জিলহজ মাসে চুল, দাড়ি বা নখ কাটার বিধান কী? জিলহজের প্রথম দশকের ফজিলত

জিলহজ মাসে চুল, দাড়ি বা নখ কাটার বিধান কী?জিলহজের প্রথম দশকের ফজিলত

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সুপ্রিয় পাঠক! সবাইকে অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা ৷ আজ আমরা কথা বলবো জিলহজের প্রথম দশকের ফজিলত, জিলহজ মাসে চুল দাড়ি ও নখ কাটার বিধান সম্পর্কে ৷ অনেকে এ বিষয়ে জানার জন্য প্রশ্ন করছেন ৷ পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন আর কোন প্রশ্ন থাকবে না ইনশাআল্লাহ ৷

আরও পড়ুনঃ ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম

কোরবানীর গোশত বণ্টনের সঠিক নিয়ম

জিলহজ মাসে চুল, দাড়ি বা নখ কাটার বিধান কী?জিলহজের প্রথম দশকের ফজিলত

আরবি বারো মাসের মধ্যে জিলহজ অন্যতম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- আল্লাহর নিকট জিলহজের প্রথম দশ দিনের আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও (এর চেয়ে উত্তম) নয়? তিনি বললেন, না,আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে হ্যাঁ, সেই ব্যক্তির জিহাদের চেয়ে উত্তম, যে নিজের জান-মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়েছে। অতঃপর কিনো কিছু নিয়ে ফিরে আসেনি। (বুখারি শরিফ, হাদিস নং ৯৬৯ , তিরমিজি শরিফ, হাদিস নং ৭৫৭, আবু দাউদ শরিফ, হাদিস নং ২৪৩৮)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- আল্লাহর নিকট জিলহজের প্রথম দশ দিনের আমলের চেয়ে অধিক মহৎ এবং অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সুতরাং তোমরা এই দিনগুলোতে বেশি বেশি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ এবং ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়ো। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৫৪৪৬, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং ১৪১১০)

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আল্লাহ তাআলার নিকট ইবাদতের দিক থেকে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের তুলনায় অধিক পছন্দনীয় কোনো দিন নেই। যার প্রতিদিনের রোজা এক বছরের রোজার সমতুল্য এবং প্রতিটি রাত্রের ইবাদত রাইলাতুল কদরের ইবাদতের সমতুল্য। (তিরমিজি শরিফ, ১/১৫৮)

হযরত আবু কাতাদাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আরাফার দিনের (৯ তারিখ) একটি রোজার দ্বারা পূর্বের ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (তিরমিজি শরিফ, ১/১৫৭)

এসব হাদিসের কারণেই জিলহজ মাসের প্রথম দশকের আমলকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়। এই দশকের মধ্যে বেশ কয়েকটি আমল রয়েছে।

(১) নখ-চুল না কাটা
(২) রাত্রগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত করা।
(৩) প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা।
(৪) আরাফার দিন অর্থাৎ ৯ জিলহজ রোজা রাখা। (৫) তাকবিরে তাশরিক পড়া।
(৬) কুরবানি করা (যদি ওয়াজিব হয়)।
(৭) ঈদুল আজহার নামাজ পড়া।
(৮) ঈদ ও আইয়ামে তাশরিকে রোজা না রাখা ।

জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানির পশু জবাই করা পর্যন্ত কুরবানি আদায়কারী এবং অনাদায়কারী সকলের জন্য নখ-চুল ও শরীরের অবাঞ্ছিত পশম না কাটা মুস্তাহাব। যে ব্যক্তি এ নিয়ম পালন করবে, সে হাজিদের সাথে এতটুকু সামঞ্জস্য গ্রহণ করার বরকতে কুরবানির সাওয়াব পাবে। (আবু দাউদ শরিফ, ২/৩৮৬) যারা এ আমল করতে ইচ্ছুক, তাদের উচিত জিলকদ মাসের ২৮ বা ২৯ তারিখে অর্থাৎ, জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পূর্বেই নখ-চুল ও শরীরের অবাঞ্ছিত পশম কেটে পরিষ্কার হওয়া। যাতে জিলহজ মাসের প্রথম দশকে আর কাটার প্রয়োজন না পড়ে।

জিলহজ মাসে চুল, দাড়ি বা নখ কাটার বিধান কী
জিলহজ মাসে চুল, দাড়ি বা নখ কাটার বিধান কী

জিলহজ মাসে চুল, দাড়ি বা নখ কাটার বিধান কী?

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জিলহজ মাসে কোরবানি করবে, তাহলে সে যেন তার শরীরের পশম এবং নখ না কাটে, কোরবানি করা পর্যন্ত।’ যদি কোনো ব্যক্তি কোরবানি করার নিয়ত করে থাকেন, তাহলে তিনি জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠা থেকে শুরু করে কোরবানি করা পর্যন্ত হাতের নখ, মাথার চুল বা শরীরের যে পশমগুলো রয়েছে, সেগুলো কাটবেন না। এটি কোরবানির সঙ্গে যুক্ত মাসয়ালা, রোজার সঙ্গে এটি যুক্ত নয়। এ বিধান শুধু ওই ব্যক্তির ওপর যিনি কোরবানি করবেন, পরিবারের সবার জন্য এ বিধান নয়। আবার এটাকে সবার জন্য সুন্নাহ মনে করার বিষয়ও এটি নয়।

একদল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, ‍‍‌‌‍‍‌‌‌‌‘এই কাজটি মুস্তাহাব।’ আরেক দল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, ‘এ কাজটি ওয়াজিব।’ তবে রাসুল (সা.)-এর নির্দেশনা থেকে বোঝা যায় যে, এ কাজটি গুরুত্বপূর্ণ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং, যাঁরা কোরবানি করবেন তাঁদের জন্য উত্তম হলো তাঁরা চুল, দাড়ি, গোঁফ এবং নখ কোরবানি হওয়ার আগ পর্যন্ত কাটবেন না। কোরবানি হওয়ার পর এগুলো কাটা জায়েজ রয়েছে।

কোরবানির ঈদের আগে নখ, চুল কাটা যাবে?

বিশেষ করে যারা কোরবানি করার সংকল্প করেছেন, তাদের উদ্দেশ্য করে নবীজি (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির কাছে কোরবানির পশু আছে সে যেন জিলহজের নতুন চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে।’ (মুসলিম: ৪৯৫৯, আবু দাউদ: ২৭৮২)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, আমি কোরবানির দিন সম্পর্কে আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ তাআলা তা এই উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি আরজ করল, হে আল্লাহর রাসুল, যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা থাকে অর্থাৎ যা শুধু দুধপানের জন্য দেওয়া হয়েছে? আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, না; বরং সেদিন তুমি তোমার চুল কাটবে, নখ কাটবে, গোঁফ ও নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটিই আল্লাহর কাছে তোমার পূর্ণ কোরবানি বলে গণ্য হবে। (মুসনাদে আহমদ: ৬৫৭৫)

উক্ত হাদিসে রাসুল (স.) কোরবানি করতে অক্ষম ব্যক্তিরাও যেন সচ্ছল মুসলমানদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ও খুশি উদ্‌যাপনে অংশীদার হতে পারে, সেই রাস্তা বাতলে দিয়েছেন। তারা এই ছোট্ট আমলটির মাধ্যমেও পরিপূর্ণ সওয়াবের অধিকারী হবে। অনুরূপভাবে হাজিদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী হিসেবে গণ্য হবে। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মহান আল্লাহ ঈদের দিনে তাঁর কোনো বান্দাকেই নৈরাশ করেননি।

তবে, যারা কোরবানি করবে না, তাদেরকে নখ, চুল ইত্যাদি কাটতে নিষেধ করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে শাইখ বিন বায (রহ) বলেন, আলেমগণের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, ‘তারা চুল কাটা ও নখ কাটার নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই। হুকুমটি কোরবানিকারীর জন্য খাস, যিনি তার সম্পদ থেকে কোরবানির পশুটি ক্রয় করেছেন।’ (ফতোয়ায়ে ইসলামিয়্যা: ২/৩১৬)

জিলহজের চাঁদ ওঠার আগে নখ-চুল কাটাতে বিশেষ সওয়াব

১. মাথার চুল কাটা কিংবা মাথা ন্যাড়া করা।

২. হাত ও পায়ের নখ কাটা।

৩. মোচ ছেঁটে ছোট করে নেওয়া।

৪. শরীরের অন্যান্য অযাচিত পশম (নাভি ও বগলের নিচের অযাচিত পশম) কাটা কিংবা পশম বিলুপ্তকারী ওষুধ ব্যবহার করা।

হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী জিলকদ মাসের শেষ দিকে উল্লেখিত কাজগুলো সম্পন্ন করা উচিত। যাতে জিলহজ মাসের শুরু থেকে কুরবানির দিন পর্যন্ত চুল, মোচ, হাত ও পায়ের নখ এবং শরীরের অযাচিত লোম কাটার প্রয়োজন না হয়।

জিলহজ মাসে চুল নখ কাটা যাবে কি না জেনে নিন

তবে এই মুস্তাহাব হুকুম তাদের জন্য প্রযোজ্য, যারা এর উপর আমল করলে নখ কাটা ও নাভির নিচের পশম পরিষ্কারের মেয়াদ ৪০ দিন অতিক্রম করবে না। কিন্তু এর উপর আমল করতে গিয়ে যদি ৪০ দিন অতিক্রম হয়ে যায় তবে সেক্ষেত্রে ৪০ দিনের ভিতরে অবশ্যই তা পরিষ্কার করে নিবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কুরবানীকারী তার নখ ও চুল ইত্যাদি কখন কাটবে ? এর উত্তর হচ্ছে কুরবানীকারী নিজের কুরবানী সম্পন্ন হওয়ার পর চুল-নখ ইত্যাদি কাটবে।

কোরবানির ঈদের আগে নখ, চুল কাটা যাবে?
কোরবানির ঈদের আগে নখ, চুল কাটা যাবে?

রোজা রেখে নখ, চুল ও দাড়ি কাটা যাবে কি?

এই প্রশ্নের উত্তর হলো- রোজা অবস্থায় নখ কাটাতে বা চুল কাটতে কোনো অসুবিধা নেই। এগুলোর সঙ্গে রোজার কোনো সম্পর্ক নেই। আর রোজা রেখে দাড়ি সেভ করলে রোজা ভাঙবে না। তবে পবিত্র রমজানের উদ্দেশ্য পূর্ণতা পাবে না।

কেননা, রমজানের রোজার উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর প্রতি আনুগত্য করা। আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী চলা ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নত নিজের ব্যক্তিজীবনে নিয়ে আসা।

কিন্তু শেভ করার মাধ্যমে আমরা নবীর একটা সুন্নতের উপর আঘাত করি। অথচ দাড়ি কামানোর মাধ্যমে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সুন্নতের বিপরিত করা মুমিন মুসলমানের জান্য উচিত নয়। অবশ্য এটা ভিন্ন কথা; এতে রোজা ভেঙে যাবে না, বরং রোজা— রোজার জায়গা থেকে আদায় হয়ে যাবে। তবে রমজানের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণভাবে আদায় হচ্ছে না। মানে আল্লাহর পরিপূর্ণ আনুগত্য ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী নিজের জীবন সাজানোর বিষয়টি পূর্ণতা পাচ্ছে না।

তথ্যসূত্র : সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩/৩৩; সুনানে কুবরা, বায়হাকি, হাদিস : ৮২৫৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৯৩১৯)

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের আর্টিকেলগুলো ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করে হাজারো মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারেন ৷ আপনার কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও জানাতে পারেন ৷ নিচের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন নির্দ্বিধায় ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ৷ জাযাকাল্লাহ ৷

One thought on “জিলহজ মাসে চুল, দাড়ি বা নখ কাটার বিধান কী? জিলহজের প্রথম দশকের ফজিলত

  1. জিলহজ্জ মাসে কোরবানির আগে বোগলের চুল কাটতে পারবো কি? ৪০ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে?? আমার মনে ছিলো না? আর মোচ বড় হয়ে গেছে ছেটে ছোট করতে পারেবো কি???

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *