ওয়াদা পালনের গুরুত্ব | ওয়াদা ভঙ্গ করার কাফফারা

ওয়াদা পালনের গুরুত্ব | ওয়াদা ভঙ্গ করার কাফফারা

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সুপ্রিয় পাঠক! সবাইকে অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা ৷ আজ আমরা কথা বলবো ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি পালনের গুরুত্ব নিয়ে ৷ ওয়াদা ভঙ্গ করার কাফফারা সম্পর্কে ৷ অনেকেই ওয়াদা ভঙ্গ করছেন ৷ এটাকে মামুলি বিষয় হিসেবে দেখছেন ৷ ওয়াদা কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন না ৷ যারা ওয়াদা ভঙ্গ করছেন এর মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গরা শীর্ষস্থানে আছেন ৷ তাদের শেখা ও জানা উচিত আসলে ওয়াদা কী জিনিস?

আরও পড়ুনঃ তাওবার নামাজের নিয়ম

ওয়াদা কাকে বলে? প্রতিশ্রুতি কাকে বলে?

ওয়াদা আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অঙ্গীকার, চুক্তি, প্রতিশ্রুতি, প্রতিজ্ঞা ইত্যাদি ৷ ইসলামী পরিভাষায় কারো সাথে কেউ কোনো অঙ্গীকার করলে, কাউকে কোনো কথা দিলে বা লিখিত চুক্তি করলে তা পালন করার নাম ওয়াদা ৷ যাপিত জীবনে মানুষ মানুষের সাথে বিভিন্ন রকম ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। এই ওয়াদা পালন করা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও ঈমানের অঙ্গ ৷ সংসার ও সমাজজীবনে ওয়াদা রক্ষাকারীরা মানুষের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য।

সবাই ওয়াদা পালনকারীকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে ৷ আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন ৷ ওয়াদা রক্ষা করা আল্লাহর একটা গুণও বটে ৷ ইসলামী বিধানে কারও কাছে কোনো বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হলে তা পালন করা যেমন ওয়াদা, ঠিক একইভাবে আল্লাহ যা কিছু নির্দেশ দিয়েছেন এবং যেসব কাজ নিষেধ করেছেন তার সবই ওয়াদার অন্তর্ভুক্ত ৷ কেননা এসব পালনে মুমিনরা আল্লাহর সঙ্গে ওয়াদাবদ্ধ। ওয়াদা পালনের তাগিদ দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! তোমরা চুক্তিসমূহ পূরণ কর ৷ (মায়েদা-১) অন্যত্র বলা হয়েছে, তোমরা প্রতিশ্রুতি পূরণ কর, কেননা প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ৷ (বনি ইসরাইল-৩৪)

ওয়াদা পালনের গুরুত্ব | ওয়াদা ভঙ্গ করার কাফফারা
ওয়াদা পালনের গুরুত্ব | ওয়াদা ভঙ্গ করার কাফফারা

ওয়াদা পালনের গুরুত্ব

ওয়াদা রক্ষা করা ফরজ, ভঙ্গ করা হারাম। জীবন চলার পথে প্রতিনিয়ত একে অপরকে যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, এসব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা একান্ত কর্তব্য। এ ব্যাপারে সামান্যতম শৈথিল্য প্রদর্শনও দুনিয়া-আখিরাতে বিপদের কারণ হতে পারে। আহকামুল হাকিমিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন-

وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولًا
অর্থ : তোমরা ওয়াদা রক্ষা করো। ওয়াদা রক্ষার ব্যাপরে তোমাদের হবে। [সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত নং : ৩৪]

হযরত আলি রাযি. থেকে বর্ণিত। মহানবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ধ্বংস তার জন্য! ধ্বংস তার জন্য! ধ্বংস তার জন্য! যে ওয়দা করলো অতঃপর তা রক্ষা করলো না। [মুজামুল আওসাত, হাদিস নং: ৩৬] হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

“آيَةُ المُنَافِقِ ثَلاَثٌ: إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ”

অর্থ : মুনাফিকের আলামত তিনটি-

  • কথা বললে মিথ্যা বলে ৷
  • ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে ৷
  • আমানত রাখলে তার খেয়ানত করে ৷

[সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩৩]

নিজেদের চারপাশে একটু চোখ মেলে দেখুন এবং নিরীক্ষণ করুন, কতজন সৌভাগ্যবান লোক উক্ত আলামতের আওতামুক্ত আছে।

প্রিয়নবির [সা.] ওয়াদা রক্ষা

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু হামসা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে একদিন আমি তাঁর নিকট থেকে কিছু কেনাকাটা করি, যার কিছু মূল্য অবশিষ্ট ছিল। অতঃপর আমি তাঁর সাথে ওয়াদা করেছিলাম যে, “অবশিষ্ট মূল্য নিয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে তাঁর নিকট উপস্থিত হবো।’ ঘটনাক্রমে আমি এ প্রতক্রিতির কথা ভুলে গেলাম। তিন দিন পর আমার স্মরণ হলে এসে দেখলাম, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই নির্দিষ্ট স্থানেই আছেন; আমি যেখানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের অঙ্গীকার দিয়ে এসেছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে আমি খুবই লজ্জিতবোধ করলাম। হায়! এখন আমি তাঁর নিকট কী জবাব দিবো। না জানি তিনি আমার অপেক্ষায় কত কষ্ট করেছেন। এসব কথা ভাবতে ভাবতে আমি এক পা দু’পা করে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলাম; কিন্তু তাঁকে কী বলবো ঠিক করতে পারছিলাম না। উপরন্তু আমার মনে ক্রমেই এ ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছিল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ওপর খুবই রাগান্বিত হবেন। আমাকে অনেক গালমন্দ করবেন। কিন্তু দয়ার সাগর, উত্তম আদর্শের মূর্তপ্রতীক, মহানবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আসার পর আমার পূর্বোক্ত ধারণা সম্পূর্ণরূপে ভুল বলে প্রমাণিত হলো।

তিনি আমাকে দেখে ক্রোধের ন্যূনতম আলামত প্রকাশ করলেন না। স্বাভাবিক হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় শান্তকণ্ঠে শুধু এতটুকু বললেন যে, তুমি আমাকে খুব বিপদে ফেলেছিলে। আমি তিন দিন পর্যন্ত তোমার জন্য এখানে অপেক্ষা করছি।’ [আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯৯৬]

বাল্যকাল থেকেই শেষনবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সততার মূর্তপ্রতীক। তিনি সর্বদা সত্য কথা বলতেন। যা বলতেন, অবশ্যই পালন করতেন। তাঁর কর্মনিষ্ঠা, সত্যবাদিতা, নম্রতা, আত্মবিশ্বাস প্রভৃতি গুণাবলির জন্য সকলেই তাকে ভালোবাসতো এবং ‘আল-আমিন’ উপাধি দিয়েছিল। এমনকি ‘মুহাম্মদ’ নামটি চাপা পড়ে ‘আল-আমিন’ নামটিই বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। প্রিয়নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াদা রক্ষার ব্যাপারে কতটা সিরিয়াস ছিলেন, ইতোমধ্যে জেনেছেন। আমরাও যার সাথে যে ওয়াদা দিবো, তা কা পালন করার আপ্রাণ চেষ্টা করবো। মন থেকে অন্যায় লোভ বিদায় করতে হবে, সততার পরিচয় দিতে হবে। বারবার ফিরে যেতে হবে কুরআন-সুন্নাহর কাছে, প্রিয়নবির (স) পবিত্র জীবনের কাছে। তবেই জীবন সার্থক হবে।

ওয়াদা পালনের ঘটনা

৭ম হিজরির কথা। ওই বছর হয়েছিল খায়বারের যুদ্ধ। মদিনা থেকে খাইবারের দূরত্ব প্রায় একশো মাইল। ওখানে ছিল ইহুদিদের বসতি। এরা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনেক কষ্ট দিয়েছিল। কিন্তু দয়ার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবসময় ওদের ক্ষমা করেছেন। দেখেও না- দেখার ভান করেছেন। বুঝেও না-বোঝার ভান করেছেন। কিন্তু পরিশেষে যখন ওদের অন্যায় সীমা ছাড়িয়ে গেলো এবং মুসলমানদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের যে চুক্তি ছিল তা ভেঙে সরাসরি মহানবিকে হত্যা করার চেষ্টা করলো, তখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওদের দমন করতে যুদ্ধে নামলেন।

খাইবারে ইহুদিদেরে ছিল অনেকগুলো দূর্গ। মুসলিম মুজাহিদগণ কাছাকাছি জায়গায় ছাউনি ফেললেন। এদিকে খাইবারের এক হাবশি রাখাল, যে এক ইহুদি মালিকের ছাগল চরাতো; ছাগল চরাতে চরাতে মুসলিম ছাউনির কাছে এসে পড়েছিল। আরবিতে রাখালকে বলে ‘রায়ি’। আর হাবশি হওয়ায় তার গায়ের রং ছিল কালো। আরবিতে কালোকে বলে ‘আসওয়াদ’। তাই তাকে ‘আসওয়াদ রায়ি’ অর্থাৎ, ‘কালো রাখাল’ বলে ডাকা হতো। তার প্রকৃত নাম ছিলো ইয়াসার।

যাহোক, মুসলিম ছাউনির কাছে এসে রাখালের মনে সাধ জাগলো, মুসলমানদের যে নেতা সেই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সে একনজর দেখবে। লোকমুখে সে কত কথা শুনেছে তার সম্পর্কে। এইতো আজও দূর্গের ভেতর শুনে এলো নানা কথা। তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যই তো দুর্গের ভেতর সাজ সাজ রব। আজ এই সুযোগে সে যেভাবেই হোক একনজর তাঁকে দেখে যাবে।

আসওয়াদ রায়ি ধীরে ধীরে মুসলিম ছাউনির কাছে এগিয়ে এলো। সাথে তার ছাগলের পাল। কাছে এসে মহানবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখার বাসনা প্রকাশ করলো। হযরত সাহাবায়ে কেরাম রাযি. দেখিয়ে দিলেন, ওই যে তাঁবুটি; ওখানেই আছেন দুজাহানের সরদার । আসওয়াদ রায়ি বিস্মিত হয়, এই অতি সাধারণ তাঁবুতে অবস্থান করছেন মদিনার প্রতাপশালী রাজা! সে এগিয়ে যায় দুরুদুরু বুকে। ধন্য হয় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাঁদমুখ দেখে। তন্ময় হয়ে প্রাণভরে শুনে তাঁর পবিত্র মুখ নিঃসৃত অমীয় বাণী। এরপর ঈমান এনে হয়ে যান তাঁর গর্বিত সাহাবি। আগেই বলা হয়েছে, তার প্রকৃত নাম ‘ইয়াসার’। ইসলাম গ্রহণের পর ইয়াসার রাযি. আবেদন করলেন- ‘আল্লাহর রাসুল, আমিও জিহাদে শামিল হতে চাই।’ নবিজি অনুমতি দিলেন । ইয়াসার রাযি. বললেন- ‘আমার সাথে যে ইহুদি মালিকের এক পাল ছাগল, তা কী করবো?’ প্রিয়নবি ইরশাদ করলেন- ‘তা দূর্গের দিকে হাঁকিয়ে দাও। আল্লাহ তোমার আমানত মালিকের কাছে পৌঁছে দিবেন। ‘

সময়টা ছিল যুদ্ধের। আর ছাগলগুলো ছিল শত্রুপক্ষের। এত বড় মুজাহিদ বাহিনির খাবারেরও প্রয়োজন ছিল। এতদসত্ত্বেও দয়ার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যার জিনিস তাকে ফিরিয়ে দিতে বললেন। কারণ ইয়াসার রাযি. যখন এই ছাগলের পাল নিয়ে দূর্গ থেকে বের হয়েছেন, তখনও তিনি মুসলমান হননি। মালিকের সাথে তার বিশ্বস্ততা রক্ষার যে অঙ্গীকার ছিল, মহানবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ভাঙার অনুমতি দেননি।

এই হলো ইসলামের শিক্ষা। ইসলাম আমানতদারি ও বিশ্বাস রক্ষার ধর্ম, খেয়ানত ও বিশ্বাস ভঙ্গের সুযোগ ইসলামে নেই। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরাও সততা বজায় রাখবো, বিশ্বাস রক্ষা করবো, পরের জিনিসে লোভ করবো না। মনে রাখতে হবে, যে সততার ঘটনা কেউ দেখে না, তা আল্লাহ দেখেন। এর প্রতিদান ইহকালে না-পেলেও পরকালে পাওয়া যাবে। তেমনি যে অন্যায় কেউ দেখে না, তা আল্লাহ দেখেন। এর শাস্তি দুনিয়াতে না-হলেও আখিরাতে অবশ্যই হবে; যদি আল্লাহ ক্ষমা না করেন।

ওয়াদা ভঙ্গের কাফফারা

এখানে এ বিষয়টি খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে, ওয়াদা করা আর কসম খাওয়া এক জিনিস নয়। কেউ হয়ত মনে মনে বা কারো কাছে ওয়াদা করল যে, সে এ কাজটা করবে কিন্তু পরে কোন কারণে তা করতে পারল না। তাহলে তা ‘কসম ভঙ্গ’ হিসেবে গণ্য হবে না। কারণ সে আল্লাহর নামে কসম করে নি। কিন্তু অবশ্যই তা ওয়াদার খেলাফ বা অঙ্গীকার ভঙ্গ করার পর্যায়ে পড়বে, যা ক্ষেত্রবিশেষে কবিরা গুণাহর কারণ হয়ে পড়তে পারে । আর যদি ঐ ওয়াদা অন্য কারো সাথে হয়ে থাকে তবে তা দ্বীন ভঙ্গের কারণ হয়ে দাড়ায়। কারণ, মুমিনের একটি প্রধান গুণই হলো সে কখনো ওয়াদার খেলাফ করেনা, সে কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেনা।

পক্ষান্তরে কেউ যদি বলে, “আল্লাহর নামে কসম করে বলছি, উমুক কাজটা করব।” তাহলে এটা হল কসম। এখন সে যদি উক্ত কাজটা না করে তাহলে তা ‘কসম ভঙ্গ’ হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে তাকে কসম ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে। কিন্তু সাধারণ ওয়াদা/অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে তার কোন কাফফারা নেই। কিন্তু ওয়াদা রক্ষা না করতে পারার কারণে আল্লাহর নিকট তওবা করবে এবং যার সাথে ওয়াদা করেছিল তার কাছে ক্ষমা চাইবে। আল্লাহু আলাম।

কোন ব্যক্তি যদি কোন কাজ করবে বলে আল্লাহর নামে কসম করে তারপর তা ভঙ্গ করে তাহলে তার জন্য কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব।

ওয়াদা পালনের গুরুত্ব | ওয়াদা ভঙ্গ করার কাফফারা
ওয়াদা পালনের গুরুত্ব | ওয়াদা ভঙ্গ করার কাফফারা

কসম ভঙ্গের কাফফারা হল

  • – দশজন মিসকিনকে মধ্যম ধরণের খাবার খাবার খাওয়ানো।
  • – অথবা ১০ জন মিসকিনকে পোশাক দেয়া।
  • – অথবা একজন গোলাম আযাদ করা।
  • – এ তিনটি কোনটি সম্ভব না হলে তিনটি রোযা রাখা।

আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّـهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَـٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الْأَيْمَانَ ۖ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ۚ ذَٰلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ۚ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّـهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
“আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।” [সূরা মায়িদাহ: ৮৯]

সুতরাং কেউ যদি আর্থিক সংকটের কারণে উপরোক্ত তিনটি জিনিসের কোনটি দ্বারা কসম ভঙ্গের কাফফারা আদায় করতে সক্ষম না হয় তাহলে তিনটি রোযা রাখবে।

ওয়াদা ভঙ্গের ঘটনা

একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়াতে অনেক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হয় আমাকে ৷ এবং ঘটনাচক্রে অনেকে আবার চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হয় ৷ বিশেষত হিফজ খানার শিক্ষক নিয়োগ দিতে গিয়ে অনেক সময় বিপাকে পড়েছি ৷ অনেক হাফেজ সাহেব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভঙ্গ করেছেন ৷ এমন ঘটনা আমার সাথেই এই অল্প সময়ে কয়েকজনের ঘটেছে ৷ হাফেজ সাহেবরা নির্দ্বিধায় প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছেন ৷ বিষয়টি অত্যন্ত খারাপ বটে ৷ যারা কুরআনুল কারীম পড়াবেন তারাই যদি কুরআনের নীতি নিয়ম ভঙ্গ করেন ৷ ওয়াদা ভঙ্গের মতো কাজ করেন ৷ সেটা আরও যে কতটা ভয়ঙ্কর তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷

ভোলার এক হাফেজ সাহেবকে নিয়োগ দিলাম ৷ তিনি আসবেন বলে বলে কয়েকবার তারিখ করলেন ৷ সকালে বিকেলে পরের দিন এভাবে করে আমাদেরকে ঘুরাচ্ছেন ৷ শেষ পর্যন্ত তিনি এলেন না এবং আমরা অন্য হাফেজ নিয়োগ দিলাম ৷ এবার সেই হাফেজ ঈদের সময় ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে আর খোলার তারিখে মাদ্রাসায় এলেন না ৷ শুধু তাই না চার-পাঁচ দিন পর্যন্ত তার জন্য অপেক্ষা করে কিছুতেই তাকে ফোনে না পেয়ে তার বাড়িতে লোক পাঠালাম ৷ তিনি ভিন্ন কিছু বললেন ৷ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেন ৷

এবার আমরা নতুন হাফেজ নিয়োগের ব্যাপারে কয়েকজনের সাথে কথা বললাম ৷ পিরোজপুরের একজন হাফেজ সাহেবকে আমরা নিয়োগ দিলাম ৷ তিনি বললেন বিকেলে রওনা হবেন ৷ হলেন না ৷ কিছুটা বৃষ্টি ছিল ৷ বললেন যেহেতু বৃষ্টি আগামীকাল ভোরে রওনা হব ৷ কিন্তু তাকে ফোনে পেলাম না ৷ ততক্ষণে সকাল ১১ টা বেজে গেছে ৷ যোগাযোগ করলে তিনি বললেন আসবেন ৷ আবার একই রকমের প্রতিশ্রুতি বিকেলে রওনা হবেন ৷ আমি তাকে খোলাখুলি বললাম আপনি যদি না আসেন ক্লিয়ার মেসেজ করেন ৷ আসলে সেটারও স্পষ্ট বক্তব্য দেন ৷ আর যদি চাকরি না করেন সেটাও ক্লিয়ারলি বলেন ৷ কিন্তু তিনি বললেন আসবেন শেষ পর্যন্ত ঘুরাতে ঘুরাতে তিনিও আসলেন না ৷ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন ৷ এভাবে আরো কয়েকজন শিক্ষক আমার সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন ৷

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

ওয়াদা পালনের গুরুত্ব | ওয়াদা ভঙ্গ করার কাফফারা
ওয়াদা পালনের গুরুত্ব | ওয়াদা ভঙ্গ করার কাফফারা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *