দাড়ি রাখার বিধান | দাড়ি রাখা সুন্নত নাকি ওয়াজিব

দাড়ি রাখার বিধান | দাড়ি রাখা সুন্নত নাকি ওয়াজিব

আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক! সবাইকে অনেক অনেক মোবারকবাদ ৷ আজ আমরা কথা বলব ইসলামের দাড়ি রাখার বিধান সম্পর্কে ৷ অনেকেই বিভ্রান্তিতে আছেন মূলত দাড়ি রাখা কি? দাড়ি রাখা সুন্নত নাকি ওয়াজিব? দাড়ি রাখার বিধান সম্পর্কে ৷ অনেককে দেখা যায় দাড়ি ছোট ছোট করে খোঁচা খোঁচা করে রাখতে ৷ অনেকে চেঁঁছে ফেলতে দেখা যায় ৷ অনেকে আবার অনেক বড় করে দাড়ি রাখেন ৷ দাড়ি কতটুকু রাখতে হবে? দাড়ি রাখার বিধানই বা কি? এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ ৷ আমাদের সঙ্গেই থাকুন ৷

আরও পড়ুনঃ শিশুদের নাম রাখার ক্ষেত্র ইসলামের নির্দেশনা

দাড়ি রাখার বিধান | দাড়ি রাখা সুন্নত নাকি ওয়াজিব

শরীয়াতের স্তর বিন্যাসের ক্ষেত্রে ইসলামী আইনবীদগণ তথা ফিকাহবীদগণ ফরজ ও ওয়াজিবের পরবর্তী পর্যায়ের করণীয় বহু বিষয়াদিকে সুন্নাত নামে আখ্যায়িত করেছেন। সুন্নাত মুস্তাহাব পর্যায়ের করণীয় নেক কাজগুলো ফরজ ও ওয়াজিবের ক্ষতি পুরণের পক্ষে সহায়ক। ফিকাহবীদগণ ফরজ-ওয়াজিবের পরবর্তী পর্যায়ের কাজগুলোকে আবার দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। তার একভাগ হলো সুন্নাতে মুআক্কাদাহ অর্থাৎ এমন ধরনের সুন্নাত কাজ যা পালন করার জন্য জোর তাকিদ করা হয়েছে।

জামায়াতের সাথে ফরজ নামায আদায় করা, মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা, গোঁফ ছোট করা, পুরুষের খাতনা করা, যথা সময়ে হাত-পায়ের নখ কাটা, পুরুষের নাভীর নীচের পশম পরিষ্কার করা, বোগলের পশম পরিষ্কার করা ইত্যাদী।

এক মুষ্ঠিরও কম পরিমাণ দাড়ি কেটে ছোট করা মাকরুহে তাহরীমী। দাড়ি শুধু নীচের দিকে বৃদ্ধির সুযোগ দিয়ে মুখের দু’পাশ থেকে কেটে ছোট করাও মাঝরুহে তাহরীমী। দাড়িকে বড় হতে দেখা আর গোঁফ ছোট করা সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তোমরা তোমাদের গোঁফ খুব ছোট করবে আর দাড়ি লম্বা করবে। (মুসলিম, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা নং-১২৯)

দাড়ি সম্পর্কে আরো একটি হাদীসে বলা হয়েছে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের গোঁফগুলো খুব ছোট করবে, আর দাড়িগুলো লম্বা করে রাখবে। (এ ব্যাপারে) অগ্নি পূজকদের বিপরীত বলবে। (মুসলিম, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা নং-১২৯)

অর্থাৎ যারা আগুনের পূজা করে তারা গোঁফ বড় করে রাখে এবং দাড়ি ছোট করে অথবা দাড়ি একেবারেই কেটে ফেলে। এ জন্য হাদীসে বলা হয়েছে, তোমরা তাদের বিপরীত করবে। আবার অন্য হাদীসে মুখের দু’দিকের ও নীচের দিকের দাড়ি কেটে ছোট করে রাখার কথা রয়েছে। দাড়ি লম্বা করে রাখা এবং কেটে ছোট করে রাখার উভয় পর্যায়ের হাদীসের ব্যাখ্যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুর আমল সম্পর্কীত হাদীসটি সনদ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে রদ্দুল মোহতার কিতাবের তৃতীয় খন্ডের ৩৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘দাড়ি সম্পর্কে উল্লেখিত হাদীসের বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বিশুদ্ধ সুত্রে বর্ণনা এসেছে যে, তিনি এক মুষ্ঠি থেকে অতিরিক্ত দাড়ি ছেঁটে নিতেন।

তবে এ ক্ষেত্রে এ কথা মনে রাখতে হবে যে, পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুসারী এক শ্রেণির ভোগবাদী পোক ফ্যাশন হিসেবে যেমন ছোট ছোট দাড়ি রাখে, তাদেরকে অনুসরণ করা ইসলামী আইন বিশারদগণের কেউ বৈধ বলে মনে করেননি। এক মুষ্ঠি দাড়ির অতিরিক্ত দাড়ি ছেটে নেয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে আবু দাউদ শরীফের ব্যাখ্যামূলক কিতাব বাজলুল মাজহুদের প্রথম খণ্ডের ৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, যে, আর তা এভাবে করতে হবে যে, পুরুষ লোক তার নিজ দাড়ি হাতের মুঠোয় ধরবে, তারপর মুঠোর বাইরের অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলবে। এমন ধরনের পদ্ধতির বিষয়টি ইমাম মুহাম্মদ (রাহঃ), ইমাম আবু হানিফা (রাহঃ) থেকে কিতাবুল আসারে উল্লেখ করেছেন।

দাড়ি রাখার বিধান

বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফয়জুল বারিতে উল্লেখ আছে- এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাটা সব ইমামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে হারাম (৪/৩৮০)। এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর ইসলামিক স্কলারর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, দাড়ি রাখা ওয়াজিব। এর সর্বনিম্ন পরিমাপ এক মুষ্টি। এক মুষ্টির পর দাড়ি কাটার অনুমতি আছে।

দাড়ি রাখা কি

দাড়ি রাখা ইসলামের শিআর এবং নিদর্শন। এটি সব নবীর সুন্নাত। এটি ভদ্রতা, মহত্ত্ব এবং ইজ্জত ও সম্মানের আলামত। এর মধ্যেই রয়েছে পৌরুষত্বের পরিপূর্ণতা।

দাড়ি রাখা কি ফরজ

দাড়ি রাখা কি ফরজ?
দাড়ি রাখা কি ফরজ?

বিখ্যাত ফকীহ আল্লামা ইবনে আবেদিন শামী বলেছেন- দাড়ি সম্পর্কে মূল কথা হলো, দাড়ি রাখা ওয়াজিব। এর শরয়ি পরিমাপ হলো এক মুষ্টি পরিমাণ। দাড়ি রাখা ইসলামের শিআর এবং নিদর্শন। এটি সব নবীর সুন্নাত।

দাড়ি রাখার বয়স

দাড়ি একেক জনের একেক সময় ওঠে ৷ গড়ে যেহেতু ১৫ / ১৬ বছরে দাড়ি উঠা শুরু হয়, সেহেতু এটাই দাড়ি রেখে দেয়ার বয়স। শুরু থেকেই দাড়ি রাখতে হবে ৷ যখনই দাড়ি গজাবে ৷ দাড়ি গজাতে দিতে হবে ৷ কাটা যাবে না ৷

দাড়ি রাখার উপকারিতা

গবেষকরা বলছেন, দাড়ি কামাতে গিয়ে মুখের চামড়ায় যে হালকা ঘষা লাগে, তা নাকি ব্যাকটেরিয়ার বাসা বাঁধার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। অন্যদিকে দাড়ি নাকি সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে।

এক. দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকে। ফলে ভালোভাবে কোরআন তেলাওয়াত সম্ভব হয়।

দুই. দাড়ি থাকলে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা যায়। অবৈধ কাজে অংশগ্রহণে লজ্জাবোধ হয়।

তিন. মুমিন হিসেবে পরিচিত হওয়া যায়। নতুবা মুমিন-কাফির, পার্থক্য করা কঠিন হয়ে যায়।

চার. অপরিচিত স্থানে মারা গেলে মুসলমান হিসেবে সসম্মানে গোসল ও দাফন-কাফন নসিব হয়।

পাঁচ. হাশরের ময়দানে রাসুলের উম্মত দাবি করা সহজ হবে এবং তাঁর সুপারিশ লাভ সম্ভব হবে।

দাড়ি না রাখার ক্ষতি

ইউনানি চিকিৎসবিজ্ঞান অনেক আগেই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে দাড়ি পুরুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। গলা ও বক্ষকে ঠাণ্ডা ও গরম থেকে রক্ষা করে । আধুনিক ডাক্তারদের মধ্যে একজন লিখেছেন : সব সময় দাড়িতে খুর চালালে চোখের শিরার ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এতে চোখের জ্যোতি ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসে।

অন্য এক ডাক্তার লিখেছেন : দাড়ি জীবাণুকে দাড়ির ভেতরে ঢুকতে প্রতিবন্ধতার সৃষ্টি করে। তাকে গলা, বক্ষ পর্যন্ত অতিক্রম করতে বাধা দেয়। দাড়ি না রাখা যৌনশক্তি শূন্যের কোঠায় পৌঁছে দেয়।

এক ডাক্তার লিখেছেন, যদি সাত প্রজন্ম পর্যন্ত কোনো বংশের পুরুষদের মধ্যে দাড়ি মুণ্ডানোর অভ্যাস চালু থাকে, তাহলে অষ্টম প্রজন্মের সন্তান দাড়িবিহীন হবে। এর কারণ হলো, এর ফলে প্রত্যেক প্রজন্মে যৌনশক্তি হ্রাস পেতে পেতে অষ্টম জেনারেশনে একেবারে শূন্যের কোঠায় পৌঁছে যাবে ।

দাড়ি রাখা সুন্নত নাকি ওয়াজিব

দাড়ি ইসলামের শিআর ও পরিচয়-চিহ্ন হিসেবে গণ্য। দাড়ি লম্বা করা এবং মোচ খাটো করা দ্বীনে তাওহীদের শিক্ষা, যা সকল নবীর শরীয়তে ছিল। দাড়ি লম্বা রাখা ওয়াজিব এবং এক মুষ্ঠি থেকে খাটো করা নাজায়েয। যেহেতু দাড়ি রাখা সকল নবীর পবিত্র রীতি ছিল তাই একে ‘সুন্নত’ও বলা হয়। এতে কারো কারো ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, দাড়ি লম্বা করাও অন্যান্য সাধারণ সুন্নতের মতো একটি সুন্নত। অতএব তা করলে ভালো, না করলেও গুনাহ নেই! এটা একদম ভুল ধারণা। দাড়ি এমন কোনো সুন্নত নয়, যা রাখা-না রাখার স্বাধীনতা রয়েছে, এটা একটা ‘সুন্নতে ওয়াজিবা’। অর্থাৎ সুন্নতে মুয়াক্কাদা থেকেও এর গুরুত্ব বেশি এবং এটা পরিত্যাগ করলে গুনাহ হয়।

দেখুন, দাড়ি কামানো বা এক মুষ্ঠি থেকে ছোট রাখা এমন এক গুনাহ, যা মানুষের সঙ্গে সর্বদা সংযুক্ত থাকে এবং এমন একটি গুনাহ, যা গোপন করারও কোনো উপায় নেই। এটা একটা প্রকাশ্য গুনাহ, যা খুবই ভয়াবহ। তদুপরি দাড়ির সঙ্গে এই আচরণটা করা হয় সুন্নতের প্রতি অনীহা এবং অনৈসলামিক ফ্যাশনের প্রতি আকর্ষণের কারণে। এ অবস্থায় তো ঈমানের ব্যাপারেই শঙ্কিত হতে হয়।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

দাড়ি রাখার বিধান | দাড়ি রাখা সুন্নত নাকি ওয়াজিব
দাড়ি রাখার বিধান | দাড়ি রাখা সুন্নত নাকি ওয়াজিব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *