যেভাবে সুযোগ হয় তখনই তাদের জন্য দোয়া করতে থাকা। মৃত মাতা-পিতার জন্য বিশেষ দোয়া মহান আল্লাহ নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন। দোয়াটি হলো, ‘রব্বির হামহুমা কামা রব্বাইয়ানি সাগিরা।’ অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক, তাদের প্রতি দয়া করো যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৪)

চার. কবর জিয়ারত করা

মাতা-পিতা ইন্তেকাল করলে মাঝেমধ্যে কবর জিয়ারত করা সন্তানদের কর্তব্য। বিশেষভাবে জুমার দিন কবর জিয়ারত সম্পর্কে হাদিসে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। মুহাম্মদ ইবনে নুমান মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমার দিন তার মাতা-পিতা অথবা কোনো একজনের কবর জিয়ারত করে তাকে ক্ষমা করা হয় এবং সে মাতা-পিতার আনুগত্যশীল হিসেবে পরিগণিত হয়।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৭৯০১)

পাঁচ. তাঁদের আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা

মাতা-পিতার মৃত্যুর পর তাঁদের সঙ্গে ভালো আচরণ করার আরেকটি উপায় হলো, তাঁদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ভালো আচরণ করা। মাতা-পিতার কারণে তাদের সম্মান-শ্রদ্ধা ও আদর-আপ্যায়ন করা। আবু উসাইদ মালেক ইবনে রাবিয়া আস-সায়িদি (রা.) বর্ণনা করেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর কাছে ছিলাম। বনু সালিমা গোত্রের এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, মাতা-পিতার মৃত্যুর পর তাঁদের সঙ্গে উত্তম আচরণের কোনো উপায় আছে কি? তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। তাদের জন্য দোয়া করা, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের কৃত অঙ্গীকার পুরো করা, তাদের কারণে যাদের সঙ্গে আত্মীয়তা আছে তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা এবং তাদের বন্ধুদের সম্মান করা।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৪৪)

ছয়. দান-সাদকা করা

মৃত মাতা-পিতার জন্য সন্তানের যেকোনো দান-সদকা তাঁদের সওয়াবের পাল্লা ভারী করে দেয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই কোনো অসিয়ত করতে পারেননি। আমার ধারণা, তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-সাদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে দান-সাদকা করলে তিনি কি এর সওয়াব পাবেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হ্যাঁ।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩২২; মুসলিম, হাদিস : ২৩৭৩)

সাত. অন্য ইবাদত

অন্য ইবাদতের মাধ্যমেও মৃত মাতা-পিতার প্রতি সওয়াব পৌঁছানো যায়। যেমন—নফল নামাজ, রোজা, হজ, ওমরাহ, কোরবানি, ইতিকাফ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির ইত্যাদি। বিশেষ করে তাঁদের নামাজ, রোজা কাজা থাকলে কাফফারা দেওয়া। হজ অনাদায় হয়ে থাকলে সামর্থ্য থাকলে আদায় করা। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, জুহাইনা গোত্রের একজন নারী রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হজ করার মানত করেছিলেন; কিন্তু তিনি হজ না করেই মারা গেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ আদায় করতে পারি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তাঁর পক্ষ থেকে তুমি হজ আদায় করো…’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৫৪)

আট. সর্বোপরি সন্তানদের নেক হয়ে চলতে হবে

নেককার সন্তানই মৃত মাতা-পিতার জন্য সর্বোত্তম সাদকায়ে জারিয়া। সাধারণত নেককারের দোয়া মহান আল্লাহ কবুল করেন। নেককার সন্তানের দোয়া আরো দ্রুত কবুল করবেন—এটাই স্বাভাবিক। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি আমল বন্ধ হয় না। এক. সদকায়ে জারিয়া বা চলমান দান। দুই. এমন জ্ঞান-যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়। তিন. নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৩১০)

মৃত পিতা মাতার নামে কোরবানি

মৃত মানুষের নামে কোরবানি করা মুস্তাহাব। করলে ভালো, উনি সওয়াব পাবেন। এছাড়াও নবীর নামে, আল্লাহর নামে, কোনো নেতার নামে কেউ চাইলে কোরবানি দিতে পারে। এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে এটা দিতে হবে উনাদের পক্ষ থেকে, উনাদের নামে কোরবানি দেয়া যাবে না। নবীর নামে, আল্লাহর নামে, পিতামাতার নামে, এই নাম শব্দটা ব্যবহার করা যাবে না। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বলতে হবে উনাদের পক্ষ থেকে। কোরবানি শুধুমাত্র আল্লাহর নামে হতে হবে, অন্য যে কারো নামেই হোক সেটা হারাম হয়ে যাবে।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

মৃত পিতা মাতার জন্য করণীয় আমল
মৃত পিতা মাতার জন্য করণীয় আমল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *