বালাগাল উলা বিকামালিহি কি শিরক?

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বালাগাল উলা বিকামালিহি কি শিরক?[/box]

 

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু ৷ সুপ্রিয় পাঠক! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন ৷ আজ আমরা অত্যন্ত প্রচলিত একটি কবিতা নিয়ে আপনাদের সাথে আলোকপাত করব ৷ বিখ্যাত দার্শনিক ও বুজুর্গ কবি শেখ সাদী রহমাতুল্লাহ আলাইহির রচিত বালাগাল-উলা-বি-কামালিহি এই ছন্দবদ্ধ কবিতা সম্পর্কে ৷ বালাগাল উলা বিকামালিহি কি শিরক? একটি বিতর্ক উঠেছে ৷ কেউ এটা পাঠ করাকে শিরক বলছেন ৷ এবং কেউ এটা পাঠ করাকে তাদের হৃদয়ের প্রশান্ততা আখ্যা দিচ্ছেন ৷ কারা সঠিক? আর এটা পাঠ করা যাবে কিনা? এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলোকপাত করব ইনশাল্লাহ ৷ পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন ৷

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বালাগাল উলা বিকামালিহির আরবি[/box]

بلغ العلا بكماله

كشف الدجى بجماله

حسنه جميعه خصاله

صلوا عليه واله

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বালাগাল উলা বিকামালিহির বাংলা[/box]

 

বালাগাল উলা বি-কামালিহি,
কাশাফাদ্দুজা বি-জামালিহি,
হাসুনাত জামিয়ু খিসালিহি,
সাল্লু আলায়হি ওয়া আলিহি।।

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বালাগাল উলা বিকামালিহির অর্থ[/box]

তিনি পৌঁছে গেছেন সর্বোচ্চ মর্যাদায় তাঁর সুমহান চরিত্রের দ্বারা।

বিদুরিত হয়েছে সকল অন্ধকার তাঁর সৌন্দর্যের ছটায়।

সম্মিলন ঘটেছে তাঁর মাঝে সকল উন্নত চরিত্রের।

পেশ করুন তাঁর প্রতি ও তাঁর সম্মানিত আহলু বাইতদের প্রতি দরুদ ও সালাম।

বালাগাল উলা বিকামালিহি কি শিরক?
বালাগাল উলা বিকামালিহি কি শিরক?

আমাদের দেশে প্রচলিত এই কবিতাটিকে কেউ কেউ দরুদ মনে করছেন ৷ মিলাদ মাহফিল এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রগ্রামে এই কবিতাটি পাট একটি অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ এটি অসম্ভব জনপ্রিয় একটি কবিতা ৷ এটি সর্বমহলে সমানভাবে সমাদৃত ও পাঠ উপযোগী একটি কবিতা ৷ যেটি আলেম-ওলামা, শিক্ষিত-মূর্খ সব শ্রেণীর মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি কবিতা ৷ এই কবিতার অর্থ না জেনেও আবেগাপ্লুত হয়ে সবাই পাঠ করেন ৷ তারা মনে করেন বিশ্ব নবীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের এটি একটি মাধ্যম ৷

এই কবিতাটিকে নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলা যায় ৷ কেননা আল্লাহ রব্বুল আলামিনের প্রতি প্রশংসাসূচক স্তুতিকে হামদ বলে ৷ আর বিশ্ব নবীর প্রতি প্রশংসামূলক কোন বাক্য বা কবিতাকে নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলে ৷ আমাদের অনুষ্ঠানাদিতে দেখা যায়, পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের পরে ৷ একটি হামদ অথবা একটি নাতে রাসুল সাল্লাহু সাল্লাম পরিবেশন করা হয় ৷ এবং এটি এখন একটি রুটিনে পরিণত হয়েছে ৷

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]কবি শেখ সাদীর পরিচয়[/box]

তিনি একজন ফারসি কবি। বিশ্ব বিখ্যাত সাধক কবি। তার আসল নাম মুশাররফ উদ্দীন মুসলেহ ইবনে আব্দুল্লাহ শিরাজী ৷ বর্তমান ইরানের ফার্স প্রদেশ বা প্রাচীন পারস্যের রাজধানী শিরাজ নগরীতে তাঁর জন্ম ৷ এবং সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত।

তার জন্মসাল নির্দিষ্ট নয় ৷ তবে মৃত্যু ৬৯১ ও ৬৯৫ হিজরির মধ্যবর্তী সময়ে। বর্তমানে ১৪৩৩ হিজরী চলছে । অর্থাৎ এখন থেকে অন্তত: সাড়ে আটশ বছর আগে।

উচ্চ শিক্ষার জন্য শেখ সাদী রহঃ সে সময়কার বিশ্ব সাহিত্যের পাদপীঠ হাজারো সাহাবীর পদধন্য বাগদাদে চলে আসেন ৷ জমানার মুজাদ্দিদ হযরত আবদুল কাদের জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহির নিকট এলেমি শিক্ষা লাভ করেন | মহান হজ্বব্রত পালন শেষে তিনি বিশ্ব ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়লেন | বলা হয় ইবনে বতুতার পর প্রাচ্যে তিনিই সবচেয়ে বড় পরিব্রাজক ৷ ইতিহাস ঘেটে দেখে গেছে যে তিনি একজন বীর মুজাহিদ ও বটে ৷ জেরুজালেমের পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাস (আল আকসা) নিয়ে খৃস্টানদের সাথে ঐতিহাসিক যুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণ ছিল অতুলনীয় ৷

জেরুজালেমের পথে প্রান্তরে দিবানিশি শেখ সাদীর কবিতা হামদ রচনা মুসলীম মুজাহিদগণ আবৃত্তি করে একে অপরকে উৎসাহ জোগাতেন ৷ সেই জিহাদে শেখ সাদী রহঃ-এর অংশগ্রহণ ছিল নেতৃস্থানীয় এবং প্রভাবশালী। সম্মিলিত ইউরোপের ক্রুসেডের বিরুদ্ধে সেই জিহাদে মুসলমানরা বিজয় অর্জন করে। ফলে শেখ সাদী রহঃ হন গাজী।

বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সৃষ্টি তাঁর দুটি মহাগ্রন্থ গুলিস্তা এবং বোস্তা ৷ জন্মের সাড়ে ৮০০ বছর পরও এ মহাকবি আজও অমর তাঁর কালজয়ী সাহিত্য কর্মের সুবাদে ৷ তিনি ফারসি গদ্য ও পদ্য সাহিত্যে সবার শিরোমণি। আবার আরবিতে তাঁর পান্ডিত্য কত উঁচু মানের তা প্রমাণের জন্য এ চারটি চরণই যথেষ্ট।

তাঁর রচিত বালাগাল-উলা-বি-কামালিহি চতুষ্পদী চরণটি আমরা ভক্তি ভরে পাঠ করি ৷ এবং কবিতার সাথে সাথে কবিকেও আমরা স্মরণ করি ৷ কি আছে কবিতায়? এই কবিতাটি এতটা জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে কারণ কী? রহস্যই বা কি?

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বালাগাল উলা সম্পর্কে অলৌকিক তথ্য[/box]

বালাগাল উলা বিকামালিহি কি শিরক?
বালাগাল উলা বিকামালিহি কি শিরক?

এই কবিতাটির রচনা সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক তথ্য রয়েছে ৷ যা আমাদেরকে আবেগ আপ্লুত করে ৷ শেখ সাদী রহঃ এই চতুষ্পদীর প্রথম তিন লাইন লেখার পর চতুর্থ লাইন মিলাতে পারছিলেন না। অনেক দিন-মাস অতিক্রান্ত হয়ে যায়। শেখ সাদী রহঃ এখানে একটি সন্তোষজনক লাইন পেতে ব্যর্থ হন। এসময় তিনি রাসূলুল্লা­হ সাঃ কে স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নে বিশ্বনবী তাঁকে এই চতুর্থ লাইনে লিখে দিতে বলেন – সাল্লু আলায়হি ওয়া আলিহি। ‘সাল্লু ’ মানে তোমরা দরূদ পাঠাও। আর ‘দরূদ’ অর্থ কারও জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করা। ‘আলাইহি’ তার প্রতি। ‘ওয়া’ মানে এবং, ও ‘আলিহী’ অর্থ তাঁর বংশধর।

শেখ সাদী স্বপ্নযোগে এ আদেশ পেলেন স্বয়ং হযরতের কাছ থেকে। একজন কবির জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া কী হতে পারে? এর চাইতে বড় গৌভাগ্য কী কল্পনা করা যায়! স্বয়ং নবীজির সাক্ষাৎ পাওয়া। যাঁর প্রশংসায় কবি তিনটি চরণ লিখছেন, স্বয়ং তিনি এসে চতুর্থ লাইন মিলিয়ে দেয়া। এভাবে রচিত হয় এই অসাধারণ কবিতাটি।

এভাবে এই চতুষ্পদীটি তৈরীতে সহায়তা করায় এটা বুঝা যায় যে, এটি রাছুলুল্লা­হ সাঃ-এর পছন্দনীয়। এখানে একটা কথা উল্লেখ্য যে, যে কোন লোক স্বপ্নযোগে এভাবে কিছু পাওয়ার দাবী করলে তা সব সময় গ্রহণযোগ্য হয় না । কিন্তু শেখ সাদী (রহঃ) -এর মত একজন বিশ্ব বিখ্যাত আল্লা­হ্’র ওলী জানানোতে তা অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য। সম্ভবত: এখানেই ‘বালাগাল উলার…’ জনপ্রিয়তার রহস্য নিহিত। নচেত এটি চার লাইনের একটি চতুস্পদী। সরল সহজ ভাষায় বর্ণনা। কবিত্বের অলংকার নাই, তত্ত্ব-দর্শনের মারপ্যাঁচ নেই। এত সহজ প্রকাশের এত বড় পাওয়া নিশ্চয়ই অকল্পনীয়। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এর বিশ্বজনীন স্বীকৃতি, সমাদর। সারা দুনিয়ার মুসলিমরা গায় এই বালাগাল উলা। নবীপ্রেমের সুধা পান করে এর সুরের ব্যঞ্জনায়। এই চতুস্পদীর অন্তরালে মহা নেয়ামত নহর কাওসার, আবে হায়াত যমযম লুকিয়ে না থাকলে শত শত বছর ধরে এই না’তসহ দরূদ নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-কিশোর সবার গলার মালা হয়ে গীত হত না পরম ভক্তিতে- মসজিদে, মাহফিলে, দুনিয়ার সর্বত্র। সত্যিই নবী প্রেমের আরশি ‘বালাগাল উলা বি কামালিহী’।

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বালাগাল উলার তাৎপর্য[/box]

বালাগাল উলা বিকামালিহি কি শিরক?
বালাগাল উলা বিকামালিহি কি শিরক?

আসুন আমরা বালাগাল-উলা-বি-কামালিহি এই কবিতার বিশ্লেষণ করি ৷ তাৎপর্য ব্যাখ্যা করি ৷ আমরা সকলেই জানি একটি ভাষা অন্য ভাষায় পুরোপুরি রূপান্তর করা যায় না ৷ একটি ভাষার শব্দের গাঁথুনি, বাক্যের অলংকার ও সৌন্দর্য অন্য ভাষায় পরিবর্তন করা সম্ভবপর নয় ৷ একটি ভাষার কবিতা অন্য ভাষায় তা পরিপূর্ণভাবে রূপান্তর করা কিছুতেই সম্ভবপর নয় ৷ তথাপিও বিভিন্নজন এই কবিতাটির ভাবনা এবং ছন্দ রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন ৷ কিন্তু পুরোপুরি সফল হয়েছেন বলা যায়না ৷

ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী লিখেন

সুউচ্চ শিখরে সমাসীন তিনি নিজ মহিমায়, তিমির-তমসা কাটিল তার রূপের প্রভায়,
সুন্দর আর সুন্দর তার স্বভাব চরিত্র তামাম,
জানাও তাঁর ও তাঁর বংশের পরে দরূদ-সালাম।

কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ লিখেন

তাবৎ পূর্ণতা নিয়ে শীর্ষে হয়েছেন উপনীত,
অপার সৌন্দর্যে তিনি আলো করেছেন তমসাকে, আশ্চর্য চারিত্র তাঁর অতুলন সৌন্দর্যে মন্ডিত, রাহমাতুল্লিল আ’লামীন-হাজার সালাম তাঁকে।

কেউ করেছেন এভাবে

অতি উচ্চতা মহিমা মহান পূর্ণগুণজ্ঞানে হে নবী,
তব মাধুরীত অমর আঁধার বিদূরিত আজিরে সবি, অতীব সুন্দর অতীব সুন্দর তোমার সকল আচার ব্যবহারই,
সহস্র সালাম উপরে তোমার হে নবী রাসূলে আরবি ৷

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম আলোচ্য চতুষ্পদীটি অবলম্বনে একটা নাত রচনা করেছেন। নাতটি হলঃ

কুল মখলুক গাহে হযরত

বালাগাল উলা বেকামালিহী।

আঁধার ধরায় এলে আফতাব

কাশাফাদ দুজা বেজমালিহী ||

 

রৌশনীতে আজো ধরা মশগুল

তাইতো ওফাতে করি না কবুল,

হাসনাতে আজো উজালা জাহান

হাসুনাত জমিউ খেসালিহী ||

 

নাস্তিরে করি’ নিতি নাজেহাল

জাগে তাওহীদ দ্বীন-ই কামাল

খুশবুতে খুশী দুনিয়া বেহেশত

সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী ||

 

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বালাগাল-উলা-বি-কামালিহি বলা কি শিরক?[/box]

মাসিক আত তাহরিকে এই প্রশ্নের জবাবে তারা শিরক বলেছে ৷ যেটা আহলে হাদীস ভাইদের দ্বারা পরিচালিত ৷ আগে তাদের লেখাটি পড়ে নিই ৷ এরপর আমরা পর্যালোচনা করবো ইনশাআল্লাহ ৷

‘এটি কোন দো‘আ নয়, বরং কবিতা। বাক্যটি পারস্য কবি শেখ সা‘দী (৫৮৫ অথবা ৬০৬-৬৯১ হিঃ) স্বীয় গুলিস্তাঁ গ্রন্থে আরবীতে লিখিত তার অল্প সংখ্যক কবিতা সমূহের মধ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রশংসায় লিখিত কবিতার একটি অংশ। এটি দরূদ হিসাবে পাঠ করা যাবে না। কারণ এটি একটি কবিতা মাত্র। দ্বিতীয়তঃ এটি শিরক মিশ্রিত। এখানে বলা হয়েছে, ‘উচ্চতা তার পূর্ণতায় পৌঁছে গেছে’। অথচ এটি কেবল আল্লাহ্র জন্য খাছ। তৃতীয়তঃ এখানে রাসূল (ছাঃ)-কে নূরের তৈরী কল্পনা করা হয়েছে। যাঁর দেহের আলোকচ্ছটায় অন্ধকার বিদূরিত হয়েছে। এটি কুরআন বিরোধী আক্বীদা (কাহফ ১৮/১১০)। সুতরাং এটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। উল্লেখ্য যে, স্বয়ং কবিও এটিকে দরূদ বলেননি। বরং শেষে বলেছেন, صَلُّوا عَلَيْهِ وَآلِهِ ‘তোমরা তাঁর ও তাঁর পরিবারের প্রতি দরূদ পাঠ কর’।, মাসিক আত তাহরিক

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বালাগাল-উলা-বি-কামালিহি শিরক নয়[/box]

 

বালাগাল উলা বি কামালিহি কোন দরুদ না। এটাকে কেউ দরুদ মনে করলে তার ভুল ভাঙ্গানো সমর্থনযোগ্য। কিন্তু আরেকটু আগ বেড়ে একে শিরকী কবিতা বলা হলো অজ্ঞতা বা মাথামোটা টাইপ কাজ। মূলত যারা এটাকে শিরকী বলে, তারা লাইনটার অপব্যাখ্যা করে। এটার সরল অনুবাদ হলো, ‘তিনি (রাসূল সা.) উচ্চতায় পৌঁছেছেন কামেল হওয়ার মাধ্যমে।’ এখন প্রশ্ন হলো, তিনি কামেল কীভাবে হলেন? স্বীয় প্রচেষ্টায়? নাকি আল্লাহ তাঁকে কামেল বানিয়েছেন বিধায় তিনি কামেল হয়েছেন?

 

যে কোন মুমিন মাত্রই স্বীকার করবেন যে, আল্লাহ তাঁকে কামেল বানিয়েছেন বিধায় তিনি কামেল হয়েছেন। কথা অনেক সহজ ও সরল। কিন্তু যাদের মনের মধ্যে বক্রতা বা কুটিলতা আছে, কিংবা আছে অহেতুক মানুষকে শিরকের অপবাদে জর্জরিত করার অপ-ইচ্ছা, তারা এই সহজ কথাকে জটিল বানায় এই ব্যাখা দিয়ে দেয় যে, রাসূল সা. নিজে নিজে কামেল হবার কারণে উচ্চতায় পৌঁছেছেন। অথচ তিনি কামেল হয়েছেন কি নিজ ক্ষমতাবলে না আল্লাহর দয়ায়? এই প্রসঙ্গ বাক্যে পুরোই অনুপস্থিত। এটা বুঝে নিতে হয় আকলে সালিম তথা সুস্থ বিবেচনাবোধ দিয়ে।

 

আপনার কি মনে হয় একজন সাধারণ মুসলিমও যে জিনিস বুঝে, সেখানে শেখ সাদীর মত একজন জ্ঞানী বিখ্যাত বুজুর্গ মুসলিম কবির এতটুকু বুঝ ছিল না? নবী হওয়াকে যে ব্যক্তি আল্লাহর দান ছাড়া নিজ গুণে অর্জিত মনে করে তাঁর তো ঈমানই থাকে না।

বালাগাত বা আরবী আলঙ্কারশাস্ত্রে খুব বিখ্যাত একটা উদাহরণ আছে- আনবাতার রবীউল বাক্বলা। মানে, বসন্ত সবজি উৎপন্ন করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই উদাহরণ যদি কোন নাস্তিক বলে তাহলে এই উৎপন্নের সাথে সবজির সম্বন্ধ করাটা হাকীকী বা প্রকৃত অর্থেই। কেননা নাস্তিকের বিশ্বাস এমনই যে, জগতে কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। যা হয় সব যুগ-কাল-পরিবেশের থেকে। পক্ষান্তরে এটা কোন মুমিন বললে এটি মাজায বা রূপক ধরতে হবে। সেই ব্যক্তির আস্তিক বা মুমিন হওয়াটাই প্রমাণ (পরিভাষায় বলে-ক্বরীনা) যে, সে এখানে বসন্তকে সবজির স্রষ্টা আখ্যা দিচ্ছে না।

 

এমন ব্যবহার আমরা প্রচুর করি। যেমন, শাহজাহান তাজমহল বানিয়েছেন। অথচ বাস্তবে এটা তিনি বানাননি; বরং কারিগররা বানিয়েছে। তবে তাঁর নির্দেশনা ছিল বিধায় তার দিকে সম্বন্ধিত হচ্ছে। এটাই হলো মাজায বা রূপক। এগুলো বুঝার জন্য প্রথমত দরকার একটা সুস্থ বিবেচনাবোধ ৷ দ্বিতীয়ত ভাষার অলঙ্কারের সাথে পরিচিতি ৷ তৃতীয়ত কাউকে অহেতুক অপরাধী বানানোর মানসিকতা না থাকা। অন্যথায় ‘অমুক ওষুধ খাওয়ার কারণে আমি সুস্থ হয়েছি।’ এই জাতীয় বাক্য বলাকেও শিরক বলে আখ্যা দিতে হবে। অথচ কথাটা কোন মুসলিমের মুখ দিয়ে বের হওয়াটাই ক্বরীনা বা দলিল যে, সে এখানে ওষুধকে মাধ্যম মনে করছে। মূল সুস্থতাদানকারী তো আল্লাহই।

আরও পড়ুনঃ মুনাফিক কারা? 

যাইহোক, এটা দরুদ নয় সেই বিষয়কে মানুষকে সচেতন করা দরকার। অনেকেই দরুদ মনে করে এটি পাঠ করে, যা সঠিক নয়। এটি একটি কবিতা। তাই আমাদের উচিত নেকি অর্জনের জন্য কবিতা নয়, দরুদ পাঠ করা। পাশাপাশি যারা একে শিরক বলে তাদের অপব্যখ্যাকেও প্রশ্রয় না দেওয়া।

وهذه السطور لمن يعرف العربية:
بلغ العلى بكماله أي بأن يكون كاملا، فهنا إضافة المصدر إلى فاعله، كما هو معروف الاستعمال في اللغة العربية.
– শায়খ আব্দুল্লাহ আল মাসউদ হাফি.

আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সা: ছিলেন উত্তম চরিত্র ও মাধুর্যপূর্ণ আচরণের অধিকারী। এ বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই প্রশংসা করে বলেন, তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। (সূরা আল-কালাম : ৪)

‘তোমাদের মধ্যে যাহারা আল্লাহ্ ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাহাদের জন্য তো রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আল-আহজাব : ২১)

আল্লাহ নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন : রাসূলের চরিত্রে উত্তম আদর্শ আছে ৷

আর চরিত্রিক গুণে এত উপরেই উনার সম্মান ছিল যে মুনাফিক মুশরেকরা ইমান না আনা সত্ত্বেও আলামীন বা বিশ্বাসী বলে ডাকতো..

এটা কি অন্যান্য মর্যাদা নয়?

রাসূলের মর্যাদা কত টুকু?
ডিফাইন করার মত কেউ নেই ৷
যাঁর সম্মান আরশে আজীমে, তাঁর প্রসংশা কতটুকুই বা করতে পারবেন?

হাদিসে রাসূলের যেসব মর্যাদার কথা বলা আছে, তা দেখলে তো শির্কের ফতোয়া লাগাবেন…

আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন ৷

 

শেষ কথাঃ

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও করতে পারেন ৷ কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ খাইরান ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *